- Get link
- X
- Other Apps
বার কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি পর্ব ৪
প্রশ্ন: এক আদালত থেকে অন্য আদালতে মামলা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বিধান এবং স্থানান্তরকারী আদালতের ক্ষমতা সম্পর্কে আলোচনা করুন। - বিজেএস পরীক্ষা, ২০১০
উত্তর: মোকদ্দমা স্থানান্তর: দেওয়ানী কার্যবিধির ২২ থেকে ২৪ ধারায় এক আদালত থেকে অন্য আদালতে মামলা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বিধানসমূহ আলোচনা করা হয়েছে এবং স্থানান্তরকারী আদালতের ক্ষমতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।
এক আদালত থেকে অন্য আদালতে মামলা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বিধান:
একাধিক আদালতে দায়েরযোগ্য মোকদ্দমা স্থানান্তরের ক্ষমতা:
একাধিক আদালতে দায়েরযোগ্য মোকদ্দমা স্থানান্তরের ক্ষমতা দেওয়ানী কার্যবিধির ২২ ধারায় বলা হয়েছে। দেওয়ানী কার্যবিধির ২২ ধারায় মোকদ্দমা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে কোন আদালতে আবেদন করতে হবে, সেটা দেওয়ানী কার্যবিধির ২৩ ধারায় বলা হয়।
মোকদ্দমা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে শর্তসমূহ:
দেওয়ানী কার্যবিধির ২২ ধারা অনুসারে, আদালত কোন মোকদ্দমা স্থানান্তরের আদেশ দিতে পারে, যদি নিম্নলিখিত শর্তসমূহ পূরণ হয়, যথা:
১. মোকদ্দমাটি দুই বা ততোধিক আদালতের যে কোন একটিতে দায়েরযোগ্য হতে হবে। অর্থাৎ যে আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করা হয়েছে এবং যে আদালতে মোকদ্দমা স্থানান্তর হবে, সেই আদালতের উক্ত মোকদ্দমা গ্রহণের এখতিয়ার থাকতে হবে এবং
২. মোকদ্দমাটি এইরুপ যে কোন এখতিয়ারসম্পন্ন একটি আদালতে দায়ের করা হয়েছে,
৩. মোকদ্দমাটি যে আদালতে দায়ের করা হয়েছে, সেই আদালত হতে অন্য এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতে স্থানান্তরের জন্য আবেদন করতে-
i. বিবাদী অপর পক্ষকে নোটিশ দিয়েছে এবং
ii. এমন নোটিশ দিয়েছে প্রথম সম্ভাব্য সুযোগে ও বিচার্য বিষয় নির্ধারণের সময় বা তার পূর্বে।
৪. স্থানান্তরের আবেদন পাওয়ার পর আদালত অপর পক্ষের আপত্তি (যদি থাকে) শ্রবণ করে এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতসমূহের কোনটিতে মোকদ্দমা অগ্রসর হবে, সেটা আদালত নির্ধারণ করবে।
দেওয়ানী কার্যবিধির ২২ ধারায় শুধুমাত্র বিবাদী মোকদ্দমা স্থানান্তরের আবেদন করতে পারে যদি মোকদ্দমাটি দুই বা ততোধিক আদালতের যে কোন একটিতে দায়েরযোগ্য হয় এবং তার মধ্যে যে কোন একটি আদালতে দায়ের করা হয়। ২২ ধারায় আদালতকে মোকদ্দমা স্থানান্তরের সাধারণ ক্ষমতা দেওয়া হয়নি বরং ২২ ধারা শুধুমাত্র দেওয়ানী কার্যবিধির ১৬ এবং ২০ ধারার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ যেক্ষেত্রে বাদীর একাধিক কোর্টে মোকদ্দমা দায়ের করার সুযোগ আছে। ২২ ধারায় শুধুমাত্র বিবাদী মোকদ্দমা স্থানান্তরের আবেদন করতে পারে যদি মোকদ্দমাটি দুই বা ততোধিক আদালতের যে কোন একটিতে দায়েরযোগ্য হয় এবং তার মধ্যে যে কোন একটি আদালতে দায়ের করা হয়। যে কোন বিবাদী অপর পক্ষকে নোটিশ দিয়ে প্রথম সম্ভাব্য সুযোগে এবং যে ক্ষেত্রে মোকদ্দমার বিচার্য বিষয় নির্ধারণ হয়ে গেছে, সেই ক্ষেত্রে বিচার্য বিষয় নির্ধারণের সময় বা তার পূর্বে অপর একটি আদালতে স্থানান্তরের জন্য আবেদন করতে পারবে। আদালত এইরুপ আবেদন পাওয়ার পর অপর পক্ষের আপত্তি (যদি থাকে) শ্রবণ করে এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতসমূহের কোনটিতে মামলা অগ্রসর হবে তা স্থির করবে। দেওয়ানী কার্যবিধির ২২ ধারা অনুসারে মোকদ্দমা স্থানান্তরের আবেদন করা হলে, বিবাদী কর্তৃক অপর পক্ষকে নোটিশ দেওয়া বাধ্যতামূলক।
যে আদালতে দরখাস্ত দায়ের করতে হবে:
দেওয়ানী কার্যবিধির ২২ ধারায় উল্লিখিত ক্ষেত্রে মোকদ্দমা স্থানান্তরের জন্য আবেদন করা যেতে পারে জেলা জজের নিকট বা হাইকোর্ট বিভাগে। যখন এখতিয়ারসম্পন্ন একাধিক আদালত একই আপীল আদালতের অধস্তন হয়, তখন সেই আপীল আদালতে ২২ ধারা অনুসারে দরখাস্ত দাখিল করতে হবে। তবে এইরুপ আদালতগুলি বিভিন্ন আপীল আদালতের অধস্তন হলে, দরখাস্ত হাইকোর্ট বিভাগে দাখিল করতে হবে।
মোকদ্দমা স্থানান্তরের সাধারণ ক্ষমতা:
দেওয়ানী কার্যবিধির ২২ ধারায় উল্লিখিত কারণ ব্যতীত অন্যান্য কারণে কোন মোকদ্দমা স্থানান্তর করতে পারে ২৪ ধারায়। ২৪ ধারায় মোকদ্দমার যে কোন পক্ষের আবেদনক্রমে, সকল পক্ষকে নোটিশ দিয়ে এবং তাদের কোন পক্ষের বক্তব্য শ্রবণ করে বা নোটিশ না দিয়ে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে হাইকোর্ট বিভাগ বা জেলা আদালত মোকদ্দমা বা আপীল বা কার্যক্রম স্থানান্তর করার আদেশ দিতে পারে।
স্থানান্তরকারী আদালতের ক্ষমতা:
দেওয়ানী কার্যবিধির ২৪ ধারায় মোকদ্দমা, আপীল, বা অন্যান্য কার্যক্রম স্থানান্তরের এবং প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে স্থানান্তরকারী আদালত তথা জেলা আদালত বা হাইকোর্ট বিভাগ নিম্নলিখিত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে, যথা:
ক) তার নিকট বিচারাধীন কোন মোকদ্দমা, আপীল বা অন্যান্য কার্যক্রম তার অধস্তন এবং বিচার করার
এখতিয়ারসম্পন্ন কোন আদালতে বিচার বা নিষ্পত্তির জন্যে স্থানান্তরিত করতে পারে; অথবা
খ) তার অধস্তন কোন আদালত হতে কোন মোকদ্দমা, আপীল বা অন্যান্য কার্যক্রম প্রত্যাহার করতে পারে; এবং
i. উক্ত মোকদ্দমা, আপীল বা অন্যান্য কার্যক্রম নিজে বিচার বা নিষ্পত্তি করতে পারে,
অথবা
ii. বিচার বা নিষ্পত্তি করার উপযুক্ত কোন আদালতে বিচার বা নিষ্পত্তির জন্যে স্থানান্তর করতে পারে, অথবা
iii. যে আদালত হতে প্রত্যাহার করা হয়েছিল, সেই আদালতে বিচার বা নিষ্পত্তির জন্য পুনঃপ্রেরণ করতে পারে।
উল্লিখিত ক্ষমতা ব্যতীত মোকদ্দমা স্থানান্তর করার আদালতের ক্ষমতা বিবেচনামূলক। অন্যান্য বিবেচনামূলক ক্ষমতার ন্যায় মোকদ্দমা স্থানান্তরের বিবেচনামূলক ক্ষমতাও বিচারিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে এই কথা বিবেচনায় রেখে যে, মোকদ্দমা দায়ের করার বিদ্যমান একাধিক ফোরামের বা আদালতের মধ্যে কোন একটি এখতিয়ারসম্পন্ন আদালত পচ্ছন্দ করে নেওয়ার অধিকার আইন মোকদ্দমার পক্ষগণকে দিয়েছে এবং সাধারণত এমন অধিকার কর্তন করা যায় না বা হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।
প্রশ্ন: একটি মামলায় একের অধিক ব্যক্তি বাদী হিসেবে পক্ষভুক্ত হতে পারে কি? যদি তা হয়, কোন ক্ষেত্রে? - বিজেএস পরীক্ষা, ২০১২
উত্তর: বাদী বা বিবাদী উভয়ের ক্ষেত্রে পক্ষভুক্তির প্রশ্ন উঠতে পারে। যেক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি কর্তৃক কোন একটি কার্য করা হয় বা যখন এমন কার্য দুই বা ততোধিক ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে, উক্ত ক্ষেত্রে পক্ষভুক্তির প্রশ্ন দেখা দেয়। মোকদ্দমায় পক্ষভুক্তি বলতে বাদীর পক্ষভুক্তি বা বিবাদীর পক্ষভুক্তি উভয়কে নির্দেশ করে।
যেক্ষেত্রে একটি মামলায় একের অধিক ব্যক্তি বাদী হিসাবে পক্ষভুক্ত হতে পারে:
দেওয়ানী কার্যবিধির ১ আদেশের ১ বিধিতে উল্লিখিত ক্ষেত্রে কোন মামলায় একের অধিক ব্যক্তি বাদী হিসাবে পক্ষভুক্ত হতে পারে। ১ আদেশের ১ বিধি অনুসারে, একটি মোকদ্দমায় একাধিক বাদী
পক্ষভুক্ত হতে পারে যদি নিম্নলিখিত ২ টি শর্তপূরণ হয়।
১. যদি মোকদ্দমার প্রত্যেক বাদীর দাবীকৃত প্রতিকার একই কার্য বা লেনদেন থেকে উৎপত্তি
হয় এবং
২. মোকদ্দমার কারণ এমন প্রকৃতির যে, যদি এমন ব্যক্তিরা পৃথক মোকদ্দমা দায়ের করে, তাহলে আইন বা তথ্য সংক্রান্ত একটি সাধারণ প্রশ্নের উদ্ভব হবে।
উদাহরণ:'ক' যৌথভাবে 'খ' এবং 'গ' এর সাথে ১০০ টিন তেল বিক্রয়ের চুক্তি করে । 'ক' পরবর্তীতে তা বিক্রয়ে অস্বীকার করে । এখানে 'খ' এবং 'গ' উভয়ের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার আছে যা একই কার্য (বিক্রয় চুক্তি) থেকে উদ্ভব হয়েছে । তাই 'খ' এবং 'গ' বাদী হিসাবে যৌথভাবে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে।
প্রশ্ন: একটি মামলায় বিবাদী লিখিত জবাব দাখিলক্রমে আরজিতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি এমন কোন ব্যক্তির নাম উল্লেখ ছাড়াই অভিযোগ করে যে, মামলাটি পক্ষদোষে দুষ্ট। এ অবস্থায় বাদীর করণীয় কি? আলোচনা করুন। -বিজেএস পরীক্ষা,
উত্তর: যেহেতু বিবাদী কোন ব্যক্তির নাম উল্লেখ ছাড়াই অভিযোগ করেছে যে, মোকদ্দমাটি পক্ষদোষে দুষ্ট, সেহেতু এমন আপত্তি রক্ষণীয় নয় মর্মে বাদী বলতে পারে। তাছাড়া বিবাদীর এমন আপত্তির সত্ত্বেও বাদী কোন ব্যক্তিকে পক্ষভুক্ত করতে বাধ্য না। বাদীর আরজিতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি এমন কোন ব্যক্তির কারণে মোকদ্দমাটি পক্ষদোষে দুষ্ট, বিবাদীর এমন আপত্তির সত্ত্বেও বাদী এমন ব্যক্তিকে আরজিতে বাদী হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করতে নাও পারে কারণ কেউ তাকে পক্ষভুক্ত করতে বাধ্য করতে পারেনা। তবে এই ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাদীর। সুতরাং, ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে কোন ব্যক্তিকে বাদী হিসাবে পক্ষভুক্ত করতে বাদী অস্বীকার করবে। যেহেতু, দেওয়ানী কার্যবিধির ১ আদেশের ৯ বিধি অনুসারে, কোন মোকদ্দমায় পক্ষসমূহের অ-সংযুক্ত এবং অপসংযোগ এর কারণে কোন মোকদ্দমা ব্যর্থ হবেনা এবং যেহেতু বিবাদী লিখিত জবাব দাখিলক্রমে আরজিতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি এমন কোন ব্যক্তির নাম উল্লেখ ছাড়াই ১ আদেশের ১৩ বিধিতে অভিযোগ করে যে, মামলাটি পক্ষদোষে দুষ্ট, সেহেতু এমন অভিযোগ রক্ষণীয় নয় মর্মে বাদী দাবী করতে পারে এবং উক্ত কারণে মোকদ্দমাটি আদালত খারিজ করতে পারেনা মর্মে দাবী করতে পারে। বরং যে সকল ব্যক্তিদের পক্ষভুক্ত হিসাবে মোকদ্দমায় যুক্ত করা হয়েছে, তাদের অধিকার ও স্বার্থ সংক্রান্ত বিষয় নির্ধারণ করতে অগ্রসর হতে আদালতকে বলতে পারে।