- Get link
- X
- Other Apps
প্রশ্ন: ডিক্রীর সংজ্ঞা লিখুন । [বার কাউন্সিল পরীক্ষা, ১০ অক্টোবর ২০০৩]
প্রশ্ন: ডিক্রি কি? [বিজেএস, ২০১১ ও ২০০৮]
উত্তর:
ডিক্রির অর্থ [ধারা ২ (২)]:
দেওয়ানী কার্যবিধির ২ ধারার ২ উপ-ধারায় ডিক্রির সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ২ ধারার ২ উপ-ধারা অনুসারে, ডিক্রি হলো আদালতের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত যেটা মোকদ্দমার বিতর্কিত সমগ্র বা যে কোন বিষয় সম্পর্কে পক্ষসমূহের অধিকার চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করে। আব্দুল হামিদ বনাম আব্দুল জায়ের ৩৩ ডিএলআর ৩৪১ মোকদ্দমায় বলা হয়েছে, এমন ডিক্রি শুধুমাত্র আরজির ভিত্তিতে দায়েরকৃত মোকদ্দমায় প্রদত্ত হতে পারে। সুতরাং, মোকদ্দমার আরজিতে যে প্রতিকার চাওয়া হয়, উক্ত প্রতিকার বিষয়ে আদালতের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত যা চূড়ান্তভাবে মোকদ্দমার পক্ষগণের অধিকার নির্ধারণ করে, এমন আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তকে ডিক্রি বলা হয় । ২ ধারার (২) উপ-ধারা অনুসারে, আদালতের কোন সিদ্ধান্ত ডিক্রি হিসাবে গণ্য হতে নিম্নলিখিত শর্তপূরণ করতে হবে, যথা:
i. অবশ্যই একটি বিচারিক সিদ্ধান্ত থাকতে হবে;
ii. এমন বিচারিক সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক অভিব্যক্তি থাকতে হবে;
iii. এমন আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত অবশ্যই কোন মোকদ্দমায় প্রদত্ত হতে হবে;
iv. এমন সিদ্ধান্ত মোকদ্দমায় বিরোধীয় সকল বা কোন একটি বিষয়ে পক্ষগণের অধিকার নির্ধারণ
করবে;
v. এমন নির্ধারণ অবশ্যই চূড়ান্ত প্রকৃতির হতে হবে।
দলিল বাতিলের সিদ্ধান্ত, চুক্তি রদ, চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, দখলচ্যুত ব্যক্তিকে দখল অর্পণের সিদ্ধান্ত ইত্যাদি ডিক্রির অন্তর্ভুক্ত। উপরে উল্লিখিত শর্তাবলী পূরণ না করলেও, ২ ধারার (২) উপ-ধারা অনুসারে, ”আরজি প্রত্যাখ্যান এবং ১৪৪ ধারায় বর্ণিত কোন প্রশ্ন নির্ধারণ” ডিক্রি মর্মে গণ্য হবে। এমনকি মোকদ্দমা বাতিলের আদেশ, তামাদিতে বারিত আপীল খারিজ, মোকদ্দমা দায়েরের অধিকার নেই মর্মে আদেশ, কোর্ট ফি না দেওয়ায় আরজি খারিজ, আপীল রক্ষণীয় নয় মর্মে আদেশ ডিক্রি হিসাবে বিভিন্ন মামলায় সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন: রায় এবং ডিক্রি এর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করুন। [বিজেএস পরীক্ষা, ২০০৭]
প্রশ্ন: রায় ও ডিক্রীর মধ্যে পার্থক্য করুন? [বার কাউন্সিল পরীক্ষা, ২০১১]
উত্তর:
রায় এবং ডিক্রীর মধ্যে পার্থক্য:
যদিও রায় এবং ডিক্রী উভয় আদালত কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্ত, তবুও এদের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্য আছে;
১. সংজ্ঞা ভিত্তিক পার্থক্য:
ডিক্রী হলো আদালতের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত যেটা চূড়ান্তভাবে মোকদ্দমার বিতর্কিত সমগ্র বা যে কোন বিষয় সম্পর্কে পক্ষসমূহের অধিকার নির্ধারণ করে। রায় বলতে ডিক্রী বা আদেশের যুক্তি হিসেবে বিচারক যে বর্ণনা দেয়, তা বুঝায়। অর্থাৎ ডিক্রী এবং আদেশ উভয় ক্ষেত্রে রায় হতে পারে।
২. ধারাভিত্তিক পার্থক্য:
২(২) ধারায় ডিক্রির সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। রায়ের সংজ্ঞা ২ (৯) ধারায় দেওয়া হয়েছে।
৩. বক্তব্য ভিত্তিক পার্থক্য:
ডিক্রীর ক্ষেত্রে বিচারককে যুক্তি দেখিয়ে কোন বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু রায়ের ক্ষেত্রে বিচারককে ডিক্রী বা আদেশের যুক্তি দেখিয়ে বক্তব্য দিতে হয়।
৪. ক্রমভিত্তিক পার্থক্য:
রায় দেওয়ার পর রায়ের ভিত্তিতে আদালত ডিক্রী প্রদান করে। মোকদ্দমার শুনানীর পর আদালত রায় ঘোষণা করে এবং এরুপ রায়ের ভিত্তিতে ডিক্রী প্রদান করে। অর্থাৎ রায় আগে প্রদান করা হয় ও পরে ডিক্রী দেওয়া হয়।
৫. অধিকার নির্ধারণ ভিত্তিক পার্থক্য:
ডিক্রী মোকদ্দমার পক্ষদ্বয়ের অধিকার চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করে। রায়ে মামলার ঘটনা, বিচার্য বিষয়, সাক্ষীদের সাক্ষ্য, আইনগত যুক্তি ইত্যাদি উল্লেখ থাকে।
৬. আকার ভিত্তিক পার্থক্য:
ডিক্রী রায় অপেক্ষা সংক্ষিপ্ত। কিন্তু রায়ে ডিক্রীসহ মোকদ্দমার সকল কিছু লিপিবদ্ধ থাকে। অর্থাৎ মোকদ্দমা সম্পর্কে রায় ডিক্রী অপেক্ষা বিস্তারিত হয়।
প্রশ্ন: নিম্নলিখিত পরিভাষাগুলোর সংজ্ঞা দিন। [বিজেএস পরীক্ষা, ২০০৮]
ক) ডিক্রী খ) রায় গ) দায়িক ঙ) আইনানুগ প্রতিনিধি চ) বিধি ছ) অস্থাবর সম্পত্তি জ) মধ্যবর্তী মুনাফা ঝ) সরকারী উকিল ঞ) জেলা
উত্তর:
রায়:
দেওয়ানী কার্যবিধির ২ (৯) ধারায় রায়ের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ২ এর ৯ ধারা অনুসারে, রায় বলতে ডিক্রি বা আদেশের যুক্তি হিসেবে বিচারক যে বর্ণনা দেয়। মোকদ্দমার শুনানীর পর আদালত রায় ঘোষণা করে এবং এরুপ রায়ের ভিত্তিতে ডিক্রি প্রদান করে। রায়ের অপরিহার্য উপাদান হলো আদালত তার সিদ্ধান্তের হেতু বা কারণ সম্পর্কে একটি বিবৃতি দিবে। ক্ষুদ্র এখতিয়ারসম্পন্ন আদালত ব্যতীত প্রত্যেকটি আদালতের রায়ে মোকদ্দমা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি থাকবে, সিদ্ধান্তের কারণ থাকবে এবং সিদ্ধান্ত উল্লেখ থাকবে।
দায়িক:
দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ২ (১) ধারায় দায়িকের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আদালত যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে ডিক্রি বা জারি করার যোগ্য কোন আদেশ দেয়, সেই ব্যক্তিকে দায়িক বলে । মোকদ্দমার পক্ষ কিন্তু তার বিরুদ্ধে ডিক্রি জারি করা হয়নি, এমন ব্যক্তি দায়িক মর্মে গণ্য হবেনা।
আইনানুগ প্রতিনিধি:
দেওয়ানী কার্যবিধির ২ (১১) ধারায় আইনানুগ প্রতিনিধির সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আইনানুগ প্রতিনিধি হলো সেই ব্যক্তি
১. যে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির প্রতিনিধিত্ব করে।
২. যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি পরিচালনা করে। এবং
৩. যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তির প্রতিনিধি হিসেবে মোকদ্দমা করে বা মৃত ব্যক্তির প্রতিনিধি হিসেবে যার বিরুদ্ধে মামলা করা যায়। যেমন উত্তরাধিকারী, উইলের নির্বাহক, মোহান্ত বা সেবাইত আইনানুগ প্রতিনিধি হিসাবে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে।
বিধি:
দেওয়ানী কার্যবিধির ২ (১৮) ধারায় বিধির সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ২ এর ১৮ অনুসারে, বিধি বলতে প্রথম সিডিউলে বর্ণিত নিয়ম বা ফর্ম বা দেওয়ানী কার্যবিধির ১২২ ধারার অধীন প্রণীত নিয়ম।
অস্থাবর সম্পত্তি:
দেওয়ানী কার্যবিধির ২ (১৩) অনুসারে, অস্থাবর সম্পত্তি বলতে বাড়ন্ত ফসলাদিও অন্তর্ভুক্ত হবে।
মধ্যবর্তী মুনাফা:
দেওয়ানী কার্যবিধির ২ (১২) ধারা অনুসারে, বেআইনীভাবে দখলকৃত সম্পত্তিতে স্বাভাবিক নিয়মে যে লাভ তৈরি হয় বা বেআইনীভাবে দখলদার ব্যক্তি সাধারণ বুদ্ধিমত্তায় যে লাভ করতে পারতো, সুদসহ উক্ত মুনাফা কে মধ্যবর্তী মুনাফা [Mesne Profits] বলে । তবে বেআইনীভাবে দখলদার ব্যক্তি উক্ত সম্পত্তির কোন উন্নয়ন করলে এবং সেই উন্নয়নের ফলে কোন মুনাফা হলে, উক্ত মুনাফা মধ্যবর্তী মুনাফা [Mesne Profits] বলে গণ্য হবে না। মধ্যবর্তী মুনাফার [Mesne Profits] ক্ষেত্রে বাদীকে প্রমাণ করতে হবে যে-
১. সে উক্ত সম্পত্তির মালিক। এবং
২. বিবাদী কর্তৃক বাদীর সম্পত্তিতে বেআইনী বা অন্যায় দখলে [wrongful possession] থাকা।
৩. বেআইনী দখলদার বিবাদী উক্ত সম্পত্তি হতে সাধারণ বুদ্ধিমত্তায় মুনাফা গ্রহণ করেছে সেই ক্ষেত্রে সুদসহ মুনাফা হলো মধ্যবর্তী মুনাফা এবং বাদী দখল উদ্ধারের মোকদ্দমায় এই মধ্যবর্তী মুনাফার জন্য মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে।
সরকারী উকিল:
দেওয়ানী কার্যবিধির ২(৭) ধারা অনুসারে, সরকারী উকিল বলতে দেওয়ানী কার্যবিধির অধীন সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত সকল বা যে কোন কার্য সম্পাদন করার উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত অফিসার কে বুঝায় বা সরকারী উকিলের নির্দেশ অনুযায়ী কার্যরত অপর কোন উকিলকে বুঝায়।
জেলা:
জেলা বলতে আদি এখতিয়ারসম্পন্ন কোন প্রধান দেওয়ানী আদালতের আঞ্চলিক সীমানা বুঝায় এবং এমন আদালত জেলা আদালত নামে অভিহিত। জেলা বলতে হাইকোর্ট বিভাগের আদি এখতিয়ারের স্থানীয় সীমানাও অন্তর্ভুক্ত হবে।
প্রশ্ন: ডিক্রি এবং আদেশের মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তর:
ডিক্রি এবং আদেশের মধ্যে পার্থক্য:
১. দেওয়ানী কার্যবিধির ২ ধারার ২ উপ-ধারায় ডিক্রির সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, ২ ধারার ১৪ উপ-ধারায় আদেশের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
২. ডিক্রি হলো আদালতের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত যেটা মোকদ্দমার বিতর্কিত সমগ্র বা যে কোন বিষয় সম্পর্কে পক্ষসমূহের অধিকার চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করে। অন্যদিকে, দেওয়ানী আদালতের সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক অভিব্যক্তি যা ডিক্রি নয়।
৩. আরজি দাখিলের মাধ্যমে দায়েরকৃত মোকদ্দমায় ডিক্রি প্রদত্ত হতে পারে। অন্যদিকে, আরজি দাখিলের মাধ্যমে শুরু হয়েছে এমন মোকদ্দমায় বা পিটিশন বা আবেদন দাখিলের মাধ্যমে শুরু হয়েছে এমন কোন কার্যধারায় আদেশ প্রদত্ত হতে পারে।
৪. ডিক্রি প্রাথমিক বা চূড়ান্ত হতে পারে বা এটা আংশিক প্রাথমিক এবং আংশিক চূড়ান্ত হতে পারে। কিন্তু আদেশ কখনও প্রাথমিক হতে পারেনা।
৫. যেক্ষেত্রে প্রাথমিক বা চূড়ান্ত ডিক্রি দেওয়া হয়, সেই সকল ক্ষেত্র ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে একটি মামলায় শুধুমাত্র একটি ডিক্রি প্রদত্ত হয়। যেখানে কোন মোকদ্দমা বা কার্যধারায় এক বা একাধিক আদেশ প্রদত্ত হতে পারে।
৬. কতিপয় ব্যতিক্রম ছাড়া প্রত্যেক ডিক্রি আপীলযোগ্য (শর্তাধীন)। কিন্তু সাধারণত আদেশ আপীলযোগ্য না। শুধুমাত্র সেই সকল আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা যায়, যে গুলোকে দেওয়ানী কার্যবিধির ৪৩ আদেশে বা ১০৪ ধারায় আপীলযোগ্য আদেশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ এবং প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ৯৬ ধারার অগ্রক্রয়ের মামলায় পক্ষগণের অধিকার চূড়ান্তভাবে নির্ধারণপূর্বক আনুষ্ঠানিক অভিব্যক্তি কোন ডিক্রি না বরং দেওয়ানী কার্যবিধির ২ (১৪) ধারায় সংজ্ঞায়িত আদেশ।