- Get link
- X
- Other Apps
ভুল রেকর্ড বাদীর উপর বাধ্যকর না মর্মে আরজি মুসাবিদা বা ড্রাফটিং:
প্রশ্ন: মি. রহিম একখন্ড জমির মালিক এবং তিনি উহার দখলে আছেন কিন্তু ভুলক্রমে সম্পত্তি করিমের নামে রেকর্ড হইয়াছে। যদি রহিম আপনার নিকট আইনগত সাহয্যের জন্য আসে তাহলে আপনি তার পক্ষে কোন ধরনের মোকদ্দমা দায়ের করিবেন। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের বিধান উল্লেখপূর্বক সেই মর্মে আরজি মুসাবিদা করুন।
এই প্রশ্নটি বার কাউন্সিল পরীক্ষা, ৮ ই এপ্রিল, ২০০৫ সালে এসেছিল।
অথবা
প্রশ্ন: রশিদ গুলশান থানাধীন বাড্ডা মৌজার ৭৬ নং দাগের জমিটির মালিক দখলকার। বিগত জরিপে ঐ জমিটি ভূলবশতঃ রশিদের নামে রেকর্ড না হয়ে তার প্রতিবেশী জামালের নামে রেকর্ড হয়েছে। নানা কারণে রশিদের সাথে জামালের সম্পর্ক বৈরী উপযুক্ত আদালতে দায়েরের জন্য রশিদের পক্ষে একটি আরজি প্রস্তুত করুন। সংশ্লিষ্ট আইনের উল্লেখসহ মূল প্রার্থনা সমূহ সংযোজিত থাকতে হবে।
এই প্রশ্নটি বার কাউন্সিল পরীক্ষা, ২ রা জুন, ২০০৭ এবং ২২ এপ্রিল ২০১১ সালে এসেছিল।
যদি রহিম আমার নিকট আইনগত সাহায্যের জন্য আসে তাহলে আমি তার পক্ষে কোন ধরনের মোকদ্দমা দায়ের করবো বা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো তা আলোচনা করা হলো।
আলোচ্য ১ম প্রশ্নের ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় মি. রহিম একখন্ড জমির মালিক এবং দখলদার । কিন্তু ভুলক্রমে সম্পত্তি করিমের নামে রেকর্ডে হয়েছে। অর্থাৎ মি. রহিমের সম্পত্তি করিমের নামে রেকর্ড হয়েছে। এই ক্ষেত্রে বাদীর জন্য প্রতিকার হতে পারে উক্ত ভুল রেকর্ড সংশোধন করা। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩ক ধারায় রেকর্ড সংশোধনের বিধান ১৯৬৭ সালে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব(সংশোধন) ৮ নং অধ্যাদেশ, বলে যুক্ত করা হয়। ১৪৩ক ধারার বিধান অনুযায়ী রেকর্ড সংশোধনের জন্য সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি দেওয়ানী আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারতো। কিন্তু ১৯৭৫ সালে ৪৪ নং অধ্যাদেশ বলে এটা বাতিল করা হয়। সুতরাং বর্তমানে রেকর্ড সংশোধনের জন্য দেওয়ানী আদালতে মামলা করার কোন বিধান নেই। তবে বিকল্প হিসেবে ১৪৩খ এবং ১৪৩গ যুক্ত করা হয়েছে । সুতরাং মি. রহিম রেকর্ড সংশোধনের আবেদন করতে পারবে না। প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়নি যে, উক্ত ভুল রেকর্ডের উপর ভিত্তি করে করিম সম্পত্তির মালিকানা দাবী করছে কিনা। যদি এমনটি হয় তাহলে মি, রহিম উক্ত ভুল রেকর্ডটি তার উপর বাধ্যকর না মর্মে ঘোষণাসহ স্বত্ব ঘোষণার ডিক্রী দাবী করে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারায় মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে। নিচে এই মর্মে মি. রহিমের পক্ষে একটি আরজি মুসাবিদা করা হলো।
ভুল রেকর্ডটি বাদীর উপর বাধ্যকর না মর্মে আরজি মুসাবিদা বা ড্রাফটিং:
সম্পত্তির আনুমানিক মূল্যমান ১,৫০,০০০ টাকা ধরে নিম্নে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারায় একটি মোকদ্দমার আরজি মুসাবিদা বা ড্রাফটিং করা হল:
মোকামঃ বিজ্ঞ ২য় সহকারী জজ আদালত, যশোর
দেঃ মোঃ নং ..../২০০৫
রহিম
পিতা: মজিদ
ঠিকানা: ৮১, লোন অফিস পাড়া, যশোর।
......বাদী
বনাম
করিম
পিতা: শেখ ফরিদ
ঠিকানা: ৮৪, লোন অফিস পাড়া, যশোর।
.....বিবাদী
বিষয়: সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারায় ঘোষনামূলক মোকদ্দমা ।
মোকদ্দমার তায়দাদ ১,৫০,০০০/- টাকা
বাদীর বিনীত প্রার্থনা এই যে,
১. বাদী নিম্ন তফসিলভূক্ত কোতয়ালী থানার লোন অফিস পাড়ার মৌজার ২৫ নং খতিয়ানে ৫৪১ নং দাগের ৫৫ শতাংশ সম্পত্তির ক্রয়সূত্রে মালিক ও দখলকার।
2. বাদী ১৯৯২ সালে তার আপন চাচার নিকট হতে উক্ত সম্পত্তি ক্রয় করে। একটি রেজিস্ট্রি কবলা দলিলমূলে বাদী জমিটি ক্রয় করে এবং তার চাচার নাম কর্তন করে নিজ নামে নাম জারী করে।
৩. সরকারী আদেশে নালিশী মৌজাসহ সমস্ত যশোর শহরে জরিপ কার্যক্রম শুরু হয়।
৪. বাদীর উক্ত নালিশী সম্পত্তি যে মৌজায় অবস্থিত উক্ত এলাকায় জরিপ চলাকালীন সময় তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিল।
৫. ভারত থেকে ফেরার পর তিনি জানতে পারে যে, তার এলাকার জরিপ সম্পন্ন হয়েছে এবং তার জমিটি তার নামের পরিবর্তে তার প্রতিবেশী, করিমের, নামে রেকর্ড হয়েছে।
৬. উক্ত রেকর্ড অনিচ্ছাকৃত এবং উক্ত সময়ে দেশে অবস্থান না করার কারণে হয়েছে।
৭. বাদী এখনো উক্ত সম্পত্তিতে দখলে আছে। ভুল রেকর্ডের কারণে বাদীর স্বত্ব সামান্য বাধাগ্রস্থ হয়নি। কিন্তু বিবাদী উক্ত রেকর্ডের উপর ভিত্তি করে স্বত্ব দাবী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
৮. গত ১০-০৫-২০০৫ তারিখে বাদী নালিশী সম্পত্তিটির ভুল রেকর্ড সম্পর্কে জানতে পারে। সুতরাং উক্ত সময় হতে মোকদ্দমার কারণ উদ্ভব হয়েছে।
৯. বাদী নির্ধারিত তামাদির মধ্যে মোকদ্দমা দায়ের করেছে।
১০. বাদী মোকদ্দমার তায়দাদ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কোর্ট ফি ( দুইটি ঘোষণার জন্য ৬০০/- টাকা) প্রদান করেছে এবং প্রয়োজনীয় স্ট্যাম্প পেপারে আরজি দাখিল করেছে।
অতএব, বিজ্ঞ আদালতে বাদীর প্রার্থনা এই যে,
ক. ন্যায়বিচারের স্বার্থে তফসিলভুক্ত নালিশী সম্পত্তিতে বাদীর স্বত্ব-দখল বিদ্যমান আছে মর্মে ঘোষণামূলক ডিক্রী দিতে।
খ. নালিশী সম্পত্তির রেকর্ডটি যথাযথ হয়নি এবং তা ভুল বলে ঘোষণা করে তা বাদীর উপর বাধ্যকর না বলে ঘোষণা করতে।
গ. আইন ও ইক্যুইটি মতে বাদী অন্য যে সকল প্রতিকার পাওয়ার অধিকারী তার আদেশ দিতে একান্ত মর্জি হয়।
এবং
উপরোক্ত আদেশ দিলে বাদী পক্ষ চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।
অদ্য তাং
তফসিল
জেলা: যশোর, থানা: কোতয়ালী, মৌজা: লোন অফিস পাড়া, খতিয়ান: ২৫, দাগ নং: ৫৪১, জমির পমিাণ: ৫৫ শতাংশ।
চৌহদ্দি
উত্তরে: রাস্তা,
দক্ষিনে: পুকুর,
পূর্বে : করিমের জমি এবং
পশ্চিমে: নালা।
সত্যপাঠ
অত্র আরজিতে যা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে তা আমার বিশ্বাস মতে সত্য ও শুদ্ধ জেনে অদ্য ১২/০৬/২০০৫ ইংরেজি তারিখে সকাল ১০.৩০ ঘটিকার সময় বিজ্ঞ আইনজীবীর চেম্বার বসে অত্র সত্যপাঠে নিজ নাম স্বাক্ষর করলাম।
সত্যপাঠকারীর স্বাক্ষর
তাং
ভুল রেকর্ড বাদীর উপর বাধ্যকর না মর্মে আরজি মুসাবিদা বা ড্রাফটিং টি ডাউনলোড করতে নিচের বাটনে ক্লিক করুন
ডাউনলোড
ভুল রেকর্ড বাদীর উপর বাধ্যকর না মর্মে আরজি মুসাবিদা বা ড্রাফটিং যে সমস্ত আইনের আলোকে করা হয়েছে তার লিংক নিম্নে দেওয়া হলো:
১. আরজি সংশোধনের দরখাস্ত মুসাবিদার বিধান
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ১। The State Acquisition and Tenancy Act, 1950 এর ৪৩ ধারা মতে, এবং প্রজাস্বত্ব বিধিমালা, ১৯৫৫ এর বিধি ২৩ এর উপবিধি (৩) অনুযায়ী চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত রেকর্ডের করনিক ভুল (Clerical Mistake) সংশ্লিষ্ট রাজস্ব কর্মকর্তা যিনি বর্তমানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ড হিসেবে কাজ করেন তিনিই সংশোধন করতে পারেন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবেদনের প্রেক্ষিতে বা প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫ এর ২২ বিধির উপবিধি (১) অনুযায়ী খতিয়ানে দৃষ্ট করণিক ভুল সংশোধনের জন্য প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর পূর্ববর্তী জরিপের কাগজপত্র, প্রাথমিক খাজনা বিবরণী, কালেক্টরের দপ্তরে সংরক্ষিত খতিয়ানের কপি এবং ২ নং রেজিস্ট্রার পর্যালোচনা ক্রমে এবং তিনি যে ধরনের অনুসন্ধান প্রয়োজন মনে করেন, তা করে এরূপ করণিক ভুল সংশোধনের নির্দেশ দেবেন। কালেক্টর কর্তৃক বা ইউনিয়ন (ভূমি) সহকারী কর্মকর্তা কর্তৃক সংরক্ষিত খতিয়ান এবং ২ নম্বর রেজিস্ট্রার অনুযায়ী সংশোধন করার নির্দেশ প্রদান করত সংশোধনলিপির কপি সংশ্লিষ্ট পক্ষকে প্রদান করবেন। সহকারী কমিশনার (ভুমি) কর্তৃক বিবেচনাযোগ্য করণিক ভুলের মধ্যে নামের ভুল, অংশ বসানোর হিসেবে ভুল, দাগসুচিতে ভুল, ম্যাপের সংঙ্গে রেকর্ডের ভুল, জরিপকালে বাবার মৃত্যুর কারণে সন্তানদের নামে সম্পত্তি রেকর্ড হবার কথা থাকলেও জরিপকারকদের ভুল বা অজ্ঞাত কারণে তা মূল প্রজা বা বাবার নামে রেকর্ড হওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব ক্ষেত্রে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে থেকে প্রতিবেদন পাঠানোর পর যার নামে খতিয়ানে ভুল নাম এসেছে বা সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নোটিশ প্রদান করা হয়। তারপর একটি নির্ধারিত তারিখে উভয়পক্ষের শুনানি গ্রহণ ও দাখিলীয় কাগজপত্রাদি বিবেচনায় কোনো আপত্তি না থাকলে খতিয়ানের করণিক ভুল সংশোধনের আদেশ দেওয়া হয়। সংশোধিত আদেশ অনুসারে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সংশোধিত খতিয়ান প্রস্তুত করে পেশ করেন এবং কানুনগো প্রয়োজনীয় রেকর্ড সংশোধন করেন। সংশোধনের পুরো পক্রিয়া সম্পন্ন হতে সাধারণত সময় লাগে ৩০-৩৫ দিন। সরকারিভাবে সংশোধনের জন্য আবেদনের সাথে নির্ধারিত কোর্ট ফি সংযুক্ত করতে হয়। আবেদনের সাথে যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হবে: ১। সর্বশেষ নামজারি, সিএস, আর.এস, এসএ, বিএস, খতিয়ানের সত্যায়িত ফটোকপি/ সার্টিফাইড কপি ২। সংশ্লিষ্ট মৌজার এসএ ও বিএস মৌজা ম্যাপ ৩। ওয়ারিশ সনদপত্র ((প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) [অনধিক ০৩ মাসের মধ্যে ইস্যুকৃত] ৪। মূল দলিলের ফটোকপি/ সার্টিফাইড কপি( প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ৫। সর্বশেষ জরিপের পর থেকে ভায়া/পিট দলিল(প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ৬। ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলা পত্র ৭। আদালতের রায়/আদেশ/ডিক্রির সার্টিফাইড কপি ৮। আদালতের রায়/আদেশ/ডিক্রি থাকলে আরজির সার্টিফাইড কপি ৯। বিএস জরিপের মাঠপর্চা, ডিপি খতিয়ান ইত্যাদি।
একইভাবে প্রতারণামূলক লিখনের (Fraudulent Entry) মাধ্যমে সৃষ্ট চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত রেকর্ড সংশোধনের জন্য প্রাপ্ত আবেদন অথবা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজস্ব কর্মকর্তা প্রজাস্বত্ব বিধিমালা, ১৯৫৫ এর বিধি ২৩ এর উপবিধি (৪) অনুযায়ী রেকর্ড সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
খতিয়ান সংশোধন নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে ডিসিআর এবং সংশোধিত খতিয়ানের কপি উপজেলা/সার্কেল ভূমি অফিস থেকে সংগ্রহ করা যাবে।
২। The State Acquisition and Tenancy Act, 1950 এর ১৪৯ ধারার (৪) উপধারা মতে, Board of Land Administration যে কোনো সময় যে কোনো খতিয়ানে বা চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত সেটেলমেন্ট রেন্ট-রোলে অন্তর্ভুক্ত যথার্থ ভুল (Bonafide Mistake) সংশোধনের আদেশ দিতে পারেন। কিন্তু Board of Land Administration বর্তমানে বিলুপ্ত বিধায় এ ক্ষমতা সরকারের পাশাপাশি ভূমি আপিল বোর্ডের রয়েছে।
৩। ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল সর্বশেষ জরিপে প্রকাশিত খতিয়ানের বিষয়ে যে কোনো আদেশ প্রদানে এখতিয়ারবান। জরিপ পরবর্তী স্বত্বলিপি গেজেটে চূড়ান্ত প্রকাশনার পর কোন সংশোধনীর দাবি থাকলে তা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল, ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচার্য।
অর্থাৎ আপনার খতিয়ানে যে কোনো ধরনের ভুল হোক না কেন ভুলের ধরণ অনুসারে উপরিউক্ত তিনভাবেই তা সংশোধন সম্ভব।
ইউটিউব ভিডিও - ভুল রেকর্ড বাদীর উপর বাধ্যকর না মর্মে আরজি মুসাবিদা বা ড্রাফটিং