- Get link
- X
- Other Apps
চুক্তির সুনির্দিষ্ট বাস্তবায়নের জন্য আরজি মুসাবিদা
জমি বিক্রয় চুক্তির সুনির্দিষ্ট বলবৎকরণের জন্য আরজি মুসাবিদা।
প্রশ্ন: 'ক' তাহার জমি বিক্রয়ের জন্য 'খ' এর সহিত চুক্তি করে ও মূল্য গ্রহণ করে পরবর্তীতে 'ক' দলিল সম্পাদনে অস্বীকৃতি জানায়। 'খ'- কে পরামর্শ দিন এবং প্রয়োজনীয় 'আরজি' মুসাবিদা করুন। এই প্রশ্নটি বার কাউন্সিল পরীক্ষা, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০০৬ সালে এসেছিল।
'খ' এর জন্য পরামর্শ:
আলোচ্য প্রশ্ন অনুযায়ী 'ক' এবং 'খ' জমি ক্রয় বিক্রয়ের চুক্তি করে। 'ক' জমির মূল্য গ্রহণ করে, পরবর্তীতে দলিল সম্পাদনে অস্বীকৃতি জানায়। চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ১২ ধারায় 'খ’ কে মোকদ্দমা দায়ের করতে পরামর্শ দেওয়া যায়। কারণ সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ১২ ধারায় বলা হয়েছে যখন সম্মতিভূক্ত কাজটি এমন হয় যে, তা সম্পাদন না করলে আর্থিক ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে পর্যাপ্ত প্রতিকার লাভ করা যায় না, তখন আদালত উক্ত চুক্তিটি সুনির্দিষ্টভাবে বাস্তবায়নের আদেশ দিতে পারে। ১২ ধারায় বলা হয়েছে যদি না এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না বিপরীত কিছু প্রমাণিত হয়, আদালত অবশ্যই ধরে নিবে যে, স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের চুক্তি ভঙ্গের প্রতিকার পর্যাপ্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের মাধ্যমে সম্ভব নয়। যেহেতু 'ক' এবং 'খ' জমি বিক্রয়ের চুক্তি করেছে, তাই এই চুক্তি ভঙ্গের প্রতিকার পর্যাপ্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের মাধ্যমে দেওয়া সম্ভব না। ১২ (গ) অনুযায়ী যে চুক্তি ভঙ্গের প্রতিকার পর্যাপ্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের মাধ্যমে দেওয়া সম্ভব না, সেখানে আদালত চুক্তির সুনির্দিষ্ট বলবৎ করণের জন্য ডিক্রী দিতে পারে। সুতরাং 'ক' কে চুক্তিটি বাস্তবায়ন করতে এবং কবলা দলিল সম্পাদন করতে বাধ্য করতে 'খ' কে ১২ ধারায় মোকদ্দমা দায়ের করার পরামর্শ দেওয়া যায়। এই ক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিক্রয় চুক্তিটি নিবন্ধিত হতে হবে। কারণ ২১ক ধারা অনুযায়ী স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় চুক্তি অবশ্যই নিবন্ধিত হতে হবে। অন্যথায় তা সুনির্দিষ্টভাবে বলবৎযোগ্য হবেনা।
নিচে 'খ' এর পক্ষে জমি বিক্রয়ের চুক্তিটি সম্পাদনে 'ক' কে বিবাদী করে একটি আরজি মুসাবিদা করা হলো।
মোকামঃ বিজ্ঞ ২য় সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, চট্টগ্রাম
দেঃ মোঃ নং.../২০০৬
“খ”
পিতা: আনোয়ার
২২/ক লালখান,
চট্টগ্রাম
…….বাদী
বনাম
“ক”
পিতা: শামীম আহম্মেদ
৪৫/০২, লালখান
চট্টগ্রাম
……বিবাদী
বিষয়: সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ১২ ও ২১ক ধারা মতে সুনির্দিষ্টভাবে চুক্তি পালনের মোকদ্দমা।
মোকদ্দমার তায়দাদ ৩,৫০,০০০ টাকা
বাদী পক্ষের বিনীত নিবেদন এই যে,
১. বাদী বাংলাদেশের একজন স্থায়ী নাগরিক এবং এলাকায় একজন সম্মানিত শিক্ষক। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তি।
২. অন্যদিকে বিবাদী এলাকায় একজন ভূমি দস্যু এবং অর্থ লোভী ব্যক্তি নামে পরিচিত।
৩. বিবাদী 'ক' তার চট্টগ্রাম জেলার কুলগাঁও মৌজার, খতিয়ান নম্বর ২০, দাগ নম্বর -২১০৪, আর এস জরিপে ১১৭৮/১৩৭০ নম্বর জমি পরিমাণ ১০ শতাংশ বিক্রয় করার জন্য বাদী 'খ’-কে প্রস্তাব দিয়েছিল ।
৪. বিবাদী ‘ক’ তার জমি বিক্রয়ের জন্য 'খ' এর সাথে গত ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০০৬ তারিখে চুক্তিবদ্ধ হয়। ঐ দিনই বিবাদী বাদীর নিকট হতে বায়না বাবদ ৫০,০০০.০০ (পঞ্চাশ হাজার টাকা মাত্র) টাকা গ্রহণ করে বাদীর অনুকূলে একটি বায়না দলিল সম্পাদন করে দেয়।
৫. অতপর গত ১০-০৩-২০০৬ তারিখে বাদী উক্ত বায়না দলিলটি রেজিস্ট্রি করে। বায়না চুক্তিতে শর্ত আরোপ করা হয় যে, পরবর্তী ৫ মাসের মধ্যে চুক্তির বাকী মূল্য ৩,০০,০০০/- টাকা (তিন লক্ষ টাকা মাত্র) বিবাদী বাদীর নিকট হতে গ্রহণ করে, 'খ' এর বরাবরে একখানা কবলা দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করে দিবে।
৬. বাদী, 'খ’ যথাসময়ে জমির মূল্যের অবশিষ্ট্য তিন লক্ষ টাকা বিবাদী, 'ক' কে প্রদান করে প্রতিশ্রুত কবলা দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করে দিতে অনুরোধ জানায়।
৭. চুক্তি অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করা হলেও 'ক' নানা প্রকার তালবাহানা করে কালক্ষেপণ করছে এবং গত ১১-০৭-২০০৬ তারিখে কবলা দলিল করে দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
৮. ইতোমধ্যে বিবাদী উক্ত সম্পত্তি অন্যত্র বিক্রয়ের জন্য চেষ্টা করছে এবং তাদের নিকট হতে অগ্রীম টাকা গ্রহণ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৯. মোকদ্দমার কারণ: যেহেতু ১১-০৭-২০০৬ বিবাদী বাদীর অনুকূলে চুক্তি অনুযায়ী কবলা দলিল করে দিতে অস্বীকার করেছে, সেহেতু উক্ত দিন হতে চুক্তি ভঙ্গ হয়েছে এবং মোকদ্দমার কারণ উৎপত্তি হয়েছে।
১০. মোকদ্দমার তামাদি: যেহেতু ১১-০৭-২০০৬ বিবাদী বাদীর অনুকূলে চুক্তি অনুযায়ী কবলা দলিল করে দিতে অস্বীকার করেছে, সেহেতু উক্ত দিন হতে চুক্তি ভঙ্গ হয়েছে এবং উক্ত দিন হতে মোকদ্দমার তামাদি শুরু হয়েছে এবং মোকদ্দমাটি ১ বৎসরের মধ্যে দায়ের করা হয়েছে। সুতরাং মোকদ্দমাটি তামাদিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দায়ের করা হয়েছে।
১১. মোকদ্দমার এখতিয়ার: মোকদ্দমার বিরোধীয় সম্পত্তি নিম্নে উল্লেখিত তফসিল অনুযায়ী আদালতের আঞ্চলিক সীমানার মধ্যে অবস্থিত। সুতরাং মোকদ্দমাটি বিচার করার আঞ্চলিক এখতিয়ার আদালতের আছে। চুক্তিতে উল্লেখিত সম্পত্তির মূল্যমান ৩৫০০০০ (তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা মাত্র। সুতরাং মোকদ্দমাটি বিচার করার আর্থিক এখতিয়ার আদালতের আছে।
১২. বাদী মোকদ্দমার তায়দাদ মূল্য অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কোর্ট ফি প্রদান পূর্বক এবং প্রয়োজনীয় স্ট্যাম্প পেপারে আরজি দাখিল করেছে।
১৩. বাদী, 'খ' একজন শিক্ষক মানুষ। তিনি তার সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে উক্ত জমি ক্রয় করেছে। বিবাদী যদি বায়না চুক্তি অনুযায়ী একখানা কবলা দলিল সম্পাদন এবং রেজিস্ট্রি না করে এবং বাদীকে উক্ত সম্পত্তি দিতে অস্বীকার জানায়, তাহলে বাদীর অপূরণীয় ক্ষতি হবে এবং অর্থের মাধ্যমে উক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব না। একমাত্র আদালতের ন্যায় বিচার বাদীর জন্য পর্যাপ্ত প্রতিকার হতে পারে।
অতএব, বিজ্ঞ আদালতের নিকট বাদীর বিনীত প্রার্থনা এই যে, উপরোক্ত অবস্থা ও কারণাদি বিবেচনাপূর্বক ন্যায় বিচারের স্বার্থে
ক. তফসিলে বর্ণিত সম্পত্তির বিষয়ে বাদী এবং বিবাদীর মধ্যে বিদ্যমান বায়না চুক্তিটির সুনির্দিষ্ট বাস্তবায়নের আদেশ দিতে;
খ. বিবাদীকে বায়না চুক্তি অনুযায়ী একটি কবলা দলিল সম্পাদন এবং রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার আদেশ দিতে;
গ. তফসিলে বর্ণিত সম্পত্তির দখল বাদীকে প্রদানের আদেশ দিতে;
ঘ. বাদীর অনুকূলে বিবাদীকে মোকদ্দমার ব্যয় প্রদানের আদেশ দিতে; এবং
ঙ. আদালতের বিবেচনা মতে অন্যান্য প্রতিকার যা বাদী আইনগত ও ইকুইটি মতে পাওয়ার হকদার তা বাদীকে প্রদানের আদেশ দিতে একান্ত মর্জি হয়।
এবং
আদালতের এমন আদেশে বাদী পক্ষ চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।
অদ্য তাং
তফসিল
মৌজা- কুলগাঁও, থানা: বায়েজিদ বোস্তামী, জেলা-চট্টগ্রাম, খতিয়ার নম্বর: ২০, দাগ নং-২১০৪, আর, এস জরিপের ১১৭৮/১৩৭০
চৌহদ্দি
উত্তরে- বাদীর ভাইয়ের বাড়ী
দক্ষিণে-উক্ত দাগের বাকী জমি।
পূর্বে-সরকারী নালা।
পশ্চিমে- আজিজ ও শফির বাড়ী এবং অন্যান্য।
সত্যপাঠ
অত্র আরজিতে যা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে তা আমার বিশ্বাস মতে সত্য ও শুদ্ধ জেনে অদ্য ইংরেজি ০৭/০৮/২০০৬ তারিখে সকাল ১০.৩০ ঘটিকার সময় বিজ্ঞ আইনজীবীর চেম্বার বসে অত্র সত্যপাঠে নিজ নাম স্বাক্ষর করলাম।
সত্যপাঠকারীর স্বাক্ষর
তাং