- Get link
- X
- Other Apps
চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার জন্য আরজি মুসাবিদা বা ড্রাফটিং
প্রশ্ন: আপনার মক্কেলের প্রতিবেশী আপনার মক্কেলের বাড়ীর পূর্ব পার্শ্বে রাজউক এর নিয়ম মাফিক প্রয়োজনীয় জায়গা না ছাড়িয়া প্রাচীর নির্মাণ করে এবং দেওয়াল এত উঁচু করে যে, আপনার মক্কেলের বাড়ীতে আলো প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। আপনার মক্কেল দেওয়ানী আদালত হতে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের কোন ধারায় কি প্রতিকার পাইতে পারেন ? সংক্ষেপে একটি আরজি মুসাবিদা করুন। মুসাবিদার জন্য আপনি বাদী বিবাদীর নাম ঠিকানা ইচ্ছা মত বর্ণনা করিতে পারেন।
এই প্রশ্নটি বার কাউন্সিল পরীক্ষা, ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০০৮ এবং ৮ জুন ২০১২ সালে এসেছিল।
পরামর্শ:
রাজউকের নিয়ম না মেনে উঁচু দেওয়াল নির্মাণ করায় মক্কেলের বাড়ীতে আলো প্রবেশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে বাদীর জন্য প্রতিকার হতে পারে বিবাদী যে দেওয়াল নির্মাণ করেছে তা ভেঙ্গে ফেলা এবং বাদীর বাড়িতে আলো প্রবেশের ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ বিবাদীকে উক্ত উঁচু প্রাচীর এমনভাবে ভেঙ্গে ফেলার আদেশের জন্য আদালতের নিকট আবেদন করতে হবে যেন বাদী তার বাড়িতে আলো পায়। এই ক্ষেত্রে বাদীকে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫৫ ধারায় বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞার মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে। কারণ বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে কোন ব্যক্তির যে দায়িত্ব পালনে তার বাধ্যবধকতা আছে তা পালনের আদেশ দিবে। এই ধারার প্রথম উদাহরণে বলা হয়েছে 'ক' একটি নতুন বিল্ডিং তৈরী করে 'খ' এর আলো বাতাসের অধিকার ব্যহত করেছে যা 'খ' তামাদি আইনের অধীন সুখাধিকার হিসেবে অর্জন করেছে। 'খ' নিষেধাজ্ঞা দ্বারা বিবাদীকে বিল্ডিং তৈরী হতে বিরত থাকা ছাড়াও বিল্ডিং এর যতটুকু অংশ আলো বাতাসের জন্য বাধা ততোটুকু ভাঙ্গার আদেশ নিতে পারে। এই ক্ষেত্রে বাদীকে প্রমাণ করতে হবে যে, উক্ত প্রাচীর দিয়ে আলো পাওয়ার অধিকার তার আছে। অর্থাৎ সর্বনিম্ন ২০ বছর ধরে তিনি আলো পাচ্ছেন এবং এটা পাওয়া তার অধিকার। অর্থাৎ উক্ত বিষয়ে তার সুখাধিকার সৃষ্টি হয়েছে। এই ক্ষেত্রে সুখাধিকার আইন: ( The Easement Act) ১৮৮২ এর ২৬ ধারা প্রযোজ্য হবে। যদিও সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫৫ ধারায় বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু উক্ত ধারা কে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫৪ এবং ৫৬ ধারার বিধানবলীর শর্ত সাপেক্ষ ব্যাখ্যা করতে হবে এবং উক্ত ৫৪ এবং ৫৬ ধারায় উল্লেখিত শর্ত সাপেক্ষে মঞ্জুর করতে হবে। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫৪ ধারা ব্যতীত কোন নিষেধাজ্ঞার মোকদ্দমা চলতে পারে না”। যেমন যেক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পর্যাপ্ত হতে পারে সেক্ষেত্রে আদালত বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করবেনা।
নিচে বাদী পক্ষে এবং বিবাদীর বিপক্ষে বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞার আরজি মুসাবিদা করা হলো।
মোকামঃ সহকারী জজ আদালত ঢাকা
দেঃ মোঃ নং …./২০০৮
আব্দুর রহমান
পিতা: জাহান আলী
পূর্ণ ঠিকানা:
৬৬, সেন্ট্রাল রোড, ধানমণ্ডি, ঢাকা-১২০৫
.........বাদী
বনাম
মো: ইব্রাহিম খলিল
পিতা: মো: কাদের আকন্দ
৬৭, সেন্ট্রাল রোড়, ধানমণ্ডি, ঢাকা-১২০৫
........বিবাদী
বিষয়: বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞার মোকদ্দমা।
মামলার তায়দাদ মূল্য ২০০০ টাকা
বাদী পক্ষে বিনীত নিবেদন এই যে,
১. বাদী নিম্ন বর্ণিত তফসিলভুক্ত সম্পত্তি উত্তরাধিকারসূত্রে মালিক এবং গত ১৯৭৯ সাল হতে বসবাস করে আসছে।
২. বিবাদী এলাকায় একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং বাদীর প্রতিবেশী।
৩. ১৯৮৫ সাল হতে তফসিলে বর্ণিত সম্পত্তিতে বাদী ৪ তলা বিশিষ্ট বাড়ি নির্মাণ করে বসাবাস করে আসছে।
৪. বিবাদী তার সম্পত্তিতে গত ০২-০৩-২০০৮ তারিখে বাড়ী নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
৫. বাদী এবং বিবাদীর উভয়ের সম্পত্তি এবং বসতবাড়ী রাজুকের নিয়ন্ত্রণাধীন।
৬. গত ১৫-০৩-২০০৮ তারিখে বিবাদী বাড়ী নির্মাণের পূর্বে বাড়ীর চারপাশ দিয়ে উঁচু প্রাচীর নির্মাণ করা শুরু করে। এই ক্ষেত্রে রাজউকের নিয়ম না মেনে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। দেওয়াল এতটা উঁচু যে তা বাদীর বাড়িতে আলো প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে।
৭. এই প্রাচীর নির্মাণের ফলে বাদী দীর্ঘ ২৯ বৎসর যাবত যে আলো বাতাসের সুবিধা ভোগ করে আসছে, তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
৮. গত ২৯ বৎসর যাবৎ বাদীর আলো এবং বাতাস ব্যবহার করার যে সুখাধিকার তৈরী হয়েছে, তা বিবাদী কর্তৃক নির্মাণ করা রাজউক আইন বহির্ভূত হবে এবং বাদীর অধিকার ক্ষুণ করবে।
৯. যেহেতু বাদীর এই সুখাধিকার ক্ষুণ করার অধিকার বিবাদীর নেই, তাই বিবাদীকে প্রাচীর ভেঙ্গে বাদীর সুখাধিকার অর্থাৎ আলো বাতাসের অধিকার নিশ্চিত করা অতিব জরুরী। আদালতের চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ একমাত্র বাদীর এই অধিকার নিশ্চিত করতে পারে।
১০. যেহেতু গত ১৫-০৩-২০০৮ তারিখে বিবাদী প্রাচীর নির্মাণ করা শুরু করেছে এবং উক্ত নির্মাণ বাদীর আলো বাতাসের অধিকারকে ক্ষুণ করছে, সুতরাং উক্ত সময় হতে মোকদ্দমার দায়েরের কারণ উদ্ভব হয়েছে।
১১. অত্র মোকদ্দমার বিষয়বস্তু তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি অত্র আদালতের এখতিয়ারাধীন।
১২. যেহেতু ইহা একটি বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা ও চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মোকদ্দমা বিধায় বাদীর প্রার্থীত প্রতিকার নির্ণয়ের কোন মানদণ্ড না থাকায় বাদী উক্ত মোকদ্দমার তায়দাদ ২০০০ টাকা নির্ধারণ করে মূল্যানুপাতিক কোর্ট ফি প্রদানপূর্বক বাদী মোকদ্দমাটি অত্র আদালতে দায়ের করেছে।
অতএব বাদীর প্রার্থনা এই যে,
ক. বিবাদী কর্তৃক বাদীর আলোর অধিকার তথা সুখাধিকারের উপর নির্মিত প্রতিবন্ধকতা তথা দেয়াল যাতে ভেঙ্গে ফেলতে বাধ্য হয় তার জন্য বিবাদীকে নির্দেশ দিয়ে বিবাদীর বিরুদ্ধে বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞার ডিক্রী প্রদান করতে:
খ. বিবাদী তফসিল বর্ণিত সম্পত্তিতে যাহাতে রাজউকের অনুমোদিত প্ল্যান বর্হিভূত ভাবে কোনরুপ নির্মাণ করতে না পারে বা বাদী পক্ষের আলো বাতাসের অধিকারে বিঘ্ন ঘটাতে না পারে তৎমর্মে একটি স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রচার করতে পারে:
গ. বিবাদীকে তার নিজ খরচে উক্ত স্থাপনা অপসরণ করার আদেশ দিতে।
ঘ. অত্র মোকদ্দমার সকল খরচের জন্য বাদীর পক্ষে এবং বিবাদীর বিপক্ষে ডিক্রী দিতে; এবং
ঙ. আইন ও ইক্যুইটি মতে বাদী অন্য যে সকল প্রতিকার পেতে বাদী হকদার তারও ডিক্রী দিতে সদয় মর্জি হয়।
এবং
আদালতের এমন আদেশে বাদী পক্ষ চিরকৃতজ্ঞ থাকবে
অদ্য তাং
তফসিল
জেলা ঢাকা, থানা কলাবাগান, মৌজাঃ সেন্ট্রাল রোড়, খতিয়ানঃ ৪৩, দাগ নং ১২৪, সম্পত্তির পরিমান ৬ শতক।
চৌহদ্দি
উত্তরে: পুকুর.
দক্ষিনে: রাস্তা
পূর্বে: মসজিদ
পশ্চিমে: বিবাদী নিজে
সত্যপাঠ
অত্র আরজিতে যা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে তা আমার বিশ্বাস মতে সত্য ও শুদ্ধ জেনে অদ্য ইংরেজি তারিখে ... ১৮/০৩/২০০৮ সকাল ১০.৩০ ঘটিকার সময় বিজ্ঞ আইনজীবীর চেম্বার বসে অত্র সত্যপাঠে নিজ নাম স্বাক্ষর করলাম।
সত্যপাঠকারীর স্বাক্ষর
তাং