- Get link
- X
- Other Apps
দলিল বাতিলের আরজি মুসাবিদা বা ড্রাফটিং
পরেশের দখলে একখণ্ড জমি ছিল। জমিটি তার পৈত্রিক সম্পত্তি ছিল। সে তাহার প্রতিবেশী দ্বারা জমিটি হতে বেদখল হয়। প্রতিবেশী দাবী করে যে, সে পরেশের নিকট হইতে জমিটি খরিদ করিয়াছে। পরেশের ভাষ্য যে, কবলা দলিলটি ভূয়া। কোন ধরনের মামলা দাখিল করিতে হইবে পরেশকে পরামর্শ দিন এবং যথাযথ আইনের উল্লেখ করিয়া একটি আরজি মুসাবিদা করুন।
এই প্রশ্নটি বার কাউন্সিল পরীক্ষা, ২৭ আগষ্ট ২০০৪ সালে এসেছিল।
আমার মক্কেল পরেশকে যে যে পরামর্শ দিতে পারি:
আলোচ্য ঘটনায় উল্লেখ করা হয়েছে পরেশ তার প্রতিবেশী দ্বারা বেদখল হয়েছে। দখল পুনরুদ্ধারের জন্য পরেশের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের দুইটি ধারায় প্রতিকার আছে।
১. ৮ এবং ৪২ ধারায় স্বত্বসহ দখল পুনরুদ্ধার
২. ৯ ধারায় শুধুমাত্র দখল পুনরুদ্ধার
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ এবং ৪২ ধারায় মোকদ্দমা দায়ের:
নিম্নলিখিত কারণে পরেশের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ এবং ৪২ ধারায় মোকদ্দমা দায়ের করা যুক্তিযুক্ত: পরশ পৈত্রিকভাবে উক্ত সম্পত্তিতে দখলে ছিল। অর্থাৎ পৈত্রিকভাবে পরশ উক্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকার (মালিক) বলে অনুমান করা যায়। সুতরাং মালিকানাসহ দখল পুনরুদ্ধারের জন্য ৮ ধারায় মোকদ্দমা করা উচিত।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ধারায় বলা হয়েছে যে, সুনির্দিষ্ট স্থাবর সম্পত্তির দখলের অধিকারী ব্যক্তি দেওয়ানী কার্যবিধি অনুযায়ী নির্ধারিত পন্থায় তা পুনরুদ্ধার করতে পারে। যদি পরেশ ৮ ধারায় মামলা দায়ের করে তাহলে পরেশকে প্রমাণ করতে হবে যে, উক্ত সম্পত্তিতে তার মালিকানা স্বত্ব ছিল। এই ক্ষেত্রে বেদখল হওয়ার তারিখ হতে ১২ বছরের মধ্যে মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে। তবে এই ক্ষেত্রে ৪২ ধারায় স্বত্ব ঘোষণাসহ মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে। ৮ ধারায় মামলা করলে পরশ সম্পত্তির মালিকানাসহ দখল ফেরত পাবে। যেহেতু পরশ পৈত্রিক সম্পত্তিতে দখলে ছিল, তাই সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ এবং ৪২ ধারায় মোকদ্দমা করে উক্ত সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করা উচিত।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারায় মালিকানা স্বত্ব দাবী এবং দলিল বাধ্যকর না বলে মোকদ্দমা দায়ের:
প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রতিবেশী দাবী করেছে যে, পরেশের পিতার নিকট হতে তিনি জমিটি খরিদ করেছে। অর্থাৎ প্রতিবেশী পরোক্ষভাবে দাবী করছে যে সে ক্রয়সূত্রে উক্ত জমির মালিক। অর্থাৎ প্রতিবেশী পরেশের মালিকানা অস্বীকার করছে। তাই পরশের জন্য এটা উচিত হবে যে, সে যে উক্ত সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারসূত্রে মালিক এই মর্মে আদালতের নিকট ৪২ ধারায় ঘোষণা প্রার্থনা করা। অন্যদিকে পরেশ দাবী করেছে যে দলিলটি ভূয়া। যেহেতু পরেশ উক্ত দলিলেল পক্ষ না, তাই সে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারার অধীন দলিলটি তার উপর বাধ্যকর না এই মর্মে ঘোষণা চেয়ে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে। সুতরাং পরেশ সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ধারায় দখল পুনরুদ্ধারের জন্য এবং ৪২ ধারায় মালিকানা ঘোষণা এবং দলিলটি তার উপর বাধ্য না বলে ঘোষণা চেয়ে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে। নিম্নে পরেশের পক্ষে উপরে উল্লেখিত প্রতিকার চেয়ে আরজি মুসাবিদা করা হলো।
মোকাম: বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, যশোর
দেওয়ানী মোকদ্দমা নং ......./২০০৪
পরেশ বড়ুয়া
পিতা: দিলীপ বড়ুয়া
৯১, লোন অফিস পাড়া, যশোর
..বাদী
বনাম
কামাল
পিতা: জামালউদ্দিন
৬২, লোন অফিস পাড়া, যশোর
..বিবাদী
বিষয়- সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ও ৪২ ধারামতে স্বত্বসহ দখল পুনরুদ্ধারের মোকদ্দমা
মোকদ্দমার তায়দাদ ৩,০০,০০০ টাকা।
বাদী পক্ষে বিনীত নিবেদন এই যে,
১. বাদী বাংলাদেশের একজন স্থায়ী নাগরিক এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অন্য দিকে বিবাদী বিত্তশালী, এলাকার প্রভাবশালী ও দখলবাজ নামে কুখ্যাতি বিশিষ্ট ব্যক্তি।
২. বাদী, পরেশ নিম্নবর্ণিত তফসিলভুক্ত কোতয়ালী থানার লোন অফিসপাড়ার মৌজার ১৭ নং খতিয়ানের ৪২১ নং দাগের ৩৩ শতাংশ সম্পত্তিতে পৈত্রিকসূত্রে মালিক ও দখলদার।
৩. বাদীর নামে উক্ত মৌজায় সিএস এবং এসএ খতিয়ানে উপরোক্ত দাগের জমি সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ হয়ে চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হয়।
৪. উক্ত জমিতে বাদী দখলদার থাকাবস্থায় গত ০২/১০/২০০৪ তারিখে তার প্রতিবেশী, কামাল এলাকার সন্ত্রাসী লোকজন নিয়ে বাদীকে তার দখল থেকে বেদখল করে।
৫. বিবাদী একখানা ভূয়া দলিল দেখিয়ে, উক্ত সম্পত্তি তার বলে দাবী করে এবং সন্ত্রাসী দলবল দিয়ে বাদীকে বেদখল করে।
৬. বাদী পৈত্রিকসূত্রে উক্ত সম্পত্তির অধিকারী এবং সেখানে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে তার পিতার তৈরী পাঁকা বাড়িতে বসবাস করছে।
৭. উক্ত সম্পত্তিতে বিবাদীর কোন দখল নেই, বিবাদী জমি ক্রয়ের যে দলিল দেখিয়েছে তা জাল।
৮. অত্র মোকদ্দমার বিষয়বস্তু অর্থাৎ তফসিলে বর্ণিত সম্পত্তি অত্র আদালতের এখতিয়ারাধীন।
৯. বিবাদীকর্তৃক দাবীকৃত বিক্রয় দলিলটি ০২/০৫/১৯৯০ সালে সম্পদিত বলে গণ্য এবং অরেজিস্ট্রিকৃত।
১০. যেহেতু ০২/১০/২০০৪ তারিখে বিবাদী তার সন্ত্রাসী দলবল নিয়ে বাদীকে বেদখল করেছে এবং তার নিকট একটি ভূয়া বিক্রয় দলিল আছে বলে দাবী করেছে, তাই উক্ত তারিখ হতে মোকদ্দমা দায়েরের কারণ সৃষ্টি হয়েছে। উক্ত সময় হতে বাদী নির্দিষ্ট সময়ে মোকদ্দমা দায়ের করেছে।
১১. অত্র মোকদ্দমাটি মালিকানা স্বত্বসহ ঘোষণামূলক মোকদ্দমা বিধায় মোকদ্দমার সম্পত্তির তায়দাদ মূল্য অনুসারে কোর্ট ফিসহ আরজি দাখিল করা হয়েছে এবং এই মামলা শুনানী ও বিচার করতে অত্র আদালতের এখতিয়ার আছে।
১২. যেহেতু বিরোধীয় সম্পত্তিতে বিবাদীর কোন দখল এবং মালিকানাগত অধিকার বা স্বত্ব নেই এবং যেহেতু বিবাদীর দলিলটি জাল এবং যেহেতু বিবাদী বাদীকে আইন পরিপন্থীভাবে বেদখল করেছে, তাই উক্ত দলিলটি বাদীর উপর বাধ্যকর না এবং সম্পত্তিতে বাদীর স্বত্ব ঘোষণা করে বাদীকে দখল অর্পণ করা অতীব জরুরী। অন্যথায় বাদীর অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
অতএব, বাদীর বিনীত প্রার্থনা এই যে, বিজ্ঞ আদালত
ক. নালিশী সম্পত্তিতে বাদীর স্বত্ব ঘোষণা করতে;
খ. বিবাদী কর্তৃক দাবীকৃত জাল দলিলটি বাদীর উপর বাধ্যকর না মর্মে ঘোষণা করতে;
গ. বাদীকে তার পৈত্রিক সম্পত্তিতে দখল অর্পণ করতে;
ঘ. আইন ও ইক্যুইটি মতে অন্য যে সকল প্রতিকার বাদী পেতে পারে তাকে সেই সকল প্রতিকার দিতে একান্ত মর্জি হয়;
এবং
উক্ত প্রতিকার মঞ্জুর করলে বাদী পক্ষ চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।
তফসিল
জেলা: যশোর, থানা: কোতয়ালী, মৌজা: লোন অফিসপাড়া, খতিয়ান: ১৭, দাগ নং- ৪২১, সম্পত্তির পরিমাণ: ৩৫ শতাংশ।
চৌহদ্দি
উত্তরে: সরকারী রাস্তা;
দক্ষিণে: বসতবাড়ী (৪২৫ দাগ)
পূর্বে: মনোজ মল্লিকের বাড়ী ( ৪৩০ দাগ)
পশ্চিমে: দোকান।
সত্যপাঠ
উপরোক্ত বিবরণ আমার জ্ঞান ও বিশ্বাসমতে সত্য ও সঠিক জেনে নিযুক্ত এ্যাডভোকেট সাহেবের চেম্বারে বসে গত ১১/১১/২০০৪ তারিখে সকাল ১০.০০ নিজ নাম স্বাক্ষর করলাম।
সত্যপাঠকারীর স্বাক্ষর:
তাং