- Get link
- X
- Other Apps
দেওয়ানী মুসাবিদা বা সিভিল ড্রাফটিং।
ড্রাফটিং সম্পর্কিত প্রাথমিক আলোচনা।
মোকদ্দমা দায়ের এবং এখতিয়ার নির্ধারণ।
কিভাবে মোকদ্দমা দায়ের করবেন?
সিভিল ড্রাফটিং এর অর্থ কি?
আরজি এবং পিটিশনের মধ্যে পার্থক্য কি?
সত্যপাঠ এবং হলফনামার ব্যবহারের নিয়ম কি বা সত্যপাঠ এবং হলফনামার মধ্যে পার্থক্য কি?
আরজি মুসাবিদাকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়?
আরজির শিরোনাম কিভাবে লিখতে হয়?
আরজিতে মোকদ্দমার মূল বিবরণ কিভাবে লিখতে হয়?
আরজিতে প্রার্থীত প্রতিকার কিভাবে লিখতে হয়?
আরজির অন্যান্য নিয়ম কি?
ড্রাফটিং সম্পর্কিত প্রাথমিক আলোচনা।
মোকদ্দমা দায়ের এবং এখতিয়ার নির্ধারণ।
কিভাবে মোকদ্দমা দায়ের করবেন?
সিভিল ড্রাফটিং এর অর্থ কি?
আরজি এবং পিটিশনের মধ্যে পার্থক্য কি?
সত্যপাঠ এবং হলফনামার ব্যবহারের নিয়ম কি বা সত্যপাঠ এবং হলফনামার মধ্যে পার্থক্য কি?
আরজি মুসাবিদাকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়?
আরজির শিরোনাম কিভাবে লিখতে হয়?
আরজিতে মোকদ্দমার মূল বিবরণ কিভাবে লিখতে হয়?
আরজিতে প্রার্থীত প্রতিকার কিভাবে লিখতে হয়?
আরজির অন্যান্য নিয়ম কি?
দেওয়ানী মুসাবিদা বা সিভিল ড্রাফটিং
ড্রাফটিং সম্পর্কিত প্রাথমিক আলোচনাঃ
যখন কোন মক্কেল কোন আইনজীবীর নিকট আসে এবং তাকে কোন বিবাদী বা বিবাদীগণের বিরুদ্ধে কোন কারণে মোকদ্দমা দায়ের করতে নির্দেশনা প্রদান করে, তখন উক্ত আইনজীবী বাদীর মামলাটি অধ্যায়ন করবে এবং শুধুমাত্র তিনি নিজে সন্তুষ্ট হওয়ার পর যদি মনে করে যে মোকদ্দমাটি দায়ের করা উচিত, তাহলে তিনি মোকদ্দমাটি দায়ের করতে পারে। এই ক্ষেত্রে দুইটি প্রধান প্রশ্ন আসতে পারে।
১. কোথায় মোকদ্দমা দায়ের করবেন?
২. কিভাবে মোকদ্দমা দায়ের করবেন?
মোকদ্দমা দায়ের এবং এখতিয়ার নির্ধারণ:
যদি মামলাটি দেওয়ানী মোকদ্দমা হয়, তাহলে তিনি মোকদ্দমাটি দেওয়ানী আদালতে দায়ের করবে। কারণ দেওয়ানী কার্যবিধির ৯ ধারায় বলা হয়েছে আইন দ্বারা বারিত না হলে দেওয়ানী আদালতের সকল প্রকার দেওয়ানী মামলার বিচার করার এখতিয়ার আছে। পরবর্তীতে এ্যাডভোকেটকে নির্ধারণ করতে হবে কোন অঞ্চলের কোন দেওয়ানী আদালতে মোকদ্দমাটি দায়ের করতে হবে। অর্থাৎ আদালতের আর্থিক এখতিয়ার নির্ধারণ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে দেওয়ানী কার্যবিধির ১৬ থেকে ২০ ধারার বিধান অনুযায়ী মোকদ্দমাটি কোন দেওয়ানী আদালতের আঞ্চলিক এখতিয়ারাধীন তা নির্ধারণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে মোকদ্দমার বিষয়বস্তুর অবস্থান, বাদী এবং বিবাদীর বসবাসের স্থান এবং মোকদ্দমার কারণ কোথায় উৎপত্তি হয়েছে ইত্যাদি বিবেচনায় নিতে হবে। আঞ্চলিক এখতিয়ার নির্ধারণ করার পর (মনে করি মোকদ্দমাটি ঢাকা জেলা জজের আঞ্চলিক এখতিয়ারাধীন), মোকদ্দমার তায়দাদ বা মূল্যমান অনুযায়ী আদি এখতিয়ার সম্পন্ন কোন আদালতে (যুগ্ম জেলা জজ, সিনিয়র সহকারী জজ এবং সহকারী জজ) দায়ের করতে হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। দেওয়ানী কার্যবিধির ১৫ ধারায় বলা হয়েছে বিচার করার এখতিয়ার সম্পন্ন সর্বনিম্ন আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে। The Civil Courts (Amendment) Act, 2021 অনুসারে, যে সকল মোকদ্দমার মূল্যমান ১৫ লক্ষ টাকা বা এর কম, সেই সকল মোকদ্দমা সহকারী জজের নিকট দায়ের করতে হবে এবং যে সকল মোকদ্দমার মূল্যমান ২৫ লক্ষ টাকা বা এর কম, সেই সকল মোকদ্দমা সিনিয়র সহকারী জজের নিকট দায়ের করতে হবে এবং যে সকল মোকদ্দমার মূল্যমান ২৫ লক্ষ টাকা থেকে সীমাহীন, সেই সকল মোকদ্দমা যুগ্ম জেলা জজ আদালতে দায়ের করতে হবে। আদালতের এখতিয়ার নির্ধারণ করার জন্য আইনজীবী বাদীর নিকট হতে সকল প্রয়োজনীয় তথ্য গ্রহণ করবে। এ্যাডভোকেট অবশ্যই সন্তুষ্ট হবে যে, মোকদ্দমাটি আইন দ্বারা বারিত কিনা, মোকদ্দমার সকল প্রয়োজনীয় পক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে কিনা ইত্যাদি।
কিভাবে মোকদ্দমা দায়ের করবেন?
দেওয়ানী কার্যবিধির ২৬ ধারায় বলা হয়েছে, আরজি দাখিলের মাধ্যমে প্রত্যেক মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে। আরজি হলো এমন একটি দলিল যেটা উপস্থাপনের মাধ্যমে দেওয়ানী মোকদ্দমা দায়ের করা হয়। সুতরাং আইনজীবীর জন্য পরবর্তী করণীয় হলো আরজি প্রস্তুত (ড্রাফট/খসড়া/ মুসাবিদা) করা। আরজি প্রস্তুত বা ড্রাফটিং বা মুসাবিদা করার অর্থ হলো আরজিতে যে সকল বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন সেই সকল বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে আরজি লেখা। দেওয়ানী কার্যবিধির ৬ এবং ৭ নং আদেশে যে সকল নিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেই সকল নিয়ম অনুযায়ী আরজি লিখতে হবে। কারণ এই সকল নিয়ম পালন না করে আরজি লিখলে তা আদালতে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে এবং বাদী তার প্রার্থীত প্রতিকার পেতে নানা আইনগত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে পারে এমনকি বঞ্চিত হতে পারে। অর্থাৎ আরজি লেখা বা ড্রাফট বা মুসাবিদা করা একটি বিশেষ জ্ঞান এবং দক্ষতার বিষয়। একইভাবে বলা যায়, আপনি যদি বিবাদী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে বিবাদী পক্ষে আপনাকে লিখিত জবাব দাখিল করতে হবে। এই ক্ষেত্রেও আইনজীবীকে দেওয়ানী কার্যবিধির ৬ এবং ৭ নং আদেশে যে সকল নিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেই সকল নিয়ম মেনে লিখিত জবাব প্রস্তুত (ড্রাফট) করতে হবে। অর্থাৎ লিখিত জবাবের ক্ষেত্রেও একজন আইনজীবীর বিশেষ জ্ঞান এবং দক্ষতা থাকা প্রয়োজন । অন্যদিকে মোকদ্দমার বিভিন্ন পর্যায়ে বাদী এবং বিবাদী পক্ষের আইনজীবী বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে দরখাস্ত (পিটিশন) দায়ের করে। যেমন বাদীর অনুপস্থিতির কারণে আদালত মামলা খারিজ করে দিলে, বাদী পক্ষের আইনজীবী উক্ত খারিজ আদেশ রদ করার জন্য দরখাস্ত (পিটিশন) দায়ের করতে পারে। আবার বিবাদী অনুপস্থিত থাকার কারণে আদালত একতরফা ডিক্রী দিলে, বিবাদী পক্ষের আইনজীবী উক্ত ডিক্রী বাতিলের জন্য দরখাস্ত (পিটিশন) দায়ের করতে পারে। অর্থাৎ বাদী এবং বিবাদী উভয় পক্ষের আইনজীবীকে দেওয়ানী কার্যবিধির বিধি বিধান অনুযায়ী পিটিশন লিখতে হবে বা ড্রাফট বা মুসাবিদা করতে হবে। সুতরাং পিটিশন মুসাবিদা করার ক্ষেত্রে একজন আইনজীবীর বিশেষ জ্ঞান এবং দক্ষতা থাকা প্রয়োজন ।
সিভিল ড্রাফটিং এর অর্থ কি?
আরজি, লিখিত জবাব এবং বিভিন্ন প্রকার পিটিশন বা দরখাস্ত লেখা বা মুসাবিদা করা বা প্রস্তুত করাকে দেওয়ানী মামলা সংক্রান্ত ড্রাফটিং বলা হয় ।
আরজি এবং পিটিশনের মধ্যে পার্থক্য কি?
আরজি এবং পিটিশনের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো আরজি দাখিলের মাধ্যমে মূল মোকদ্দমা দায়ের করা হয় কিন্তু পিটিশনের মাধ্যমে মোকদ্দমার বিভিন্ন পর্যায়ে পক্ষদ্বয় মামলা সংক্রান্ত বিভিন্ন আদেশ প্রার্থনা করে। ভিন্ন রূপ কিছু না থাকলে আরজিতে যে বিষয়ে প্রতিকার প্রার্থনা করা হয়, আদালত উক্ত বিষয়ে ডিক্রী দিয়ে থাকে। কিন্তু পিটিশনের উপর সিদ্ধান্ত আদেশ হিসেবে গণ্য হয়। আরজিতে বাদী কর্তৃক সত্যপাঠ বা Verification দিতে হয় কিন্তু পিটিশন যে পক্ষ দায়ের করে উক্ত পক্ষ হলফনামা বা Affidavit প্রদান করে। অর্থাৎ আরজিতে সত্যপাঠ (Verification) ব্যবহার করতে হয় কিন্তু পিটিশনে হলফনামা (Affidavit) ব্যবহার করতে হয়। আরজি বাদী পক্ষের আইনজীবী কর্তৃক দায়ের করা হয় কিন্তু পিটিশন বাদী এবং বিবাদী উভয় পক্ষ কর্তৃক দায়ের করা হয়।
সত্যপাঠ এবং হলফনামার ব্যবহারের নিয়ম কি বা সত্যপাঠ এবং হলফনামার মধ্যে পার্থক্য কি?
১. সত্যপাঠ ব্যবহার করা হয় আরজি বা লিখিত জবাবে। আরজির ক্ষেত্রে মোকদ্দমার বাদী এবং লিখিত জবাবের ক্ষেত্রে বিবাদী বা আদালতের সন্তুষ্টি মতে যে ব্যক্তি মোকদ্দমার বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানে বলে মনে করা হয়, সে সত্যপাঠ করবে।
২. হলফনামা ব্যবহার করা হয় পিটিশনে। যে পক্ষ পিটিশন দায়ের করে সেই পক্ষ হলফনামা প্রদান করে। হলফনামার ক্ষেত্রে আইনজীবী পিটিশনার বা দরখাস্তকারীকে সনাক্ত করবে এবং সেই মর্মে স্বাক্ষর করবে। এরপর হলফকারী আদালতের সেরেস্তাদার তথা হলফ পরিচালনাকারী (হলফনামা কমিশনার) এর নিকট উপস্থিত হতে হয় হলফনামায় স্বাক্ষর করবে। তারপর সেরেস্তাদার হলফনামায় স্বাক্ষর এবং সীল দিয়ে হলফনামা সম্পন্ন করবে।
(সিভিল ড্রাফটিং) আরজি মুসাবিদাকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়?
(সিভিল ড্রাফটিং) আরজি মুসাবিদা কে প্রধানত চার স্তরে ভাগ করা যায়।
১.শিরোনাম
২. মোকদ্দমার মূল বিবরণ
৩. প্রার্থীত প্রতিকার
৪. অন্যান্য নিয়ম
আরজির শিরোনাম কিভাবে লিখতে হয়?
১. আরজির শীর্ষে যে আদালতে আরজিটি দাখিল করা হচ্ছে, সেই আদালতের নাম লিখতে হবে।
২. মোকদ্দমা নম্বর
৩. বাদী এবং বিবাদীর বিবরণ। এই ক্ষেত্রে তাদের নাম, পিতা-মাতার নাম, এবং ঠিকানা লিখতে হবে।
৪. তাদের বিবরণের সাথে মোকদ্দমায় তাদের অবস্থা কি তা উল্লেখ করতে হবে। যেমন বিবাদী যদি পিটিশন দাখিল করে, তাহলে বিবাদীকে দরখাস্তকারী হিসেবে উল্লেখ করতে হবে।
৫. মামলার শিরোনাম লিখতে হবে।
আরজিতে মোকদ্দমার মূল বিবরণ কিভাবে লিখতে হয়?
মোকদ্দমার মূল বিবরণ আরজির মূল অংশ। এখানে নিম্নলিখিত বিষয় উল্লেখ করতে হবে:
১. যে সকল ঘটনা মোকদ্দমার উৎপত্তির কারণ সেই সকল বিষয় উল্লেখ করতে হবে।
২. বিরোধীয় বিষয়ে আদালতের আর্থিক এবং আঞ্চলিক এখতিয়ার আছে তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
৩. আদালতের আর্থিক এখতিয়ার নির্ধারণে এবং মোকদ্দমার কোর্ট ফি নির্ধারণে মোকদ্দমার বিষয়বস্তুরমূল্যমান অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। স্থাবর সম্পত্তি নিয়ে মোকদ্দমা হলে, সম্পত্তিটি কোথায় অবস্থিত এবং সম্পত্তিটি সনাক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় বিবরণ যেমন চৌহদ্দি উল্লেখ করতে হবে। যদি মোকদ্দমাটি অর্থ আদায়ের মোকদ্দমা হয়, তাহলে দাবীকৃত অর্থের পরিমাণ সুনির্দিষ্টভাবে লিখতে হবে।
৪. মোকদ্দমা উৎপত্তির কারণ বা কজ অব একশন কখন হয়েছে তা মোকদ্দমার তামাদির মেয়াদ নির্ধারণে উল্লেখ করতে হবে।
আরজিতে প্রার্থীত প্রতিকার কিভাবে লিখতে হয়?
বাদী তার আরজিতে প্রার্থীত প্রতিকার অবশ্যই সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করবে। বাদী একই কারণে এক বা একাধিক প্রতিকার প্রার্থনা করতে পারে। সেই ক্ষেত্রে বাদীকে অবশ্যই সকল বা বিকল্পভাবে প্রতিকারগুলো আরজিতে উল্লেখ করতে হবে।
আরজির অন্যান্য নিয়ম কি?
১. বাদী বা মোকদ্দমার বিষয়বস্তুর সাথে পরিচিত ব্যক্তি সত্যপাঠ করবে এবং কোন তারিখে ও কোথায় স্বাক্ষর করেছে তা উল্লেখ করবে।
২. আরজি বাদী এবং তার আইনজীবী কর্তৃক স্বাক্ষরিত হবে।
৩. স্থাবর সম্পত্তি নিয়ে মোকদ্দমাটি হলে আরজিতে সম্পত্তির তফসিল এবং চৌহদ্দি দিতে হবে।
টপিকস
দেওয়ানী মুসাবিদা বা সিভিল ড্রাফটিং। ড্রাফটিং সম্পর্কিত প্রাথমিক আলোচনা। মোকদ্দমা দায়ের এবং এখতিয়ার নির্ধারণ। কিভাবে মোকদ্দমা দায়ের করবেন? সিভিল ড্রাফটিং এর অর্থ কি? আরজি এবং পিটিশনের মধ্যে পার্থক্য কি? সত্যপাঠ এবং হলফনামার ব্যবহারের নিয়ম কি বা সত্যপাঠ এবং হলফনামার মধ্যে পার্থক্য কি? আরজি মুসাবিদাকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়? আরজির শিরোনাম কিভাবে লিখতে হয়? আরজিতে মোকদ্দমার মূল বিবরণ কিভাবে লিখতে হয়? আরজিতে প্রার্থীত প্রতিকার কিভাবে লিখতে হয়? আরজির অন্যান্য নিয়ম কি?
ইউটিউব ভিডিও - দেওয়ানী মুসাবিদা ড্রাফটিং সম্পর্কিত প্রাথমিক আলোচনা Civil Drafting