- Get link
- X
- Other Apps
রায়ের পূর্বে সম্পত্তি ক্রোক এর দরখাস্ত মুসাবিদা
প্রশ্ন: একটি মামলার বাদী আপনার মক্কেল। তিনি আপনাকে পরামর্শ দেন যে, রায়ের পূর্বে বিবাদীর সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ হওয়া দরকার। আপনার মক্কেল তার পরামর্শের সমর্থনে যুক্তি প্রদর্শন করে। আপনিও মনে করেন যে, ক্রোক আদেশের জন্য আবেদন করা যায়। বিবাদীর সম্পত্তি রায়ের আগে ক্রোকের আদেশ প্রার্থনা করে একটি দরখাস্ত মুসাবিদা করুন। উপরোক্ত মোকদ্দমায় আপনার আবেদনের সমর্থনে আদালতে কি কি কারণ প্রদর্শন করবেন? এই প্রশ্নটি বার কাউন্সিল পরীক্ষা, ১০ অক্টোবর ২০০৩ এবং ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০০৮ এবং ২২ এপ্রিল ২০১১ সালে এসেছিল।
অথবা:
প্রশ্ন: করিমের পক্ষে রহিমের বিরুদ্ধে ১০ লক্ষ টাকা আদায়ের জন্য ঢাকার ১ম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে একটি মানি স্যুট দায়ের করিয়াছেন। ইতোমধ্যে জানিতে পারিলেন যে, রহিম তাহার একমাত্র নিজস্ব ৩ কাঠা সম্পত্তি হস্তান্তর করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছেন এবং ঐ জমি হস্তান্তর হইলে টাকা আদায় করিবার জন্য কোন উৎস আর বিদ্যমান থাকে না। ভবিষ্যতে মানি স্যুটের ডিক্রীর টাকা আদায় নিশ্চিত করার জন্য আইনগতভাবে কি পন্থা গ্রহণ করা উচিত? সেই বিষয়ে একটি আবেদনের মুসাবিদা করুন। এই প্রশ্নটি বার কাউন্সিল পরীক্ষা, ১৫ জুন ২০০১ এবং ০৮ মার্চ ২০০২, এবং ১৮ অক্টোবর ২০০২ সালে এসেছিল।
(এই দুইটি প্রশ্নের উত্তর একই। শুধুমাত্র নামগত পার্থক্য রয়েছে।)
রায়ের পূর্বে কোন সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ পেতে আদালতে যে সকল কারণ প্রদর্শন করবো:
কি কি কারণে আদালত রায়ের পূর্বে কোন সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিতে পারে তা দেওয়ানী কার্যবিধির ৩৮ আদেশের ৫ বিধি উল্লেখ করা হয়েছে। ৩৮ আদেশের ৬(১) বিধির অধীন আদালত রায়ের পূর্বে সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিতে পারে। মোকদ্দমার যে কোনো পর্যায়ে, আদালত বিবাদীকে জামানত অথবা সম্পত্তি হস্তান্তর অথবা তার সমপরিমাণ অর্থ দিতে আদেশ দিতে পারে যদি বিবাদী তার বিরুদ্ধে জারিকৃত ডিক্রি জারিকরণে বাধাদান বা বিলম্বিত করার উদ্দেশ্যে
১. তার সম্পত্তির সমগ্র বা কোন অংশ হস্তান্তর করতে উপক্রম করেছে:
২. তার সমস্ত সম্পত্তি বা উহার কোনো অংশ আদালতের এখতিয়ারভুক্ত এলাকার সীমানা হতে অপসারণের উপক্রম করেছে;
সেই ক্ষেত্রে আদালত বিবাদীকে নির্দেশ দিতে পারে-
I. আদালতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জামানত হিসাবে দাখিল করার জন্য; বা
II. উক্ত সম্পত্তি বা উহার মূল্য বা ডিক্রি পরিশোধ হওয়ার মতো উপযুক্ত অংশ আদালতের এখতিয়ারে ন্যস্ত করার জন্য; বা
III. বিবাদী কেন জামানত দাখিল করবেনা, উহার কারণ দর্শাতে হাজির হওয়ার জন্য।
যেক্ষেত্রে বিবাদী নির্ধারিত সময়ে কেন সে জামানত দাখিল করবে না তার কারণ দর্শাতে ব্যর্থ হয় বা যদি প্রয়োজনীয় জামানত দাখিল করতে ব্যর্থ হয়, তখন আদালত উল্লেখিত সম্পত্তি রায় ঘোষণার পূর্বে ক্রোকের আদেশ দিতে পারে। বিবাদী কারণ দর্শালে বা প্রয়োজনীয় জামানত জমা দিলে বা মোকদ্দমাটি খারিজ হয়ে গেলে আদালত ক্রোক আদেশ প্রত্যাহার করবে। সুতরাং রায়ের পূর্বে ক্রোক আদেশ এর জন্য যুক্তি দেখাতে হবে যে-
১. বিবাদী বাদীর পাওনা বা মোকদ্দমার ডিক্রী বাস্তবায়নে বাধা দেওয়ার জন্য তার সম্পত্তি বা তার কোন অংশ হস্তান্তর করার প্রস্তুতি নিয়েছে বা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
২. এমন সম্পত্তি হস্তান্তর করা হলে আদালতের ডিক্রী বাস্তবায়ন করা অসম্ভব হতে পারে।
৩. উক্ত সম্পত্তি হস্তান্তর অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে করা হচ্ছে।
৪. এটা করা হলে বাদীর অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে।
৫. বাদীর দাবী বিবাদীর সম্পত্তি হতে আদায়যোগ্য।
মোকাম: ১ম যুগ্ম জেলা জজ আদালত, ঢাকা
সূত্র: অর্থ মোকদ্দমা নং: ২০/২০১১
করিম
পিতা: মো: জাহান আলী
৬৬/এ, মতিঝিল, ঢাকা
.....বাদী (দরখাস্তকারী)
বনাম
রহিম
পিতা: মো: মোস্তাফিজ সরদার
১২৫, কলাবাগান, ধানমণ্ডি ঢাকা-১২০৬
.......বিবাদী
বিষয়: দেওয়ানী কার্যবিধি ১৯০৮-এর ৩৮ আদেশের ৬(১) বিধি অনুযায়ী বিবাদীর সম্পত্তি রায়ের পূর্বে ক্রোকাদেশের জন্য বাদীর আবেদন।
বাদী পক্ষে প্রার্থনা এই যে,
১. অত্র মোকদ্দমার বাদী এবং বিবাদী উভয় ব্যবসায়ী। বিবাদী বাদীর নিকট হতে গত ২২/০২/২০১০ ইং তারিখে ৩০,০০,০০০/- টাকার কম্পিউটার সামগ্রী ক্রয় করে এবং বাদী কে দুইটি চেকের মাধমে ২০,০০০০০/- টাকা প্রদান করে। বাকী টাকা বিবাদী ১০/১০/২০১০ ইং তারিখে প্রদান করতে চায়।
২. বাদী উক্ত সময়ে টাকা চাইলে, বিবাদী পুনরায় সময় গ্রহণ করে। বাদী সময় দেওয়ার পরও বিবাদী টাকা পরিশোধ করতে পারেনি এবং টাকা না দেওয়ার জন্য বিভিন্ন তালবাহানা করতে থাকে।
৩. উক্ত প্রেক্ষাপটে বাদী বিবাদীর বিরুদ্ধে ১০,০০০,০০/- (দশ লক্ষ টাকা) আদায়ের জন্য অত্র আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করে। বর্তমানে মোকদ্দমাটি চূড়ান্ত শুনানীর পর্যায়ে আছে।
৪. বাদী ডিক্রী তার অনুকূলে পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সকল সাক্ষ্য প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করেছে এবং ডিক্রী বাদী পক্ষে হবে বলে আশাবাদী।
৫. অত্র মোকদ্দমার বিবাদী তার পাওনাদার বাদীকে পাওনা পরিশোধ না করার অসৎ উদ্দেশ্যে এবং পাওনাদারকে প্রতারিত করার জন্য, বিবাদী নিম্ন তফসিলভুক্ত তার একমাত্র ৩ কাঠা সম্পত্তি হস্তান্তর করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
৬. ইতোমধ্যে বিবাদী উক্ত সম্পত্তি বিক্রয়ের জন্য ক্রেতার নিকট হতে কিছু টাকা অগ্রিম গ্রহণ করেছে বলে বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে।
৭. যেহেতু উক্ত ৩ (তিন) কাঠা সম্পত্তি বিবাদীর একমাত্র সম্পত্তি এবং বাদী ডিক্রী পেলে উক্ত সম্পত্তি হতে ডিক্রীর অর্থ আদায়যোগ্য, সুতরাং বিবাদী যদি উক্ত সম্পত্তি হস্তান্তর করে ফেলে, তাহলে মোকদ্দমায় বাদী পক্ষ ডিক্রীপ্রাপ্ত হলে উক্ত ডিক্রী বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।
৮. যেহেতু উক্ত সম্পত্তি হস্তান্তর করার বিবাদীর উদ্দেশ্য হলো বাদীকে তার পাওনা টাকা না দেওয়া, বাদী পক্ষে আদালত ডিক্রী দিলে উক্ত ডিক্রী জারী বাধাগ্রস্থ করা এবং বাদীকে অপূরণীয় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন করা, তাই বিবাদী যেন তার নিজস্ব ৩ (তিন) কাঠা সম্পত্তি হস্তান্তর করতে না পারে, সেই ব্যবস্থা গ্রহণে উক্ত ৩ (তিন) কাঠা সম্পত্তি রায়ের পূর্বে ক্রোক আদেশ দেওয়া আবশ্যক।
অতএব, আদালতের নিকট বাদী পক্ষের প্রার্থনা এই যে, উপরে উল্লেখিত প্রেক্ষাপট, বাদীর আর্থিক ক্ষতি এবং ভবিষ্যৎ এ মোকদ্দমার রায় বাস্তবায়নের যে জটিলতা হতে পারে তা বিবেচনা করে, ন্যায় বিচারের স্বার্থে বিবাদীর উক্ত ৩ (তিন) কাঠা সম্পত্তিটি উক্ত মোকদ্দমার রায় ঘোষণার পূর্বে ক্রোক আদেশ দিতে আদালতের একান্ত মর্জি হয়।
এবং
আদালতের এমন আদেশের জন্য বাদী পক্ষ চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।
অদ্য তারিখ
তফসিল
জেলা: ঢাকা, থানা: কলাবাগান, মৌজা: গ্রীন রোড়, দাগ নং: ৫৫, আর এস খতিয়ান নং: ১০২৪, জমির পরিমাণ: ৩ কাঠা।
হলফনামা
আমি করিম, পিতা: মো: জাহান আলী, ৬৬/এ, মতিঝিল, থানা: মতিঝিল, জেলা: ঢাকা, পেশা: ব্যবসা, বয়স: ৫০, ধর্ম: ইসলাম, জাতীয়তা: জন্মসূত্রে বাংলাদেশী, জাতীয় পরিচয়পত্র নং....এই মর্মে শপথপূর্বক ঘোষণা করছি যে,
১. আমি অত্র মামলার বাদী এবং তদবিরকার।
২. আমি অত্র মোকদ্দমার বিষয়বস্তু জানি এবং আমি দরখাস্তটি দায়ের করছি এবং অত্র হলফনামা সম্পাদন করতে সক্ষম।
৩. অত্র দরখাস্তের বিবরণসমূহ আমার জানা এবং আমার জ্ঞান মতে সত্য এবং সঠিক।
অত্র হলফনামা ও দরখাস্তের বিবরণ আমার জ্ঞান এবং বিশ্বাসমতে সঠিক এবং সত্য জেনে আমি অত্র হলফনামায় ০৫/০২/২০১১ ইং তারিখে সকাল ১০.০০ ঘটিকায় আদালতের হলফনাম পরিচালনাকারী কর্মকর্তার সামনে উপস্থিত হয়ে নিজ নাম স্বাক্ষর করলাম।
হলফকারীর স্বাক্ষর:
তাং-
হলফকারী আমার পরিচিত এবং তিনি আমার সামনে অত্র হলফনামায় তার নিজ নাম স্বাক্ষর করেছে। আমি তাকে সনাক্ত করলাম।
-এ্যাডভোকেট
অদ্য তাং ০৫/০২/২০১১, হলফকারী আমার সামনে অত্র হলফনামায় তার নিজ নাম দন্তখত করেছে।
হলফনামা পরিচালনাকারী,
হলফনামা কমিশনারের দস্তখত এবং সীল।
হলফনামা কমিশনারের দস্তখত এবং সীল।