- Get link
- X
- Other Apps
আদালত কি কি বিষয়ের অস্তিত্ব অনুমান করতে পারে?
প্রতিবন্ধক বা স্বকার্যজনিত বাধা বা Estoppel কি?
সাক্ষ্য আইনের এস্টোপেল নীতির শর্তসমূহ কি কি?
কোন ক্ষেত্রে এস্টোপেল নীতির প্রয়োগ করা যেতে পারে?
বিল অব এক্সচেঞ্চ বা বিনিময় বিলের ক্ষেত্রে এস্টোপেল কি?
প্রতিবন্ধক বা স্বকার্যজনিত বাধা বা Estoppel কি?
সাক্ষ্য আইনের এস্টোপেল নীতির শর্তসমূহ কি কি?
কোন ক্ষেত্রে এস্টোপেল নীতির প্রয়োগ করা যেতে পারে?
বিল অব এক্সচেঞ্চ বা বিনিময় বিলের ক্ষেত্রে এস্টোপেল কি?
আদালত কি কি বিষয়ের অস্তিত্ব অনুমান করতে পারে?
সাক্ষ্য আইনের ১১৪ ধারায় ঘটনা সম্পর্কিত অনুমান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এটা খণ্ডনযোগ্য অনুমান। সাক্ষ্য আইনের ১১৪ ধারায় উল্লেখিত ৯ টি ক্ষেত্রে ঘটনার অস্তিত্ব আদালত অনুমান করতে পারে। আদালত অনুমান করতে পারে যে,
ক. চুরির অব্যবহিত পরই চোরাই মাল যে লোকের দখলে থাকে, সে যদি তার দখলের কারণ ব্যাখ্যা করতে না পারে, তবে সেই লোক চোর কিংবা চোরাই মাল বলে জানা সত্ত্বেও সে সেটা গ্রহণ করেছে।
খ. সহযোগীর বিবৃতি যদি না গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সহ সমর্থিত হয়, তবে তা বিশ্বাসের অযোগ্য।
গ. স্বীকৃত বা পৃষ্ঠাঙ্কিত বিনিময় পত্র উপযুক্ত প্রতিদানের বিনিময়ে স্বীকৃত বা পৃষ্ঠাঙ্কিত হইয়াছে।
ঘ. যে জিনিস বা জিনিসের যে অবস্থা সাধারণতঃ যে সময়ের পর আর বিদ্যমান থাকে না, তদপেক্ষা সম সময়ের মধ্যে সেই জিনিস বা জিনিসের সেই অবস্থা বিদ্যমান বলে দেখা হয়ে থাকলে, তা বিদ্যমান আছে।
ঙ.বিচার বিষয়ক ও সরকারী কার্যাবলী নিয়মিতভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
চ. নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কার্যের সাধারণ রীতি-নীতি অনুসরণ করা হয়েছে।
ছ. যে সাক্ষ্য হাজির করা যেতো, কিন্তু হাজির করা হয় নাই, তা হাজির হলে যে লোক হাজির হতে দেয়নি, তার বিপক্ষে যেতো।
জ. কোন লোক আইনতঃ যে প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নয়, সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে সে অস্বীকার করলে, সেটার উত্তর সেই লোকের প্রতিকূলে যেতো।
ঝ. যে দলিল দ্বারা একজনের নিকট আরেকজনের দায় সৃষ্টি হয়, সেই দলিল যদি যার দায় সৃষ্টি হয় তার হাতে থাকে তবে দায়ের অবসান ঘটেছে।
প্রতিবন্ধক বা স্বকার্যজনিত বাধা বা Estoppel কি?
সাক্ষ্য আইনের ১১৫ ধারায় স্বকার্যজনিত বাধা বা estoppel কে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। যে নীতি কোন ব্যক্তিকে তার পূর্বে প্রদত্ত বক্তব্যকে অস্বীকার করতে বিরত রাখে তা Estoppel বা স্বকার্যজনিত বাধা নামে পরিচিত। সাক্ষ্য আইনের ১১৫ ধারায় বলা হয়েছে "যখন কোন ব্যক্তি তার ঘোষণা, কাজ বা কার্য বিরতির দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে অন্য ব্যক্তিকে কোন বিষয়কে সত্য বলে বিশ্বাস করায় এবং সেই বিশ্বাস অনুযায়ী কাজ করতে বলে, তখন এই দুই পক্ষের মধ্যে কোন মামলায় প্রথম পক্ষ তার ঘোষণা, কার্য বা কার্য বিরতির বিষয়টি অস্বীকার করতে পারবে না”। উদাহরণ: “ক” স্বেচ্ছায় ঘোষণা দিয়েছে এবং “খ” কে বিশ্বাস করিয়েছে যে “ক” একটি জমির মালিক এবং “খ” কে উক্ত জমি কিনতে ও মূল্য দিতে প্রলুব্ধ করেছে। পরবর্তীতে “ক” ঐ জমিতে স্বত্ব অর্জন করে। ঘোষণা দেওয়ার সময় তার অর্থাৎ “ক” এর ঐ জমিতে স্বত্ত্ব ছিল না এই অজুহাতে “ক” বিক্রয় নাকচ করার চেষ্টা করে। এই ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইনের ১১৫ ধারা অনুযায়ী “ক” তার ঘোষণা অর্থাৎ বিক্রয়ের সময় তার জমিতে স্বত্ব ছিল না বলে অস্বীকার করতে পারবে না এবং তাকে তা প্রমাণ করতে দেওয়া হবে না। স্বকার্যজনিত বাধা হলো সাক্ষ্য আইনের নিয়ম। সাক্ষ্য আইনের স্বকার্যজনিত বাধার নীতি দেওয়ানী কার্যক্রমে প্রযোজ্য। ফৌজদারী কার্যক্রমে এর কোন প্রয়োগ নেই। স্বকার্যজনিত বাধা মোকদ্দমার পক্ষগণ এবং মোকদ্দমার পক্ষগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণের প্রতিনিধিদের উপর বাধ্যকর। সাক্ষ্য আইনে এটা স্বীকৃত নীতি যে, স্বকার্যজনিত বাধা আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইন বা বিধিবদ্ধ আইনের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হতে পারে না।
কোন ক্ষেত্রে এস্টোপেল নীতির প্রয়োগ করা যেতে পারে?
সাক্ষ্য আইনের ১১৬ ধারা নিম্নলিখিত দুইটি ক্ষেত্রে এস্টোপেল নীতির প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করেছে
১. ভাড়াটিয়া (Tenant) এবং মালিক (Landlord) এর মধ্যে এস্টোপেল এবং
২. অনুমতিপ্ৰাপক (Licensee) এবং অনুমতিদাতার (Licensor) মধ্যে এস্টোপেল।
এই দুইটি এস্টোপেল চুক্তিমূলে এস্টোপেল এর উদাহরণ। ভাড়াটিয়া এবং তার মালিকের মধ্যেকার সম্পাদিত চুক্তির উপর ভাড়াটিয়ার এস্টোপেল প্রতিষ্ঠিত। এটা হলো চুক্তিমূলে এস্টোপেল এর বড় উদাহরণ। ভাড়াটিয়া এবং মালিকের মধ্যে চুক্তি হলো ভাড়ার জন্য অনুমতিপ্রাপক বা Licensee) এবং অনুমতিদাতার বা Licensor এর মধ্যে চুক্তি হলো স্থাবর সম্পত্তি ব্যবহার এবং দখল সংক্রান্ত চুক্তি।
১১৬ ধারা অনুযায়ী, ভাড়াটিয়া তার ভাড়াটিয়া বা প্রজাস্বত্ব সৃষ্টির সময়ে মালিকের কোনো স্বত্ব থাকা অস্বীকার করতে পারবেনা। ভাড়া পরিশোধ করে যখন ভাড়াটিয়া ভাড়া দেওয়া প্রাঙ্গনে দখলে থাকে, তখন ভাড়াটিয়া তার কার্য দ্বারা জমির মালিকের মালিকানা স্বত্ব স্বীকার করে এবং এই কারণে সে উক্ত স্বত্ব অস্বীকার করতে পারেনা। জমির মালিক কর্তৃক স্থাবর সম্পত্তি ভাড়া বা লীজ মঞ্জুর করা তার স্বত্বের ঘোষণা, যেটা মালিক ভাড়া গ্রহণ করে পুন:নিশ্চিত করে, এবং ভাড়াটিয়া কর্তৃক ভাড়া প্রদান মালিকের মালিকানার স্বীকৃতি। আবার অনুমতিদাতার অনুমতিক্রমে যে ব্যক্তি বা অনুমতিপ্রাপক স্থাবর সম্পত্তি ব্যবহার এবং দখলে রেখেছে, উক্ত দখল চলমান থাকাবস্থায়, সে অনুমতিদাতার স্বত্ব অস্বীকার করতে পারেনা।
সাক্ষ্য আইনের এস্টোপেল নীতির শর্তসমূহ কি কি?
সাক্ষ্য আইনের ১১৬ ধারায় এস্টোপেল নীতি প্রয়োগ করতে হলে নিম্নলিখিত ২টি শর্ত পূরণ করতে হবে:
১. স্থাবর সম্পত্তির দখল অবশ্যই ভাড়াটিয়া বা প্রজাকে দিতে হবে এবং
২. এই দখলটি অবশ্যই ভূস্বামী বা মালিক এর অনুমতি নিয়ে অর্পণ করতে হবে।
উদাহরণ: “ক” একটি বাড়ির মালিক। ০২.০৫.২০২০ ইং তারিখে “ক” “খ” কে বাড়িটি ভাড়া দেয় অর্থাৎ "ক"হলো মালিক এবং “খ” হলো ভাড়াটিয়া। ভাড়াটিয়া স্বত্ব আরম্ভ হওয়ার সময় অর্থাৎ (০২.০৫.২০২০) তারিখে উক্ত সম্পত্তিতে (বাড়িতে) বাড়ির মালিকের বা ক এর যে স্বত্ব ছিল তা “খ” কে অস্বীকার করতে দেওয়া হবে না। সাক্ষ্য আইনের ১১৬ ধারা অনুযায়ী উল্লেখিত স্বকার্যজনিত বাধা বা এস্টোপেল নীতি শুধুমাত্র স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সাক্ষ্য আইনের ১১৬ ধারা অনুযায়ী স্থাবর সম্পত্তি যেমন বাড়ী, জমি ইত্যাদির ভাড়াটিয়াকে মালিকের মালিকানা স্বত্ত্ব অস্বীকার করা হতে বিরত করা হয়েছে। সাক্ষ্য আইনের ১১৬ এবং ১১৭ ধারায় এস্টোপেল হলো চুক্তিমূলে এস্টোপেল। সাক্ষ্য আইনের ১১৬ ধারার অধীন এস্টোপেল নীতি শুধুমাত্র প্রজাস্বত্ব বা ভাড়াটিয়া স্বত্ব চলমান থাকাবস্থায় প্রযোজ্য হবে। এই কারণে ভাড়াটিয়া বা অনুমতিপ্রাপকের বিরুদ্ধে এস্টোপেল নীতি প্রয়োগ করতে হলে দেখাতে হবে যে ভাড়াটিয়া স্বত্ব চলমান আছে । ১১৬ ধারার অধীন এস্টোপেল নীতি দেওয়ানী কার্যাবলির (সিভিল একশন) এ প্রযোজ্য ক্রিমিনাল এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না।
বিল অব এক্সচেঞ্চ (বিনিময় বিলের) ক্ষেত্রে এস্টোপেল কি?
সাক্ষ্য আইনের ১১৭ ধারায় চুক্তিমূলে এস্টোপেল নীতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এই ধারায় বিনিময় বিল, গচ্ছিতদাতা, গচ্ছিতগ্রহীতা এবং অনুমতিক্রমে ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে এস্টোপেল নীতির প্রয়োগ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সাক্ষ্য আইনের ১১৭ ধারায় নিম্নলিখিত তিনটি ক্ষেত্রে এস্টোপেল নীতি প্রয়োগ করা হয়েছে।
১. বিনিময় বিলে বা Bill of exchange এর ক্ষেত্রে:
যে ব্যক্তি বিনিময় বিল প্রণয়ন বা পৃষ্ঠাঙ্কন করে, সেই ব্যক্তির উক্ত বিলটি প্রণয়ন বা পৃষ্ঠাঙ্কন করার ক্ষমতা যে ছিল, এটা বিনিময় বিলের (বরাত চিঠির) স্বীকৃতিদাতা বা গ্রহীতাকে অস্বীকার করতে দেওয়া হবে না।
২. গচ্ছিতগ্রহীতা বা Bailee এর ক্ষেত্রে
৩. অনুমতি ক্রমে দখলকারীর বা Licensee এর ক্ষেত্রে। গচ্ছিত রাখার সময় বা ব্যবহারের অনুমতি দানের সময় গচ্ছিত প্রদানকারীর বা অনুমতি দাতার গচ্ছিত রাখার বা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার যে ক্ষমতা ছিল, তা কোন গচ্ছিত গ্রহিতা বা অনুমতিক্রমে দখলকারীকে অবশ্যই অস্বীকার করতে দেওয়া হবে না।
টপিকস
আদালত কি কি বিষয়ের অস্তিত্ব অনুমান করতে পারে? প্রতিবন্ধক বা স্বকার্যজনিত বাধা বা Estoppel কি? সাক্ষ্য আইনের এস্টোপেল নীতির শর্তসমূহ কি কি? কোন ক্ষেত্রে এস্টোপেল নীতির প্রয়োগ করা যেতে পারে? বিল অব এক্সচেঞ্চ বা বিনিময় বিলের ক্ষেত্রে এস্টোপেল কি?
ইউটিউব ভিডিও - আদালত কি কি বিষয়ের অস্তিত্ব অনুমান করতে পারে?