- Get link
- X
- Other Apps
তৃতীয় পক্ষের অভিমত কখন প্রাসঙ্গিক? সাক্ষ্য হিসাবে মতামতের বা অভিমতের গ্রহণযোগ্যতা কি? Experts Opinion
সাক্ষ্য হিসাবে মতামতের বা অভিমতের গ্রহণযোগ্যতা কি?
বিশারদের অভিমত বা Expert Opinion কি?
হস্তলিপি বা লেখা সম্পর্কে অভিমত কখন প্রাসঙ্গিক?
ডিজিটাল স্বাক্ষর সম্পর্কে মতামত কখন প্রাসঙ্গিক?
মামলার পক্ষগণের চরিত্র কখন প্রাসঙ্গিক?
কোন কোন ঘটনা প্রমাণ করার প্রয়োজন নাই?
বিচারিকভাবে দৃষ্টিগোচর অর্থ কি?
কোন কোন বিষয়সমূহ আদালতকে বিচারিক দৃষ্টিগোচর নিতে হয়?
তৃতীয় পক্ষের অভিমত কখন প্রাসঙ্গিক?
সাক্ষ্য হিসাবে মতামতের বা অভিমতের গ্রহণযোগ্যতা কি?
সাধারণত, মামলার পক্ষরা যাদেরকে সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করে, তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি মামলার পক্ষ না হওয়ার পরও বা মামলার পক্ষ দ্বারা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আহ্বান করা না হলেও, তার মতামত বা অভিমত মামলায় প্রাসঙ্গিক হতে পারে। তৃতীয় পক্ষের মতামত বা অভিমত কখন প্রাসঙ্গিক হবে তা সাক্ষ্য আইনের ৪৫ থেকে ৫১ ধারা পর্যন্ত আলোচনা করা হয়েছে এবং তৃতীয় পক্ষের এই অভিমত কে অভিমত সাক্ষ্য বা Opinion Evidence বলে ।
বিশারদের অভিমত বা Expert Opinion কি?
সাক্ষ্য আইনের সাধারণ নিয়ম হলো মতামত কে সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ না করা। কিন্তু সাক্ষ্য আইনের ৪৫ ধারা এই নিয়মের একটি ব্যতিক্রম। The Evidence Act 1872 (Amendment), 2022 দ্বারা ৪৫ ধারাটি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। নতুন ৪৫ ধারা অনুসারে, নিম্নলিখিত ১৩টি ক্ষেত্রে বিশারদের মতামত সাক্ষ্য হিসেবে প্রাসঙ্গিক করা হয়েছে;
১. বিদেশী আইন
২. বিজ্ঞান
৩. শারীর সম্বন্ধীয় বা ফরেনসিক সাক্ষ্য
৪. ডিজিটাল রেকর্ড
৫. চারুকলা
৬. হস্তলিপি বা হাতের লেখা
৭. আঙ্গুলের ছাপ বা টিপসহি
৮. পায়ের ছাপ
৯. তালুর ছাপ
১০. চোখের কনীনিকার ছাপ
১১. টাইপ রাইটিং
১২. ট্রেড বা টেকনিকাল অভিব্যক্তির ব্যবহার
১৩. ব্যক্তি বা প্রাণীর পরিচিতি
শারীরিক বা ফরেনসিক প্রমাণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত (সাক্ষ্য আইনের ধারা ৪৫ক: The Evidence Act 1872 (Amendment), 2022) সাক্ষ্য আইনের ধারা ৪৫ক অনুযায়ী-
(১) আদালতের অনুমতি ব্যতীত একজন সাক্ষী শারীরিক বা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ হিসাবে সাক্ষ্য দিতে পারবেন না যদি না তার রিপোর্টের একটি অনুলিপি, উপ-ধারা (২) অনুসারে সমস্ত পক্ষকে দেওয়া না হয় ।
(২) একজন বিশেষজ্ঞের প্রতিবেদন আদালতের কাছে পাঠানো হবে এবং সেই পক্ষের কাছে নয় যার পক্ষে তাকে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং আদালতকে সাহায্য করাই তার কর্তব্য হবে।
সাক্ষ্য আইনের ৪৫ ধারার অধীন বিশারদের মতামত গ্রহণ করা বা না করা আদালতের জন্বিবেচনামূলক। অর্থাৎ বিশারদের মতামত আদালতের জন্য বাধ্যকর না। সাক্ষ্য আইনের ৪৫ ধারার অধীন বিশারদের মতামত চূড়ান্ত প্রমাণ না কিন্তু অনুসমর্থন প্রকৃতির অর্থাৎ অন্যান্য সাক্ষ্যের সাথে মিলিয়ে নিয়ে আদালত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
হস্তলিপি বা লেখা সম্পর্কে অভিমত কখন প্রাসঙ্গিক?
একটি দলিল কোন ব্যক্তির দ্বারা লিখিত বা স্বাক্ষরিত হয়েছে, সে সম্পর্কে আদালতকে যখন কোন অভিমত গ্রহণ করতে হয়, তখন যে ব্যক্তির দ্বারা সেটা লিখিত বা স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে মনে করা হয়, সেই ব্যক্তির দ্বারা উহা লিখিত বা স্বাক্ষরিত হয়েছে বা হয় নাই এই মর্মে উক্ত ব্যক্তির হস্তলিপির সাথে পরিচিত লোকের অভিমত প্রাসঙ্গিক।
ডিজিটাল স্বাক্ষর সম্পর্কে মতামত কখন প্রাসঙ্গিক?
সাক্ষ্য আইনের ধারা ৪৭ক অনুযায়ী যখন আদালতকে কোনও ব্যক্তির ডিজিটাল স্বাক্ষর সম্পর্কে অভিমত তৈরি করতে হয়, তখন ডিজিটাল স্বাক্ষর সনদ জারি করা প্রত্যয়নকারী কর্তৃপক্ষের মতামত একটি প্রাসঙ্গিক ঘটনা। হস্তলেখা সনাক্তরণের (Identity of Handwriting) জন্য বিশারদের মতামত নেওয়া হয় ৪৫ ধারায়। কোন হাতে লেখা বা স্বাক্ষর কোন ব্যক্তি কর্তৃক করা হয়েছে সেটা সনাক্ত করতে উক্ত হাতে লেখা বা স্বাক্ষরের সাথে পরিচিত ব্যক্তির মতামত নেওয়া হয় ৪৭ ধারায়। ৪৭ ধারায় বিশারদ হওয়ার প্রয়োজন নেই বরং হাতে লেখা বা স্বাক্ষরের সাথে পরিচিত হলে মতামত প্রাসঙ্গিক হবে। কোন অধিকার বা প্রথার অস্তিত্ব থাকলে সেই সম্পর্কে যাদের জানা স্বাভাবিক, তাদের অভিমত ৪৮ ধারায় প্রাসঙ্গিক। ৪৯ ধারায় রীতিনীতি, মতবাদ ইত্যাদি প্রাসঙ্গিক করা হয়েছে এবং ৫০ ধারায় সম্পর্ক সম্বন্ধে মতামত প্রাসঙ্গিক করা হয়েছে।
মামলার পক্ষগণের চরিত্র কখন প্রাসঙ্গিক?
৫২ থেকে ৫৫ ধারা পর্যন্ত মামলার পক্ষগণের চরিত্রের প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এই ধারাগুলো সাক্ষীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। পক্ষগণের সাক্ষ্য প্রাসঙ্গিক হবে কি হবেনা, তা নির্ধারণ করতে দেখতে হবে মামলাটি কি দেওয়ানী না ফৌজদারী প্রকৃতির।
দেওয়ানী মোকদ্দমার ক্ষেত্রে:
দেওয়ানী মামলায় পক্ষগণের চরিত্র অপ্রাসঙ্গিক এবং অগ্রহণযোগ্য [সাক্ষ্য আইনের ধারা ৫২] কিন্তু চরিত্র সম্পর্কিত সাক্ষ্য যা ক্ষতিপূরণকে প্রভাবিত করতে পারে তা দেওয়ানী মোকদ্দমা গ্রহণযোগ্য হবে।[সাক্ষ্য আইনের ধারা ৫৫]।
ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে:
ফৌজদারী মামলায় পূর্ববর্তী সৎচরিত্র প্রাসঙ্গিক হবে।[সাক্ষ্য আইনের ধারা ৫৩]। ফৌজদারী মামলায় আসামীর চরিত্র খারাপ, ইহা অপ্রাসঙ্গিক। তবে তার চরিত্র যে ভালো এই মর্মে সাক্ষ্য দেওয়া হলে তার খারাপ চরিত্র প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে । খারাপ চরিত্রের সাক্ষ্য হিসাবে পূর্ববর্তী দণ্ডাদেশ প্রাসঙ্গিক [সাক্ষ্য আইনের ধারা ৫৪]
কোন কোন ঘটনা প্রমাণ করার প্রয়োজন নাই?
সাক্ষ্য আইনের সাধারণ নিয়ম হলো সকল প্রাসঙ্গিক বিষয় বা বিচার্য বিষয় সাক্ষ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু এই সাধারণ নিয়মের তিনটি ব্যতিক্রম আছে ।
১. বিচারিকভাবে দৃষ্টিগোচর বিষয়সমূহ (সাক্ষ্য আইনের ধারা-৫৬)
২. স্বীকৃত বিষয়সমূহ (সাক্ষ্য আইনের ধারা-৫৮)
৩. আইনের মাধ্যমে পক্ষগণের অনুকূলে অনুমানযোগ্য বিষয়সমূহ (সাক্ষ্য আইনের ধারা ৮৬ থেকে ৮৮) প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই ।
এই তিনটি বিষয় প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই। কারণ এইগুলো প্রমাণিত বলে গণ্য হবে ।
বিচারিকভাবে দৃষ্টিগোচর বিষয়সমূহ প্রমাণ করার প্রয়োজন নাই। সাক্ষ্য আইনের ৫৬ ধারায় বলা হয়েছে, যে সকল বিষয় আদালত বিচারিক দৃষ্টিগোচরে নিবে সেগুলো প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই।
বিচারিকভাবে দৃষ্টিগোচর অর্থ কি?
'Take Judicial Notice' বা বিচারিক দৃষ্টিগোচরে নিতে পারে অর্থ হলো প্রমাণ ছাড়া কোন কিছু বিদ্যমান আছে বা কোন কিছু সত্য বলে স্বীকৃতি দেওয়া । আদালত যে সকল বিষয় 'Judicial Notice' এ নিতে পারে, তা সাক্ষ্য আইনের ৫৭ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে।
কোন কোন বিষয়সমূহ আদালতকে বিচারিক দৃষ্টিগোচর নিতে হয়?
সাক্ষ্য আইনের ৫৭ ধারার অধীনে ১১ টি বিষয়ের উপর বিচারিক দৃষ্টিগোচর রাখা আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক।
এই ১১ টি বিষয়ে হলো-
১. বাংলাদেশের সকল আইনসমূহ;
২. সশস্ত্র বাহিনীর জন্য যাবতীয় অস্ত্র ও রসদ;
৩. আইন সভার কার্যসমূহ;
৪. নিম্নলিখিত সীল (Seals)
i. বাংলাদেশের সকল আদালত সমূহের সীল,
ii. অ্যাডমিরালটি ও সামুদ্রিক এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতসমূহের সীল,
iii. নোটারী পাবলিকের সীল এবং
iv. সকল সীল যেটা বাংলাদেশে বলবৎ যে কোন আইনের দ্বারা কোন ব্যক্তি ব্যবহারের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত;
৫. বাংলাদেশে কোন সরকারী পদে কাহারও যোগদানের বিষয়ে সরকারী গেজেট;
৬. সরকার কর্তৃক স্বীকৃত প্রত্যেক রাষ্ট্র বা সার্বভৌম বা রাজা বা রাণীর অস্তিত্ব, উপাধি ও জাতীয় পতাকা;
৭. সময়ের বিভাগসমূহ, পৃথিবীর ভৌগলিক বিভাগসমূহ এবং সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপিত সর্বসাধারণের উৎসব, উপবাস এবং ছুটিসমূহ;
৮. বাংলাদেশের ভূখণ্ডসমূহ;
৯. বাংলাদেশের সাথে অপর রাষ্ট্র বা সংগঠনের বিরোধ আরম্ভ হওয়া, চলতে থাকা ও অবসান হওয়া;
১০. আদালতের সদস্য এবং কর্মকর্তাগণ এবং তাদের অধীনস্থ অফিসার এবং সহকারীগণ এবং আদালতের কার্যসম্পাদনকারী অন্যান্য কর্মকর্তাগনের এবং আইন অনুসারে আদালতে উপস্থিত হয়ে মোকদ্দমা পরিচালনায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত সকল অ্যাডভোকেট এবং অন্যান্য ব্যক্তিদের নাম;
১১. স্থল বা সমুদ্র পথের নিয়মাবলী। এই ১১ টি বিষয়ের উপর বিচারিক দৃষ্টিগোচর রাখা আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক।
স্বীকৃতি ঘটনা সমূহ প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই:
সাক্ষ্য আইনের ৫৮ ধারায় বলা হয়েছে মোকদ্দমার পক্ষ বা তাদের প্রতিনিধি যে সকল বিষয় বা ঘটনা স্বীকার করেছে বা যে সকল বিষয়ে একমত পোষণ করেছে তা প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই। তবে শর্ত হলো যে উক্ত বিষয় বা ঘটনা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে-
১. মোকদ্দমার শুনানীর সময় বা
২. মোকদ্দমার শুনানীর পূর্বে, কিন্তু এই ক্ষেত্রে তারা লিখিত আকারে স্বীকার করতে সম্মত হয়েছে
৩. তারা তাদের প্লিডিংসের মাধ্যমে স্বীকার করেছে বলে মনে হয়।
টপিকস
তৃতীয় পক্ষের অভিমত কখন প্রাসঙ্গিক? সাক্ষ্য হিসাবে মতামতের বা অভিমতের গ্রহণযোগ্যতা কি? বিশারদের অভিমত বা Expert Opinion কি? হস্তলিপি বা লেখা সম্পর্কে অভিমত কখন প্রাসঙ্গিক? ডিজিটাল স্বাক্ষর সম্পর্কে মতামত কখন প্রাসঙ্গিক? মামলার পক্ষগণের চরিত্র কখন প্রাসঙ্গিক? কোন কোন ঘটনা প্রমাণ করার প্রয়োজন নাই? বিচারিকভাবে দৃষ্টিগোচর অর্থ কি? কোন কোন বিষয়সমূহ আদালতকে বিচারিক দৃষ্টিগোচর নিতে হয়?
ইউটিউব ভিডিও - তৃতীয় পক্ষের অভিমত কখন প্রাসঙ্গিক? সাক্ষ্য হিসাবে মতামতের বা অভিমতের গ্রহণযোগ্যতা কি? Experts Opinion