- Get link
- X
- Other Apps
স্বীকারোক্তি এবং দোষ স্বীকার।
স্বীকারোক্তি কি?
কোন কোন ব্যক্তির বক্তব্য স্বীকারোক্তি বলে গণ্য হবে?
কখন দেওয়ানী মামলায় স্বীকারোক্তি প্রাসঙ্গিক নয়?
দোষ স্বীকারোক্তির কি?
দোষ স্বীকারোক্তি কত প্রকার?
দোষস্বীকারোক্তি কোন কোন ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক হতে পারে?
সাক্ষ্য আইনের ২৭ ধারার আবশ্যিক শর্তসমূহ কি কি?
কখন দোষ স্বীকারোক্তি সহ-অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যে ব্যবহার করা যায়?
স্বীকারোক্তি কি?
কোন কোন ব্যক্তির বক্তব্য স্বীকারোক্তি বলে গণ্য হবে?
কখন দেওয়ানী মামলায় স্বীকারোক্তি প্রাসঙ্গিক নয়?
দোষ স্বীকারোক্তির কি?
দোষ স্বীকারোক্তি কত প্রকার?
দোষস্বীকারোক্তি কোন কোন ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক হতে পারে?
সাক্ষ্য আইনের ২৭ ধারার আবশ্যিক শর্তসমূহ কি কি?
কখন দোষ স্বীকারোক্তি সহ-অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যে ব্যবহার করা যায়?
স্বীকারোক্তি এবং দোষ-স্বীকার [Admission & Confession]
সাক্ষ্য আইনের ১৭ থেকে ৩১ ধারা পর্যন্ত স্বীকারোক্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ২৪ ধারা অনুসারে অনুচিত প্রভাবজনিত দোষ স্বীকারোক্তি, ২৫ ধারা অনুসারে পুলিশের নিকট প্রদত্ত দোষ স্বীকারোক্তি, ২৬ ধারা অনুসারে পুলিশ হেফাজতে থাকাবস্থায় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি ছাড়া পুলিশের নিকট দোষ-স্বীকারোক্তি গ্রহণযোগ্য না।
স্বীকারোক্তি কি?
সাক্ষ্য আইনের ১৭ ধারায় স্বীকারোক্তিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। ১৭ ধারায় বিধান করা হয়েছে, স্বীকারোক্তি হলো কোনো ব্যক্তির মৌখিক বা লিখিত বক্তব্য যা বিচার্য বা প্রাসঙ্গিক ঘটনা সম্পর্কে কোনো অনুমান ইঙ্গিত করে। সুতরাং স্বীকারোক্তি দুই প্রকার
১. মৌখিক স্বীকারোক্তি
২. লিখিত স্বীকারোক্তি
কোন কোন ব্যক্তির বক্তব্য স্বীকারোক্তি বলে গণ্য হবে?
১. মামলার পক্ষ বা তাদের প্রতিনিধির স্বীকারোক্তি
২. মামলার বিষয়বস্তুতে যার মালিকানাগত বা আর্থিক স্বার্থ আছে তার বিবৃতি স্বীকারোক্তি বলে গণ্য হবে যদি সে অনুরুপ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হিসাবে বিবৃতি দেয়।
৩. যে সকল ব্যক্তির নিকট হতে মামলার পক্ষসমূহ মামলার বিষয়বস্তুতে তাদের স্বার্থ লাভ করে, সেই সকল ব্যক্তির বিবৃতি স্বীকারোক্তি বলে গণ্য হবে ।
৪. কোন প্রতিনিধিত্বমূলক মামলার বাদী বা বিবাদী যে বিবৃতি দান করে, তা প্রতিনিধি হিসাবে প্রদত্ত হলে, স্বীকারোক্তি বলে গণ্য হবে ।
কখন দেওয়ানী মামলায় স্বীকারোক্তি প্রাসঙ্গিক নয়?
সাক্ষ্য আইনের ২৩ ধারা অনুযায়ী দুইটি ক্ষেত্রে দেওয়ানী মামলায় স্বীকারোক্তি প্রাসঙ্গিক নয়-
১. যদি স্বীকৃতিটা এই শর্তে করা হয় যে, উক্ত স্বীকারোক্তি সম্পর্কে কোন সাক্ষ্য দেওয়া হবে না;
২. যদি এইরুপ পরিস্থিতিতে স্বীকারোক্তি দেওয়া হয় যে, তাদের মধ্যে কোন চুক্তি ছিল যে তারা এই স্বীকারোক্তি সম্পর্কে কোন স্বাক্ষী দিবে না।
দোষ স্বীকারোক্তির কি?
সাক্ষ্য আইনের ২৪ থেকে ৩০ ধারা পর্যন্ত দোষ স্বীকারোক্তি সম্পর্কিত বিধান করা হয়েছে। অপরাধ স্বীকারোক্তি বা দোষস্বীকারোক্তি অর্থ কোন প্রকার ভয়ভীতি বা প্ররোচনা ব্যতীত স্বেচ্ছায় অভিযুক্ত কর্তৃক নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করা যেক্ষেত্রে তিনি কোন আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক কোন বক্তব্য প্রদান করেনা। যেমন: A, B কে খুনের অপরাধে অভিযুক্ত। A কিভাবে B কে খুন করেছে সেই ঘটনার বিবরণ দিয়ে দোষস্বীকারোক্তি প্রদান করেছে। A দোষ-স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে গণ্য হবে। কিন্তু A যদি উক্ত স্বীকারোক্তিতে বলে যে, তিনি খুনের সময় উন্মাদ ছিল, তাহলে এটাকে দোষস্বীকারোক্তি বলা যাবেনা।
দোষ স্বীকারোক্তি কত প্রকার?
দোষস্বীকারোক্তি বা Confession কে ২ ভাগে ভাগ করা যায়
১. বিচারিক দোষ স্বীকার বা Judicial Confession
এবং
২. বিচার বহির্ভূত দোষ স্বীকার বা Extra-judicial Confession।
বিচারিক দোষ স্বীকার বা Judicial Confession
হলো ম্যাজিস্ট্রেট অথবা আদালতের নিকট দোষ স্বীকারমূলক বক্তব্য। যেমন ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ এবং ৩৬৪ ধারা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট আসামীর দোষ স্বীকারমূলক যে বক্তব্য লিপিবদ্ধ করে, সেই বক্তব্য বিচারিক দোষ স্বীকারমূলক বক্তব্য হবে।
২. বিচার বহির্ভূত দোষ স্বীকার বা Extra-judicial Confession বা বিচার বহির্ভূত দোষস্বীকারোক্তি হলো ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালতের নিকট যে দোষ স্বীকারমূলক বক্তব্য দেওয়া হয় না, সেটা বিচার বর্হিভূত দোষস্বীকারোক্তি। যেমন: 'খ' 'গ' এর নিকট চা পান করার সময় স্বীকার করে যে, সে 'ক' কে হত্যা করেছে। এখানে ক' এর দোষ স্বীকারমূলক বক্তব্য হলো বিচার বহির্ভূত দোষ স্বীকার।
দোষস্বীকারোক্তি কোন কোন ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক হতে পারে?
সাক্ষ্য আইনের ২৪ থেকে ৩০ ধারায় কোন কোন অবস্থায় আসামির অপরাধমূলক স্বীকারোক্তি সাক্ষ্য হিসাবে অপ্রাসঙ্গিক তা বলা হয়েছে। সাক্ষ্য আইনের ২৪ ধারায় বিধান করা হয়েছে, অভিযুক্ত কর্তৃক প্রদত্ত অপরাধমূলক স্বীকারোক্তি ফৌজদারী কার্যধারায় অপ্রাসঙ্গিক, যদি আদালতের নিকট মনে হয় যে, অপরাধমূলক স্বীকারোক্তি প্ররোচনা, হুমকি বা প্রতিশ্রুতি দ্বারা গ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষ্য আইনের ২৫ ধারায় বিধান করা হয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তার নিকট প্রদত্ত কোন দোষস্বীকারোক্তি কোন অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রমাণ করা যাবেনা। ২৬ ধারা অনুসারে পুলিশের নিকট প্রদত্ত কোন দোষ-স্বীকারোক্তি প্রাসঙ্গিক হবে না যদি অভিযুক্ত-
১. পুলিশ হেফাজতে থাকাবস্থায় এবং
২. ম্যাজিস্ট্রেটের তাৎক্ষণিক উপস্থিতি ছাড়া দোষ-স্বীকারোক্তি প্রদান করে।
২৫ ধারা এবং ২৬ ধারায় প্রদত্ত দোষস্বীকারোক্তির মধ্যে পার্থক্য হলো, ২৬ ধারা প্রযোজ্য হবে শুধুমাত্র যে ক্ষেত্রে পুলিশ হেফাজতে থাকাবস্থায় এবং ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি ব্যতিত দোষ স্বীকারোক্তি প্রদান করে। পুলিশ হেফাজত ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে পুলিশের নিকট প্রদত্ত দোষস্বীকারোক্তির ক্ষেত্রে ২৫ ধারা প্রযোজ্য হবে।
অভিযুক্ত ব্যক্তির নিকট হতে প্রাপ্ত কতটুকু তথ্য প্রমাণ করা যেতে পারে?
সাক্ষ্য আইনের ২৭ ধারায় বিধান করা হয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তির নিকট হতে প্রাপ্ত তথ্য কতটুকু প্রমাণ করা যেতে পারে। সাক্ষ্য আইনের ২৭ ধারা অনুযায়ী, আসামী পুলিশের নিকট যে তথ্য প্রদান করে তার উপর ভিত্তি করে মামলার কোন বিষয়ে সত্যতা উদ্ঘাটন বা আলামত উদ্ধার করা হলে, উক্ত তথ্য প্রাসঙ্গিক হবে।
সাক্ষ্য আইনের ২৭ ধারার আবশ্যিক শর্তসমূহ কি কি?
পুলিশের নিকট অভিযুক্ত কর্তৃক প্রদত্ত কোন তথ্য ২৭ ধারা অনুসারে প্রাসঙ্গিক হতে পারে যদি নিম্নলিখিত শর্তসমূহ পূরণ হয়-
১. কোন অপরাধে অভিযুক্ত হতে হবে এবং
২. উক্ত অভিযুক্ত ব্যক্তির নিকট হতে তথ্যটি প্রাপ্ত হতে হবে;
৩. অভিযুক্ত ব্যক্তি পুলিশ কাস্টডিতে বা হেফাজতে থাকা অবস্থায় এমন তথ্য প্রকাশ করবে;
৪. প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে কোন বিষয় বা আলামত উদ্ঘাটন বা আবিষ্কার হতে হবে।
সেই ক্ষেত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, যে বিষয়টি বা আলামত আবিষ্কার করা হবে সেই আবিষ্কৃত বিষয়ের সাথে প্রাপ্ত তথ্য যতটুকু সম্পর্কিত ততটুকু প্রমাণ করা যেতে পারে। উদাহরণ: অভিযুক্ত ব্যক্তি পুলিশকে বলে 'আমি 'ক' এর অফিসে বোমা রেখেছিলাম; আমি আপনাকে এটা দেখাতে চাই”। অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য অনুযায়ী পুলিশ 'ক' এর অফিসে বোমা খুঁজে পায়। 'ক' এর বক্তব্য প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য ।
কখন দোষ স্বীকারোক্তি সহ-অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যে ব্যবহার করা যায়?
সাক্ষ্য আইনের সাধারণ নিয়ম হলো যে ব্যক্তি দোষ স্বীকারোক্তি প্রদান করে উক্ত দোষ স্বীকারোক্তি তার বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হবে অন্যকোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে না। কিন্তু সাক্ষ্য আইনের ৩০ ধারা এই নিয়মের ব্যতিক্রম। সাক্ষ্য আইনের ৩০ ধারায় বলা হয়েছে যেখানে একের অধিক ব্যক্তিকে একই অপরাধের জন্য যৌথ বিচার করা হচ্ছে, সেখানে কোন একজন অভিযুক্ত নিজেকেসহ অন্যান্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জড়িয়ে কোন দোষ স্বীকারোক্তি প্রদান করলে উক্ত স্বীকারোক্তি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য হলে তা স্বীকারোক্তি প্রদানকারীসহ অন্যান্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। তবে শর্তসমূহ হলো-
১. একই অপরাধের জন্য একাধিক ব্যক্তি অভিযুক্ত হতে হবে;
২. উক্ত একই অপরাধের জন্য তাদের যৌথ বিচার করা হবে;
৩. উক্ত অভিযুক্তদের মধ্যে কোন একজন অভিযুক্ত নিজেকেসহ অন্যান্য অভিযুক্তকে জড়িয়ে কোন দোষ
স্বীকারোক্তি প্রদান করবে;
8. এমন দোষ স্বীকারোক্তি প্রমাণিত হলে আদালত উক্ত দোষ স্বীকারোক্তি প্রদানকারীসহ অন্যান্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে আমলে নিতে পারে। উদাহরণ -১: C কে হত্যার জন্য A এবং B এর যৌথ বিচার করা হচ্ছে। এটা প্রমাণিত যে, A বলেছে, B এবং আমি C কে হত্যা করেছি। যেহেতু C কে হত্যার জন্য A এবং B-এর যৌথ বিচার করা হচ্ছে সেহেতু A এর দোষস্বীকারোক্তি B এর বিরুদ্ধেও আদালত বিবেচনা করতে পারে। উদাহরণ-২: C কে হত্যার জন্য A এর বিচার করা হচ্ছে। সাক্ষ্য প্রমাণে দেখায় যে, A এবং B কর্তৃক C খুন হয়েছিল এবং B বলেছে যে, A এবং আমি C-কে হত্যা করেছি। B এর এই বিবৃতি আদালত A এর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসাবে বিবেচনায় নাও নিতে পারে কারণ এই মামলায় B কে A এর সাথে যৌথভাবে বিচার করা হচ্ছে না। তবে সাক্ষ্য আইনের ১৩৩ ধারা অনুসারে, কোন অপরাধে অভিযুক্ত একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে উক্ত অপরাধের জন্য সহযোগী যোগ্য সাক্ষী হবে। আবার
৩০ ধারা অনুসারে, একজন অপরাধের সহযোগি অন্য সহ-অভিযুক্তকে জড়িয়ে দোষস্বীকারোক্তি দিলে, উক্ত দোষস্বীকারোক্তি আদালত সকল অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারবে। একজন অপরাধের সহযোগির সাক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমর্থিত হতে হবে। যদি সহযোগির সাক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমর্থিত না হয়, তাহলে সেটা বিশ্বাসের অযোগ্য হবে। কারণ সাক্ষ্য আইনের ১১৪ (খ) ধারা অনুসারে, একজন অপরাধের সহযোগি বিশ্বাসের অযোগ্য যদিনা তার দোষস্বীকারোক্তি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমর্থিত হয়। কিন্তু ১৩৩ ধারা অনুসারে, অপরাধের সহযোগির অসমর্থিত সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে দণ্ড দিলেও তা বেআইনী হবেনা। সাক্ষ্য আইনের ৩১ ধারায় বলা হয়েছে, স্বীকারোক্তি চূড়ান্ত প্রমাণ না কিন্তু প্রমাণের বাধা তৈরী করতে পারে।
টপিকস
স্বীকারোক্তি এবং দোষ স্বীকার। স্বীকারোক্তি কি? কোন কোন ব্যক্তির বক্তব্য স্বীকারোক্তি বলে গণ্য হবে? কখন দেওয়ানী মামলায় স্বীকারোক্তি প্রাসঙ্গিক নয়? দোষ স্বীকারোক্তির কি? দোষ স্বীকারোক্তি কত প্রকার? দোষস্বীকারোক্তি কোন কোন ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক হতে পারে? অভিযুক্ত ব্যক্তির নিকট হতে প্রাপ্ত কতটুকু তথ্য প্রমাণ করা যেতে পারে? সাক্ষ্য আইনের ২৭ ধারার আবশ্যিক শর্তসমূহ কি কি? কখন দোষ স্বীকারোক্তি সহ-অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যে ব্যবহার করা যায়?