সম্পত্তি সম্পর্কিত অপরাধ চুরি [Theft] কাকে বলে বলপূর্বক গ্রহণ Extortion কাকে বলে শাস্তি কি

সম্পত্তি সম্পর্কিত অপরাধ।
চুরি সম্পর্কিত অপরাধ।
চুরি কাকে বলে?
কখন নিজের সম্পত্তি নিজে চুরি করা বলে গণ্য হবে?
কেন চুরির ক্ষেত্রে মালিকানাটি গুরুত্বপূর্ণ না বরং দখল গুরুত্বপূর্ণ?
চুরির শাস্তি কি?
বলপূর্বক গ্রহণ কাকে বলে?
বলপূর্বক গ্রহণের শর্ত বা উপাদান কি কি?
চুরি এবং বলপূর্বক গ্রহণের মধ্যে পার্থক্য কি?
বলপূর্বক গ্রহণের শাস্তি কি?

সম্পত্তি সম্পর্কিত অপরাধ [Offences Relating to Property]

১। চুরি [Theft] ধারা ৩৭৮-৩৮২

২। জোরপূর্বক গ্রহণ [Of Extortion] ধারা ৩৮৩-৩৮৯

৩। দস্যুতা [Robbery] ধারা ৩৯০

৪। ডাকাতি [Decoity] ধারা ৩৯১, ৩৯৫, ৩৯৬

৫। অসাধুভাবে সম্পত্তি আত্মসাৎ ধারা ৪০৩, ৪০৪

৬ । অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ ধারা ৪০৫ থেকে ৪০৯

৭। চোরাই মাল ধারা ৪১০ থেকে ৪১৪

৮। প্রতারণা ধারা ৪১৫ থেকে ৪২০

৯। প্রতারণামূলকভাবে সম্পত্তি হস্তান্তর  ধারা ৪২১ থেকে ৪২৪

১০। ক্ষতিসাধন বা অনিষ্টসাধন ধারা ৪২৫ থেকে ৪৪০

১১। অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ ধারা ৪৪১ থেকে ৪৬২

১২। জালিয়াতি ধারা ৪৬৩ থেকে ৪৮৯ঙ

১৩। অপরাধমূলক সেবার চুক্তিভঙ্গ ধারা ৪৯০ থেকে ৪৯২

চুরি সম্পর্কিত অপরাধ। ধারা: ৩৭৮ থেকে ৩৮২। 

চুরি [Theft] কাকে বলে?

দণ্ডবিধির ৩৭৮ ধারায় চুরিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। চুরির অপরাধ অস্থাবর সম্পত্তি যেমন টাকা, স্বর্ণালংকার ইত্যাদির সাথে সম্পর্কিত। অর্থাৎ স্থাবর সম্পত্তি যেমন জমি চুরির অপরাধের সাথে সম্পর্কিত নয়। যখন কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির দখলে থাকা কোন অস্থাবর সম্পত্তি উক্ত ব্যক্তির সম্মতি ছাড়া অসাধু উপায়ে গ্রহণ করার অভিপ্রায়ে বা অনুরুপ গ্রহণের উদ্দেশ্যে উক্ত সম্পত্তি স্থানান্তর করে, সেই ব্যক্তি চুরি করেছে বলে গণ্য হবে।

চুরির উপাদান বা শর্তসমূহ কি কি?

চুরি হয়েছে বলে গণ্য হবে যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি-

১. অন্যকোনো ব্যক্তির দখল হতে অসাধুভাবে সম্পত্তি গ্রহণ করে থাকে,

২. সম্পত্তিটি অবশ্যই অস্থাবর সম্পত্তি যেমন টাকা, স্বর্ণালংকার ইত্যাদি হতে হবে,

৩. উক্ত সম্পত্তি অন্য ব্যক্তির দখল থেকে নিতে হবে,

৪. সম্পত্তিটি উক্ত ব্যক্তির সম্মতি ছাড়া নিবে,

৫. চুরি সম্পন্ন হবে যদি সম্পত্তিটি সামান্য হলেও প্রকৃতপক্ষে স্থানান্তর করা হয়।

কখন নিজের সম্পত্তি নিজে চুরি করা বলে গণ্য হবে?

কোন ব্যক্তি নিজের সম্পত্তি চুরির জন্য অভিযুক্ত হতে পারে। যেমন: ক, খ-এর নিকট ১০০০০ টাকা পাবে যা খ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। ক উক্ত ঋণের জামানত হিসাবে খ-এর মোবাইল রেখে দেয়। পরবর্তীতে খ উক্ত মোবাইল ক-এর সম্মতি ছাড়া নিয়ে যায়। এই ক্ষেত্রে খ- মোবাইল চুরির জন্য দায়ী হবে যদিও খ উক্ত মোবাইলের মালিক। তাছাড়া উক্ত টাকায় ক-এর বিশেষ দখল অধিকার আছে। অর্থাৎ কোন ব্যক্তিকে তার নিজের সম্পত্তি চুরি করার দায়ে দণ্ডিত করা যেতে পারে যদি সে অসাধুভাবে উক্ত সম্পত্তি যার দখলে আছে তার দখল হতে গ্রহণ করে।

কেন চুরির ক্ষেত্রে মালিকানাটি  গুরুত্বপূর্ণ না বরং দখল গুরুত্বপূর্ণ?

চুরির ক্ষেত্রে অস্থাবর সম্পত্তির মালিকানাটি গুরুত্বপূর্ণ না বরং দখল গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যেকোন ব্যক্তি দখল থেকে অসাধুভাবে সম্পত্তি গ্রহণ এবং স্থানান্তর চুরি বলে গণ্য হবে। দখল থেকে অস্থাবর সম্পত্তিটি গ্রহণ করা হয়েছে কিনা তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উদাহরণ: ক ১০০০০০ টাকা খ এর নিকট প্রদান করে ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য। গ উক্ত টাকা খ-এর সম্মতি ছাড়া অসাধুভাবে গ্রহণ করে। এই ক্ষেত্রে গ চুরি করেছে যদিও গ উক্ত টাকা মালিক ক-এর নিকট হতে গ্রহণ করেনি।

এখানে বলে রাখা ভালো যে, চুরির ক্ষেত্রে যে ব্যক্তির সম্পত্তি চুরি করা হয়েছে তাকে প্রমাণ করতে হবে যে, তার উক্ত সম্পত্তিতে প্রকৃত দখল ছিল। মালিকানা প্রমাণ না করলেও চলবে। যেক্ষেত্রে কোন অস্থাবর সম্পত্তি কোন মৃত ব্যক্তির দখল থেকে অসাধুভাবে গ্রহণ করা হয় বা যে সম্পত্তি কারোর দখলে নেই বা যেক্ষেত্রে কোন হারিয়ে যাওয়া সম্পত্তির কোন দখলদার পাওয়া যায় না, সেই ক্ষেত্রে অসাধুভাবে সম্পত্তি গ্রহণ চুরি হবে না বরং সেটা অসাধুভাবে সম্পত্তি আত্মসাৎ বলে গণ্য হবে। চুরির ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগ বা ভয় দেখিয়ে সম্পত্তি গ্রহণ অপরিহার্য না বরং অসাধুভাবে সম্পত্তি গ্রহণ অপরিহার্য উপাদান। ৩৭৮ ধারায় বর্ণিত ৫ টি শর্ত পূরণ করলেই চুরি বলে গণ্য হবে। 

চুরির শাস্তি কি?

৩৭৯ ধারা অনুযায়ী চুরির শাস্তি যে কোন বর্ণনার কারাবাস যা ৩ বছর পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ড সহ বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।

৩৮০ ধারা অনুযায়ী বসতবাড়ি তাঁবু জাহাজ ইত্যাদিতে চুরির শাস্তি যেকোনো বর্ণনার কারাবাস যা ৭ বছর পর্যন্ত হতে পারে এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।

৩৮১ ধারা অনুযায়ী মালিকের দখলের সম্পত্তি ক্লার্ক বা চাকর কর্তৃক চুরির শাস্তি যে কোন বর্ণনার কারাবাস যা সাত বছর পর্যন্ত হতে পারে এবং অর্থদণ্ডেও দন্ডিত হবে।

৩৮২ ধারা অনুযায়ী চুরি করার উদ্দেশ্যে মৃত্যু ঘটানো আঘাত দান বা আটকানোর প্রস্তুতি নেওয়ার পর চুরি অনুষ্ঠানের শাস্তি সশ্রম কারাবাস যা ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।

বলপূর্বক গ্রহণ সম্পর্কিত অপরাধ [Of Extortion] ধারা ৩৮৩ থেকে ৩৮৯

বলপূর্বক গ্রহণ [Extortion] কাকে বলে?

চুরি এবং দস্যুতা এর মধ্যবর্তী একটি অপরাধ হলো বলপূর্বক গ্রহণ। দণ্ডবিধির ৩৮৩ ধারায় বলপূর্বক গ্রহণের সংজ্ঞা এবং ৩৮৪ ধারায় বলপূর্বক গ্রহণের শাস্তির বিধান করা হয়েছে। সাধারণভাবে বলা যায়, যদি কোন ব্যক্তি ভয় দেখিয়ে বা অসাধু উপায়ে প্ররোচিত করে উক্ত ব্যক্তি বা অন্য ব্যক্তির নিকট থেকে (স্থাবর বা অস্থাবর) সম্পত্তি গ্রহণ করে তাহলে উক্ত গ্রহণ, বলপূর্বক গ্রহণ বলে গণ্য হবে। বলপূর্বক গ্রহণ অপরাধটি নিম্নলিখিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে-

১. অভিযুক্ত ইচ্ছাকৃতভাবে অন্য কোন ব্যক্তিকে ক্ষতির ভয়ে রাখবে।

২. যে ব্যক্তিকে ভয়ে রাখা হয়েছে তাকে অভিযুক্ত ব্যক্তি অসাধুভাবে কোন সম্পত্তি বা মুল্যবান জামানত অৰ্পণ করতে প্ররোচিত করবে যেমন দান বা চাঁদা প্রদানে বা যে কোন সম্পত্তি অর্পণে বা মূলবান জামানত অর্পণে বা স্বাক্ষরিত এবং সীলকৃত যেকোন জিনিস যেটা মূল্যবান জামানতে পরিণত করা যেতে পারে এমন সম্পত্তি অর্পণে ভয় দেখিয়ে অসাধুভাবে প্ররোচিত করে।

বলপূর্বক গ্রহণের শর্ত বা উপাদান কি কি?

১. অভিযুক্ত অবশ্যই কোন ব্যক্তিকে ক্ষতির ভয়ে রাখবে;

২. ক্ষতির ভয়ে রাখার কার্য অবশ্যই ইচ্ছাকৃত হতে হবে;

৩. অতপর অভিযুক্ত যে ব্যক্তিকে ভয়ে রেখেছে তাকে প্ররোচিত করবে কোন সম্পত্তি অর্পণে এবং

৪. এমন প্ররোচনা অবশ্যই অসাধুভাবে হতে হবে ।

উদাহরণ: ক খ কে ভয় দেখায় যে ২০০০০০ টাকা না দিলে তার নামে অশ্লীল ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দিবে। খ ক কে ১,০০,০০০ টাকা দেয়। ক বলপূর্বক গ্রহণ করেছে।

চুরি এবং বলপূর্বক গ্রহণের মধ্যে পার্থক্য কি?

১. চুরি শুধুমাত্র অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে হতে পারে কিন্তু বলপূর্বক গ্রহণ স্থাবর এবং অস্থাবর উভয় সম্পত্তির ক্ষেত্রে হতে পারে।

২. চুরির ক্ষেত্রে সম্পত্তির মালিক বা দখলদারের কোন সম্মতি থাকে না কিন্তু বলপূর্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে ক্ষতির ভয় দেখিয়ে সম্মতি নেওয়া হয়।

৩. চুরির ক্ষেত্রে বল প্রয়োগ থাকে না কিন্তু বল প্রয়োগ গ্রহণের ক্ষেত্রে বল প্রয়োগ থাকে বা ক্ষতির ভয় থাকে।

৪. চুরির ক্ষেত্রে অপরাধী সম্পত্তিটি নিয়ে যায়। এক্ষেত্রে মালিক সম্পত্তি অর্পণ করে না কিন্তু বলপূর্বক গ্রহণের ক্ষেত্রে ক্ষতির ভয়ে সম্পত্তির মালিক সম্পত্তিটি অপরাধীকে অর্পণ করে।

বলপূর্বক গ্রহণের শাস্তি কি?

৩৮৪ ধারা অনুযায়ী বলপূর্বক গ্রহণের শাস্তি যে কোন বর্ণনার কারাবাস যা ৩ বছর পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ড সহ বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

৩৮৫ ধারা অনুযায়ী বল পূর্ব গ্রহণের জন্য কোন ব্যক্তিকে ক্ষতির ভয়ে রাখার শাস্তি যেকোনো বর্ণনার কারাবাস যা ১৪ বছর পর্যন্ত হতে পারে এবং ৫ বছরের নিচে হবে না এবং অর্থদণ্ডসহ বা উভয়দন্ডে দণ্ডিত হবে।

৩৮৬ ধারা অনুযায়ী মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের ভয়ে রেখে বলপূর্বক গ্রহণের শাস্তি যেকোনো বর্ণনার কারাবাস যা ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে এবং অর্থদণ্ডসহ দণ্ডিত হবে।

৩৮৭ ধারা অনুযায়ী বলপূর্বক গ্রহণের জন্য মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের ভয়ে রাখার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাবাস এবং ৭ বছরের নিচে না এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।

টপিকস 

সম্পত্তি সম্পর্কিত অপরাধ, চুরি সম্পর্কিত অপরাধ, চুরি কাকে বলে? কখন নিজের সম্পত্তি নিজে চুরি করা বলে গণ্য হবে? কেন চুরির ক্ষেত্রে মালিকানাটি গুরুত্বপূর্ণ না বরং দখল গুরুত্বপূর্ণ? চুরির শাস্তি কি? বলপূর্বক গ্রহণ কাকে বলে? বলপূর্বক গ্রহণের শর্ত বা উপাদান কি কি? চুরি এবং বলপূর্বক গ্রহণের মধ্যে পার্থক্য কি? বলপূর্বক গ্রহণের শাস্তি কি?

ইউটিউব ভিডিও - সম্পত্তি সম্পর্কিত অপরাধ চুরি [Theft] কাকে বলে বলপূর্বক গ্রহণ Extortion কাকে বলে শাস্তি কি