অপরাধে প্ররোচনা বা অপসহায়তা Abetment উপাদান কয়টি

অপরাধে প্ররোচনা বা অপসহায়তা |Abetment] কাকে বলে?
অপরাধে প্ররোচনা বা অপসহায়তার উপাদান কয়টি?
অভিন্ন অভিপ্রায় এবং অপরাধে সহায়তার মধ্যে পার্থক্য কি?
প্ররোচনায় বা অপসহায়তায় (Abetment) দায়ী করতে মৌলিক নীতিসমূহ কি কি?
ধারা ৩৪ এবং ধারা ১০৭ এর মধ্যে পার্থক্য কি?
বিভিন্ন প্ররোচনার (Abetment) শাস্তি কি?
অপসহায়তাকৃত কার্য হতে ভিন্ন কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে অপসহায়তকারীর দায় কি?

অপরাধে প্ররোচনা বা অপসহায়তা [Abetment] [ধারা ১০৭ থেকে ১২০]

অপরাধে প্ররোচনা বা অপসহায়তা |Abetment] কাকে বলে?

অপরাধী এবং অপরাধ সংঘটন করতে সাহায্যকারী আইনের চোখে সমানভাবে দোষী। ১০৭ থেকে ১২০ ধারা পর্যন্ত অপরাধে প্ররোচনা বা অপসহায়তা (Abetment) সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যে লোক অপরাধ সংঘটন করতে সাহায্য করে তিনি দুষ্কর্মের সহায়তাকারী বা প্ররোচক বা অপসহায়তাকারী [Abettor)।

অপরাধে প্ররোচনা বা অপসহায়তার উপাদান কয়টি?

কোন অপরাধ সংঘটনের আগে অপরাধটি সংঘটনের জন্য ৩ ভাবে প্ররোচনা বা অপসহায়তা [Abetment) করা হতে পারে। যথাঃ

১. প্ররোচিত করে [By Instigation |

2. ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহন করে। [By Engaging in the Conspiracy] অর্থাৎ এ্যাবেটমেন্টে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে ।

৩. কোন কাজ করে বা করা হতে বিরত থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে সাহায্য করে [Intentionally aids, by any act or illegal omission]

প্ররোচনা বা অপসহায়তার উদাহরণ:

‘ক’, ‘খ’, কে খুন করার জন্য ‘গ’ কে প্ররোচিত করে। ‘গ’ ‘খ’ কে খুন করে। ‘ক’ অপরাধে প্ররোচনার জন্য দোষী হবে। এখানে ‘ক’ হলো খুনে সহায়তাকারী (Abettor to Murder) এবং ‘গ’ হলো খুনকারী [Murderer]

অভিন্ন অভিপ্রায় এবং অপরাধে সহায়তার মধ্যে পার্থক্য কি? ধারা ৩৪ এবং ধারা ১০৭ এর মধ্যে পার্থক্য কি?

১. ৩৪ ধারায় অভিন্ন অভিপ্রায়ের ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটনে অপরাধীদের প্রকৃত অংশগ্রহণ (Participation) অপরিহার্য। কিন্তু ১০৭ ধারায় এ্যাবেটমেন্টের ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটনে দুষ্কর্মের সহায়তাকারীর (Abettor) অংশগ্রহণ অপরিহার্য না। এ্যাবেটমেন্টের ক্ষেত্রে দুষ্কর্মের সহায়তাকারী মূল অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা করে বা সহায়তা করে কিন্তু মূল অপরাধ সংঘটনে সে অংশগ্রহণ নাও করতে পারে। সে অংশগ্রহণ না করলেও দায়ী হবে। অপরাধ সংঘটনের স্থানে দুষ্কর্মের সহায়তাকারীর উপস্থিতি থাকা প্রয়োজন না।

২. অভিন্ন অভিপ্রায় বাস্তবায়নে অপরাধ সংঘটিত না হলে ৩৪ ধারায় কোন দায় সৃষ্টি হয়না। কিন্তু অপরাধ সংঘটিত হোক বা না হোক এ্যাবেটমেন্ট প্রমাণিত হলে দুষ্কর্মের সহায়তাকারী দোষী হয়।

প্ররোচনায় বা অপসহায়তায় (Abetment) দায়ী করতে মৌলিক নীতিসমূহ কি কি?

যে অপরাধ সংঘটনের জন্য প্ররোচনা করা হয়েছে তা সংঘটিত হোক বা না হোক প্ররোচনা [Abetment) প্রমাণিত হলে প্ররোচক বা দুষ্কর্মের সহায়তাকারী |Abettor] দোষী হয় [ধারা ১০৮, ব্যাখ্যা-২]। এমনকি যে ব্যক্তিকে অপরাধটি করতে প্ররোচিত করা হয়েছে সে যদি উক্ত কাজ করতে অস্বীকার করে, তবুও Abettor প্ররোচনার জন্য দোষী হবে। যে ব্যক্তিকে অপরাধ করতে প্ররোচিত করা হয় সে অপরাধ করতে যোগ্য কি যোগ্য না বা তার অপরাধ করার একই অভিপ্রায় এবং জ্ঞান ছিল কিনা, তা দুষ্কর্মের সহায়তাকারী (Abettor] কে দোষী করতে বিবেচ্য বিষয় না। (১০৮, ব্যাখ্যা ৩)। অপরাধে প্ররোচনা অপরাধরূপে গণ্য হবে (১০৮, ব্যাখ্যা ৩)।

বিভিন্ন প্ররোচনার (Abetment) শাস্তি কি?

দন্ডবিধির ১০৯ থেকে ১২০ ধারা পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকার প্ররোচনার শাস্তি উল্লেখ করা হয়েছে।

১০৯ ধারা অনুযায়ী প্ররোচনার ফলে অপরাধটি সংঘটিত হলে শাস্তি কিভাবে নির্ধারণ করতে হবে, তা ১০৯ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে।

১. আইনের সাধারণ নীতি হলো প্ররোচনাকারী এবং কার্য সংগঠনকারী একই শাস্তি পাবে।

২. কোন অপরাধের সহায়তা করার জন্য শাস্তি নির্ধারিত থাকলে অপরাধের সহায়তাকারী উক্ত শাস্তিতে দন্ডিত হবে।

উদাহরণ: A, B নামক একজন উন্মাদ ব্যক্তিকে বিষ পান করে আত্মহত্যা করতে প্ররোচনা করে। উন্মাদ ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করে। শিশু বা উন্মাদ ব্যক্তির আত্মহত্যায় সহায়তাকানের জন্য শান্তি দন্ডবিধির ৩০৫ ধারা অনুযায়ী নির্ধারিত হবে এবং এই ক্ষেত্রে A মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা অনধিক দশ বৎসর মেয়াদে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে।

৩. কোন অপরাধে সহায়তা করার জন্য শাস্তি নির্ধারিত না থাকলে অপরাধে সহায়তাকারি মূল অপরাধের জন্য নির্ধারিত শাস্তিতে দণ্ডিত হবে। উদাহরণ: A এবং B একত্রে Z কে বিষ প্রয়োগে হত্যা করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ঐ ষড়যন্ত্র অনুযায়ী A বিষ সংগ্রহের জন্য B কে প্রয়োজনীয় অর্থ দেয়। B বিষ সংগ্রহ করে A এর অনুপস্থিতিতে B ঐ বিষ Z কে পান করিয়ে তার মৃত্যু ঘটায়। এখানে B খুনের জন্য দায়ী হবে এবং খুনের জন্য নির্ধারিত ৩০২ ধারায় দণ্ডিত হবে। অন্যদিকে A খুনে সহায়তা করার জন্য দায়ী হবে। কিন্তু খুনে সহায়তা করার জন্য কোন শাস্তির বিধান দণ্ডবিধিতে নেই। এই ক্ষেত্রে A মূল অপরাধ অর্থ্যাৎ খুনের জন্য ৩০২ ধারায় দণ্ডিত হবে।

অপসহায়তাকৃত কার্য হতে ভিন্ন কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে অপসহায়তকারীর দায় কি?

যে কার্য করার জন্য প্ররোচনা করা হয়েছে সেই কার্যটি ব্যতীত ভিন্ন কার্য করা হলে, অপসহায়তাকারী সংঘটিত কার্যটির জন্য এমনভাবে দায়ী হবে যেন তিনি সরাসরি উক্ত কার্যটি সংঘটনে প্ররোচনা করেছে। তবে শর্ত হলো, সংঘটিত কার্যটি প্ররোচনার সম্ভাব্য ফলাফল হতে হবে এবং প্ররোচনা, বা সহায়তা বা ষড়যন্ত্র যা অপসহায়তা সৃষ্টি করেছে সেটার প্রভাবে হতে হবে।

টপিকস

অপরাধে প্ররোচনা বা অপসহায়তা |Abetment] কাকে বলে?অপরাধে প্ররোচনা বা অপসহায়তার উপাদান কয়টি?অভিন্ন অভিপ্রায় এবং অপরাধে সহায়তার মধ্যে পার্থক্য কি? ধারা ৩৪ এবং ধারা ১০৭ এর মধ্যে পার্থক্য কি?প্ররোচনায় বা অপসহায়তায় (Abetment) দায়ী করতে মৌলিক নীতিসমূহ কি কি?বিভিন্ন প্ররোচনার (Abetment) শাস্তি কি?অপসহায়তাকৃত কার্য হতে ভিন্ন কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে অপসহায়তকারীর দায় কি?

ইউটিউব ভিডিও - অপরাধে প্ররোচনা বা অপসহায়তা Abetment উপাদান কয়টি