- Get link
- X
- Other Apps
কোন আপীল আদালতে দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা যায়?
দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করার তামাদির মেয়াদ কত?
খালাসের ক্ষেত্রে আপীল। কে খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করতে পারে?
খালাস আদেশের বিরুদ্ধে সংবাদদাতার প্রতিকার কি?
ফৌজদারী মামলায় দ্বিতীয় আপীল কি করা যায়?
কত সময়ের মধ্যে খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করা যায়?
অপর্যাপ্ত দন্ডের বিরুদ্ধে আপীল।
কে অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করতে পারে?
অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়েরের সময়সীমা কতদিন?
কোন কোন ক্ষেত্রে আপীল চলে না?
দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করার তামাদির মেয়াদ কত?
খালাসের ক্ষেত্রে আপীল। কে খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করতে পারে?
খালাস আদেশের বিরুদ্ধে সংবাদদাতার প্রতিকার কি?
ফৌজদারী মামলায় দ্বিতীয় আপীল কি করা যায়?
কত সময়ের মধ্যে খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করা যায়?
অপর্যাপ্ত দন্ডের বিরুদ্ধে আপীল।
কে অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করতে পারে?
অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়েরের সময়সীমা কতদিন?
কোন কোন ক্ষেত্রে আপীল চলে না?
দণ্ডাদেশের ক্ষেত্রে আপীল [Appeal from Sentence] [ধারা ৪০৭, ৪০৮ এবং ৪১০]
ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০৭, ৪০৮ এবং ৪১০ ধারায় দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীলের বিধান আলোচনা করা হয়েছে। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করবে দণ্ডিত ব্যক্তি।
কোন আপীল আদালতে দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা যায়?
দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করা যায়-
১. চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট [ধারা ৪০৭]
২. দায়রা জজের নিকট [ধারা ৪০৮]
৩. হাইকোর্ট বিভাগে [ধারা ৪০৮ এবং ৪১০]
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল:
২৯গ ধারায় উল্লেখিত বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা যে কোনো অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট ৫ বৎসরের অধিক কারাবাস দিলেও, উক্ত কারাবাসের বিরুদ্ধে আপীল করতে হবে দায়রা জজের নিকট। যেমন: চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৭ বৎসর কারাবাস দিলে, সেই ক্ষেত্রেও আপীল করতে হবে দায়রা জজের নিকট।
উদাহরণ : ৩২ ধারা অনুযায়ী প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাধারণ ক্ষমতাবলে সর্বোচ্চ ৫ বৎসরের কারাদণ্ড দিতে পারে। কিন্তু ২৯গ ধারা অনুযায়ী সরকার হাইকোর্ট বিভাগের সাথে পরামর্শ করে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটকে অনধিক ১০ বৎসর কারাবাসযোগ্য কোন অপরাধের বিচার করতে ক্ষমতা দিতে পারে এবং এই বিশেষ ক্ষমতাবলে ৩৩ক ধারা অনুযায়ী প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট সর্বোচ্চ ৭ বৎসর কারাবাস দিতে পারে। যেমন: দণ্ডবিধির ৩০৭ ধারার অধীন খুনের উদ্যোগের অপরাধের বিচার প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট করতে পারে যদি সরকার তাকে বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত করে। দণ্ডবিধির ৩০৭ ধারায় শুধুমাত্র খুনের উদ্যোগের শাস্তি হতে পারে অনধিক ১০ বৎসর। কিন্তু ফৌজদারী কার্যবিধির ২৯গ ধারায় প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট বা অন্য কোনো বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট অপরাধটির বিচার করলে সর্বোচ্চ ৭ বৎসর কারাবাস দিতে পারবে। এই ক্ষেত্রেও দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করতে হবে দায়রা জজের নিকট।
এখানে বলে রাখা ভালো যে, দণ্ডবিধির ১২৪ক ধারার অধীন রাষ্ট্রদ্রোহিতা [Sedition] অপরাধের বিচার করতে সরকার কর্তৃক বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট কোনো ব্যক্তিকে দণ্ডিত করলে তার বিরুদ্ধে আপীল করতে হবে হাইকোর্ট বিভাগে।
দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করার তামাদির মেয়াদ কত?:
তামাদি আইনের ১৫৪ এবং ১৫৫ অনুচ্ছেদে দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়েরের তামাদির মেয়াদ উল্লেখ করা হয়েছে। ১৫৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট ব্যতীত অন্যান্য আদালতে যেমন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা দায়রা জজের নিকট আপীল করার তামাদির মেয়াদ ৩০ দিন এবং ১৫৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করার তামাদির মেয়াদ ৬০ দিন।
খালাসের ক্ষেত্রে আপীল [Appeal in case of Acquittal] ধারা ৪১৭
ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৭ ধারায় খালাসের বিরুদ্ধে আপীলের বিধান আলোচনা করা হয়েছে। দায়রা আদালত প্রদত্ত খালাস আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করতে হবে। [ধারা ৪১৭(১) ও ৪১৭ (২)] এবং ম্যাজিস্ট্রেট প্রদত্ত খালাস আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা জজের নিকট আপীল দায়ের করতে হবে। [ধারা ৪১৭(১) ও ৪১৭ (২)
কে খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করতে পারে?
খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করতে পারে-
৪১৭ (১) ধারায় পাবলিক প্রসিকিউটর এবং ৪১৭ (২) ধারায় অভিযোগকারী খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করতে পারে।
পাবলিক প্রসিকিউটর কর্তৃক খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের সম্পর্কে ৪১৭ (১) ধারায় বলা হয়েছে, “যেকোনো মামলায়, সরকার পাবলিক প্রসিকিউটরকে আপীল দায়ের করার নির্দেশ দিতে পারে-
ক) যেকোন দায়রা আদালত কর্তৃক মূল মামলায় বা আপীলে প্রদত্ত খালাসের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে [to the High Court Division from an original or appellate order of acquittal passed by any Court of Session].
খ) যে কোন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক মূল মামলায় বা আপীলে প্রদত্ত খালাস আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা জজের নিকট [to the Court of Session from an original or appellate Order of an acquittal passed by any Magistrate.]
অভিযোগকারী কর্তৃক খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের সম্পর্কে ৪১৭(২) ধারায় বলা হয়েছে:
৪১৮ ধারায় যা কিছুই উল্লেখ থাকুক না কেন, যদি খালাসের আদেশ নালিশের ভিত্তিতে দায়েরকৃত মামলায় প্রদান করা হয়ে থাকে, এবং যদি এমন আদেশে কোনো আইনগত ভুল থাকে যা ন্যায় বিচার ব্যর্থ করে [error of law Occasioning failure of justice], উক্ত ক্ষেত্রে অভিযোগকারী আপীল দায়ের করতে পারে-
ক. যে কোন দায়রা আদালত কর্তৃক মূল মামলায় প্রদত্ত খালাস আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে [to the High Court Division from an original order of acquittal passed passed by any Court of Session]
খ. যেকোন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক মূল মামলায় প্রদত্ত খালাস আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা জজের নিকট [to the Court of Session from an original order of acquittal passed by any Magistrate.]
অভিযোগকারী শুধুমাত্র নালিশী মামলায় (C.R মামলায়) প্রদত্ত খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করতে পারে। শুধুমাত্র নালিশী মামলা হলেই হবে না একই সাথে অভিযোগকারীকে প্রমাণ করতে হবে যে, খালাস আদেশে আইনগত ভুল আছে এবং উক্ত আইনগত ভুলের কারণে ন্যায় বিচার ব্যর্থ হয়েছে
এখানে বলে রাখা ভালো যে, Original order of acquittal অর্থ হলো ফৌজদারী মামলায় বিচারিক আদালত যে খালাসের আদেশ প্রদান করে। অর্থাৎ মূল মামলায় বিচারিক আদালত খালাসের যে আদেশ প্রদান করে তাকে Original order of acquittal বলে। আপীল শুনানী শেষে আপীল আদালত যদি খালাসের আদেশ প্রদান করে তাহলে সেটা Appellate order of acquittal । যেমন খুনের মামলায় দায়রা আদালত হলো বিচারিক আদালত। বিচার শেষে দায়রা আদালত খালাস দিলে আপীল হবে হাইকোর্ট বিভাগে। কিন্তু চুরির মামলার বিচার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত করলে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত হলো বিচারিক আদালত। এই ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্তকে খালাস দিলে খালাসটি মূল মামলায় দেওয়া হয়েছে এবং এটা হলো Original order of acquittal । রাষ্ট্রপক্ষ খালাসের বিরুদ্ধে দায়রা জজের নিকট আপীল করলো। আপীলে দায়রা জজ খালাস দিলো। এটা হলো Appellate order of acquittal । রাষ্ট্রপক্ষ এই খালাসের বিরুদ্ধেও হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করতে পারবে। কিন্তু দায়রা জজের খালাসের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী আপিল করতে পারবেনা। কারণ আপিলে কোন খালাস আদেশ দিলে অভিযোগকারী কোন আপিল করতে পারে না।
খালাস আদেশের বিরুদ্ধে সংবাদদাতার প্রতিকার কি?
প্রাথমিক তথ্য বিবরণীর ভিত্তিতে দায়েরকৃত [FIR] বা [G.R.] মামলায় খালাস আদেশের বিরুদ্ধে ৪১৭(১) ধারার অধীন সরকার পাবলিক প্রসিকিউটরকে আপীল করার নির্দেশ দিতে পারে। ৪১৭ (১) ধারায় শুধুমাত্র রাষ্ট্রপক্ষ বা পাবলিক প্রসিকিউটরকে খালাসের বিরুদ্ধে আপীল করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। এই ধারায় সংবাদদাতা বা অভিযোগকারীর খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করার সুযোগ নেই । কিন্তু যদি রাষ্ট্র বা পাবলিক প্রসিকিউটর খালাস আদেশের বিরুদ্ধে কোন আপীল দায়ের না করে, উক্ত ক্ষেত্রে সংবাদদাতা রিভিশন দায়ের করতে পারে।
৪১৭(২) ধারায় 'অভিযোগকারী’ খালাসের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করতে পারে। ৪১৭ (২) ধারায় সংবাদদাতা বা সাক্ষীকে আপীল করার অধিকার দেওয়া হয়নি” এক্ষেত্রে একটি মামলা উল্লেখ করা যেতে পারে। আব্দুল কালাম বনাম মোহাম্মদ জুলফিকার, ৪৪ ডিএলআর, ১৯৯২] ৫৯৪।
অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে দণ্ডবৃদ্ধির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ আপীল না করলে, সংবাদদাতা আপীল করতে পারেনা। কারণ অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে দণ্ড বৃদ্ধির জন্য সংবাদদাতা আপীল করতে পারেনা।
এখানে বলে রাখা ভালো যে, যে ক্ষেত্রে খালাসের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করা হয় কিন্তু আপীলটি আদালত প্রত্যাখ্যান করে, তখন উক্ত প্রত্যাখ্যান আদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করা যাবেনা কিন্তু রিভিশন দায়ের করা যাবে। [ধারা ৪১৭(8)]
ফৌজদারী মামলায় দ্বিতীয় আপীল কি করা যায়?
শুধুমাত্র পাবলিক প্রসিকিউটর খালাস আদেশের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় আপীল দায়ের করতে পারে [ধারা ৪১৭(১)]। কিন্তু অভিযোগকারী দ্বিতীয় আপীল করতে পারেনা। উদাহরণ: ম্যাজিস্ট্রেট কোন আসামীকে খালাস দিলে সেই খালাস আদেশের বিরুদ্ধে পাবলিক প্রসিকিউটর ৪১৭(১) (খ) ধারায় দায়রা জজ কোর্টে আপীল দায়ের করতে পারে। উক্ত দায়রা জজ আপীল শুনানী করে যদি আসামীকে খালাস দেয়, তাহলে উক্ত খালাস আদেশের বিরুদ্ধে পাবলিক প্রসিকিউটর হাইকোর্টে পুনরায় দ্বিতীয় আপীল দায়ের করতে পারবে। কারণ পাবলিক প্রসিকিউটর বিচারে বা আপীলে উভয়ক্ষেত্রে প্রদত্ত খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করতে পারে।
সি.আর মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট বিচার শেষে অভিযুক্তকে খালাস প্রদান করে। উক্ত খালাস আদেশের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী ৪১৭(২)(খ) ধারা অনুসারে দায়রা জজের নিকট আপীল করতে পারে। দায়রা জজ আপীল শুনানী শেষে অভিযুক্তকে খালাস প্রদান করে। এই ক্ষেত্রে অভিযোগকারী হাইকোর্ট বিভাগে দ্বিতীয় আপীল করতে পারবেনা। কারণে আপীলে প্রদত্ত খালাস আদেশের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী কোন আপীল করতে পারেনা। অভিযোগকারী শুধুমাত্র বিচারিক আদালত কর্তৃক প্রদত্ত খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করতে পারে।
কত সময়ের মধ্যে খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করা যায়?
খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়েরের তামাদির মেয়াদ হতে পারে ৬০ দিন বা ৬ মাস। অভিযোগকারী কর্তৃক খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করার তামাদির মেয়াদ ৬০ দিন এবং পাবলিক প্রসিকিউটর কর্তৃক খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করার তামাদির মেয়াদ ৬ মাস। ৪১৭ এর ৩ ধারা অনুযায়ী একটি complaint case এ প্রদত্ত খালাসের রায় প্রদানের ৬০ দিনের মধ্যে অভিযোগকারী/ ফরিয়াদি (complainant) আপীল করতে পারবে। কিন্তু খালাস আদেশের বিরুদ্ধে পাবলিক প্রসিকিউটর কত দিনের মধ্যে আপীল করতে পারবে তা ৪১৭ ধারায় উল্লেখ করা হয় নি। তামাদি আইনের সিডিউল এর ১৫৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পাবলিক প্রসিকিউটর অর্থাৎ সরকার ফৌজদারী কার্যবিধির অধীন কোন খালাসের আদেশের বিরুদ্ধে ক্ষমতাপ্রাপ্ত আপীল আদালতে ৬ মাসের মধ্যে আপীল করতে পারে।
অপর্যাপ্ত দন্ডের বিরুদ্ধে আপীল (Appeal against Inadequacy of Sentence)
ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৭ক ধারায় অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীলের বিধান আছে। ফৌজদারী আদালত কর্তৃক প্রদত্ত দণ্ডাদেশ অপর্যাপ্ত হলে, উক্ত দণ্ডের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য ৪১৭ক ধারার বিধান অনুসারে পাবলিক প্রসিকিউটর বা অভিযোগকারী আপীল দায়ের করতে পারে। অপর্যাপ্ত দণ্ডের বিরুদ্ধে মূলত দণ্ড বৃদ্ধি জন্য আপীল করা হয়।
কে অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করতে পারে?
অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করতে পারে-
১. ৪১৭ক (১) ধারায় পাবলিক প্রসিকিউটর এবং
২. ৪১৭ (২) ধারায় অভিযোগকারী
অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে কোথায় আপীল করা যায় [ধারা ৪১৭ক]:
অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা যায়-
১. হাইকোর্ট বিভাগে [ধারা ৪১৭ক (১)] বা
২. সংশ্লিষ্ট আপীল আদালতে (ধারা ৪১৭ক (২)]
পাবলিক প্রসিকিউটর কর্তৃক অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল:
৪১৭ক (১) ধারায় বলা হয়েছে, যেকোন আদালত কর্তৃক বিচারে প্রদত্ত যেকোন দণ্ডের ক্ষেত্রে, উক্ত দণ্ডের বিরুদ্ধে উহার অপর্যাপ্তর কারণে সরকার পাবলিক প্রসিকিউটরকে (Public Prosecutor) হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করার নির্দেশ দিতে পারে।(“The government may, in any case of conviction on a trial held by any court, direct the Public Prosecutor to present an appeal to the High Court Division against the sentence on the ground of its inadequacy’]
অভিযোগকারী কর্তৃক অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল:
৪১৭ (২) ধারায় বলা হয়েছে, যেকোন আদালত কর্তৃক বিচারে প্রদত্ত যেকোন দণ্ডের ক্ষেত্রে, উক্ত দণ্ডের বিরুদ্ধে উহার অপর্যাপ্তর কারণে অভিযোগকারী(complainant) আপীল আদালতে আপীল দায়ের করতে পারে। [A complainant may, in any case of conviction on a trial held by any Court, present an appeal to the Appellate Court against the sentence on the ground of its inadequacy]
অপর্যাপ্ত দণ্ডের বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশ বৃদ্ধির জন্য আপীল কোথায় দায়ের করতে হবে তা নির্ণয় করতে হলে, দেখতে হবে কে আপীল করছে। যদি রাষ্ট্রপক্ষ বা পাবলিক প্রসিকিউটর অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করে তাহলে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করতে হবে। কিন্তু যদি অভিযোগকারী অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করে, তাহলে আপীল দায়ের করতে হবে সংশ্লিষ্ট Appellate Court এ বা আপীল আদালতে। অপর্যাপ্ত দপ্তাদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়েরের ক্ষেত্রে আর একটি বিবেচ্য বিষয় হলো দণ্ডাদেশটি কোন ধরণের মামলায় প্রদান করা হয়েছে। প্রাথমিক তথ্য বিবরণীর ভিত্তিতে দায়েরকৃত G.R. মামলায় দণ্ডাদেশটি প্রদত্ত হলে দণ্ড বৃদ্ধির জন্য শুধুমাত্র পাবলিক প্রসিকিউটর বা রাষ্ট্র আপীল করতে পারবে। এইক্ষেত্রে সংবাদদাতা বা নালিশকারীর আপীল করার কোন অধিকার নেই। কিন্তু নালিশের ভিত্তিতে দায়ের C.R মামলায় প্রদত্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে নালিশকারী আপীল দায়ের করতে পারবে। অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের ক্ষেত্রে দুই ধরনের আপীল হতে পারে। প্রথমত দণ্ডের বিরুদ্ধে দণ্ডিত আসামী আপীল করতে পারে। অন্যদিকে যে দণ্ড দেওয়া হয়েছে সেটা অপর্যাপ্ত হওয়ার কারণে দত্ত বৃদ্ধির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ বা নালিশকারী আপীল করতে পারে।
অভিযোগকারী কর্তৃক আপীল আদালতে অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল:
৪১৭ (২) ধারার অধীন অভিযোগকারী অপর্যাপ্ত দণ্ডের বিরুদ্ধে আপীল আদালতে আপীল করতে পারবে। এইক্ষেত্রে আপীল আদালত বলতে কি বোঝানো হয়েছে তা ৪১৭ক (২) ধারায় উল্লেখ করা হয়নি। এখানে আপীল আদালত |Appellate Court) বলতে দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে যেভাবে আপীল আদালত নির্ধারণ করতে হয়, ঠিক সেইভাবে নির্ধারণ করতে হবে। নালিশী মামলায় অপর্যাপ্ত দণ্ড দিলে ২ ধরণের আপীল হতে পারে। প্রথমত উক্ত দণ্ডের বিরুদ্ধে আসামী আপীল করতে পারে কারণ অপর্যাপ্ত হলেও সেটাতো মূলত একটি দণ্ড। দ্বিতীয়ত উক্ত অপর্যাপ্ত দণ্ড বৃদ্ধির জন্য নালিশকারীও আপীল করতে পারে। এই ক্ষেত্রে উক্ত দণ্ডের বিরুদ্ধে আসামী যে আদালতে আপীল করবে, অভিযোগকারীও সেই আদালতে উক্ত অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করবে এবং এই ক্ষেত্রে ৪০৭, ৪০৮ এবং ৪১০ ধারায় দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে যেভাবে আপীল আদালত নির্ধারণ করতে হয়, ঠিক একইভাবে অপর্যাপ্ত দণ্ডাদশের বিরুদ্ধে আপীল আদালত নির্ধারণ করতে হবে।
যেমন-একটি নালিশী মামলায় প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আসামীকে ৩ বৎসরের কারাদণ্ড দিলো। ৪০৮ ধারার বিধান অনুসারে, আসামী উক্ত দণ্ডের বিরুদ্ধে দায়রা জজের নিকট আপীল করতে পারবে। যদি নালিশকারী মনে করে যে, উক্ত দণ্ড অপর্যাপ্ত হয়েছে, তাহলে তিনি উক্ত দণ্ডবৃদ্ধির জন্য ৪১৭ (২) ধারায় আপীল করতে পারবে। এই ক্ষেত্রে নালিশকারী আপীল করবে ‘আপীল আদালতে’ অর্থাৎ দণ্ডের বিরুদ্ধে আসামী যে আদালতে আপীল করেছে সেখানে নালিশকারীও আপীল করবে। যেহেতু আসামী দায়রা জজের নিকট আপীল করেছে, সেহেতু নালিশকারীও দণ্ড বৃদ্ধির জন্য দায়রা জজের নিকট আপীল করবে।
রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল:
প্রাথমিক তথ্য বিবরণীর ভিত্তিতে দায়েরকৃত G.R. মামলায় দণ্ড বৃদ্ধির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ বা পাবলিক প্রসিকিউটর ৪১৭ (১) ধারায় হাইকোর্ট বিভাগে আপীল করতে পারে।
যেমন-প্রাথমিক তথ্য বিবরণীর ভিত্তিতে দায়েরকৃত G.R. মামলায় প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট কোন আসামীকে ৩ বৎসর কারাদণ্ড দিলো। আসামী উক্ত দণ্ডের বিরুদ্ধে ৪০৮ ধারায় দায়রা জজের নিকট আপীল করতে পারে। যেহেতু G.R. মামলা তাই রাষ্ট্রপক্ষ বা পাবলিক প্রসিকিউটর দণ্ডবৃদ্ধির জন্য ৪১৭ক(১) ধারায় হাইকোর্ট বিভাগে আপীল করতে পারবে। এই ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগ ৫২৬ ধারা অনুসারে দুইটি আপীল একত্রে শুনানী করতে পারে।
অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়েরের সময়সীমা কতদিন?
অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ বা অভিযোগকারী যে আপীল করুক না কেন, আপীল দায়েরের মেয়াদ ৬০ দিন। ৪১৭ক এর (২) ধারা অনুযায়ী অপর্যাপ্ত দণ্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীকে ৬০ দিনের মধ্যে আপীল করতে হবে। কিন্তু পাবলিক প্রসিকিউটর অপর্যাপ্ত দণ্ডের বিরুদ্ধে আপীল করলে কত দিনের মধ্যে দায়ের করবে তা ৪১৭ক ধারায় উল্লেখ করা হয়নি। তামাদি আইনের সিডিউলের ১৫৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, খালাস এবং মৃত্যুদণ্ডাদেশ ব্যতীত অন্যান্য আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল করতে হবে ৬০ দিনের মধ্যে। যেহেতু পাবলিক প্রসিকিউটর অপর্যাপ্ত দণ্ডের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপীল দায়ের করবে, তাই তাকে ৬০ দিনের মধ্যে আপীল দায়ের করতে হবে।
৪০৫, ৪০৬ এবং ৪০৬ক এবং ৪৭৬খ ধারার অধীন আপীলের বিধান
ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০৫, ৪০৬ এবং ৪০৬ক এবং ৪৭৬খ ধারায় নিম্নলিখিত বিষয়ে আপীলের বিধান করা হয়েছে।
১. ৮৯ ধারার অধীন ক্রোককৃত সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের আবেদন অগ্রাহ্য করলে (ধারা ৪০৫) বা
২. ১১৮ ধারার অধীন মুচলেকার আদেশের| (৪০৬) বা
৩. ১২২ ধারার অধীন জামানত গ্রহণ করতে অস্বীকার করা বা জামানত নাকচ করার আদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করা যায় (ধারা ৪০৬ক]। বা
৪. ৪৭৬ এবং ৪৭৬ক ধারায় Complaint দায়েরের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে দেওয়ানী, রাজস্ব বা ফৌজদারী আদালত কর্তৃক প্রদত্ত আদেশের বিরুদ্ধে ৪৭৬খ ধারা অনুযায়ী আপীল দায়ের করা যাবে।
কোন কোন ক্ষেত্রে আপীল চলে না? [Cases in Which No Appeal Lies]
ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১২ থেকে ৪১৪ ধারায় যে সকল ক্ষেত্রে আপীল দায়ের করা যাবেনা তা উল্লেখ করা হয়েছে।
৪১২ ধারা অনুযায়ী দোষ স্বীকারের ক্ষেত্রে [In Case of Guilty Plead] অর্থাৎ আসামী দোষ স্বীকার করলে এবং তার উপর ভিত্তি করে আসামীকে দণ্ড দিলে, সেই দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে না । কিন্তু উক্ত দণ্ডাদেশের পরিমাণ বা যৌক্তিকতা [extent or legality] বিষয়ে আপীল দায়ের করা যাবে। যেমন- দোষ স্বীকার করার পরও অধিক দণ্ড দিলে, দণ্ডের পরিমাণের [quantum of sentence] বৈধতার বিষয়ে আপীল করা যেতে পারে।
৪১৩ ধারা অনুযায়ী তুচ্ছ মামলায় [Petty Cases] কোন আপীল নেই অর্থাৎ ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৩ ধারা অনুসারে কোন দণ্ডিত ব্যক্তি আপীল করতে পারবে না যদি দায়রা আদালত অনধিক ১ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করে বা দায়রা আদালত বা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা অন্যকোন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট অনধিক ৫০ টাকার অর্থদণ্ড প্রদান করে। অন্যদিকে যদি আদালত শুধুমাত্র জরিমানা আরোপ করে এবং উক্ত জরিমানা প্রদানে ব্যর্থতার কারণে আদালত দণ্ড আরোপ করলে উক্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে আপীল করা যাবেনা।
৪১৪ ধারা অনুযায়ী সংক্ষিপ্ত বিচারের কতিপয় দণ্ডের বিরুদ্ধে আপীল নেই [Summary Conviction] অর্থাৎ ২৬০ ধারার অধীন সংক্ষিপ্ত বিচার পদ্ধতিতে ম্যাজিস্ট্রেট অনধিক ২০০ (দুইশত) টাকা জরিমানা করে আদেশ দিলে সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে না ।
টপিকস
কোন আপীল আদালতে দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা যায়? দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করার তামাদির মেয়াদ কত? খালাসের ক্ষেত্রে আপীল। কে খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করতে পারে? খালাস আদেশের বিরুদ্ধে সংবাদদাতার প্রতিকার কি? ফৌজদারী মামলায় দ্বিতীয় আপীল কি করা যায়? কত সময়ের মধ্যে খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করা যায়? অপর্যাপ্ত দন্ডের বিরুদ্ধে আপীল। কে অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করতে পারে? অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়েরের সময়সীমা কতদিন? কোন কোন ক্ষেত্রে আপীল চলে না?
Video কোন আপীল আদালতে আপীল করা যায়-দন্ডাদেশ খালাস অব্যাহতি অপর্যাপ্ত দন্ড আপিল আদালত