- Get link
- X
- Other Apps
অব্যাহতি (Discharge), খালাস (Acquittal) এবং মুক্তির (Release) মধ্যে পার্থক্য।
যে সকল ক্ষেত্রে আদালত খালাসের আদেশ দিতে পারে
যে সকল ক্ষেত্রে আদালত অব্যাহতির (Discharge] আদেশ দিতে পারে।
অনুসন্ধান ও বিচারের সাধারন বিধানসমূহ।
কখন শর্তসাপেক্ষে দুষ্কর্মের সহযোগীকে ক্ষমা করা যায়?
কখন আসামীর অনুপস্থিতিতে বিচার করা যায়?
কত সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে/মামলা নিষ্পত্তির সময়।
ফৌজদারী মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি কি সাক্ষী হতে পারে?/ফৌজদারীতে অভিযুক্ত ব্যক্তির সাক্ষী হওয়ার যোগ্যতা।
আসামীর সাক্ষী হওয়ার যোগ্যতা।
আসামীকে পরীক্ষা করার ক্ষমতা।
কখন মামলার কার্যক্রম মুলতবি করা যায়?/মামলার কার্যক্রম মুলতুবি।
কতিপয় অপরাধের আপস মীমাংসা।
অপরাধের আপস মীমাংসার আপীল।
যে সকল ক্ষেত্রে আদালত খালাসের আদেশ দিতে পারে
যে সকল ক্ষেত্রে আদালত অব্যাহতির (Discharge] আদেশ দিতে পারে।
অনুসন্ধান ও বিচারের সাধারন বিধানসমূহ।
কখন শর্তসাপেক্ষে দুষ্কর্মের সহযোগীকে ক্ষমা করা যায়?
কখন আসামীর অনুপস্থিতিতে বিচার করা যায়?
কত সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে/মামলা নিষ্পত্তির সময়।
ফৌজদারী মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি কি সাক্ষী হতে পারে?/ফৌজদারীতে অভিযুক্ত ব্যক্তির সাক্ষী হওয়ার যোগ্যতা।
আসামীর সাক্ষী হওয়ার যোগ্যতা।
আসামীকে পরীক্ষা করার ক্ষমতা।
কখন মামলার কার্যক্রম মুলতবি করা যায়?/মামলার কার্যক্রম মুলতুবি।
কতিপয় অপরাধের আপস মীমাংসা।
অপরাধের আপস মীমাংসার আপীল।
অব্যাহতি (Discharge), খালাস (Acquittal) এবং মুক্তির (Release) মধ্যে পার্থক্য
অব্যাহতি, খালাস এবং মুক্তির মধ্যে পার্থক্য নিচে দেওয়া হলো।
অব্যাহতি এবং খালাসের মধ্যে পার্থক্য হলো অব্যাহতি দেওয়া হয় চার্জ গঠনের আগে আর খালাস দেওয়া হয় চার্জ গঠনের পর। যেক্ষেত্রে অভিযোগের কোন সত্যতা পাওয়া যায় না সেই ক্ষেত্রে বিচারিক আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন না করে অব্যাহতি দিতে পারে।
অন্যদিকে খালাসের প্রশ্ন ওঠে চার্জ গঠনের পর বিভিন্ন কারণে অভিযুক্ত ব্যক্তি খালাস পেতে পারে। সাধারণ নিয়ম হলো মামলার শুনানী ও সাক্ষ্য গ্রহণ শেষেই অভিযুক্ত ব্যক্তি খালাস পাবে যদি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে চার্জ গঠনের পর এবং মামলার শুনানী শেষ হবার আগেও অভিযুক্ত খালাস পেতে পারে। যেমন ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪৭ ধারায় শুনানির দিনে নালিশকারি হাজির না হলে বা ২৪৮ ধারায় নালিশকারি নালিশ প্রত্যাহার করে নিলে বা ৪৯৪(খ) ধারায় পাবলিক প্রসিকিউশন চার্জ গঠনের পর মামলা প্রত্যাহার করে নিলে ক্ষমতাপ্রান্ত আদালত অভিযুক্তকে খালাস দিতে পারে।
খালাসের বিরুদ্ধে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তির প্রতিকার হলো আপীল। যেখানে অব্যাহতির বিরুদ্ধে প্রতিকার হলো রিভিশন।উক্ত অব্যাহতির বিরুদ্ধে পুনরায় একই বিষয়ে মামলা দায়ের করতে পারে। কারণ এই ক্ষেত্রে ৪০৩ ধারার দোবারা সাজার নীতি প্রযোজ্য না। কিন্তু খালাসের ক্ষেত্রে একই বিষয়ে পুনরায় মামলা করা যায় না। কারণ এই ক্ষেত্রে ৪০৩ ধারার দোবারা সাজার (Double Jeopardy) প্রযোজ্য হয়।
অন্যদিকে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি মামলা চলাকালীন সময়ে জামিনে মুক্তি পেতে পারে।অব্যাহতির ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম বাতিল বা খারিজ হয়ে যায়। এমনকি খালাসের ক্ষেত্রে মামলার কার্যক্রম সমাপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু মুক্তির ক্ষেত্রে মামলার কার্যক্রম চলমান থাকে বা ২৪৯ ধারার বিধান অনুসারে মামলার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্তকে হাজিরা হতে মুক্তি দিতে পারে। অব্যাহতির ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম বাতিল বা খারিজ হয়ে যায়। এমনকি খালাসের ক্ষেত্রে মামলার কার্যক্রম সমাপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু মুক্তির ক্ষেত্রে মামলার কার্যক্রম চলমান থাকে বা মুলতবি বা বন্ধ থাকে কিন্তু খারিজ বা বাতিল হয় না। যেমন জামিনে মুক্তি পেলে মামলার কার্যক্রম চলমান থাকে এবং হাজিরা দিতে হয়। ২৪৯ ধারায় মুক্তির ক্ষেত্রে মামলার কার্যক্রম বন্ধ থাকে। সাক্ষী পাওয়া গেলে পুনরায় মামলার কার্যক্রম চলমান হয়।
যে সকল ক্ষেত্রে আদালত খালাসের আদেশ দিতে পারে।
ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ম্যাজিস্ট্রেট আসামীর কোন দোষ না পেলে ২৪৫ ধারায় আসামিকে খালাস দিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিকার হলো আপিল। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে শুনানীর জন্য নির্ধারিত দিনে অভিযোগকারী হাজির না হলে এবং অভিযুক্ত হাজির হলে ম্যাজিস্ট্রেট ২৪৭ ধারায় আসামিকে খালাস দিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিকার হলো আপিল।ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে অভিযোগকারী নালিশ প্রত্যাহার করলে ম্যাজিস্ট্রেট ২৪৮ ধারায় আসামিকে খালাস দিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিকার হলো আপিল। দায়রা জজ কোর্টে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামীর কোন অপরাধ না পেলে দায়রা জজ ২৬৫জ ধারায় আসামিকে খালাস দিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিকার হলো আপিল।ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে বা দায়রা জজ কোর্টে দুষ্কর্মের সহযোগী ক্ষমার শর্তপূরণ করলে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট বা দায়রা জজ ৩৩৯ক (২) ধারায় আসামিকে খালাস দিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিকার হলো আপিল। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে বা দায়রা জজ কোর্টে ৩৪৫ ধারায় অপরাধের আপস মীমাংসা হলে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট বা দায়রা জজ ৩৪৫ (৬) ধারায় আসামিকে খালাস দিতে পারে। এবং এক্ষেত্রে প্রতিকার হলো আপিল।হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে শুনানি করে ৩৭৬ (গ) ধারায় আসামিকে খালাস দিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিকার হলো আপিল। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে বা দায়রা জজ কোর্টে পাবলিক প্রসিকিউটর চার্জ গঠনের পর মামলা প্রত্যাহার করলে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট বা দায়রা জজ ৪৯৪ (খ) ধারায় আসামিকে খালাস দিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিকার হলো আপিল।
যে সকল ক্ষেত্রে আদালত অব্যাহতির (Discharge] আদেশ দিতে পারে:
ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ রিপোর্ট গ্রহণ করলে ম্যাজিস্ট্রেট ২০২(২খ) ধারায় আসামিকে অব্যাহতি দিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিকার হলো রিভিশন। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগ ভিত্তিহীন মনে করলে ম্যাজিস্ট্রেট ২৪১ক ধারায় আসামিকে অব্যাহতি দিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিকার হলো রিভিশন। দায়রা আদালতে দায়রা জজ অভিযোগ ভিত্তি মনে করলে দায়রা জজ ২৬৫গ ধারায় আসামিকে অব্যাহতি দিতে পারে এবং এক্ষেত্রে প্রতিকার হলো রিভিশন।ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বা দায়রা আদালতে ৪৯৪ ধারায় চার্জ গঠনের আগে পাবলিক প্রসিকিউটর মামলা প্রত্যাহার করলে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট বা দায়রা জজ আসামিকে অব্যাহতি দিতে পারে এবং এক্ষেত্রে প্রতিকার হলো রিভিশন।
অনুসন্ধান ও বিচারের সাধারন বিধানসমূহ [General Provisions as to Inquiries and Trials]
কখন শর্তসাপেক্ষে দুষ্কর্মের সহযোগীকে ক্ষমা করা যায়? [Conditional Pardon to an Accomplice]
৩৩৭ ও ৩৩৮ ধারায় সত্য সাক্ষ্যদানের শর্তসাপেক্ষে দুষ্কর্মের সহযোগীকে ক্ষমা করার বিধান করা হয়েছে। দুষ্কর্মের সহযোগী বা রাজসাক্ষীর বিচারের পদ্ধতি ৩৩৯ক ধারায় আলোচনা করা হয়েছে। অপরাধের সহযোগিকে যা দুষ্কর্মের সহযোগীকে এই শর্তে ক্ষমা করা হয় যে, সে অপরাধ সম্পর্কে তার জানা সম্পূর্ণ এবং সত্য ঘটনাসমূহ প্রকাশ করবে।
৩৩৭ ধারায় অপরাধের সহযোগীকে ক্ষমা করতে পারে
১. মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট; বা
২. প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট
৩৩৭ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেট অপরাধের তদন্ত বা অনুসন্ধানের বা বিচারের যেকোন পর্যায়ে সাক্ষ্য প্রমাণ প্রাপ্তির জন্য অপরাধের সহযোগীকে এই শর্তে ক্ষমা করতে পারে যে, উক্ত সহযোগী অপরাধ সম্পর্কিত তার জানা সম্পূর্ণ এবং সত্য ঘটনাসমূহ প্রকাশ করবে।
৩৩৮ ধারায় বলা হয়েছে-
১. যে দায়রা আদালত মামলার বিচার করছে সেই দায়রা আদালত অপরাধের সহযোগীকে ক্ষমা করতে পারে বা ক্ষমা করার নির্দেশ দিতে পারে; বা
২. চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অপরাধের সহযোগীকে ক্ষমা করতে পারে।
৩৩৮ ধারা অনুসারে অপরাধের সহযোগিকে ক্ষমা করতে পারে রায় প্রদানের পূর্বে যেকোন সময়। যে সহযোগীকে যে সকল শর্তে ক্ষমা করা হয়েছে, পাবলিক প্রসিকিউটর যদি মত প্রকাশ করে যে, উক্ত ব্যক্তি ক্ষমার শর্তসমূহ পালন করেনি, তখন আদালত উক্ত অপরাধীর বিচার করতে পারে [ধারা ৩৩৯]। দুষ্কর্মের সহযোগীকে বিচারের সময় বিচারিক আদালত (দায়রা আদালত বা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত) দুষ্কর্মের সহযোগীকে প্রশ্ন করবে যে, তাকে যে শর্তে ক্ষমা করা হয়েছে, সে সেই সকল শর্তসমূহ প্রতিপালন করেছে কিনা। যদি সে দাবী করে যে, সে উক্ত শর্তসমূহ প্রতিপালন করেছে, তখন আদালত রায়ের পূর্বে নির্ধারণ করবে যে আসামী ক্ষমার শর্তসমূহ মান্য করেছে কিনা এবং আদালত যদি মনে করে যে, আসামী উক্ত শর্তসমূহ মান্য করেছে, তাহলে আদালত আসামীকে ৩৩৯ক (২) ধারায় খালাসের [Acquittal] আদেশ দিবে।
কখন আসামীর অনুপস্থিতিতে বিচার করা যায়? (Trial in Absentia)
ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৩৯খ ধারায় আসামীর অনুপস্থিতিতে বিচার সম্পর্কে আলোচনা করছে। আসামীর অনুপস্থিতিতে বিচারের ক্ষেত্রে আদালত সর্বপ্রথম ফৌজদারী কার্যবিধির ৮৭ এবং ৮৮ ধারার বিধান পালন করবে। ৮৭ ধারা অনুসারে, আদালত যে আসামীর বিরুদ্ধে সমন জারি করে, সে পলাতক বা আত্মগোপন করলে আদালত তাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে যা ৩০ দিনের কম নয় এমন সময়ে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিবে এবং লিখিত হুলিয়া জারি করবে। তারপরও যদি অভিযুক্ত হাজির না হয়, তাহলে ৮৮ ধারা অনুসারে আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তির স্থাবর ও অস্থাবর উভয় সম্পত্তি ক্রোক করার আদেশ দিতে পারে।
৮৭ ও ৮৮ ধারার বিধান প্রতিপালন করার পরও, আদালতের যদি বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি পলায়ন করেছে বা নিজেকে আত্মগোপন করেছে যেন তাকে গ্রেফতার না করা যায় বা বিচারের জন্য হাজির না করা যায় এবং তাকে গ্রেফতার করার আপতত কোন সম্ভাবনা নেই, সেই ক্ষেত্রে আদালত উক্ত অভিযুক্তকে হাজির হওয়ার জন্য সর্বনিম্ন ২টি বহুল প্রচারিত বাংলা জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দিবে। যদি অভিযুক্ত এমন নির্দেশনা মান্য করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে অভিযুক্ত ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে বিচার চলবে। কিন্তু যে আসামীকে আদালতে হাজির করা হয়েছে, বা যে আসামী জামিনে মুক্তি পেয়েছে, উক্ত আসামী পলায়ন করলে বা হাজির হতে ব্যর্থ হলে, তার ক্ষেত্রে অনুপস্থিতিতে বিচার করার সাধারণ নিয়ম (উপরে উল্লেখিত) প্রযোজ্য হবে না।
কত সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে/মামলা নিষ্পত্তির সময় [Time for disposal of cases):
৩৩৯গ ধারা অনুসারে
i.ম্যাজিস্ট্রেট কোন মামলার বিচার শেষ করবে ১৮০ দিনের মধ্যে; এবং
ii.দায়রা কোর্ট কোন মামলার বিচার শেষ করবে ৩৬০ দিনের মধ্যে।
iii.মামলার বিচার নিষ্পত্তি করার এই সময় আদালতের জন্য আদেশসূচক [Directory]।
৩৩৯গ (১) ধারায় উল্লেখিত সময়ের মধ্যে মামলার বিচার নিষ্পত্তি করতে না পারলে এবং অভিযুক্ত যদি জামিনঅযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত হয়, তাহলে আদালত তার সন্তুষ্টি অনুসারে অভিযুক্তকে জামিনে মুক্তি দিতে পারে [ধারা ৩৩৯গ (৪)]। ১৬৭(৫) ধারায় বিধান করা হয়েছে, ১২০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ না করতে পারলে ম্যাজিস্ট্রেট বা দায়রা আদালত অভিযুক্তকে জামিনে মুক্তি দিতে পারে।
ফৌজদারী মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি কি সাক্ষী হতে পারে?/ফৌজদারীতে অভিযুক্ত ব্যক্তির সাক্ষী হওয়ার যোগ্যতা
ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪০ ধারায় ২টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে-
১. উকিলের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার [Right to be defended by a Pleader] দেওয়া হয়েছে।
২. অভিযুক্ত ব্যক্তির সাক্ষী হওয়ার যোগ্যতা [Compentency of an accused to be a witness]
উকিলের মাধ্যমে আত্মপক্ষসমর্থন:
ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪০ (১) ধারায় ফৌজদারী অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তিকে কৌসুলীর মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদে কোন আসামীকে কোন অ্যাডভোকেটের মাধ্যমে আইনী পরামর্শের যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে সেই একই অধিকার ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪০ ধারায় দেওয়া হয়েছে।
আসামীর সাক্ষী হওয়ার যোগ্যতা:
ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪০ ধারায় একজন অভিযুক্ত শুধুমাত্র তার আত্মপক্ষসমর্থনে [for his defence] যোগ্য সাক্ষী হতে পারে বা আসামী শুধুমাত্র Defence Witness (DW) হতে পারে। ৩৪০ (৩) ধারা অনুসারে, লিখিত অনুরোধক্রমে আসামী আত্মপক্ষসমর্থনে সাক্ষ্য দিতে পারে। ৩৪০ (৩) ধারায় বলা হয়েছে- ফৌজদারী আদালতে অভিযুক্ত যে কোনো ব্যক্তি তার আত্মপক্ষসমর্থনে যোগ্য সাক্ষী হবে এবং তার বিরুদ্ধে বা একই বিচারে তার সাথে অভিযুক্ত করা হয়েছে এমন কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য শপথপূর্বক সাক্ষ্য দিতে পারবে। শর্ত হলো তাকে সাক্ষী হিসাবে আহ্বান করা যাবে না তার লিখিত অনুরোধ ছাড়া। অর্থাৎ সাক্ষী শুধুমাত্র লিখিত অনুরোধ করলে, আদালত তাকে আত্মপক্ষসমর্থনে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আহ্বান করতে পারে।
সুতরাং ৩৪০ ধারা অনুযায়ী, একজন আসামী
১. তার নিজের আত্মপক্ষ সমর্থনে বা নিজের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে পারে এবং
২. একই বিচারে অন্যান্য যে সকল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে তাদের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে পারে। একজন সাক্ষী কিন্তু কখনও রাষ্ট্রপক্ষের বা অভিযোগকারী পক্ষের সাক্ষী বা prosecution witness(Pw) হতে পারেনা বরং শুধুমাত্র বিবাদীপক্ষের বা defence witness [DW) হতে পারে। কারণ যে পক্ষ আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে, সেই পক্ষের হয়ে আসামী তার নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে পারেনা এবং এটা সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। একজন সাক্ষী শুধুমাত্র আত্মপক্ষ সমর্থনে সাক্ষী (DW) হতে পারে।
[ধারা-৩৪২] আসামীকে পরীক্ষা করার ক্ষমতা (Power to examine the accused):
ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারা অনুযায়ী আদালত আসামীকে পরীক্ষা করতে পারবে। পরীক্ষা করতে পারবে অর্থ হলো প্রসিকিউশন পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে এবং আসামীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের আহ্বান জানাবার পূর্বে আদালত আসামীকে মামলা সম্পর্কে সাধারণ প্রশ্ন করতে পারবে যেন আসামী তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যে উত্থাপিত কোন বিষয় বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়। আদালত মামলার বিচার বা অনুসন্ধানের পূর্বে যেকোনো সময়ে এবং আসামীকে কোন পূর্ব সতর্ক করা ছাড়া, আদালত আসামীকে এমন প্রশ্ন করতে পারে। কিন্তু এটা অবশ্যই আসামীকে তার আত্মপক্ষ সমর্থনে আহ্বান করার পূর্বে করতে হবে।
তবে এখানে জেনে রাখা ভালো যে, ৩৪২ ধারা অনুযায়ী আদালত আসামীর নিকট যে প্রশ্ন করে, আসামী এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করলে বা মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে, সে শাস্তির জন্য দায়ী হবেনা। কিন্তু আদালত এই ক্ষেত্রে অনুমান করতে পারে। ৩৪০ ধারা আসামীকে শপথ করাতে হয় কিন্তু ৩৪২ ধারায় সাক্ষীকে শপথ করানো যাবেনা।
কখন মামলার কার্যক্রম মুলতবি করা যায়?/মামলার কার্যক্রম মুলতুবি [Power to postpone or adjourn proceedings]
ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪৪ ধারায় ২টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রথমত ফৌজদারী মামলার কার্যক্রম স্থগিত বা মুলতুবি এবং দ্বিতীয় মামলার কার্যক্রম স্থগিত বা মুলতুবি রেখে অভিযুক্তকে কারাগারে প্রেরণ। কারণ ৩৪৪ ধারায় নিম্নলিখিত কারণে আদালত মামলার কার্যক্রম স্থগিত বা মুলতুবির আদেশ দিতে পারে। ১) সাক্ষীর অনুপস্থিতি বা
২)অন্য কোন যুক্তিসঙ্গত কারণে।
৩৪৪ ধারায় যদিও আদালত কত দিনের জন্য মামলার কার্যক্রম মুলতুবি বা স্থগিতের আদেশ দিতে পারে সেটা উল্লেখ নেই, কিন্তু অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য আদালত মুলতুবি মঞ্জুর করতে পারেনা। যেমন: সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হাজির না হলে, মুলতুবির আদেশ দিতে পারে।
৩৪৪ ধারার অধীন ম্যাজিস্ট্রেট মামলার কার্যক্রম মুলতুবি করে
কোন আসামীকে এক সঙ্গে ১৫ দিনের অধিক মেয়াদে হাজতে ফেরত (রিমান্ডে) পাঠাতে পারবে না। রিমান্ডের (ফেরতের) কারণ ২টি
১. আসামী অপরাধ করতে পারে এমন পর্যাপ্ত সাক্ষ্য পাওয়া গিয়েছে এবং
২. রিমান্ডের দ্বারা আরও সাক্ষ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে।
কতিপয় অপরাধের আপস মীমাংসা (Compounding Offences)
কতিপয় ফৌজদারী অপরাধের আপস মীমাংসা হতে পারে। ৩৪৫ ধারায় যে সকল অপরাধসমূহ আপসযোগ্য, সেই সকল অপরাধের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। দণ্ডবিধির কোন ধারার কোন অপরাধটি আপসযোগ্য তা ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪৫ ধারায় উল্লেখিত টেবিলের প্রথম এবং দ্বিতীয় কলামে উল্লেখ করা হয়েছে এবং যে ব্যক্তির দ্বারা এমন অপরাধ আপস করা যায় তা তৃতীয় কলামে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন দণ্ডবিধির ৩২৩ এবং ৩২৪ ধারায় আঘাতের অপরাধ মীমাংসা করতে পারে যাকে আঘাত দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ ভিকটিম।
অপরাধের আপস মীমাংসার আপীল
সেহেতু ৩৪৫ ধারায় আপস মীমাংসা আসামীর খালাস বলে গণ্য হয় এবং যেহেতু খালাসের বিরুদ্ধে আপীল করা যায়, তাই ৩৪৫ ধারায় আপস মীমাংসার বিরুদ্ধে ৪১৭ ধারায় সরকার আপীল করতে পারে।
টপিকস
অব্যাহতি (Discharge), খালাস (Acquittal) এবং মুক্তির (Release) মধ্যে পার্থক্য। যে সকল ক্ষেত্রে আদালত খালাসের আদেশ দিতে পারে। যে সকল ক্ষেত্রে আদালত অব্যাহতির (Discharge] আদেশ দিতে পারে। অনুসন্ধান ও বিচারের সাধারন বিধানসমূহ। কখন শর্তসাপেক্ষে দুষ্কর্মের সহযোগীকে ক্ষমা করা যায়? কখন আসামীর অনুপস্থিতিতে বিচার করা যায়? কত সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে/মামলা নিষ্পত্তির সময়। ফৌজদারী মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি কি সাক্ষী হতে পারে?/ফৌজদারীতে অভিযুক্ত ব্যক্তির সাক্ষী হওয়ার যোগ্যতা। আসামীর সাক্ষী হওয়ার যোগ্যতা। আসামীকে পরীক্ষা করার ক্ষমতা। কখন মামলার কার্যক্রম মুলতবি করা যায়?/মামলার কার্যক্রম মুলতুবি। কতিপয় অপরাধের আপস মীমাংসা। অপরাধের আপস মীমাংসার আপীল।
পার্থক্য- অব্যাহতি খালাস মুক্তি,যে সকল ক্ষেত্রে আদালত খালাসের আদেশ দিতে পারে