- Get link
- X
- Other Apps
Part One -Preliminary
প্রথম ভাগ -প্রাথমিক বিষয়
ধারা ১ সংক্ষিপ্ত শিরােনাম:
এই আইন ১৮৭৭ সনের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন নামে অভিহিত হবে।
প্রয়ােগের সীমানাঃ সমগ্র বাংলাদেশে ইহা বলবৎ হবে ।
বলবৎ এর তারিখঃ ১৮৭৭ সনের মে মাসের ১লা তারিখ হতে এই আইন বলবৎ হবে।
ধারা ৩ ব্যাখ্যা অনুচ্ছেদ
বিষয়বস্তুতে বা প্রসঙ্গে বিপরীত কিছু না থাকলে এই আইনে
“বাধ্যবাধকতা” অর্থ আইন দ্বারা কার্যকরীকরণযােগ্য প্রতিটি কর্তব্য।
‘ট্রাষ্ট” অর্থ প্রত্যেক ধরণের সুস্পষ্ট ইঙ্গিতবােধক বা আনুমানিক বিশ্বাসপূর্বক ন্যস্ত মালিকানা।
“ট্রাষ্টী” অর্থ এমন প্রতিটি ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত হবে যে সুস্পষ্টভাবে, ইঙ্গিতবােধকভাবে অথবা আনুমানিকভাবে বিশ্বাসপূর্বক ন্যস্ত মালিকানার অধিকারী।
উদাহরণসমূহ।
ক) খ ক-কে জমি দান করল এবং এতে কোনরূপ সন্দেহ রাখল না যে, খ জীবিত থাকা পর্যন্ত ক তাকে বার্ষিক ১০০০ টাকা বৃত্তি প্রদান করবে। ক এই দান গ্রহণ করল। এক্ষেত্রে এই আইনের অর্থ অনুসারে বার্ষিক বৃত্তির সীমা পর্যন্ত খ-এর জিম্মাদার।
খ) ক খ-এর আইনগত চিকিৎসক বা আধ্যাত্মিক উপদেষ্টা। এই উপদেষ্টা পদের সদ্ব্যবহার করে ক কিছু আর্থিক সুবিধা লাভ করল যা অন্যথায় খ-এর নিকটই স্বাভাবিকভাবে জমা হতে পারত। এই আইনের বিধান অনুসারে উক্ত সুবিধার ব্যাপারে ক খ-এর জিম্মাদার।
গ) ক খ-এর ব্যাংকার হিসেবে তার নিজস্ব লক্ষ্য বাস্তবায়নার্থে খ-এর একাউন্টের অবস্থা ফাঁস করে দেয়। এই আইনের অর্থ অনুসারে তেমন ফাঁসের ফলে ক যে সুবিধা অর্জন করে তার জন্য ক খ-এর জিম্মাদার।
ঘ) ক কতিপয় ইজারাধীন জমির বন্ধকগ্রহীতা হিসেবে নিজের নামে ইজারার মেয়াদ বাড়ায়। এই আইনের অর্থ অনুসারে মূল ইজারার সাথে স্বার্থ-সংশ্লিষ্টদের জন্য ক বর্ধিত মেয়াদের ইজারার জিম্মাদার।
ঙ) অংশীদারদের একজন হিসেবে ক-কে কারবারে মালামাল কেনার লক্ষ্যে নিযুক্ত করা হয়। ক তার অন্যান্য অংশীদারের অজ্ঞাতে বাজারদরে এমন মাল সরবরাহ করল, যা সে বাজারদর যখন কম ছিল তখন ক্রয় করেছিল এবং এভাবে সে উল্লেখযােগ্য মুনাফা অর্জন করল। এই আইনের অর্থ অনুসারে তেমনভাবে অর্জিত মুনাফার ব্যাপারে অন্যান্য অংশীদারের জন্য ক জিম্মাদার।
চ) খ-এর মালিকানধীন নীল কারখানার ম্যানেজার ক নীল বীজ বিক্রেতা গ-এর এজেন্ট হয় এবং খ-এর সম্মতি ছাড়াই কারখানার জন্য গ-এর কাছ থেকে ক্রীত নীল বীজের উপর কমিশন গ্রহণ করে। এই আইনে অর্থ অনুসারে গৃহীত কমিশনের ব্যাপারে ক খ-এর জিম্মাদার।
ছ) খ ইতিপূর্বেই যে জমি কেনার উদ্দেশ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ইহা অবগত হয়েও ক উক্ত জমি কিনল। এই আইনের অর্থ অনুসারে উক্তভাবে ক্রীত জমির ব্যাপারে ক খএর জিম্মাদার।
জ) গ জমি দখল করছে, ইহা অবগত হয়েও ক খ-এর কাছ থেকে জমি কিনল। ক উক্ত জমির ব্যাপারে গ-এর সম্পর্কে কোন তদন্তের ব্যাপারটিকে উপেক্ষা করে। এই আইনের অর্থ অনুসারে তেমন স্বত্বের সীমা পর্যন্ত ক গ-এর জিম্মাদার।
‘পওনী” অর্থ এমন দলিল [উত্তরাধিকার আইন, ১৯২৫ (১৯২৫ সনের ৩৯নং আইন) এর সংজ্ঞা অনুসারে যা উইল বা উইলের পরিশিষ্ট নয়) যার মাধ্যমে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তিতে আনুক্রমিক স্বত্বের প্রতিসংক্রম বা লক্ষ্যের প্রবর্তন করা হয় বা প্রবর্তনের সম্মতি প্রকাশ করা হয় । চুক্তি আইনের যে সকল শব্দের সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে: যে সমস্ত শব্দের সংজ্ঞা চুক্তি আইন, ১৮৭২ (১৮৭২ সনের ৯নং আইন) এ প্রদান করা হয়েছে এমন যে সমস্ত শব্দ এই আইনে ব্যবহৃত হয়েছে, তার অর্থ উক্ত আইনে অনুরূপ শব্দগুলাের যে অর্থ করা হয়েছে সে একই অর্থবােধক গণ্য করা হবে।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩ ধারার উপর আলােচনা ও প্রয়ােগ
ধারা ৩-কে ব্যাখ্যামূলক বলা হলেও মূলত উহা অন্যান্য আইনের মত সংজ্ঞামূলক। এ ধারাতে ৩টি বিষয়ের ব্যাখ্যা ও আটটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। যে তিনটি বিষয়ের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তা হলাে নিম্নরূপ-
১। বাধ্যবাধকতা
২। ট্রাস্ট
৩। ট্রাষ্টী
১। বাধ্যবাধকতা (Obligation)এখানে বাধ্যবাধকতা বলতে আইন দ্বারা কার্যকরযােগ্য প্রতিটি কর্তব্যকে নির্দেশ করা হয়েছে। বাধ্যবাধকতা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এটা হতে চুক্তি বা সাধারণ আইনবলে একটি বাড়ি বিক্রি চুক্তি হতে সৃষ্ট বাধ্যবাধকতা। অপরদিকে, শিশু সন্তানের দুগ্ধপান আইনগত দিক হতে সৃষ্ট বাধ্যবাধকতা।
২। ট্রাস্ট (Trust) এই আইনে ট্রাস্ট বলতে এমন প্রতিটি ন্যাস্ত মালিকানাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে যা সুস্পষ্টভাবে বা ইঙ্গিতবােধকভাবে বা আনুমানিকভাবে বিশ্বাস পূর্বক ন্যস্ত করা হয়। অছি শব্দটি প্রকাশ্য ও উহ্যভাবে আস্থাভাজন চরিত্রের ধারককে অন্তর্ভুক্ত করে।
৩। ট্রাষ্টী (Trustee) কোন সম্পত্তি কোন সময় কোন ব্যক্তি পাবে তার নির্দেশ যে ব্যবস্থায় থাকে তাকে ট্রাষ্টী বলে। ইহা উইল নয়। যে দলিলের দ্বারা উহা করা হয় তাকে ট্রাষ্টী দলিল বলে।
ধারা ৪ সংরক্ষণ:
এই আইনে কোথাও ভিন্নরূপে সুস্পষ্টভাবে বিধিবদ্ধ না থাকলে এই আইনে কোন কিছুকেই এরূপ গণ্য করা হবে, যাতে
ক) চুক্তি নয় এমন কোন অঙ্গীকারের ব্যাপারে প্রতিকারের কোন অধিকার প্রদান করা হয়;
খ) কোন ব্যক্তিকে কোন প্রতিকারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়—কেবলমাত্র নির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন ব্যতিরেকে, যা সে কোন চুক্তির অধীনে পেতে পারত;
বা।
গ) দলিলসমূহের উপর নিবন্ধন আইনের প্রয়োেগকে প্রভাবিত করা হয়।
ধারা ৫ সুনির্দিষ্ট প্রতিকার প্রদানের পদ্ধতি
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার প্রদান করা হয়—
ক) কোন সম্পত্তির দখল গ্রহণ এবং তা দাবিদারকে অর্পণের দ্বারা;
খ) যা করার ব্যাপারে তার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, একটি পক্ষকে তেমন কাজের আদেশ প্রদানের দ্বারা;
গ) যা না করার ব্যাপারে তার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, একটি পক্ষকে তেমন কাজ থেকে বিরতের দ্বারা;
ঘ) ক্ষতিপূরণের রায় প্রদানের মাধ্যম ছাড়া অন্য প্রকারে পক্ষসমূহের অধিকার নির্ণয় এবং ঘােষণার দ্বারা;
ঙ) একজন রিসিভার বা তত্ত্বাবধায়ক নিয়ােগ দ্বারা।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫ ধারার উপর আলােচনা ও প্রয়ােগ
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার প্রদানের উপায়গুলাে (Modes of Specific Relief)
(১) কোন নির্দিষ্ট সম্পত্তির দখল গ্রহণ করে তা একজন দাবিদারকে হস্থান্তরের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার দান করা যাবে;
(২) কোন পক্ষ যদি কোন কার্য সম্পাদনে বাধ্য থাকেন তবে তাকে সে কর্ম করার আদেশ দানের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার প্রদান করা যায়;
(৩) যদি কোন পক্ষ কোন কর্মসম্পাদন না করতে বাধ্য, তাকে ঐরকম কার্য করা হতে বিরত রাখার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার দেওয়া যায়;
(৪) ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্ত প্রদানের মাধ্যম ছাড়াই অপর কোন উপায়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহকে অধিকারসমূহ নির্ণয় এবং ঘােষণার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার দেওয়া যায়;
(৫) একজন রিসিভার নিয়ােগের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার দেওয়া যায়।
সুনির্দিষ্ট কর্মসম্পাদনের ডিক্রী অনুমােদনের নীতিমালা (Principal of approval of decree in specific performance):
যে নীতির ভিত্তিতে ইকুইটি আদালত এই প্রতিকার অনুমােদন করতেন তা হলাে ইকুইটি কোন অন্যায়কে প্রতিকার ছাড়া যেতে দিবে না। তাই চুক্তি সম্পাদনের পর কোন পক্ষ পর্যাপ্ত কারণ বিহীন চুক্তিটি পালন করতে অস্বীকার করলে ও এরূপ চুক্তিভঙ্গের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ কিংবা অন্য কোন প্রতিকার থাকলে সুনির্দিষ্ট কর্মসম্পাদনের সৃষ্টি হয়। সুনির্দিষ্ট কর্মসম্পাদন প্রতিকার হিসেবে অনুমােদন করা আদালতের স্বেচ্ছাধীন এখতিয়ার। তবুও ইহা অনুমােদন করা কিংবা প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে আদালতকে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-নীতি অনুসরণ করতে হয়। এগুলাে মােটামুটি নিম্নরূপ
(১) ফরিয়াদীর অনুকূলে একটা প্রাথমিক মােকদ্দমা থাকবে অর্থাৎ প্রাথমিকভাবে গ্রহণযােগ্য দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
(২) সুবিধা অসুবিধার ভারসাম্য ফরিয়াদীর অনুকূলে থাকবে। অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন অনুমােদন করলে বিবাদীর অসুবিধা ও প্রত্যখ্যান করলে ফরিয়াদীর অসুবিধা—এই দুই অসুবিধার ভারসাম্য ফরিয়াদীর অনুকূলে থাকতে হবে। অর্থাৎ তার ক্ষতি তুলনামূলকভাবে বেশী হবে। সুনির্দিষ্ট কর্মসম্পাদন অনুমােদন করা হলে ফরিয়াদির অপূরণীয় ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে যা আর্থিক ক্ষতি পূরণের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব নয়।
(৩) ফরিয়াদি কে অন্য প্রতিকার দিলে তা পর্যাপ্ত ও যথাযথ প্রতিকার হিসেবে গণ্য হবে না।
ধারা ৬ নিরােধক প্রতিকার
ধারা-৫ এর উপধারা-(গ) এর অধীনে মঞ্জুরী ও সুনির্দিষ্ট প্রতিকারকে নিরােধক প্রতিকার বলে ।
ধারা ৭ দন্ডমূলক আইন বলবতের জন্য প্রতিকার মঞ্জুর করা হয় না
কেবল দন্ডমূলক আইন বলবতের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার মঞ্জুর করা যায় না।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৭ ধারার উপর আলােচনা ও প্রয়ােগ
দণ্ড আইন বলবৎ করার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার প্রয়ােগ করা যায় কিনা (Whether specific Relief is applicable to enforce penal law)?
দন্ড আইন বলবৎ করার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন প্রয়ােগ করা যায় না তা এই আইনের ধারা ৭-এ সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও এ আইনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে যে, যেহেতু দেওয়ানি মােকদ্দমাগুলাে প্রাপ্তিযােগ্য কয়েক প্রকারের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার সম্পর্কিত আইনের ব্যাখ্যা এবং সংশােধন বাঞ্ছনীয়, সেহেতু এটির মাধ্যমে তা বিধিবদ্ধ করা হলাে।