- Get link
- X
- Other Apps
Recovering Possession of Immoveable Property সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধার প্রসঙ্গে স্থাবর সম্পত্তির দখল সুনির্দিষ্ট প্রতিকার
Part two
Of Specific Relief
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার সম্পর্কে
Chapter One
Of Recovering Possession of Property
সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধার প্রসঙ্গে
(a) Possession of Immoveable Property
(ক) স্থাবর সম্পত্তির দখল
ধারা ৮ সুনির্দিষ্ট স্থাবর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার
সুনির্দিষ্ট স্থাবর সম্পত্তির দখলের অধিকারী ব্যক্তি দেওয়ানি কার্যবিধি, ১৯০৮ (১৯০৮ সনের ৫নং আইন) অনুসারে তা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে পুনরুদ্ধার করতে পারে।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ধারার উপর আলােচনা ও প্রয়ােগ
দখলের অধিকারী ব্যক্তি (Right of person in possession) কে?
সাধারণত কোন সম্পত্তি দখলে রাখার অধিকারী সেই ব্যক্তি অর্থাৎ যার স্বত্ব আছে তিনি সে সম্পত্তি দখলে ও ভােগাধিকার বজায় রাখার অধিকারী। কোন ব্যক্তি কোন সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করলে বা ক্রয়, দান, রেহেন (বন্ধক), ইজারা বা বিনিময় মূলে হস্তান্তর গ্রহণ করলে তিনি দখলের অধিকারী। এক্ষেত্রে জমির সাথে দখলকারীর সম্পর্ক defacto প্রকৃতির। অনুরূপ মালিকানাধিকারী ব্যক্তিই সম্পত্তির আইনগত দখলদার। একে dejure দখল বলে, এখানে মালিকানা ও দখল সমন্বিত অর্থে ব্যবহৃত হয়। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ধারা মােতাবেক, স্থাবর সম্পত্তির দখলের অধিকারী ব্যক্তি দেওয়ানি কার্যবিধি, ১৯০৮ (১৯০৮ সনের ৫নং আইন) অনুসারে তা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে পুনরুদ্ধার করতে পারে।
এছাড়াও মালিক যদি তার কোন সম্পত্তি অন্যকে দখলাধিকার অর্পণ করে তবে সেও সম্পত্তি defacto দখলদার হিসেবে গণ্য হয়। যেমন বর্গাদার, ভাড়াটিয়া ইত্যাদি।
দখল এর সংজ্ঞা/ সম্পত্তির দখল কাকে বলে? The (Definition of possession and Explanation):
দখল কথাটির বিভিন্ন অর্থ ও প্রয়ােগ দেখা যায়। সাধারণতঃ স্থাবর (Immovable) এবং অস্থাবর (Movable) সম্পত্তি সম্পর্কে এই কথাটি ব্যবহার করা হয়। তবে দখল কথাটির সাধারণ ও আইনগত অর্থ উভয়ই এমনই দ্ব্যর্থবােধক যে এর একটি সর্বসম্মত ও সঠিক সংজ্ঞা নির্ণয় করা খুবই কষ্টসাধ্য।
সাধারণতঃ ‘দখল' বলতে কোন ব্যক্তির সাথে কোন বিষয়বস্তুর নিবিড় ও বাস্তব তথ্যভিত্তিক সম্পর্ককে বুঝায়। একইভাবে, ‘দখল’ দ্বারা এরূপ একটি নিয়ন্ত্রণাধিকারকে বুঝায় যার মাধ্যমে কোন বস্তু ভােগ করার জন্য দৈহিক নিয়ন্ত্রণে রাখা হয় অথবা দখল বলতে এমন একটি অধিকার বা ঘটনাকে বুঝায় যার বলে কোন ব্যক্তি কোন বস্তুর উপর ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষমতা প্রয়ােগ পূর্বক অন্যকে উহা হতে বহিস্কার করতে পারে ।
বিভিন্ন আইনবিশারদগণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দখলের সংজ্ঞা প্রদান করেন। নিম্নে ঐগুলি আলােচনা করা হল। 'দখলের' সংজ্ঞা দিতে Prof. Salmond বলেন যে, “The possession of a material object is the claim to the exclusive use of it. It is a continuing defacto relation between a person and a thing which is known as possession. It is a relation of fact and not one of right.” অর্থাৎ কোন বস্তুর ধারাবাহিক ভােগব্যবহারকেই দখল বলা হয়। ইহা হল কোন ব্যক্তি এবং কোন বস্তুর মধ্যকার ধারাবাহিক সম্পর্ক, যা তথ্যগত, কিন্তু অধিকারগত নহে।
Ihering বলেন, "Possession is a legally protected interest and it can control the actions of others with respect to the thing possessed by the force of the state.” অর্থাৎ দখল হল আইন দ্বারা সংরক্ষিত স্বার্থ এবং এর বলে কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রের সাহায্যে তার দখলকৃত বস্তু সম্পর্কে অন্যের কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
Sir Henry Maine বলেন যে, “কোন বস্তুকে দৈহিকরূপে শুধু আটক রাখা হলে, উহাকে দখল বলা যায় না, নিজ স্বত্ব মনে করে উহা নিয়ন্ত্রণ করার ইচ্ছা থাকাও আবশ্যক। এছাড়া, প্রখ্যাত আইনবিদ Pollock বলেন, “কোন বস্তুর উপর যখন কোন ব্যক্তির
প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকে অথবা উহার ব্যবহার ইহতে অন্যকে বহিস্কার করার প্রত্যক্ষ ক্ষমতা থাকে, সাধারণ কথায় উহাকেই দখল বলা হয়।” আইনবিদ Savigny বলেন, “কেবলমাত্র ক্ষমতার প্রকাশকেই দখল বলা যায়না। দৈহিক ক্ষমতার চেতনাবােধের উপর ইহা নির্ভরশীল। দখলকারীর বস্তুটি নিয়ন্ত্রণের দৈহিক ও মানসিক উভয়বিধ ইচ্ছা থাকা আবশ্যক।”
Prof. Keeton বলেন, “দখল বলতে কোন বিষয়বস্তুর সাথে কোন ব্যক্তির এরূপ সম্পর্ককে বুঝায় যে, তার সম্পর্কযুক্ত বস্তুর ভােগ করা সে ক্ষমতাবলে অন্যকে উহা হতে বহিস্কার করতে পারে।” প্রখ্যাত আইনবিদ Markby বলেন, “কর্তৃত্ব প্রয়ােগে সক্ষম এরূপ ব্যক্তির কোন বস্তুর উপর বাস্তব কর্তৃত্ব প্রয়ােগের সংকল্পকে দখল বলা হয়। তিনি দখলের দুটি উপাদানের কথাও উল্লেখ করেন। যথা-(১) দৈহিক ও (২) মানসিক। এভাবে, বিভিন্নভাবে আইনবিশারদ দখলের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।
দখলের প্রয়ােজনীয় উপাদানসমূহ (Important ingredients of Possession)
দখল সম্পর্কীয় বিভিন্ন সংজ্ঞাগুলি বিশেষণ করলে দখলের দুটি উপাদান পরিলক্ষিত হয়। যথা-(১) কোন বস্তুর উপর দৈহিক নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা এবং অপরটি হল (২) ঐ ক্ষমতা ব্যবহারের ইচ্ছা। ইংরেজীতে একে Corpus এবং Animus বলা হয়। কোন বস্তুর উপর এই উভয়বিধ নিয়ন্ত্রণ অধিকারকে ‘দখল' বলা হয়। রােমানগণ একে ‘কর্পাস পজেশানিস (Corpus possessionis) এবং ‘এনিমাস পসিডেন্ডি' (Animus possidendi) বলে আখ্যায়িত করেন। নিন্মে দখলের উপাদান দুটি আলােচনা করা হল
১) দৈহিক উপাদান (Corpus possessionis)
Corpus বা দৈহিক উপাদান। দখলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। দৈহিক দখল হল প্রকৃত ও প্রত্যক্ষ দখল, ইহা কাল্পনিক বা প্রতীক দখল নয়। অবশ্য কোন দখলীয় বস্তুর সাথে কারও সর্বদা সরাসরি দৈহিক সংযােগ থাকবে, এমনটি নাও হতে পারে যদিও একে প্রকৃত ও প্রত্যক্ষ দখল বলে গণ্য করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, রাস্তা দিয়ে চলার সময় কোন লােক যদি তার মাথার বােঝাটি রাস্তার পাশে রেখে খানিক দূরে সরে গিয়ে কিছুক্ষণ সেখানে বসে বিশ্রাম করে, তা হলেও উক্ত বােঝাটি তার দখলে আছে বলে গণ্য করা হবে। এরূপ দখলকেও তার প্রকৃত ও প্রত্যক্ষ দখল বলা হবে-প্রতীক (Symbolic) দখল নয়। তাই, দেখা যায় যে, দৈহিক সংস্পর্শই দখলের জন্য একান্ত অপরিহার্য নয়। অর্থাৎ দখল হল অন্যের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কোন ব্যক্তির কোন বস্তুর উপর তার ইচ্ছামত ব্যবহারের অধিকার। তাই, Prof. Holland ও Keeton বলেন যে, কোন বিষয় বস্তুর প্রকৃত ও উহার উপভােগের ব্যাপারে অন্য কারও হস্তক্ষেপ করার অধিকার আছে কিনা-উহা হতেই কোন বস্তুর দৈহিক নিয়ন্ত্রণের অস্তিত্ব নির্ণয় করা যেতে পারে। অবশ্য দৈহিক নিয়ন্ত্রণ নিরূপণের ক্ষেত্রে যেসকল বিষয়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়, উহা হল-(ক) বস্তুটির উপর অবিরাম দৈহিক নিয়ন্ত্রণ, (খ) বস্তুটির নৈকট্য, (গ) বস্তুটি সম্পর্কে একক জ্ঞান এবং (ঘ) বলপূর্বক বা জবরদস্তিমূলক বিপত্তি না হওয়া পর্যন্ত অবিরাম দখল। এছাড়া, দখলীস্বত্ব বজায় রাখবার জন্য দখলদারকে যে সব সময় সম্পত্তির নিকটে উপস্থিত থাকতে হবে এমন কোন কথা নাই। যেমন-কোন জমি-জমা বা ঘরবাড়ির মালিক তার এই সমস্ত বিষয় সম্পত্তি হতে দূরে বসবাস করলেও ওতে তার দৈহিক নিয়ন্ত্রণ আছে বলে গণ্য করা হয়। তাই, যে কোন ভাবেই হােক কোন বিষয়বস্তুর উপর হতে দৈহিক নিয়ন্ত্রণ হারালেই আমরা দখলচ্যুত হয়ে থাকি। সুতরাং কোন বস্তুর উপর যতক্ষণ পর্যন্ত দৈহিক নিয়ন্ত্রণ স্থায়ী থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত দখলও বজায় থাকে। এভাবে, আন্তর্জাতিক আইনেও দখলের জন্য দৈহিক নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটি একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে গণ্য করা হয় ।
২) মানসিক উপাদান (Animus Possidendi) মানসিক উপাদান দখলের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মানসিক উপাদান ছাড়া দৈহিক উপাদান বা দৈহিক নিয়ন্ত্রণকে কেবলমাত্র একটি তথ্যগত বিষয় বলে গণ্য করা হয়-যার কোন আইনগত পরিণতি নাই। সুতরাং দৈহিক নিয়ন্ত্রণ (Corpus) কার্যকরী করার জন্য মানসিক উপাদান অর্থাৎ ইচ্ছা শক্তি (Animus) প্রয়ােগ করা একান্ত আবশ্যক-অন্যথায় উহা পরিত্যক্ত বস্তু হিসেবে গণ্য হবে। অর্থাৎ উহার উপর দখলীস্বত্ব আরােপ করা বৈধ বলে বিবেচিত হবেনা। সুতরাং কোন বস্তুর উপর অন্য কোন ব্যক্তিকে কর্তৃত্ব করা হতে বহিস্কার করার ইচ্ছা বা মানসিক চেতনাবােধকে দখলের মানসিক উপাদান বা Animus possidendi বলা হয়। দখলের মধ্যে এই মানসিক উপাদানটি এভাবে অভিব্যক্ত হয়ে থাকে, যেমন-সম্পত্তির দখলদারের মালিকানা স্বত্ব না থাকলেও মালিকের পক্ষে ঐ সম্পত্তি হতে অন্যকে উৎখাত বা বহিস্কার করার ইচ্ছা শক্তি প্রয়ােগ করার অধিকার তার রয়েছে। মনিবের পক্ষে কর্মচারীর দখল এর উদাহরণ।
এভাবে, দেখা যায় যে, কোন বস্তুর উপর একই সময় দৈহিক (Corpus) ও মানসিক (Animus) উভয়বিধ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা করায়ত্ব হলেই ‘দখল’ অর্জিত হবে-অন্যথায় নয়। অর্থাৎ উপরিউক্ত উপাদানের যে কোন একটি উপাদানের অভাবে দখলের কোন আইনগত পরিণতি বর্তায় না । উপরিউক্ত আলােচনার আলােকে আমরা বলতে পারি যে, দৈহিক (Corpus) এবং মানসিক (Animus) উপাদানের সমন্বয়ে দখলের ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। এর কোনটির অভাবে দখলের ধারণা পূর্ণতা লাভ করেনা। তাই, কোন বস্তুর উপর এই উভয়বিধ নিয়ন্ত্রণ
অধিকারকে ‘দখল' বা Possession বলে আখ্যায়িত করা হয়। তাই, Savigny যথার্থই বলেন যে, “Both the corpus of possession and the Animus Possidendi must be present to constitute possession."
দখল ধারণের প্রকারভেদ (Kinds of Recovering of Possession)
প্রকারভেদে বিভিন্ন রকমের দখলের পরিচয় পাওয়া যায়, যেমন
১। প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ দখল (Immediate and mediate possession) যখন কোন দখলকারী নিজ অধিকারে কোন জিনিস রাখে, তখন একে প্রত্যক্ষ দখল বলে অভিহিত করা হয়। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে একটি লােক অন্যের সাপেক্ষে কোন জিনিসের উপর দখল বজায় রাখতে পারে। এভাবে একজন অন্যজনের সাপেক্ষে দখল বজায় রাখাকে পরােক্ষ দখল বলা হয়। পরােক্ষ দখল তিন প্রকারে অর্জিত হতে পারে।
(ক) প্রতিনিধি অথবা কর্মচারীর মাধ্যমে দখলঃ সাধারণতঃ প্রতিনিধি ও কর্মচারীগণ তাদের প্রভূর সাপেক্ষে দখল কার্যকরীভাবে পালন করে থাকে। এসকল ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ
দখল তাদের নিকট থাকলেও কিন্তু পরােক্ষভাবে উহা তাদের প্রভূর নিকট থাকে।
(খ) জমিনদারের খাতক অথবা ভাড়াটে হিসেবে দখলঃ খাতক অথবা ভাড়াটের সরাসরি দখলে কোন বিষয় বা জিনিস থাকতে পারে। ইহা তাদের নিজেদেরও যার নিকট হতে ধার বা ভাড়া নিয়েছে উভয়ের পক্ষ হতেই তারা জিনিসটির অধিকার বজায় রাখে। যার নিকট হতে সে বিষয় বা জিনিসটি ধার বা ভাড়া নিয়েছে তার স্বত্ব উক্ত জিনিস বা বিষয়ের উপর স্বীকার করে নেয় এবং মালিক উহা ফিরিয়ে চাহিবামাত্র সে উহা দিতে বাধ্য থাকে |
(গ) সাময়িকভাবে দখলঃ কোন লােক সাময়িকভাবে কোন জিনিসের উপর অধিকার দাবী করে থাকে; যেমন-বন্ধক বা চুক্তি এক্ষেত্রে বন্ধক গ্রহণকারীর দখল প্রত্যক্ষ এবং বন্ধকদানকারীর দখল পরােক্ষ । বন্ধকদাতা তার বন্ধক বিষয়ের উপরে বন্ধকদানের অধিকার মেনে নেয় এবং শর্ত মােতাবেক বন্ধকদাতা চুক্তি পালন করলেই তার বিষয় ফিরে পায়। অন্যথায় ঋণের বিনিময়ে বন্ধকদার বন্ধকদাতার জিনিসের উপর নিজ অধিকার কায়েম করে নিতে পারে।
পরােক্ষ দখলের ক্ষেত্রে দখলের এনিমাস ও কর্পাস এই প্রধান দুটি উপাদান বিদ্যমান। এখানে এনিমাস সরাসরিভাবে এবং কর্পাস পরােক্ষভাবে অন্য লােকের মাধ্যমে কার্যকরী হয়ে থাকে । সকল পরােক্ষ দখলের ক্ষেত্রে দুইট লােক একই সঙ্গে একই জিনিসের উপর দখল লাভ করে থাকে। পরােক্ষ অধিকার তৃতীয় ব্যক্তির বিরূদ্ধে আইনতঃ ঠিক। কিন্তু প্রত্যক্ষ দখলকারীর বিরুদ্ধে নহে। কিন্তু প্রত্যক্ষ দখল আইনতঃ দুনিয়ার অপর সকল এমনকি পরােক্ষ দখলকারীর বিরুদ্ধে ন্যায় বলে বিবেচিত হয়।
উপরিউক্ত আলােচনা হতে দেখা যায় যে, একই বস্তুর ক্ষেত্রে উপরিউক্ত দুটি দখলই যুগপৎ সহ-অবস্থান করতে পারে, যেমন-এক বাড়িওয়ালা বাড়ীভাড়া প্রদানের মাধ্যমে ভাড়াটেকে Immediate বা তাৎক্ষণিক বা প্রত্যক্ষ দখল প্রদান করে নিজে Mediate অর্থাৎ পরােক্ষ দখলটি রেখে দিতে পারেন অর্থাৎ এক লােক অপর এক লােকের জন্য বা তার পক্ষে বা অনুকূলে কোন একটি বস্তু/সম্পত্তি দখল করতে পারেন। এভাবে একজন প্রজা/ভাড়াটে, ভৃত্য কিংবা লাইসেন্সধারী বা অনুমতিপত্র প্রাপ্ত কোন ব্যক্তির মাধ্যমে একজন লােক যে দখলটি সংরক্ষণ করেন তাকেই বলা হয় Mediate possession বা অন্যের মাধ্যমে সংরক্ষিত অপ্রত্যক্ষ দখল। আমি যদি নিজেই দোকানে গিয়ে একখানি বই ক্রয় করি তবে, আমি উহার প্রত্যক্ষ দখলটি অর্জন করি কিন্তু আমি যদি ভৃত্যের মাধ্যমে উহা ক্রয় করি তবে, আমি বইখানির অপ্রত্যক্ষ বা Mediate দখলটিই অর্জন করি।
২। খাস দখল (Khash possession): প্রকৃত মালিকের দখলীয় সম্পত্তির সাথে প্রত্যক্ষ বা সরাসরি সম্পর্ককে খাস দখল হিসাবে অভিহিত করা হয়। যেমন-মালিকের দখলে তার মালিকানা স্বত্বের বিষয়বস্তু সংরক্ষিত থাকে। একে প্রত্যক্ষ দখলও বলা যেতে পারে।
৩। গঠনমূলক দখল (Constructive possession) :
গঠনমূলক দখলের প্রশ্ন ঐ সকল ক্ষেত্রে উত্থাপিত হয়, যখন আইন এরূপ ব্যাখ্যা দান করে থাকে যে, বাস্তব ক্ষেত্রে যদিও বিষয়ের দখল প্রদত্ত হয়নি, তবুও উহা নীতিগতভাবে দেয়া হয়েছে। ইহা তিন প্রকার হতে পারে-(১) যখন কোন জিনিসের পরােক্ষ দখল উহার প্রত্যক্ষ দখলকারীর হস্তে প্রত্যার্পণ করা হয়। যেমন রহিম জলিলকে একটি ঘড়ি প্রথমে কর্জ স্বরূপ দিয়েছিল, পরে সে ঘড়িটি জলিলের নিকট বিক্রয় করে ফেলিল, এখানে নতুন করে দখল প্রদানের প্রশ্ন আসে না। (২) যেখানে কোন জিনিসের পরােক্ষ দখল প্রত্যার্পণ করা হলেও উহার প্রত্যক্ষ অধিকার দখলদানকারীর নিকট থাকে। যেমন-রহিম জলিলের নিকট হতে কিছু জিনিস খরিদ করল। উভয়ের মধ্যে চুক্তি হল যে, জিনিসগুলি আপাততঃ জলিলের নিকট থাকবে। এক্ষেত্রে জিনিসগুলি রহিমের নিকট প্রদত্ত হয়েছে বলে গণ্য হবে। (৩) যেখানে পরােক্ষ অধিকার প্রদান করা হলেও জিনিসের প্রত্যক্ষ অধিকার তৃতীয় ব্যক্তির নিকট থেকে যায়। ইহা গঠনমূলক দখল নামে পরিচিত। যেমন-রহিম জলিলের গুদামে রহমানের নিকট বিক্রিত মাল রাখল। জিনিসগুলি আইনতঃ রহমানকে প্রদান করা হল। যদিও জলিল তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে জিনিসগুলির প্রত্যক্ষ দখলে এবং রহমানের পরােক্ষ দখলে উহা রইল। আবার যেমন-ক একটি বাড়ী খ এর নিকট হতে ক্রয় করে যে বাড়ীটি গ একজন ভাড়াটের দখলে আছে। এক্ষেত্রে ক বাড়ীটি আইনতঃ দখল করে কিন্তু তথ্যগতভাবে নয়। সে গ এ ভাড়াটে অধিকার বা স্বত্ব বিলােপ করতে পারবে না আইনের বিধান ব্যতিরেকে এ ধরনের দখলকে ইংল্যান্ডের আইনে “গঠনমূলক দখল” বলে। ইহা বাংলাদেশের স্বীকৃত।
৪। সমাবর্ত দখল (Concurrent possession):
দখলের মৌলিক নীতি হল যে, একমাত্র একটি লােক একই সময়ে একই জিনিস অধিকার করে থাকবে। অধ্যাপক স্যাম একে সত্য বলে ধরলেও কেমন করে দুজন বিরােধী দাবীদার উভয়ে একসঙ্গে একই জিনিসের দখলদার হতে পারে। কিন্তু সমবর্তী বা সাপেক্ষ দখল তখনই সম্ভব যখন জিনিসের বা বিষয়ের উপর দাবী কারোর বিরােধী নহে অথবা সহ-মালিকগণের একই সঙ্গে একই জিনিসের উপর দখল সম্ভব। নিম্নলিখিতভাবে সমবর্তী দখল বিদ্যমান থাকতে পারে(১) প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ দখল একই জিনিস বা বিষয়ের উপর সহ-অবস্থান থাকতে পারেঃ যেমন-ভূস্বামী তার ঘর বাড়ি ভাড়া দিলে সে নিজে পরােক্ষ ও ভাড়াটে প্রত্যক্ষ উহার দখল ভােগ করে থাকে।
(২) যুক্ত অধিকার বা দখলঃ দুই বা ততােধিক লােক একই জিনিস বা বিষয়ের উপর দখল রাখতে পারে যদি তারা একসঙ্গে উহার মালিক বলে বিবেচিত হয়। যেমন-এজমালি শরিকানা।
(৩) শারিরীক ও অশারিরীক দখলঃ এই দুই প্রকার দখল একই জিনিসের উপর একসঙ্গে বিদ্যমান থাকতে পারে। যেমন-‘ক’-এর দখলে একটি ভূমি থাকলেও ‘খ’ উহার উপর রাস্তা পাতার অধিকার ভােগ করতে পারে।
৫। হুকুম দখল (Acquisitive possession): সরকার বিধিবদ্ধ আইনের ক্ষমতাবলে যে সকল পরিত্যক্ত সম্পত্তির দখল লাভ করে থাকেন অথবা সরকার ক্ষতিপূরণ ছাড়া জনগণের স্বার্থে যেসব সম্পত্তির দখল আইনের ঘােষণাবলে গ্রহণ করেন তাকেই হুকুম দখল বলে গণ্য করা হয়।
৬। যৌথ দখল (Common possession): দুই বা ততােধিক ব্যক্তি একই বস্তু যৌথভাবে দখল করতে পারে কেননা উহারা যৌথভাবেই উহার মালিক, যেমন-একটি যৌথ পরিবারের অবিভক্ত সম্পত্তি ঐ পরিবারের সকল মালিকই যৌথভাবে দখল করে।
৭। তথ্যগত দখল (Possession in fact): তথ্যগত দখল বা বাস্তব দখল বলতে প্রকৃত বা দৈহিক দখলকেই বুঝায়। তাই, জনৈক আইনবিদ বলেন যে, “Possession if fact is actual or physical possession.” কোন বস্তুর সাথে কোন ব্যক্তির দৈহিক সম্পর্ককেই তথ্যগত বা বাস্তব দখল বলা হয়। তাই, জনৈক আইনবিদ বলেন “It is a physical relation to a thing." সময় অতিক্রান্ত হবার ফলে অর্থাৎ কালের প্রবাহে তথাগত দখল আইনগত দখলকে পরাভূত করে। অর্থাৎ আইনে নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হবার পর হাত দখলদারী আইনগত দখলকারীকে বহিস্কার করতে পারে। তথাগত বা বাস্তব দখল (Possession as fact) আইনগত দখলের চাইতেও অধিকতর শক্তিশালী। কারণ প্রকৃত দখলদার হিসেবে সে আইনগত দখলদারকেও বহিস্কার করতে পারে। তথ্যগত বা বাস্তব দখল সব সময় প্রথমেই আদালতের সাহায্য পায়। কারণ যিনি বাস্তবে দখলে থাকেন, আদালত তাকেই দৃশ্যতঃ মালিক বলে মনে করে এবং তার
সাহায্যে এগিয়ে আসে। তথ্যগত দখলের ক্ষেত্রে বাস্তব দখলকারী আইনগত স্বীকৃতির মাধ্যমেই আইনগত দখলকারী হিসেবে গণ্য হতে পারেনা।
৮। আইনগত দখল (Possession in law): আইনগত দখল বলতে এমন একটি দখলকে বুঝায় যা আইন দ্বারা স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হয়ে থাকে। তাই, জনৈক আইনবিদ যথার্থই বলেন যে, “Possession in law means a possession which is
recognized protected by law.” আইনের চোখে দখলকেই ‘আইনগত দখল' বলা হয়। তাই জনৈক আইনবিদ বলেন যে, “Possession in law means possession in the eye of law.” আইনগত দখলের ক্ষেত্রে প্রকৃত দখলকারী যদি বাস্তবে দখলে না থাকেন, তবে সেক্ষেত্রে সে অনুরূপ সাহায্য আদালতের নিকট হতে প্রাথমিকভাবে পায়না। আইনগত দখলের ক্ষেত্রে আইনগত দখলকারীকে প্রকৃতপক্ষে বা বাস্তবে দখল প্রদান করা হলে তিনি একটিকে বৈধ দখলকারী এবং অন্যদিকে বাস্তব দখলকারী হিসেবে গণ্য হন। কোন কোন ক্ষেত্রে কেহ আইনগত দখল বজায় রাখলেও প্রকৃতপক্ষে বা বাস্তব দখলবিহীন থাকতে পারেন। অধ্যাপক কিটনের মতে, “Possession in law and possession in fact are not invariable Conterminous, although very frequently they are."
উল্লেখিত আলােচনার প্রেক্ষাপটে উপসংহারে আমরা বলতে পারি যে, আইন বিজ্ঞানে দখলের ধারণা একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ হিসেবে অভিহিত হয়। দখলের ধারণাকে আইন বহির্ভূত এবং আইনগত ধারণা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কারণ আইন সৃষ্টির পূর্বেও সমাজের মানুষের মধ্যে দখলের ধারণা ছিল এবং রাষ্ট্র সৃষ্টির পরও এ ধারণাকে আইনত স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সর্বোপরি, তথ্যগত দখল ও বাস্তব দখলের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে-যা আমাদের আলােচনার মাধ্যমে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
শারিরীক ও অশারীরিক দখল (Corporeal and Incorporeal possession)
৯। শারিরীক দখল (Corporeal possession): শারিরীক দখল বলতে কোন বস্তু বা সম্পত্তি পুনঃ পুনঃ প্রতিনিয়ত ব্যবহার দ্বারা উহার উপর অধিকারকে সুদৃঢ় করা বুঝায়। ইহা কোন বিশেষ স্পর্শণীয় পদার্থের উপর অধিকার বুঝায়। সুতরাং শারিরীক দখলের প্রশ্নে সর্বদাই কোন ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। এতে দুটি বিশেষ উপাদান বিজড়িত থাকে
(ক) একটি মনােগত বা কর্তৃবাচক উপাদান-যাকে এনিমাস বলা যায়;
(খ) একটি দৈহিক বা কর্মবাচক উপাদান যাকে করপাস বলে অভিহিত করা হয়।
(ক) এনিমাস-মনােগত উপাদানের নাম সাধারণতঃ এনিমাস। কোন বস্তুর উপর দখলকারীর মনােগত ইচ্ছার দ্বারা ইহা গঠিত হয়ে থাকে। এনিমাস বলতে কোন জিনিসেরউপর দখলকারীর পূর্ণ ব্যবহার দ্বারা উহার উদ্দেশ্য সাধনের মনােগত ইচ্ছাকে বুঝায়। ইহা বস্তুর উপর মালিকের পূর্ণ দাবীকে বুঝায়।
(খ) কর্পাস-শারিরীক উপাদানকে কর্পাস বলা হয়। ইহা বাহ্যিক ঘটনাবলী সমন্বয়ে গঠিত হয়ে থাকে যার মধ্যে দখলকারীর ইচ্ছা যথাযথভাবে পালিত হয়। দখল করার ইচ্ছা পূর্ণভাবে কার্যত প্রতিপালিত হতে হবে।
১০। অশারিরীক দখল (Incorporal possession): এক্ষেত্রে বস্তুর উপর নিরবচ্ছিন্ন দাবীর দ্বারা দখলের কথা বুঝায়, যদিও ঐ বস্তুর উপর কার্যত কোন দখল থাকে না। প্রকারান্তরে ঐ বস্তুর দখল অপেক্ষা অন্য কোন কিছুর উপর অধিকার বুঝায়। যেমন
(ক) বােধগম্য ও অশরিরীর উপর দখল, যার অস্তিত্ব চিন্তাক্ষেত্রে বিদ্যমান, যথাব্যবসায়িক শুভেচ্ছা, বাণিজ্যিক চিহ্ন ইত্যাদি।
(খ) বাধাযুক্ত অধিকার, যেমন-কোন জমির পথের উপর চলার অধিকার, আলাে পাওয়ার অধিকার।
অশারিরীক দখল সাধারণতঃ দখল করা অধিকারকে বুঝায়। সুতরাং একে একটি অধিকারের নিরবচ্ছিন্ন ব্যবহার বলা যায়। শারিরীক ও অশারিরীক দখলের উপর ক্ষেত্রে কোন জিনিসের বাস্তব প্রতিনিয়ত ব্যবহার ও উহার অধিকার ভােগ এই দুটি উপাদান বিশেষভাবে প্রয়ােজনীয়। মূলতঃ শারিরীক ও অশারিরীক দখলদ্বয় পরস্পর সমতুল্য। সুতরাং পূর্ণভাবে দখল শারিরীক ও অশারিরীক উভয় ক্ষেত্রেই কোন বস্তুর উপর অধিকার বা দাবীর নিরবচ্ছিন্ন ব্যবহার বলে অভিহিত করা যায়। এভাবে কোন বস্তু শারিরীক দখলের মধ্যে এনিমাস কর্পাসের সাথে বিদ্যমান থাকবে। অন্য কথায় দখলের ব্যাপারে এনিমাস ও করপাস এই দুটি উপাদান অপরিহার্য। উহাদের যে কোন একটি একাকী যথেষ্ট নহে। সুতরাং শুধু অধিকারের বাসনা দ্বারা একটি লােক কোন কিছু অর্জন বা দখলে রাখতে পারে না, যে পর্যন্ত না উহা বাস্তবভাবে কার্যে পরিণত করে। যেমন-কোন লােক ইচছ করলেই ভূমি আত্মসাৎ করতে পারে না এবং ভূমি দখলের মত গণ্য হতে পারে না। অনুরূপভাবে এনিমাস যা ইচ্ছা ব্যতিরেকে শুধুমাত্র অধিকার দ্বারা বস্তুর দখল কার্যকরী হয় না। যেমন-একটি লােক অন্যের বাগানের মধ্যে বেড়াবার সুযােগ পেলেও সে উহার অধিকারী বলে গণ্য হয় না। কেননা লােকটি বাগানটি অধিকার করার কোন ইচ্ছাও পােষণ করে থাকে না। সর্বোপরি, একই বস্তু বা সম্পত্তির ক্ষেত্রে একই সঙ্গে বা একই সময়ে দৈহিক ও অশারিরীক দখলের সহ-অবস্থান সম্ভব। যেমন-ক একটি ভূমি দখল করে কিন্তু খ একই সময়ে উহার উপর দিয়া যাতায়াতের জন্য পথাধিকার ভােগ করতে পারে।
১১। জবর দখলঃ মালিকানা স্বত্বে বা অন্য কোন রূপ কর্তৃত্ব ছাড়া অপরের সম্পত্তি নিজের নামে দখলধারণ করাকে জবর দখল করা বলে অভিহিত করা হয়। এক্ষেত্রে জবরদখলকারী ব্যক্তি তার দখলীয় সম্পত্তির মালিকানা দাবী করে থাকে। অন্যান্য সবাই তার এ দাবীর বৈধতা স্বীকার ও মেনে নেয়। যেমন-জবর দখলকারী ব্যক্তি যদি বার বৎসরের অধিক সময় ধরে কোন জমির শান্তিপূর্ণ, অবিরত বা কোনরূপ বাধাবিপত্তি ছাড়া ভােগদখল করতে পারে তবে তার জবর দখল মালিকানা স্বত্বে রূপান্তরিত হয়। পক্ষান্তরে প্রকৃত মালিকের মালিকানা স্বত্ব লােপ পেয়ে যায় । আমাদের দেশে প্রচলিত ১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ১৮ ধারা মােতাবেক জবরদখলের মাধ্যমেও সম্পত্তি অর্জন করা যায়। যেমন-যদি কোন ব্যক্তি বিরুদ্ধ দখল জনিতভাবে সম্পত্তিতে ১২ বৎসরের অধিককাল নির্বিঘ্নে দখল প্রমাণ করতে সমর্থ হয় তবে উক্ত সম্পত্তিতে তার বৈধ স্বত্ব সৃষ্টি হয়।
১২। কার্যত বা প্রকৃত দখল (Real possession): কোন বস্তু যখন কোন ব্যক্তির নিজের দখলে থাকে তখন একে প্রকৃত দখল বলে। দখলীয় বিষয়বস্তুর উপর কার্যত দখলদার তার দৈহিক নিয়ন্ত্রণ প্রয়ােগ করার অধিকারী। সুতরাং ঐ বিষয়বস্তুর উপর দখলকারীর দৈহিক ও মানসিক উভয় প্রকার নিয়ন্ত্রণ অধিকার থাকে।
১৩। বাস্তব দখলঃ ব্যক্তিগত মালিকানাসূত্রে মালিকের সাথে বর্তমান সম্বন্ধযুক্ত যে বস্তুটি সরাসরি তার দখলে আছে, একে বাস্তব দখল বলে অভিহিত করা হয়। অন্যভাবে বলা যায় যে, মালিকের সাথে মালিকানা স্বত্বে বিষয়বস্তুটির প্রত্যক্ষ দৈহিক যােগসূত্রই বাস্তব দখলের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
১৪। উপদখল (Quasi possession): রােমান এবং ইংল্যান্ডের আইনে মতৈক্যের উপর প্রতিষ্ঠিত নয় এ ধরনের অর্থে সত্যিকারের চুক্তি নয়, কিন্তু আইনে চুক্তি হিসেবে কল্পিত হয় এমন ধরনের চুক্তিকে আধা-চুক্তি বা উপ-চুক্তি বলে। আর এধরনের চুক্তি থেকে উদ্ভূত দখলকেই উপ-দখল হিসেবে গণ্য করা যায়। কোন ব্যক্তি আইনত যে ঋণ পরিশােধ করতে বাধ্য সে ধরনের ঋণ পরিশােধ সম্বন্ধে স্বার্থ জড়িত আছে এমন অন্য কোন ব্যক্তি যদি উক্ত ঋণ পরিশােধ করে তাহলে তিনি এই ঋণ পরিশােধের অর্থ প্রথমােক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ফেরত পাবার অধিকারী। অর্থাৎ পরিশােধিত ঋণের টাকার উপর তার উপ দখল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সাধারণত পারিবারিক সম্পত্তি নিলাম বিক্রি রোধ করার ক্ষেত্রে পরিবারের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী এ ধরনের দখল অর্জন করে থাকে।
ধারা ৯ স্থাবর সম্পত্তির দখলচ্যুত ব্যক্তির মাধ্যমে মােকদ্দমা:
যথােপযুক্ত আইনগত পন্থা ব্যতীত কোন ব্যক্তি তার অনিচ্ছায় স্থাবর সম্পত্তির দখলচ্যুত হলে সে বা তার মাধ্যমে দাবিদার কোন ব্যক্তি মােকদ্দমার দ্বারা তার দখল পুনরুদ্ধার করতে পারে, যদিও তেমন মােকদ্দমায় অন্য কোন স্বত্বে ছাড়া করা হতে পারে, তথাপিও এই ধারার কোন কিছুই তেমন সম্পত্তির ব্যাপারে নিজের স্বত্ব প্রতিষ্ঠা এবং তার দখল পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কোন ব্যক্তির মাধ্যমে মােকদ্দমা রুজুর পথে প্রতিবন্ধক হবে না। এই ধারা অনুসারে সরকারের বিরুদ্ধে মােকদ্দমা রুজু করা যাবে না । এই ধারা অনুসারে রুজুকৃত মােকদ্দমায় প্রদত্ত কোন ডিক্রি বা আদেশের বিরুদ্ধে কোন আপীল করা যাবে না, বা তেমন কোন আদেশ বা ডিক্রি পুনর্বিবেচনার কোন অনুমতি প্রদান করা যাবে না।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের 9 ধারার উপর আলােচনা ও প্রয়ােগ
স্থাবর সম্পত্তি দখল পুনরুদ্ধার (Recovery of immovable property)
কোন সম্পত্তিতে জনসাধারণের যত ভাল স্বত্ত্বই থাকুক না কেন তাদেরকে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া হতে নিরুসাহিত করাই এই ধারার লক্ষ্য। কোন ব্যক্তি যদি অন্য কোন ব্যক্তিকে আইনের মাধ্যম ব্যতীত তার বিনা অনুমতিতে শান্তিপূর্ণভাবে কিংবা অন্যকোনভাবে উচ্ছেদ করে, তবে এরূপ ক্ষেত্রে দখলচ্যুত ব্যক্তিকে সংক্ষিপ্ত প্রতিকার প্রদানের জন্য আইনসভা এই ধারা ৯ ধারাটি সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে বিধিবদ্ধ করেছেন।
৯ ধারার উদ্দেশ্য (Object of section 9)
মানুষ যাতে নিজের হাতে আইন তুলে নিতে না পারে, সেজন্য এ ধারার বিধান প্রদত্ত হয়েছে। জমিতে যার স্বত্ব আছে তিনি একদিন দখল পাবেনই। কিন্তু তাই বলে স্বত্বহীন দখলকার ব্যক্তিকে তিনি জোর করে জমি হতে তুলে দিতে পারেন না। যার স্বত্ব আছে তিনি মামলা করে জমির দখল পেতে পারেন। মামলার পথে না গিয়ে তিনি যদি জোর খাটিয়ে দখলকার ব্যক্তিকে বেদখল করেন তবে উক্ত স্বত্বহীন ব্যক্তি মামলা করে এ ধারার দখল ফিরে পেতে পারেন। অর্থাৎ জনগণ, তাদের যত ভাল স্বত্ব থাকুক না কেন তারা যেন আইন তাদের হাতে তুলে না নেন সে দিকে গুরুত্ব আরােপ করা এই ধারার উদ্দেশ্য। এ ধারা যা করে তা হলাে—কোন ব্যক্তি তার অনুমিত ব্যতীত এবং যথাযথ আইনগত পন্থা ব্যতীত দখলচ্যুত হলে তার স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত না করে তাকে দখল পুনরুদ্ধার করে দেয়া।
১৮৭৭ সনের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে ৯ ধারায় স্থাবর সম্পত্তির দখল ই ব্যক্তি কর্তৃক মামলা দায়েরের বিধি-বিধান সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এই ধারার অধীনে মােকদ্দমায় ইনকোয়ারী পরিসর খুবই সীমিত। নিম্নলিখিত শর্ত সাপেক্ষে, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে ৯ ধারার অধীনে একটি মােকদ্দমার ইনকোয়ারী করা যেতে পারে। যেমন :
(১) বাদী যদি তার স্থাবর সম্পত্তি হতে দখল চ্যুত হয়, তবে সেক্ষেত্রে এই ধারার অধীনে উক্ত মােকদ্দমার ইনকোয়ারীর পরিসর দখলচ্যুত সম্পত্তিটির পুনরুদ্ধার পর্যন্ত বিস্তৃত।
(২) এই ধারার অধীনে ইনকোয়ারী করতে হলে, ইহাই প্রধান বিবেচ্য বিষয় হতে হবে যে, স্থাবর সম্পত্তিটি আইনগত পন্থা ব্যতিরেকে দখলচ্যুত হয়েছিল কিনা । এই ধারায় “আইনগত পন্থা” বলতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে বুঝায়। যথাযথ কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে দখল অর্পণকে ‘আইনগত পন্থা' বলা যাবে না। যেমন—আদালতের যথাযথ কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে আদালতের কোন কর্মকর্তার মাধ্যমে দখল সমর্পণ করা হলে, তা আইনগত পন্থা হয় নাই বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ স্থাবর সম্পত্তির দখল ‘আইনগত পন্থায় সম্পন্ন হয়েছে কিনা উহার উপরই এই ধারার অধীনে ইনকোয়ারীর পরিসর’ বিশেষভাবে নির্ভরশীল।
(৩) এরূপ দখলচ্যুত’ বাদীর সম্পতি ব্যতিরেকে হয়েছিল।
(8) মামলা দায়েরের ছয় মাস পূর্বে বাদী তার স্থাবর সম্পত্তি হতে দখলচ্যুত হয়েছিল। অর্থাৎ দখলচ্যুত হওয়ার তারিখ হতে ছয় মাস অতিক্রান্ত হবার পর এই ধারার অধীনে কোন মােকদ্দমা দায়ের করা যাবে না।
(৫) এই ধারার কোন কিছুই দখলচ্যুত সম্পত্তির ব্যাপারে নিজের প্রতিষ্ঠা এবং তার দখল পুনরুদ্ধার করার জন্য বাদী কর্তৃক মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না।
(৬) এই ধারা অনুসারে সরকারের বিরুদ্ধে কোন মামলা দায়ের করা যাবে না।
(৭) এই ধারা অনুসারে দায়েরকৃত মামলায় প্রদত্ত কোন ডিক্রী বা আদেশের কোন আপীল করা যাবে না, অথবা কোন আদেশ বা ডিক্রী পুনর্বিবেচনার জন্য অনুমতি প্রদান করা যাবে না।
এই ধারা বলে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ডিক্রী প্রদান করা হলেও একজন প্রকৃত মালিক অযৌক্তিক বিলম্ব না ঘটিয়ে তার সম্পত্তিতে পুনঃপ্রবেশ করতে পারে। তবে, ডিক্রীপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্বয়ং সরকার হলে সেক্ষেত্রে এই ধারার কোন বিধান প্রকৃত মালিকের উপর প্রযােজ্য হবে না। এই ধারার অধীনে যদি কোন ব্যক্তি প্রতিকার লাভ করতে ইচ্ছুক হয়, তবে তাকে অবশ্যই দখলচ্যুত হওয়ার তারিখ হতে ছয় মাসের মধ্যেই মামলা রুজু করতে হবে।
এ ধারা কোনভাবে সাক্ষ্য আইনের ১০০ ধারার বিধানের কার্যকারীতা নিয়ন্ত্রণ করে না। এর সাথে সম্পত্তির স্বত্বের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এ নিয়ম প্রকৃত মালিকের বিরুদ্ধেও প্রযােজ্য। যদি তিনি শান্তভাবে দখলকদারকে আইনগত পন্থা ব্যতীত উচ্ছেদ করে থাকেন। এক্ষেত্রে পক্ষগণ তাদের নিজ নিজ স্বত্বের প্রশ্ন ক্ষমতাপ্রাপ্ত আদালতের মাধ্যমে নির্ধারণ করে নিতে পারে।
ধারা ১০ সুনির্দিষ্ট অস্থাবর সম্পত্তির পুনরুদ্ধার
সুনির্দিষ্ট অস্থাবর সম্পত্তির দখলের অধিকারী ব্যক্তি দেওয়ানি কার্যবিধিতে প্রদত্ত নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে তার দখল পুনরুদ্ধার করতে পারেন।
ব্যাখ্যা ১: এই ধারানুসারে একজন জিম্মাদার যার জন্য জিম্মাদার নিযুক্ত হয়েছে, সে ব্যক্তির হিতকর স্বার্থে নিয়ােগের অধিকার রয়েছে এমন অস্থাবর সম্পত্তির দখল লাভের লক্ষ্যে মােকদ্দমা রুজু করতে পারেন।
ব্যাখ্যা ২: সম্পত্তির বর্তমান দখলের জন্য অস্থায়ী বা বিশেষ অধিকারই এই ধারা অনুসারে রুজুকৃত মােকদ্দমাকে সমর্থনের জন্য যথেষ্ট।
উদাহরণসমূহ সুনির্দিষ্ট অস্থাবর সম্পত্তির পুনরুদ্ধার
ক) ক, খ-কে সারাজীবনের জন্য জমি উইল করে দেয় এবং গ-কে পরবর্তী অধিকারী নির্দেশ প্রদান করে। ক ইন্তেকাল করল। খ জমিতে ঢুকে কিন্তু গ খ-এর সম্মতি ব্যতীতই স্বত্ব-সম্পর্কিত দলিলসমূহ হস্তগত করে। খ গ-এর কাছ থেকে সেগুলাে পুনরুদ্ধার করতে পারে।
খ) ক কিছু কর্জের লক্ষ্যে খ-এর কাছে কিছু অলঙ্কার বন্ধক রাখে। খ সেগুলাে বিক্রয়ের অধিকারী হওয়ার আগেই বিক্রয় করে। ক কর্জের অর্থ পরিশােধ না করেই অলঙ্কারাদির দখলের জন্য খ-এর বিরুদ্ধে মােকদ্দমা রুজু করে। মােকদ্দমা অবশ্যই খারিজ হবে; কারণ ক সেগুলাের দখলের অধিকারী নয়, তার যতটুকু অধিকার তা হচ্ছে, অলঙ্কারসমূহের নিরাপদ সংরক্ষণ নিশ্চিত করা।
গ) ক খ কর্তৃক তার নিকট লিখিত একটি চিঠি পেল। খ ক-এর সম্মতি ব্যতিরেকেই উক্ত চিঠি ফিরিয়ে নিল। উক্ত চিঠিতে ক-এর এমন এক স্বত্ব রয়েছে, যা তাকে খ-এর কাছ থেকে পুনরুদ্ধারের অধিকারী করে।
ঘ) ক খ-এর কাছে নিরাপদ সংরক্ষণের জন্য বই এবং কাগজ-পত্র জমা রাখল। খ সেগুলাে হারিয়ে ফেলল এবং গ সেগুলাে পেল, কিন্তু যখন দাবি করল, তখন সেগুলাে ফেরত প্রদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করল। খ চুক্তি আইন, ১৮৭২ (১৮৭২ সালের ৯নং আইন) এর ধারা-১৬৮ অনুসারে গ-এর কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করতে পারে।
ঙ) গুদামরক্ষক ক-এর দায়িত্ব ছিল জ-এর নিকট কিছু মাল অর্পণ করায় যা ক এর দখল থেকে খ নিয়ে গিয়েছে। ক খ-এর বিরুদ্ধে উক্ত মালামাল পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে মােকদ্দমা রুজু করতে পারে।
ধারা ১১ আশু দখলের অধিকারী ব্যক্তির বরাবর অর্পণের ব্যাপারে দখলকারী ব্যক্তির, স্বত্বাধিকারী ছাড়া দখলকারী ব্যক্তির দায়-দায়িত্ব
অস্থাবর সম্পত্তির কোন বিশেষ অংশের নিয়ন্ত্রণকারী বা দখলকারী ব্যক্তিকে, যে সম্পত্তির মালিক সে নিজে নয়, নিম্নেবর্ণিত যেকোন ক্ষেত্রে আশু দখলের অধিকারী ব্যক্তির বরাবর তা অর্পণের লক্ষে সুনির্দিষ্টভাবে বাধ্য করা যেতে পারেঃ
ক) যেক্ষেত্রে দাবিকৃত সম্পত্তি দাবিদারের জিম্মাদারের বা এজেন্ট হিসেবে প্রতিবাদীর কাছে রয়েছে
খ) যেক্ষেত্রে দাবিকৃত বস্তুর ক্ষতি টাকার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দাৰিদারের পর্যাপ্ত প্রতিকার করবে না
গ) যেক্ষেত্রে দাবিকৃত বস্তুর ক্ষতিহেতু সাধিত যথার্থ ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা দুঃসাধ্য হবে
২) যেক্ষেত্রে দাবিকৃত বস্তুর দখল দাবিদারের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে হস্তান্তরিত করা হয়েছে
উদাহরণ
উপধারা-ক-
ক ইউরােপে গমনের প্রাক্কালে তার সমস্ত আসবাবপত্র তার অনুপস্থিতকালীন সময়ের জন্য এজেন্ট হিসেবে খ-এর জিম্মায় রেখে গেল। খ ক-এর প্রাধিকার ছাড়াই গ-এর কাছে আসবাবপত্র বন্ধক রাখল এবং তা বিক্রয়ের জন্য বিজ্ঞাপন প্রদান করল। গ-কে ক-এর কাছে উক্ত আসবাবপত্র অর্পণে বাধ্য করা যেতে পারে; কারণ, সে ক এর জিম্মাদার হিসেবে তা রাখছে
উপধারা খ -
ক্ষ ক-এর পরিবারের মালিকানাধীন এমন একটি দেবমূর্তির দখল পেল যার যথাযথ সংরক্ষক হচ্ছে ক। ক-এর কাছে উক্ত দেবমূর্তি অর্পণে ক্ষ-কে বাধ্য করা যেতে পারে
উপধারা-গ-
ক একজন মৃত চিত্রকরের একটি চিত্র ও একজোড়া দুষ্প্রাপ্য চীনামাটির কারুকার্যখচিত পাত্রের অধিকারী। কিন্তু সেগুলাে খ-এর দখলে রয়েছে। জিনিসগুলাে অত্যন্ত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এবং তার বাজারদর নির্ণয় করাও দুঃসাধ্য। ক-এর কাছে এইগুলাে অর্পণের জন্য খ-কে বাধ্য করা যেতে পারে।এর।এর।র-হ।