- Get link
- X
- Other Apps
The Specific Relief Act, 1877
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭
(১৮৭৭ সনের ১নং আইন) (৭ই ফেব্রুয়ারী, ১৮৭৭]
কতিপয় সুনির্দিষ্ট প্রতিকার সম্পর্কিত আইনের সংজ্ঞা নিরূপণ ও সংশােধনের লক্ষ্যে প্রণীত আইন।
প্রস্তাবনা
যেহেতু দেওয়ানি মােকদ্দমায় অর্জনযােগ্য কতিপয় ধরণের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার সম্পর্কিত আইনের সংজ্ঞা নিরূপণ এবং সংশােধন করা সমীচীন ও প্রয়ােজনীয়; সেহেতু এতদ্বারা নিম্নরূপ আইন প্রণয়ন করা হল।
আলােচনা ও প্রয়ােগ -প্রস্তাবনা সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭
প্রস্তাবনা (Preamble)
যেহেতু দেওয়ানি মােকদ্দমা সমূহে প্রাপ্তিযােগ্য কয়েক প্রকারের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার সম্বন্ধীয় আইনের ব্যাখ্যা এবং সংশােধন যুক্তিসংগত; ইহা দ্বারা নিম্নলিখিতভাবে ইহা বিধিবদ্ধ করা হল।
এই আইনের ধরণ (Nature of this Act)
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ মূলতঃ পদ্ধতিগত আইন।
প্রস্তাবনার গুরুত্ব (Importance of preamble)
কোন আইনের মধ্যে বিধিবদ্ধ বিধানসমূহ যদি প্রস্তাবনার সাথে সঠিকভাবে সহব্যাপী হয় ও যদি ভিতরের বিধিবদ্ধ বিধানসমূহ পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট হয়, তবে এরকম ক্ষেত্রে উক্ত বিধিবদ্ধ বিধানসমূহ প্রস্তাবনা কিংবা ভূমিকার উপর প্রাধান্য পাবে।
কোন অস্পষ্ট এবং অবােধগম্য আইনের কিংবা অবােধগম্য অর্থের আইনকে বুঝার জন্য উক্ত আইনের ভূমিকা কিংবা প্রস্তাবনা একটি চমৎকার সহায়ক। ইহা কোন আইনকে বুঝার উপায়, যে উপায়ে আইন প্রণয়নকারীদের মনের কথা বুঝা যায় । অন্যদিকে আইনের বিধিবদ্ধ বিধানসমূহর যদি অস্পষ্ট, অবােধগম্য এবং অপরিষ্কার হয় তবে এরূপ ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা এবং অবােধগম্যতাকে এড়ানাের জন্য প্রস্তাবনা কিংবা ভূমিকা উক্ত অস্পষ্ট এবং অবােধগম্য বিধিবিধানসমূহের উপর প্রাধান্য পাবে।
কোন আইনের শব্দগুলাে যদি পরিষ্কার এবং সুস্পষ্ট হয়, তবে উক্ত আইনের ব্যাপ্তি উক্ত আইনের প্রস্তাবনা কিংবা ভূমিকা কর্তৃক নিয়ন্ত্রন করা যায় না। কারণ প্রস্তাবনা কোন আইনের সুস্পষ্ট শব্দগুলােকে নিয়ন্ত্রিত করেনা। কোন আইন প্রণীত হওয়ার সময় আইন প্রণয়নকারীগণের মনে কি ছিল তা ধারণা করা আদালতের কার্য নয়। আইনের শব্দসমূহ সাধারণ অর্থ আদালতের উপর বাধ্যতামূলক।
সংক্ষেপে বলতে গেলে কোন অন্যায়ের প্রতিকারের জন্য কোন্ বিশেষ আইন পাশ করা হয়েছে তা প্রস্তাবনা আইন প্রণয়নকারীগণের ইচ্ছা বুঝার উপায়।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার কাকে বলে (Definition of Specific Relief)
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার শব্দ দুইটির সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের পঞ্চম ধারায় বর্ণিত আছে। দেওয়ানি অনিষ্টের জন্য প্রতিকার হিসেবে আইনে সাধারণতঃ টাকার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে; ইহা সাধারণ আইন। ইহার বিপক্ষে এই আইনে বিভিন্ন প্রতিকারের যে বিধান প্রণয়ন করেছেন ইহাকে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার বলা হয়। কারণ এগুলাে সাধারণ আইনে প্রদান করা আইনসঙ্গত প্রতিকারের বাইরে অবস্থান করছে। এই আইনটি কয়েক প্রকারের সুনির্দিষ্ট প্রতিকারের প্রবর্তন করেছে-যা দেওয়ানি মােকদ্দমা দ্বারা লাভ করা যায়। এই আইনে বিধিবদ্ধ বিভিন্ন প্রকারের সুনির্দিষ্ট প্রতিকারসমূহ প্রতিকার সম্পর্কীয় ও রক্ষামূলক। প্রতিকার সম্পৰ্কীয়, যেমন- কোন সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধার ও দাবীদারকে তা প্রত্যার্পণ, চুক্তির সুনির্দিষ্ট কর্মসম্পাদন, পার্থক্যকরণ, সংশােধন, রহিত, বাতিল, ঘােষণামূলক ডিক্রী এবং রিসিভার নিয়ােগ। রক্ষামূলক, যেমন-ইনজাংশনের মাধ্যমে প্রতিকার।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের উদ্দেশ্য (Object of Specific Relief Act)
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর প্রস্তাবনা কিংবা ভূমিকা পাঠ করলে এই আইনের লক্ষ্য সম্বন্ধে জানা যায়। এই আইনের প্রস্তাবনা কিংবা ভূমিকায় বলা হয়েছে যে, দেওয়ানি মােকদ্দমাগুলাের প্রাপ্তিযােগ্য কয়েক প্রকারের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার সম্বন্ধীয় আইনের ব্যাখ্যা এবং সংশােধনের জন্য এই আইনটি প্রণয়ন করা হল। ইহা ব্যতীত সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন কি লক্ষ্যে পাশ করা হয়েছে তা ভারতীয় গেজেটে উল্লেখ রয়েছে ও আইন পাশের পূর্বে বাছাই কমিটি যে প্রতিবেদন দেন তার বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে ও এই ব্যাপারে কাউন্সিলের আলােচনায়ও উল্লেখ রয়েছে।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনটি সম্পূর্ণভাবে ইকুইটি কিংবা ন্যায়পরতার উপর নির্ভরশীল। দেওয়ানি মােকদ্দমায় অর্জনযােগ্য কতিপয় সুনির্দিষ্ট প্রতিকার সংক্রান্ত আইনের সংজ্ঞা নির্ধারণ ও সংশােধনের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ প্রণীত হয়েছে। ন্যায়পরতা কিংবা ইকুইটির উপর নির্ভরশীল হলেও বর্তমানে বিধিবদ্ধ আকারে প্রণীত হয়েছে। এই আইনটি সারা বাংলাদেশে প্রযােজ্য।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার বলতে ন্যায়পর আদালত দ্বারা বিশেষ প্রকৃতির প্রতিকার বুঝায়। কমন ল' এর লক্ষ্য হচ্ছে, কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির আইনগত ক্ষতি সাধন করলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ অনুমােদন করা। কিন্তু সুনির্দিষ্ট প্রতিকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে উক্ত ব্যক্তিকে তার কর্তব্য প্রতিপালনের লক্ষ্যে কোন কার্য করার নির্দেশ দিয়ে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে প্রতিকার দেওয়ার আর্থিক ক্ষতিপূরণ অনেক ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিকার প্রতীয়মান হতে পারে। এক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তিকে সুনির্দিষ্টভাবে কার্য করার নির্দেশ প্রদান সুনির্দিষ্ট প্রতিকারে অনুমােদন করা যায়। দেওয়ানি প্রকৃতির মােকদ্দমা সর্বদাই দেওয়ানি আদালতে রুজু করা হয়। এর মধ্যে কতিপয় বিশেষ রকমের মােকদ্দমার প্রতিকার কিভাবে প্রদান করা যেতে পারে তা এই আইনে সুনির্দিষ্টভাবে দেওয়া আছে। অতএব সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে যে সকল মােকদ্দমার প্রতিকার প্রদান করা হয় তা সবই দেওয়ানি প্রকৃতির, ফৌজদারি অপরাধের নয়। স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তির দখল, চুক্তি কার্যকরকরণ, দলিল সংশােধন, চুক্তি বাতিল, দলিল বিলােপন, ঘঘাষণামূলক ডিক্রী, রিসিভার নিয়ােগ ও নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত আইন এই আইনের মূল আলােচ্য বিষয়। ৫৭টি ধারা সম্বলিত বিধিবদ্ধ এই আইনের অধ্যায় রয়েছে ১০টি।
যে সকল উপায়ে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার অনুমােদন করা যায় তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য হচ্ছে, (ক) নির্দিষ্ট সম্পত্তির দখল নিয়ে দাবীদারকে প্রত্যর্পনের মাধ্যমে (খ) সুনির্দিষ্ট আইনগত কর্তব্য সম্পন্নের মাধ্যমে, (গ) আইনগত যে কার্য না করা কর্তব্য সে কার্য হতে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ প্রদান কিংবা নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে, (ঘ) মােকদ্দমার পক্ষগুলাের অধিকার সাব্যস্ত করে ঘােষণা দান কিংবা ঘােষণামূলক ডিক্রীর মাধ্যমে, (ঙ) রিসিভার নিয়ােগের মাধ্যমে।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের পরিসর (Scope of Specific Relief Act)
কোন আইনের শিরােনাম ঐ আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কাজেই উক্ত আইনের সাধারণ পরিধি যাচাই কিংবা বােধগম্যের জন্য আইনের শিরােনামটি গণ্য হবে ও ও এরূপ ক্ষেত্রে শিরােনামটি তা বুঝতে সহায়তা করবে। যদিও তা বিধিবদ্ধ আইনের পরিষ্কার অর্থকে অতিক্রম করতে পারে না। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের শিরােনাম হতে ইহার পরিধি সহজেই বুঝা যায় । ইহা ব্যতীত তৎকালীন ভারতীয় গভর্ণর জেনারেল কাউন্সিলের ২৩-১১-১৮৭৫ ও ৭-১২-১৮৭৫ তারিখের কার্যবিবরণী অনুসারে ইহার পরিসর “চুক্তি আইনের অধীনে একটি চুক্তির বৈধতা এবং অবৈধতা সম্পর্কিত সকল নিয়ম কানুন চুক্তি আইনে উল্লেখিত আছে ও কি প্রয়ােগিক প্রক্রিয়ায় কোন চুক্তির পক্ষসমূহ তাদের প্রতিকার পাবে ইহা দেওয়ানি কার্যবিধি আইনে উল্লেখ রয়েছে। দেওয়ানি কার্যবিধি আইন এবং চুক্তি আইনের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান প্রদানের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনটি প্রণয়ন করা হয়। চুক্তি আইনে ও দেওয়ানি কার্যবিধি আইনে যে সকল বিষয়ে প্রতিকার প্রদান করা হয়েছে, সেগুলাে এই আইনে বিধিবদ্ধ করা এই আইনের লক্ষ্য নয়”। “দেওয়ানি আদালতগুলাে যে সকল প্রতিকার দেওয়া নিয়ে কার্য করেন তাদেরকে বড় দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়। উহাদের একটি হল দেওয়ানি আদালতে মােকদ্দমা রুজুকারী যে জিনিসটি পাওয়ার অধিকারী সে জিনিস তাকে দেওয়া ও দ্বিতীয়টি হল ঐ জিনিস না দিয়ে তার ক্ষতিপূরণ দেওয়া। দেওয়ানি আদালতে উক্ত প্রথম কার্যটিকে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার বলা হয় ও দ্বিতীয়টিকে বলা হয় ক্ষতিপূরণ সম্পর্কিয় প্রতিকার। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনটি সাধারণতঃ ক্ষতিপূরণ সম্পর্কিয় প্রতিকারের বিধান রাখে নি। তবে ঘটনাক্রমে সুনির্দিষ্ট প্রতিকারের পরিপূরক কিংবা বিকল্প প্রতিকার হিসেবে ইহা ক্ষতিপূরণ সম্বন্ধীয় প্রতিকারের নিয়ম করা হয়েছে। এই আইনের প্রত্যক্ষ লক্ষ্য হল সুনির্দিষ্ট প্রতিকার প্রদান।”
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ পাশের পর ইংলিশ আইনের রেফারেন্স (English Law reference after passing The specific Relief Act, 1877)
ইংল্যান্ডের ইকুইটি আদালত দ্বারা সর্ব প্রথম সুনির্দিষ্ট প্রতিকার অনুমােদন করা হত। সুবিবেচনা এবং বিবেকের উপর ভিত্তি করে ইকুইটি আদালতগুলাে বিচারকার্য সম্পন্ন করতেন। বাধাধরা আইনের মাধ্যমে এই আদালতসমূহ বিচার করতেন না। আইনের নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে অবস্থান করতেন কমন ল’ আদালত। ১৮৭৭ সালে বিধিবদ্ধ আকারে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনটি প্রণীত হওয়ার পর ইংলিশ আইনের রেফারেন্স অপ্রয়ােজনীয় হয়ে পড়ে। তবে ইকুইটির নীতিবাক্যসমূহ (Maxims) রেফারেন্স প্রায়ই করা হয়। যে সকল নীতিবাক্যের রেফারেন্স আবশ্যক হয় তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য হচ্ছে, (১) যিনি ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন, তাকে অবশ্যই ত্রুটিমুক্ত অবস্থায় আসতে হবে, (He who comes to equity must come with clean hands) (২) ন্যায় বিচার পেতে হলে তাকে সবার আগে ন্যায়বিচারী হতে হবে (He who wants equity must do equity) (৩) দেরী ন্যায়পরতাকে পরাস্ত করে (Delay defeats equity) ইত্যাদি।
বাংলাদেশের আদালতগুলাের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার অনুমােদনের ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। উক্ত প্রকার মােকদ্দমাগুলাের পক্ষগণের অধিকার এবং দায়দায়িত্ব সমূহও এই আইনের অন্তর্ভুক্ত। যদি কোন বিষয়ে এই সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে ইংলিশ আইন বিবেচনার জন্য সমর্পণ করা যায়। ইহার কারণ এই যে, এই আইনটি ইংলিশ আইনের (ন্যয়পরতার) উপর প্রতিষ্ঠিত।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের অধীনে যে সকল প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে সেগুলােকে কেন সুনির্দিষ্ট প্রতিকার বলা হয় (Remedies that may be available under the Specific Relief Act, which are called specific remedy, why?):
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার বলতে ইকুইটি আদালত কর্তৃক কিছুসংখ্যক বিশেষ প্রকৃতির প্রতিকারকে বুঝায়। স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তির দখল, চুক্তির সুনির্দিষ্ট কর্মসম্পাদন, দলিল সংশােধন, চুক্তি বাতিল, দলিল বিলােপন, ঘােষণামূলক ডিক্রী, রিসিভার নিয়ােগ ও নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত বিষয়সমূহ সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের মূল বিষয়।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকারের বিধানগুলি ইকুইটির এক অনন্য অবদান। ইকুইটির এই সুনির্দিষ্ট প্রতিকারের বিধানগুলি আমাদের দেশে বিধিবদ্ধ করাই ছিল ১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের উদ্দেশ্য। এই আইনটি সুনির্দিষ্ট প্রতিকার সংক্রান্ত আইনের সংজ্ঞা প্রদান ও সংশােধনের উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছে। এভাবে দেওয়ানি আদালত বিভিন্ন ধরনের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার মঞ্জুর করতে পারেন। এক কথায় সুনির্দিষ্ট প্রতিকার বলতে বুঝায়, যা ১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের বিধান মােতাবেক কোন ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষ সুনির্দিষ্ট ভাবে পাওয়ার অধিকারী। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের বিধান মােতাবেক সুনির্দিষ্ট প্রতিকারসমূহ নিম্নরূপ -
(১) সুনির্দিষ্টভাবে স্থাবর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার;
(২) দখলচ্যুত ব্যক্তি দ্বারা সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধার;
(৩) চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পন্ন করণ;
(৪) দলিল বাতিল;
(৫) দলিল সংশােধন;
(৬) চুক্তি বাতিল বা রদ;
(৭) রিসিভার নিয়ােগ প্রদান;
(৮) ঘােষণামূলক ডিক্রি প্রদান; এবং
(৯) আদালত কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা প্রদান।
সুনির্দিষ্ট কর্মসম্পাদন মতবাদের ভিত্তি ও উদ্ভব
সুনির্দিষ্ট কর্মসম্পাদন প্রতিকারটির সৃষ্টি হয় ইংল্যান্ডের ইকুইটি আদালতে। কাজেই মুলতঃ ইহা একটা ন্যায়পর প্রতিকার। ১৮৭৩ সালে ইংল্যান্ডে জুডিকেচার আইন পাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে দু’ ধরণের আইন পদ্ধতি প্রচলিত ছিল- কমন ল’ ও ইকুইটি। ইংল্যান্ডের আদি আইন হচ্ছে কমন ল’ কিংবা সাধারণ আইন। ত্রয়ােদশ শতাব্দীতে ইকুইটি আইনের সৃষ্টি ঘটে ও দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। ন্যায়বিচার, ন্যায়পরতা ও সুবিবেচনা (Justice, equity and good conscience)-এই তিনটি মৌল নীতির ভিত্তি করে ইকুইটি আদালত অগ্রসর হতে থাকে। সুনির্দিষ্ট কর্মসম্পাদন হচ্ছে ইকুইটির অন্যতম নতুন প্রতিকার যা চুক্তি আইনের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য হয়। বাংলাদেশে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে এই প্রতিকারটি বিধিবদ্ধ আকারে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। চুক্তিভুক্ত কোন পক্ষ চুক্তি লঙ্ঘন করলে ইংল্যান্ডের কমন ল' অনুসারে চুক্তিভঙ্গকারীকে ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য করা হত, কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে চুক্তিটি প্রতিপালন করতে নির্দেশ প্রদান করা হত না। আর্থিক ক্ষতিপূরণ অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ কিংবা পর্যাপ্ত প্রতিকার বিবেচিত হত না, কেননা এরূপ ক্ষেত্রে চুক্তিপালনই পক্ষদ্বয়ের কিংবা কোন পক্ষের একান্ত কাম্য ছিল। কমন ল' প্রবর্তিত আর্থিক ক্ষতিপূরণ ব্যতীত ইকুইটি আদালত এই প্রতিকারটির প্রবর্তন করেন, যার ফলে আর্থিক ক্ষতিপূরণের পরিবর্তে চুক্তিটি যথার্থভাবে প্রতিপালন করার জন্য ইকুইটি আদালত উক্ত পক্ষকে নির্দেশ দিতেন।