- Get link
- X
- Other Apps
Order 8 Written Statement Civil Procedure Code
আদেশ ৮ লিখিত বর্ণনা দেওয়ানী কার্যবিধি আইন
আদেশ ৮ বিধি ১ - লিখিত বর্ণনা
১) ৮০ ধারার (২) উপধারার শর্তাংশে যেরূপ বিধান আছে, তা ছাড়া বিবাদী প্রথম শুনানির সময় বা তার আগে বা আদালতের অনুমতির দ্বারা অনধিক দুই মাসের মধ্যে, আত্মপক্ষ সমর্থনপূর্বক একটি লিখিত বিবৃতি পেশ করবে: তবে শর্ত থাকে যে, যখন বিবাদী উক্ত ত্রিশ কার্যদিবসের মধ্যে যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত লিখিত জবাব দিতে ব্যর্থ হবে, তখন আদালত কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোন দিনে তা দাখিল করার অনুমতি প্রাপ্ত হবে এবং তার কারণ অবশ্য লিপিবদ্ধ থাকতে হবে, কিন্তু তা কোনক্রমে সমন জারি হওয়ার ষাট কার্যদিবস অতিক্রম করবে না; আরাে শর্ত থাকে যে, যদি বিবাদী ষাট কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দাখিলে ব্যর্থ হয়, তবে আদালত এক তরফা মামলার নিষ্পত্তি করবে।
২) যেক্ষেত্রে বিবাদী তার দখলীয় বা ক্ষমতায় রক্ষিত দলিলসমূহের উপর তার আত্মপক্ষ সমর্থনের বা দাবি-সমন্বয় করার দাবির সমর্থনে সাক্ষ্য হিসাবে নির্ভর করেন, সে ক্ষেত্রে তিনি লিখিত বিবৃতি পেশ করার সময় তা আদালতে হাজির করবে এবং তখন দলিলগুলাে লিখিত বিবৃতির সাথে নথিভুক্ত করার জন্য দিবে ।
৩) শুনানীর সময় বা আদালত তলব করলে তখন পেশ করার অঙ্গীকার প্রদান করে সে সৰ দলিলের ফটোষ্ট্যাট বা আইনজীবী দ্বারা সত্যায়িত প্রতিলিপি প্রতিস্থাপিত হওয়ার পর আদালতে পেশ করলে আদালত এরূপ দলিলাদি কেৱত প্রদান করতে পারে।
৪) যেক্ষেত্রে বিবাদী তার আত্মপক্ষ সমর্থনে বা পাল্টা দাবির অধিকার সমর্থনে তার দখলে বা ক্ষমতায় না থাকা অপর প্রকার দলিলাদির উপর নির্ভর করে, সে ক্ষেত্রে সে লিখিত বিবৃতির সঙ্গে সংযােজন বা যুক্ত করার জন্য একটি তালিকায় অনুরূপ দলিলাদি অন্তর্ভুক্ত করবে এবং উক্তরূপ দলিলাদি কার দখলে বা ক্ষমতায় আছে তা বর্ণনা করবে।
৫) যে দলিল বিবাদী দ্বারা লিখিত বিবৃতি দাখিলের সময় হাজির করা কোন তালিকায় লিখিত করে লিখিত বিবৃতির সঙ্গে সংবর্ধিত বা যুক্ত করা উচিত ছিল এবং যা তদনুসারে হাজির বা তালিকায় লিখিত করা হয় নাই, তা আদালতের অনুমতি ছাড়া মামলা শুনানীর সময় তার অনুকুলে সাক্ষ্য হিসাবে গৃহীত হবে না। অবে শর্ত হল যে, আদালত ব্যতিক্রমধর্মী অবস্থা ছাড়া উক্তরূপ অনুমতি প্রদান করবে না।
৬) বাদীর সাক্ষীদের জেরা করার জন্য বা বাদীর দ্বারা উত্থাপিত কোন বিষয়ের জবাৰে বা কোন সাক্ষীর স্মৃতিশক্তি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য যে সব দলিল তার হাতে প্রদান করা হয় , ৫) উপবিধির কোন বিধান সে দলিলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। [২০১২ সনের ৩৬ নং আইন দ্বারা প্রতিস্থাপিত।]
আদেশ ৮ বিধি ১ বিশ্লেষণ
দেওয়ানি মামলার তৃতীয় পর্যায়
মামলা-মোকদ্দমার তৃতীয় পর্যায় (Third Stage)
হাজিরা এবং লিখিত বিবৃতি (Appearance and Written Statement) প্রদানের মাধ্যমে একটি দেওয়ানি মামলা রুজুর তৃতীয় পর্যায়ে শুরু হয় । দেওয়ানি কার্যবিধির ৮নং আদেশের (১) নং বিধিতে হাজিরা এবং লিখিত জবাব সম্পর্কে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে মামলার শুনানীর তারিখে কিংবা তৎপূর্বে অথবা আদালতের অনুমতিক্রমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিবাদী আত্মপক্ষ সমর্থন করে একটি লিখিত বিবৃতি দাখিল করবে। একই আদেশের ৭নং বিধিতে বলা হয়েছে যে, বিবাদী যেক্ষেত্রে তার আরও পক্ষ সমর্থনের জন্য কতিপয় সুস্পষ্ট অজুহাতের (grounds) উপর নির্ভর করে, অথবা পৃথক এবং সুস্পষ্ট পারস্পরিক দায়ের উপর নির্ভর করে, সেক্ষেত্রেই উক্ত অজুহাতগুলি কিংবা পারস্পরিক দায়গুলির বিষয় যথাসম্ভব সুস্পষ্টরূপেও পৃথকভাবে উল্লেখ করতে হবে । একই আদেশের ৮নং বিধিতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মামলা দায়ের করার পর অথবা পারস্পরিক দায় পরিশােধের দাবিতে লিখিত বিবৃতি দাখিল করার পর যদি বিবাদগুলি আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন অজুহাতের উদ্ভব হয়, তবে বিবাদী কিংবা বাদী তার লিখিত বিবৃতিতে সে অজুহাত উত্থাপন করতে পারবে। পরিশেষে বিবাদী পক্ষের হাজিরা এবং লিখিত বিবৃতি সম্পর্কে এই আদেশের ১০নং বিধিতে বলা হয়েছে যে, যেক্ষেত্রে আদালত কোন পক্ষের নিকট উক্তরূপ লিখিত বিবৃতি তলব করেন, এবং সে পক্ষ যদি উহা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাখিল করতে অপারগ হয়, তবে সেক্ষেত্রে আদালত উক্ত পক্ষের বিরুদ্ধে রায় প্রদান করতে পারবেন অথবা সে মামলা সম্পর্কে উপযুক্ত অন্য কোন আদেশ দিতে পারবেন।
দেওয়ানি কার্যবিধির অধীনে লিখিত বিবৃতি বলতে কি বুঝায়
সাধারণভাবে বলা যায়, বাদীর বিরুদ্ধে বিবাদী যদি জবাব দিতে চাহেন তবে তাকে লিখিতভাবে উক্ত জবাব প্রদান করতে হয়। তাই বিবাদীর জবাবকে লিখিত জবাব বলা হয়। মৌখিক জবাবের কোন আইনগত ভিত্তি নাই। দেওয়ানি কার্যবিধির ৮নং বিধি অনুযায়ী, মামলার প্রথম শুনানীর তারিখে বা তৎপূর্বে, অথবা আদালতের অনুমতিক্রমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিবাদী আত্মপক্ষ সমর্থন করে একটি লিখিত বিবৃতি দাখিল করতে পারবেন, অথবা আদালত কর্তৃক আর্দিষ্ট হয়ে তা দখিল করবে।
এই আদেশের ৩নং বিধি মােতাবেক, বিবাদীর লিখিত বিবৃতিতে কেবলমাত্র, বাদীর উত্থাপিত অভিযােগসহ সাধারণভাবে অস্বীকার করলেই যথেষ্ট হবে না; বরঞ্চ ক্ষতি সাধনের অভিযোেগ ব্যতীত অপর যে সকল অভিযােগের সত্যতা সে স্বীকার করে না তার প্রত্যকটি সম্পর্কে বিবাদীর সুস্পষ্ট জবাব দান করতে হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বাদীর আরজি দাখিলের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিবাদী লিখিত জবাব দাখিল না করলে আদালতের একতরফা রায় ঘোষণা করতে পারেন।
লিখিত জবাবের প্রকারভেদ
লিখিত জবাব-কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে-
১। আকাগরত অংশ (Formal Portion)
২। প্রকৃত অংশ (Substantial Portion).
(১) আকারগত অংশ (Formal Portion)
আরজির অনুরূপ লিখিত জবাবেও মামলার শিরোনাম (Heading) এবং (Title) উল্লেখ করতে হবে। শিরোনাম এবং নাম বলতে মামলায় আদালতের নাম উল্লেখ করাকে বুঝায যেমন, জেলা নারায়ণগঞ্জ সহকারী জজ আদালত। আদালতের নাম উল্লেখ করে পরবর্তী সারিতে আরজির অনুরূপ মামলার নাম্বার, সন, এবং প্রকৃতি উল্লেখ করতে হবে যেমন ১৩৭/২০২১ অঃপ্রঃ স্বত্ব বন্টন ইত্যাদি।
মামলার নাম্বার ও সালের পর আরও একটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, কি প্রকৃতির মামলা সেটাও আরজিতে উল্লেখ করা হয়ে থাকে যেমন, অঃপ্রঃ স্বত্ব বন্টন ইত্যাদি। আরজিতে মামলার যে প্রকৃতি উল্লেখ করা হয় বিবাদীকেও তার লিখিত জবাবে মামলার সে প্রকৃতি উল্লেখ করতে হবে। মামলায় অনেকগুলাে বাদী ও বিবাদী থাকলে কেবলমাত্র প্রথম বাদী ও প্রথম বিবাদীর নাম উল্লেখ করলেই চলবে। অনেকগুলো বাদী ও বিবাদীর ক্ষেত্রে প্রথম বাদী ও প্রথম বিবাদীর নাম এবং আরেকজন বা এবং অন্যান্য শব্দ উল্লেখ করতে হবে। মােট কথা জবাবের শিরােনামে প্রথমে যে আদালতের মামলা সে আদালতের নাম, মামলার নাম্বার, সন এবং মামলার প্রকৃতি উল্লেখ করতে হবে।
(২) প্রকৃত অংশ (Substantial Portion)
জবাবের এই অংশ আদালতের নাম, মামলার নাম্বার, সন, মামলার প্রকৃতি এবং মামলায় বাদী বিবাদীর নাম উল্লেখ করার পর বিবাদীর জবাবের প্রকৃত অংশ আরম্ভ হয়ে থাকে। উপরিউক্ত কথাগুলির পর কোন বিবাদীর পক্ষে বা কত নাম্বার বিবাদীর পক্ষে জবাব দাখিল করা হচ্ছে সেটা উল্লেখ করতে হবে, যেমন, জবাব দাখিল পক্ষে ১ ও ২নং বিবাদী। এইভাবে লিখিত জবাব এর প্রকৃত অংশ আরম্ভ হয়ে থাকে। নিম্নে এই অংশের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলাে। এই অংশ ব্যাতিরেকে লিখিত জবাব-এর অন্যান্য নিয়মকানুন (Formalities) যেমন, সই স্বাক্ষর সত্যপাঠে স্বাক্ষর, ইত্যাদি আরজির নিয়মানুযায়ী হবে।
বিবাদীর লিখিত জবাব আরজির বস্তুগত বিষয়ের (Material facts) বক্তব্য স্বীকার বা অস্বীকার করে জবাব আরম্ভ করতে হবে। আরজির প্রত্যেকটি বস্তুগত বিষয়-এর বক্তব্য যা স্বীকার বা অস্বীকার করা হবে অথবা যদি বস্তগত বিষয়ের বক্তব্য বিবাদীর ব্যক্তিগত জানা বা ধারণা না থাকে তবে, তা জবাবে বাদীর আরজিতে বিষয়বস্ত যেভাবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে সেভাবে উল্লেখ করে স্বীকার বা অস্বীকার বা কেবলমাত্র 'স্বীকার করতে অস্বীকার' করে জবাব লিখতে হবে। লিখিত জবাবে আরজির প্রত্যেকটি বস্তগত বিষয়ের বক্তব্য স্পষ্টভাবে স্বীকার বা অস্বীকার করতে হবে। কেবলমাত্র ‘স্বীকার করা হলাে না' বা 'অস্বীকৃত বলে গন্য হবে' এরূপ শব্দ উল্লেখ না করাই ভালাে। যখন কোন ঘটনায় বিবাদীর ব্যক্তিগত জ্ঞান বা ধরাণা না থাকে তবে সেক্ষেত্রে বিবাদী তার জবাবে অবশ্যই ঘটনাটি সম্পর্কে (স্বীকার) অস্বীকার করবেন। যেমন বাদী তার আরজিতে বিবাদীর বিরুদ্ধে অভিযােগ আনয়ন করলেন যে, “বিবাদী বাদীর ধান নষ্ট করেছে” এরূপক্ষেত্রে বিবাদী তার জবাবে বাদীর ঐরূপ উক্তি অস্বীকার করতে পারেন। কিন্তু যে ক্ষেত্রে বিবাদীর কোন ব্যক্তিগত জ্ঞান বা ধারণা না থাকে সেক্ষেত্রে জবাবে উল্লেখ করতে হবে যে, “বিবাদী বাদীর ঐরূপ অভিযােগ স্বীকার করেন না।”
লিখিত জবাবের উদ্দেশ্য কি
লিখিত জবাব-এর উদ্দেশ্য হচ্ছে পক্ষদ্বয় মধ্যে বিরােধ মীমাংসায় সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া এবং মিথ্যা স্বাক্ষ্য প্রমাণ বা মামলা প্রমাণে অথবা এবং অপ্রয়ােজনীয় সাক্ষী আনয়নে বাধা দান করা। আইনানুগ অগ্রাধীকারের প্লীকে বা আত্মপক্ষ সমর্থনে বাধা বলতে Plea which go to the root of the case কে বুঝায়। এই আইনানুগ অগ্রাধিকারের প্লীকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে;
১। অস্বীকৃতি (Traverse)
২। অপরাধ স্বীকার এবং পরিহার বা বিশেষ আত্মপক্ষ সমর্থনের প্লী (Confession and avoidence or special defence),
৩। আইনের প্রশ্নে বাধা দেওয়া (Objection in point of law).
(১) অস্বীকৃতির প্লী (Plea of Traverse)
বিবাদী বাদীর আরজির যাবতীয় উক্তি সম্পূর্ণভাবে এবং স্পষ্টভাবে অস্বীকার করতে পারেন। যেমন বাদী কোন 'বণ্ড’ সম্পর্কিত ব্যাপারে বিবাদীর বিরুদ্ধে একটি মামলা আনয়ন করলাে, এক্ষেত্রে বিবাদী জবাবে বিরােধীয় উক্ত 'বণ্ড’-এর সম্পাদন সম্পর্কে অস্বীকার করতে পারেন। এরূপ মামলায় বিবাদী অস্বীকার এর প্লী নিতে পারেন। কিন্তু নিম্নলিখিত আরজির অভিযােগ সম্পর্কে বিবাদী কোন প্রকার অস্বীকার এর প্লী নিতে পারবেন না যেমন;
(ক) আইনের বিষয়বস্তু বা আইনের সিদ্ধান্ত সমূহের ক্ষেত্রে,
(খ) বাদীর আরজির সাধারণ ও বিশেষ ক্ষতির অভিযােগ সম্পর্কে বিবাদীর আত্মপক্ষ সমর্থন করার কোন প্রয়ােজন নাই তবে বিবাদী জবাবে বলতে পারেন যে, বাদীর আরজির ক্ষতির অভিযােগ সমূহ পরােক্ষ এবং এই পরােক্ষ ক্ষতির দাবিতে বাদীর মামলার কোন কারণ উদ্ভব হয় নাই। অথবা বিবাদী জবাবে বাদীর ক্ষতিসমূহের কোন কারন নাই মর্মে উল্লেখ করতে পারেন।
(২) অপরাধ-স্বীকার এবং পরিহার বা বিশেষ আত্মপক্ষ সমর্থনের প্লী (Confession and avoidence or special defence)
বিবাদী তার লিখিত জবাবে আত্মপক্ষ সমর্থনে বাদীর আরজির অভিযােগসমুহ স্বীকার এবং বর্জন করতে পারেন। মামলা দায়েরের পূর্বে বা পরে আরজির অভিযােগ বিবাদী কর্তৃক পূরণ করা হয়ে থাকলে, বাদীর অভিযােগ স্বীকার করে কিভাবে বাদীর অভিযােগ পূরণ করা হয়েছে তা জবাবে উল্লেখ করতে হবে। যেমন বাদী, বাদী ও বিবাদীর মধ্যে সম্পাদিত একটি ‘বন্ড' বাবদ মামলা আনয়ন করলো। এই ক্ষেত্রে বিবাদী তার জবাবে ‘বন্ড' এর সম্পাদনা সম্পর্কে স্বীকার করে 'বন্ড’ এর টাকা বহু পূর্বে পরিশােধ হয়ে গেছে মর্মে তার নিজ বক্তব্য উল্লেখ করতে পারেন। সম্পাদিত 'বন্ড' সম্পর্কে বিবাদী তার জবাবে ‘বন্ড' এর অস্তিত্ব স্বীকার এবং পরিহার বর্জন করতে পারেন।
(৩) আইনের প্রশ্নে বাধা দেওয়া (Objection in point of law)
বিবাদী জবাবে বাদীর মামলার কোন কারণে উদ্ভব হয় নাই মর্মে অথবা বাদীর আরজি কোন সংশ্লিষ্ট আইনে বারিত মর্মে প্লী নিতে পারে। এরূপ প্লীকে বিবাদীর আইনানুগ কোন আইনের প্রশ্নে বাধাদান বা আপত্তি উত্থাপন করা বলে। যেমন, বাদী যদি কোন বন্ড এর সম্পাদন সম্পর্কে কোন মামলা আনয়ন করে তবে বিবাদী জবাবে বন্ড এর কোন মূল্য উল্লেখ করেন নাই বা বাদীর মামলা কারনাভাবে দুষ্ট বা বাদীর মামলা তামাদী দোষে বারিত বা বাদীর মামলা বর্তমান আকারে চলতে পারেনা মর্মে আইনের প্রশ্নে বাধা দান বা আপত্তি উত্থাপন করতে পারেন।
টিমে-প্লী (Dilatory plea)
টিমে-প্লী মামলায় কোন কারণ উদ্ভব হয়না, তবে মামলার বিচার্য বিষয় ত্বরান্বিত করার জন্য এই টিমে প্লী যতদূর সম্ভব তাড়াতাড়ি নিস্পত্তি হওয়া আবশ্যক। দেঃকাঃবিঃ আইনের ১০নং ধারা অনুযায়ী মামলা স্থগিত রাখার প্লী, বাদীর মামলা কারণাভাবে কারণ দোষে দুষ্ট-এর প্লী, বাদীর মামলা পক্ষাভাবে বারিত ইত্যাদি প্লীকে বােঝায়।
লিখিত জবাব প্রস্তুতের নিয়মাবলি
বিবাদীর জবাব প্রস্তুত করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলাের প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখা উচিত হবে-
(ক) দেঃ কাঃ বিঃ আইনের ৮নং আদেশের ২নং বিধি মতে, বাদীর আরজি সকল অর্থে আইনতঃ চলতে পারেনা মর্মে যেমন, প্রতারণা, তামাদী, অব্যাহতি, যে কোন প্রকার আদানপ্রদান, কোন কিছু কাৰ্যে পরিণত করা অথবা দৃশ্যতঃ অবৈধ ঘটনা সমূহ ইত্যাদি, বিবাদীর জবাবে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করতে হবে। যদি জবাব বাদীর সকল দাবি সমূহ পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করে অস্বীকার না করা হয় তবে সে সকল বিষয়সমূহ মামলার শুনানীর সময় হঠাৎ উল্লেখ করে বাদীকে বিস্মিত বা বেকারদায় ফেলা যাবে না। বিবাদীর লিখিত জবাব তৈরি করার সময় অবশ্যই উপরিউক্ত বিষয়সমূহের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে কারণ আদালত কোন পক্ষকেই 'আরজিজবাব’-এর বহির্ভূত কোন প্রশ্ন উত্থাপনের অনুমতি দেন না। কারণ ঐরূপ আচরণ ন্যায় বিচারের পরিপন্থি। ন্যয় বিচারের প্রতিষ্ঠিত নীতি হচ্ছে উভয় পক্ষের নিজ নিজ বক্তব্য বিচারকের নিকট তুলে ধরা যাতে পক্ষদ্বয় তাদের নিজ আত্মপক্ষ সমর্থনে সুযােগ পান।
(খ) বিবাদী জবাবে শুধুমাত্র বাদীর উত্থাপীত আরজির অভিযােগসমূহ সাধারণভাবেঅস্বীকার করলেই চলবে না। বাদীর আরজির যে সকল অভিযােগসমূহ বিবাদী অস্বীকার করবে সে অস্বীকৃত প্রত্যেকটি অভিযােগ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে জবাবে উল্লেখ করতে হবে।
(গ) বিবাদী, বাদীর আরজিতে উল্লেখিত যদি কোন তথ্যের বা তথ্য সংক্রান্ত অভিযােগ সম্পর্কে অস্বীকার করেন তবে সে সমস্ত ক্ষেত্রে অভিযােগ সমূহ চাতুরীপূর্ণভাবে অস্বীকার করলেই চলবে না। অস্বীকৃতি অবশ্যই স্বতন্ত্র এবং অস্তিত্বপূর্ণ হতে হবে। যেমন, যদি বিবাদী জবাবে বাদীর নিকট হতে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা প্রাপ্তি অস্বীকার করেন তবে কেবলমাত্র অঙ্কের টাকা প্রাপ্তি ও অস্বীকার করলেই যথেষ্ট হবে না, বরং আরজির অঙ্কের টাকা প্রাপ্তি ও অস্বীকার করতে হবে। অন্যথায় বিবাদী কি পরিমাণ অঙ্কের টাকা গ্রহণ করেছেন তাও উল্লেখ করতে হবে। বাদীর আরজিতে বক্তব্য কৌশলে এড়াবার জন্য/অব্যাহতি পাওয়ার জন্য চাতুরীপূর্ণ জবাব দেওয়া ঠিক নয়। বিবাদীর নতুন কোন ঘটনাবলিও জবাৰে স্পষ্টতঃ উল্লেখ করতে হবে এবং কোন আরজির ঘটনাবলি অস্বীকার করলে তাও স্পষ্টভাবে জৰাৰে উল্লেখ করতে হবে। মােট কথা জবাব কোন অবস্থাতেই চাতুরীপূর্ণভাবে লেখা উচিত নয় ।
(ঘ) বাদীর পাওনা টাকা আদায়ের দাবিতে দায়েরকৃত মামলায়, বিবাদী তার জবাবে বাদীর নিকট হতে আইনতঃ বিবাদীর প্রাপ্য টাকা বাদে, বাদীর দাবিকৃত টাকা পরিশােধ করতে চান এরূপ পাল্টা দাবিও জবাবে উত্থাপন করতে পারেন। এসকল ক্ষেত্রে বিবাদী তার জবাবে বাদীর নিকট পাওনা টাকার বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করবেন। কিন্তু যদি বিবাদী এরূপ পাল্টা দাবি জবাবে উত্থাপন না করেন, তবে মামলা শুনানীর সময় বা জবাব দাখিলের পর পূনরায় উক্তরূপ পাল্টা দাবি উত্থাপন করতে পারবেন না।
একটি লিখিত বিবৃতি হল একটি মামলা তা কিভাবে প্রস্তুত করায় হয়
১৯০৮ সনের দেওয়ানি কার্যবিধির ৮নং আদেশের ১নং বিধি হতে ৫নং বিধির বিধানসমূহ লিখিত বিবৃতি প্রস্তুত করণের সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। লিখিত বিবৃতি প্রস্তুতকরণের পদ্ধতি সম্পর্কে অত্র কার্যবিধির ৮নং আদেশের ১নং বিধিতে বলা হয়েছে যে, মামলার প্রথম শুনানীর তারিখে বা তৎপূর্বে অথবা আদালতে অনুমােদনক্রমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিবাদী আত্মপক্ষ সমর্থন করে একটি লিখিত বিবৃতি দাখিল করতে পারবে, অথবা আদালত কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে অবশ্যই তা দাখিল করবে। (The Defendant may and if required by the Court, shall present a written statement of his defence, either at or before the first hearing date, or within such time, as the Court may allow).
দেওয়ানি কার্যবিধির ৮নং আদেশের ২নং বিধিতে বলা হয়েছে যে বিবাদী যেসব তথ্যের উপর নির্ভর করে বাদীর মামলা প্রতিহত করতে চায় সেসব তথ্যের যাবতীয় যুক্তিসমূহ সুস্পষ্টভাবে লিখিত বিবৃতিকে উল্লেখ করতে হবে। বাদী কর্তৃক উত্থাপিত মামলাটি আইনের দৃষ্টিতে অচল অথবা বাতিলযােগ্য প্রকৃতি বিষয়গুলিও বিবাদীকে তার লিখিত বিবৃতিকে উল্লেখ করতে হবে। বাদী তার আরজিতে উল্লেখ করে নাই এমন কিছু তথ্যমূলক বিষয় বিবাদী তার লিখিত বিবৃতির মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পারবে। যেমন: প্রতারণা, তামাদী, পরিশােধ, কার্যসম্পাদন অথবা এমন কোন তথ্য যা বে-আইনি কার্য বলে প্রতীয়মান হয়।
দেওয়ানি কার্যবিধির আইনের ৮নং আদেশের ৩নং বিধিতে বলা হয়েছে যে বিবাদীর লিখিত বিবৃতিতে কেবলমাত্র বাদীর উথাপিত অভিযােগসমুহ সাধারণ ভাবে অস্বীকার করলেই যথেষ্ট বলে বিবেচিত হবে না, বরং ক্ষতি সাধনের অভিযোেগ ব্যতীত অপর যে সকল অভিযােগের সত্যতা যে স্বীকার করে না, তার প্রত্যেকটি সম্পর্কে বিবাদীর সুস্পষ্ট জবাব এই কার্যবিধির ৮নং আদেশের ৪নং বিধিতে বলা হয়েছে যে, বিবাদী যেক্ষেত্রে আরজিতে উল্লেখিত কোন তথ্য সংক্রান্ত অভিযােগ অস্বীকার করে, সেক্ষেত্রে চাতুরপূর্ণভাবে তা অস্বীকার করা অবশ্যই চলবে না, বরঞ্চ সারবত্তা সহকারে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। যেমন, যদি অভিযোেগ করা হয়ে থাকে যে বিবাদী একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা গ্রহণে অস্বীকার করেছে, তবে কেবল সে পরিমাণ টাকা প্রাপ্তির কথা অস্বীকার করলেই যথেষ্ট হবে না, বরঞ্চ সে পরিমাণ টাকা বা উহার কোন অংশ প্রাপ্তির কথাও অস্বীকার করতে হবে, অন্যথায় সে কি পরিমাণ টাকা গ্রহণ করেছে তা দেখাইতে হবে। যদি কতিপয় পরিস্থিতির সাথে জড়িত কোন অভিযােগ করা হয়ে থাকে, তবে কেবলমাত্র উক্তরূপ পরিস্থিতি সহকারে তা অস্বীকার করলেই যথেষ্ট হবে না।
পরিশেষে, দেওয়ানি কার্যবিধির ৮নং আদেশের ৫নং বিধিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আরজিতে উল্লেখিত তথ্যমূলক অভিযােগের প্রত্যেকটি যদি সুস্পষ্টভাবে অথবা ইঙ্গিত অস্বীকার করা না হয়, অথবা বিবাদীর প্লিডিংসে তা স্বীকৃত হয় নাই বলে উল্লেখ করা না হয়, তবে তা স্বীকৃত হয়েছে বলে গণ্য হবে। তবে, আদালত ইচ্ছা করলে উক্তরূপভাবে স্বীকৃত কোন অভিযােগ উক্ত স্বীকারােক্তি ছাড়া অন্য উপায়ে প্রমাণ করার নির্দেশ দিতে পারেন।
একটি লিখিত জবাবের নমুনা
ঢাকার তৃতীয় সহকারী জজ আদালত, ঢাকা।
দখল উদ্ধারের মামলার লিখিত জবাব
২০২০ সনের মামলা নং------
আবুল হাশেম, পিতা আবুল কাশেম,
থানা লালবাগ, জিলা ঢাকা
-----------------------বাদী।
বনাম
জানে আলম
পিতা নূরে আলম।
সাং কোর্ট হাউজ স্ট্রীট,
থানা কোতােয়ালী, জিলা, ঢাকা।
-----------------------------বিবাদী।
মাননীয় আদালতের নিকট নিম্মােক্ত লিখিত বিবৃতি (Written Statement) প্রদানের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করা হচ্ছে। বিবাদীর বিণীত আরজ হল এই যে,-
(১) বিবাদী বাদীর সাথে কোন সাব-কবলা দলির সম্পাদন করেন নাই।
(২) বিবাদী বাদীর আরজিতে উল্লেখিত সম্পত্তির দখল সম্পাদন গ্রহণের ব্যাপারে অসম্পূর্ণভাবে অজ্ঞাত এবং বিবাদী উক্ত সম্পত্তি হতে কোনরূপ খাজনা ভাড়া বা মুনাফা অর্জন করে নাই ।
(৩) বিবাদী তার লিখিত বিবৃতি বা জবাবে যা স্বীকার করেন, তা ব্যতীত অপরাপর বিষয় বাদী প্রমাণ করতে বাধ্য।
(৪) বাদী কর্তৃক আনীত নালিশের কারণের পশ্চাতে কোন যুক্তি নাই বিধায় তা একেবারেই অমূলক।
(৫) তামাদী দোষে বাদীর দাবি খারিজযােগ্য।
(৬) মামলাটি পক্ষদ্বয়ের অপসংযােগ এবং অসংযােগ দোষে দুষ্ট।
(৭) এই লিখিত বিবৃতিতে বিবাদীর সুস্পষ্ট বক্তব্য হল এই যে, বিবাদকৃত সম্পত্তি বিবাদী তার পিতা মৃত্যুর পর পৈত্রিক সম্পত্তির একজন অংশীদার হিসাবে অর্জন করে, এবং উক্ত সম্পত্তিটি বিবাদী এবং তার ভ্রাতা ও ভগ্নীদের মধ্যে একটি সৌহার্দমূলক বণ্টনের ভিত্তিতে ১৯৭০ সাল হতে তার মৃত পিতার একজন অংশীদার হিসাৰে ভােগ দখল করে আসিতেছে। একজন আইনসঙ্গত মালিক এবং দখলদার হিসাবে বার বৎসরেরও অধিককাল যাবৎ বিবাদী উক্ত বিবাদকৃত সম্পত্তিতে একক ও একচ্ছত্রভাবে দখলে রয়েছে।
এক্ষণে, মাননীয় আদালতের নিকট বিবাদীর সবিনয় নিবেদন হল এই যে, বিবাদকৃত সম্পত্তির মালিক হিসাবে বাদী একজন কাল্পনিক ব্যক্তি মাত্র । নালিশকৃত সম্পত্তি বাদী কখনও ক্রয় করেন নাই এবং কখনও উহার দখলে ছিল না। বাদীর কবলাটি একটি নিছক জালিয়াতি দলিল ছাড়া আর কিছুই নয়।
এমতাবস্থায়, বিবাদীর বিনীত প্রার্থনাএই যে, বাদীর ভিত্তিহীন আরজিটি খারিজ করে আদালত মামলার যাবতীয় খরচসহ বিবাদীর অনুকূলে ডিক্রী করতে মর্জি হােক।
জানে আলমবিবাদীর স্বাক্ষর
সত্যপাঠ
আমি জানে আলম উপরিউক্ত বিষয়সমূহ আমার জ্ঞাতমতে সত্য জানিয়া আমার অ্যাডভােকেট সাহেবের চেম্বারে বসিয়া অত্র ১/৬/২০২০ তারিখে সত্য পাঠে স্বাক্ষর দান করলাম।
বিবাদীর স্বাক্ষর
আদেশ ৮ বিধি ২ নুতন ঘটনা অবশ্যই স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে
বিবাদী তার জবাবে সে সকল বিষয়াবলি উত্থাপন করবে যা হতে দেখা যাবে যে, মামলাটি রক্ষণীয় নয়, বা বিষয়টি আইনের দৃষ্টিতে রহিত বা বাতিলযােগ্য এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সে সকল হেতু উত্থাপন করবেন, যা উত্থাপন না করলে অপর পক্ষ বিস্মিত হত বা আরজিতে উল্লেখ করা হয় নাই, এরূপ বিষয়াবলি উত্থাপন করবেন, যথা তঞ্চকতা, তামাদি, মুক্তি, পরিশােধ, কর্ম সম্পাদন বা আইনবিরুদ্ধ প্রমাণকারী তথ্যগুলাে।
আদেশ ৮ বিধি ৩ অস্বীকার সুনির্দিষ্ট হতে হবে
বিবাদীকে তার লিখিত বিবৃতিতে বাদীর অভিযােগের কারণগুলাে সাধারণভাবে অস্বীকার করলেই যথেষ্ট হবে না, বরং যে সব তথ্য বিষয়ক অভিযােগের সত্যতা বিবাদী স্বীকার করে না, সেগুলির প্রতিটি বিবাদীকে অবশ্যই সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, তবে ক্ষতিপূরণের বিষয় ব্যতীত।
আদেশ ৮ বিধি ৪ চাতুরীপূর্ণ অস্বীকার
যেক্ষেত্রে বিবাদী আরজিতে বর্ণিত ঘটনার নালিশ অস্বীকার করেন, সে ক্ষেত্রে তাকে তা অবশ্যই চাতুরীপূর্ণভাবে এড়াইয়া যাওয়া উচিত নয়, যদি এটা নালিশ করা হয়ে থাকে যে, তিনি কোন অংকের টাকা গ্রহণ করেছিলেন, তবে সে টাকা গ্রহণ করেছিলেন বলেকেবল অস্বীকার করলেই যথেষ্ট হবে না; বরং তাকে উক্ত পরিমাণ টাকা বা তার কোন অংশ গ্রহণ করেছিলেন বলে অবশ্যই অস্বীকার করতে হবে, বা তাকে কি পরিমাণ টাকা গ্রহণ করা হয়েছিল তা দেখাইবে। এবং যদি বিভিন্ন অবস্থার সঙ্গে যুক্ত কোনরূপ নালিশ করা হয়, তবে উক্ত অবস্থার সাথে এটা অস্বীকার করা পর্যাপ্ত হবে না।
আদেশ ৮ বিধি ৫ সুনির্দিষ্ট অস্বীকার
আরজিতে বর্ণিত তথ্য বিষয়ক সব অভিযােগের যদি সুনির্দিষ্টভাবে বা দরকারি তাৎপর্যার্থে বা বিবাদীর আরজি জবাবে তা স্বীকৃত হয় নাই বলে যদি বিবৃত করা না হয়, তবে অসমর্থ লােক ছাড়া অপর সকলের বিরুদ্ধে তা স্বীকৃত হয়েছে বলে গণ্য হবে। তবে শর্ত হল যে, এরূপ স্বীকৃত কোন ঘটনা আদালত চাইলে এরূপ স্বীকারােক্তি ছাড়া অপর কোনরূপে প্রমাণের নির্দেশ প্রদান করতে পারে।
আদেশ ৮ বিধি ৬ লিখিত বর্ণনায় সেট অফ বা পাারস্পরিক দায় শােধের বিবরণ দিতে হবে
১) যেক্ষেত্রে টাকা আদায় করার দাবিতে পেশকৃত মামলায় বাদীর কাছ হতে তার প্রাপ্য টাকা পরিশােধ করতঃ বাদীর দাবি পরিশােধ করতে চায়, এবং উক্ত প্রাপ্য টাকার পরিমাণ যদি আদালতের এখতিয়ারের উর্ধ্বে না হয়, এবং বাদীর মামলার ন্যায় বিবাদীর দাবির ক্ষেত্রেও উভয় পক্ষ একই বৈশিষ্ট্যে পড়ে, তবে মামলার প্রথম শুনানীর তারিখেই বিজ্ঞ আদালতের অনুমতি ছাড়া তার পরে নয়, বিবাদী তার পাওনা টাকার বিবরণ সম্বলিত একটি লিখিত বিবৃতি পেশ করতে পারবে।
২) সেট অফ বা পারস্পারিক দাবি শােধের তাৎপর্য
আদালতকে মূল দাবি ও পারস্পরিক দাবি সমন্বয় সম্বন্ধে চূড়ান্ত রায় ঘােষণা দিতে ক্ষমতা প্রদান করতে পারে এমন ধরনের পাল্টা মামলার আরজির ন্যায় লিখিত বর্ণনার একই প্রকার ক্রিয়া হবে। কিন্তু ডিক্রীর টাকার উপর ডিক্রীর অধীনে প্রদেয় খরচা বাবদ কোন কৌশুলীর দাবি থাকলে তা এতদ্বারা প্রভাবিত হবে না।
৩) পারস্পরিক দাবি সমন্বয়ের দাবিতে বিবাদীর লিখিত বর্ণনা সম্পর্কিত নিয়মাবলিগুলাে প্রদত্ত বিবৃতির উত্তর প্রদানের ক্ষেত্রেও প্রয়োগযােগ্য হবে।
সেট অফ বা পারস্পারিক দাবি শােধের উদাহরণগুলাে
ক) 'ক', 'খ'-কে ২০০০ টাকা উইল করে দেয় এবং ‘গ'-কে তার নির্বাহক এবং অবশিষ্টাংশ সম্পর্কিত উইল করা সম্পত্তির উত্তর দায় গ্রাহক নিয়ােগ করল। ‘খ’ এর জীবনাবসান হলে ও ‘ঘ’, ‘খ’-এর সম্পত্তির পরিচালনা ভার গ্রহণ করল। ‘গ’, ‘ঘ'-এর ১০০০ টাকা জামানত স্বরূপ পরিশোধ করে; তখন খ', ‘গ’-এর বিরুদ্ধে উইলমূলে প্রাপ্ত সম্পত্তির জন্য মামলা করে। ‘গ’ উইলমূলে প্রাপ্ত সম্পত্তির তার ১০০০ টাকা দেনার পারস্পরিক দাবি শােধ করতে পারবে না, কারণ ‘গ’ বা ‘ঘ', উইলমূলে প্রাপ্ত সম্পত্তি সম্বন্ধে ১০০০ টাকা প্রদানের মতই একই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী নয়।
খ) 'ক' তার সম্পত্তি উইল না করে এবং ঋণী হয়ে মারা যায়। গ', ক'-এর সম্পত্তি পরিচালনা করার ভার গ্রহণ করে এবং খ', ‘গ’ হতে উক্ত সম্পত্তির অংশ ক্রয় করে। ‘গ’ উক্ত সম্পত্তির মূল্যের টাকার দাবিতে ‘খ’-এর বিরুদ্ধে মামলা করলে শেষােক্ত লােক তার পাওনা টাকা ও দাবিতে টাকা পারস্পরিকভাবে পরিশােধ করতে পারে না। কারণ ‘গ’ দুইটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যপূর্ণ করে, একটিতে বিক্রেতা হিসেবে যে ক্ষমতায় সে ‘খ’-এর বিরুদ্ধে মামলা করে এবং অন্যটি ‘ক’-এর প্রতিনিধি হিসেবে।
গ) 'ক' বিল অব এক্সচেঞ্জের কারণে ‘খ’-এর বিরুদ্ধে মামলা করে। 'খ' নালিশ করে যে, ক' ‘খ' এর মালপত্র বীমা করতে অন্যায়ভাবে অবহেলা করেছে এবং তজ্জন্য সে তাকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে বাধ্য। ‘খ’ তার দাবিকৃত ক্ষতিপূরণের টাকার সাথে বিল অব এক্সচেঞ্জের দাবি পারস্পরিকভাবে পরিশােধের দাবিকরে।
ঘ) ক একটি বিল অব এক্সচেঞ্জ বাবদ ৫০০ টাকার জন্য ‘খ’-এর বিরুদ্ধে মামলা করে। ‘খ’ ‘ক'-এর বিরুদ্ধে তার পূর্বেই ১০০০ টাকার ডিক্রী লাভ করেছিল। দুইটি দাবি উভয়ই সুনির্দিষ্ট আর্থিক দাবি বিধায় পারস্পরিক পরিশােধযােগ্য।
ঙ) 'ক' অনধিকার প্রবেশের জন্য খেসারত আদায়ের দাবিতে ‘খ’-এর বিরুদ্ধে মামলা করে। ‘খ’ ‘ক'-এর কাছে হতে ১০০০ টাকার প্রমিসরি নােটের অধিকারী এবং ঐ মামলায় ‘ক’ যে পরিমাণ পাইতে পারে ‘খ’ ঐ টাকা প্রমিসরি নােট দ্বারা পরিশােধ করতে দাবি করে। উভয় অংকই নির্দিষ্ট আর্থিক দাবি হওয়ার কারণে ‘ক’ তার টাকা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ‘খ’ তা দাবি করতে পারে।
আদেশ ৮ বিধি ৬ বিশ্লেষণ
সেট অফ বলতে কি বুঝায়
এই আদেশের ৬(১) নং বিধি অনুযায়ী, টাকা পরিশােধের দাবিতে দায়েরকৃত কোন মামলায় যদি বাদীর নিকট হতে আইনতঃ তার প্রাপ্য টাকা দিয়ে তার বিরুদ্ধে বাদীর দাবি পরিশােধ করতে চায় এবং উক্ত প্রাপ্য টাকার পরিমাণ যদি আদালতের এখতিয়ারের উর্ধ্বে হয় এবং উক্ত বাদীর মামলার ন্যায় বিবাদীর দাবির ক্ষেত্রেও উভয় পক্ষ একই পর্যায়ে পড়ে, তবে মামলার প্রথম শুনানির তারিখেই বিবাদী তার পাওনা টাকার বিবরণ সম্বলিত একটি লিখিত বিবৃতি দাখিল করতে পারবে; কিন্তু প্রথম শুনানির পর আদালতের অনুমতি ব্যতীত অনুরূপ বিবৃতি দাখিল করতে পারবেন না। এই আদেশের ৬(২) নং বিধি মােতাবেক, উক্ত লিখিত বিবৃতিটি পাল্টা মামলার আরজির ন্যায় গণ্য হবে এবং বিচারক মূল মামলা ও পাল্টা দাবির মামলা সম্পর্কে একই রায় প্রদান করতে পারবেন; কিন্তু ডিক্রীর টাকার উপর খরচা বাবদ কোন এডভােকেটের দাবি থাকলে তা এতদ্বারা প্রভাবিত হবে না।
এই আদেশের ৩নং বিধি মােতাবেক, বিবাদীর লিখিত বিবৃতি সম্পর্কিত বিধিসমূহ পারস্পরিক দায় পরিশােধের দাবিতে প্রদত্ত বিবৃতির উত্তর দানের ক্ষেত্রেও প্রযােজ্য হবে। এই আদেশের ৭নং বিধি অনুযায়ী, বিবাদীর লিখিত বিবৃতি তার আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কতিপয় সুস্পষ্ট অজুহাতের উপর নির্ভর করে অথবা পৃথক ও সুস্পষ্ট পারস্পরিক দায়ের উপর নির্ভর করে, সে ক্ষেত্রে উক্ত অজুহাতগুলি বা পারস্পরিক দায়গুলির বিষয় যথাসম্ভব সুস্পষ্ট ও পৃথকভাবে উল্লেখ করতে হবে। এই আদেশের ৮নং বিধি মােতাবেক, মামলা দায়ের করার পর যদি বিবাদীর আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন অজুহাতের উদ্ভব হয়, তবে বিবাদী বা বাদী তার লিখিত বিবৃতিতে সে অজুহাত উত্থাপন করতে পারবে। এই আদেশের ৯নং বিধি মােতাবেক, বিবাদী কর্তৃক ‘তুল্য দাবি’ (setoff) সম্বলিত লিখিত বিবৃতি ব্যতীত অন্য কোন লিখিত বিবৃতি দাখিলের ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি ব্যতীত কোন দরখাস্ত দাখিল করা চলবে না, এবং আদালত অনুমতি প্রদান করলেও নির্ধারিত শর্তের খেলাপে তা করা চলবে না তবে আদালত প্রয়ােজন মনে করলে যে কোন সময় যে কোন পক্ষের নিকট লিখিত বিবৃতি তলব করতে পারবেন এবং তা দাখিলের জন্য সময় নির্ধারণ করে দিতে পারবেন । এই আদেশের ১০নং বিধি মােতাবেক, যেক্ষেত্রে আদালত কোন পক্ষের নিকট উক্তরূপ লিখিত বিবৃতি তলব করেন এবং যে পক্ষ উহা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাখিল করতে অপারগ হয়, সেক্ষেত্রে উক্ত পক্ষের বিরুদ্ধে রায় দিতে পারবেন অথবা সে মামলা সম্পর্কে উপযুক্ত অন্য কোন আদেশ দিতে পারবেন ।
সেট অফ শর্তাবলিঃ
(1) The plaintff suits must be a suit for the recovery of money বাদী কর্তৃক আনীত মামলাটি অবশ্যই অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য হতে হবে।
(2) The defendant's claim must be an ascertained sum of money, অর্থাৎ বিবাদী কর্তৃক ‘সেট অফ বিষয়ক তুল্য দাবি উত্থাপনের ক্ষেত্রে তা অবশ্যই নির্ণীত অঙ্কের অর্থ হবে।
(3) The claim of the defendant must have been legally recoverable from the plaintiff. অর্থাৎ বিবাদী কর্তৃক দাবিটি অবশ্যই বাদীর নিকট হতে আইনগতভাবে পুনরুদ্ধারযােগ্য বলে গণ্য হবে।
(4) The defendant's claim nust not exceed the pecuniary limits of jurisdiction of the court . বিবাদী কর্তৃক দাবিটি অবশ্যই আদালতের আর্থিক এখতিয়ারের সীমা অতিক্রম করলে চলবে না।
(5) It must be-recoverable by the defendant or by all the defendants, if there are more than one. এরূপ দাবি অবশ্যই বিবাদী কর্তৃক বাদীর অথবা বাদীগণের নিকট হতে (যদি একাধিক বাদী থাকে) পুনরুদ্ধারযােগ্য বলে গণ্য হতে হবে। যেমনঃ ক’ ‘খ’ এবং ‘গ’ এর বিরুদ্ধে ২৫,০০০/- টাকা আদায়ের জন্য মামলা দায়ের করে। এইরূপ ক্ষেত্রে ‘খ’ এককভাবে ‘ক’-এর বিরুদ্ধে তার তুল্য দাবি (set-off) সংক্রান্ত মামলা দায়ের করতে পারে না।
(6) Both the parties must fill the some character as in the plaintiff's suit, অর্থাৎ উভয় পক্ষকে অবশ্যই একই চরিত্র পূরণ করতে হবে যেরূপ বাদীর মামলার ক্ষেত্রে পুরিত হয়েছে।
(7) The set-off must be claimed in the written statement of the defendant, to be used at the first hearing of the suit but not afterwards, unless permitted by the Court. অর্থাৎ, বিবাদী কতৃক লিখিত বিবৃতির মাধ্যমে মামলার প্রথম শুনানির সময়, কিন্তু তার পরে নয়, যদি না আদালত অনুমতি প্রদান করে, তার তুল্য দাবি’ (set-off) পেশ করতে হবে। এই মামলায় বিবাদী দ্বারা পাল্টা দাবি গ্রহণযােগ্য। যদিও তার দাবি বাদীর দাবি অপেক্ষা বেশি হয় একই আদান প্রদান হতে যখন পাল্টা দাবি সৃষ্ট হয় এবং নির্দিষ্ট অংকের টাকার ক্ষেত্রে তা প্রযােজ্য। [36 DLR 175 AD]
কাউন্টার ক্লেম / Counter Claim কাকে বলে
যে অর্থ মামলার ক্ষেত্রে বাদীর দাবিকৃত পাওনা টাকার থেকে বিবাদীর দাবিকৃত পাওনা টাকার পরিমান বেশি হয়, তখন তাকে Counter Claim বলে। সেট অফ কোন Counter Claim নয়।
উদাহরণঃ ‘ক’, ‘খ’ এর বিরুদ্ধে ১,০০০ টাকার দাবিতে একটি মােকদ্দমা দায়ের করল । এই মামলায় হাজির হয়ে ‘খ’ জবাবে এই দাবি উত্থাপন করল যে, সে ‘ক’ এর নিকট ১,৫০০ টাকা ‘ক’ এর হ্যান্ডনােট মুলে পাওনা আছে। কাজেই তার পাওনা টাকা থেকে ‘ক’ এর প্রাপ্য ১,০০০ টাকা বাদ দিয়ে ‘ক’ এর বিরুদ্ধে অবশিষ্ট ৫০০ টাকার ডিক্রী প্রদান করা হােক এবং ‘ক’ এর প্রাপ্য টাকা পরিশােধ গণ্য করে তার মামলা ডিসমিস করা হােক। এই মামলাকে ‘খ’ এর প্রাপ্য ১,৫০০ টাকা থেকে যে ১,০০০ টাকা ‘ক’ প্রাপ্য বাবদ বাদ দেওয়ার জন্য দরখাস্ত করা হয়েছে এটা সেট অফ। কিন্তু ‘খ’ এর অবশিষ্ট ৫০০ টাকার দাবি হল পাল্টা দাবি।
আদেশ ৮ বিধি ৭ আলাদা অজুহাতের ভিত্তি করে আত্মপক্ষ সমর্থন বা দাবি সমন্বয়
বিবাদী যেক্ষেত্রে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কতিপয় সুস্পষ্ট অজুহাতের উপর নির্ভর করে বা ভিন্ন ও সুস্পষ্ট তথ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত দাবি সময়ের জন্য নির্ভর সেক্ষেত্রে উক্ত অজুহাতগুলাে যথাসম্ভব সুনির্দিষ্টভাবে ও আলাদাভাবে বিবৃতি করতে হবে।
আদেশ ৮ বিধি ৮ আত্মপক্ষ সমর্থনের নতুন অজুহাত
মামলা রুজু করার পর বা পারস্পরিক দায় শােধের দাবিতে লিখিত বিবরণ পেশ করার পর যদি বিবাদীর আত্মপক্ষ সমর্থনের নতুন কোন অজুহাত দেখা দেয়, তবে উক্ত নতুন অজুহাত বিবাদী বা বাদী তার লিখিত বিবরণে উত্থাপন করতে পারবে।
আদেশ ৮ বিধি ৯ পরবর্তী আরজি জবাব
আদালতের বিনা অনুমতিতে বিবাদী দ্বারা পারস্পরিক দায়শােধের দাবিসমেত লিখিত বিবরণ ছাড়া অপর লিখিত বিবরণ পেশের পর কোন আরজি জবাব পেশ করা চলবে না, এবং যদি আদালত অনুমতিও দেয় তবে নির্ধারিত শর্তের খেলাপে তা করা চলবে না। অবশ্য যদি আদালত দরকার মনে করে তবে যে কোন সময় যে কোন পক্ষের কাছে লিখিত বিবৃতি বা অতিরিক্ত লিখিত বিবৃতি পেশের আদেশ প্রদান করতে পারে এবং তা পেশ করার জন্য সময় নির্ধারিত করে দিতে পারবে।
আদেশ ৮ বিধি ১০ কোন পক্ষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী লিখিত বিবৃতি পেশে ব্যর্থ হলে সেক্ষেত্রে পদ্ধতি
যখন এহেন লিখিত বিবরণ আদালত কোন পক্ষের কাছে তলব করে এবং সে পক্ষ তা নির্ধারিত সময়ের ভিতর পেশ করতে ব্যর্থ হয়, তখন উক্ত পক্ষের বিরুদ্ধে আদালত রায় ঘােষণা দিতে পারবে বা সে মামলা সম্বন্ধে যথাযথ অপর কোন নির্দেশ প্রদান করতে পারবে।