- Get link
- X
- Other Apps
Transfer of Property Act
সম্পত্তি হস্তান্তর আইন
সম্পত্তি
সম্পত্তি কাকে বলে? সম্পত্তি হস্তান্তর কাকে বলে? সম্পত্তির প্রকারভেদ । কোন্ কোন সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় না এবং কোন্ কোন্ সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায়। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ কি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন?
সম্পত্তি (Property) কাকে বলে ?
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে সম্পত্তির কোন সংজ্ঞা প্রদান করা হয় নি। তবে এই আইনের বিলে সম্পত্তির সংজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। উক্ত সংজ্ঞায় বলা হয়েছিল“অন্যের বিপরীতে কোন বস্তুর উপর এক বা একাধিক ব্যক্তির অধিকার হলাে মালিকানা, আর যে বস্তুর উপর এই মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে সম্পত্তি বলে।" তবে এই সংজ্ঞাটি বর্তমান সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে স্থান পায় নি ।
সম্পত্তি হস্তান্তর (Transfer of Property) কাকে বলে ?
১৮৮২ সালে সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫ ধারা অনুযায়ীএকজন জীবিত ব্যক্তি, বর্তমান বা ভবিষ্যত কোন সম্পত্তি, এক বা একাধিক জীবিত ব্যক্তিকে বা নিজেকে ও এক বা একাধিক জীবিত ব্যক্তিকে সম্পত্তি প্রদান করলে তাকে সম্পত্তি হস্তান্তর বলে। সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে যিনি হস্তান্তর করবেন এবং যার বরাবর হস্তান্তর করবেন উভয় পক্ষকে জীবিত থাকতে হবে। সম্পত্তি অবিলম্বে কার্যকর হতে পারে আবার বিলম্বেও কার্যকর হতে পারে।
সম্পত্তি হস্তান্তর দুইভাবে হয়ে থাকে ।
১) পক্ষগণের ইচ্ছামূলক কার্যদ্বারা: একজন জীবিত ব্যক্তি কর্তৃক অন্য জীবিত ব্যক্তির বরাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করাকে পক্ষগণের ইচ্ছামূলক কার্য দ্বারা সম্পত্তি হস্তান্তর। যেমন : (১) বিক্রয়, (২) বিনিময়, (৩) ইজারা, (৪) রেহেন, (৫) দান ।
২) আদালতের মাধ্যমে বা আইন দ্বারা: কোন ব্যক্তি দেউলিয়া হলে আদালত কর্তৃক উক্ত ব্যক্তির সম্পত্তি হস্তান্তর করাকে আদালত দ্বারা সম্পত্তি হস্তান্তর বলে। যেমন: আদালত কর্তৃক ক্রোক।
সম্পত্তির প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ Classification of Property:
১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে সম্পত্তির কোন প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ করা হয়নি, তবে বিভিন্ন পর্যালােচনায় সম্পত্তির নিম্নরূপ প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ করা যায় :
(i) স্থাবর সম্পত্তি Immovable Property : যে সম্পত্তি নড়াচড়া করা যায় না তাকে স্থাবর সম্পত্তি বলে। অর্থাৎ যে সম্পত্তিকে নড়াচড়া করা যায় না বা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা স্থানান্তর করা যায় তাকে স্থাবর সম্পত্তি বলে। যেমন : দালানকোঠা, জমি । তবে স্থাবর সম্পত্তি বলতে বৃক্ষ, বাড়ন্ত ফসল বা ঘাস যা জমিতে আছে, তাকে বুঝাবে না।
(ii) অস্থাবর সম্পত্তি Movable Property : অস্থাবর সম্পত্তি কোন সংজ্ঞা আলােচ্য আইনে নেই। সুতরাং বলা যায় যা স্থাবর নয় তাই অস্থাবর। অর্থাৎ যে সকল সম্পত্তি স্থাবর, সেইগুলি ব্যতীত অন্য সকল সম্পত্তি অস্থাবর সম্পত্তি । যেমন : টাকা-পয়সা, আসবাবপত্র ।
(iii) সরকারী সম্পত্তি Public Property : যে সম্পত্তির মালিক দেশের সকল জনগণ তাকে সরকারী সম্পত্তি বলে।
(iv)বেসরকারি সম্পত্তি Private Property: সরকারি সম্পত্তি ব্যতীত অন্যান্য সম্পত্তিকে বেসরকারি সম্পত্তি বলে।
(v) শারীরিক সম্পত্তি Corporeal Property : যে সম্পত্তির শারীরিক রূপ আছে তাকে শারীরিক সম্পত্তি বলে। যেমন : দালানকোঠা, জমি, টাকা-পয়সা, আসবাবপত্র।
(vi) অশারীরিক সম্পত্তি Incorporeal Property : যে সম্পত্তির শারীরিক রূপ নেই তাকে অশারীরিক সম্পত্তি বলে। যেমন : বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি।
যে সকল সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় না ?
১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী নিম্নের সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় না :
(ক) উত্তরাধিকার বা অসিয়ত অনুসারে সম্পত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা হস্তান্তর করা যায় না।
(খ) শর্ত লংঘন হলে উক্ত সম্পত্তি প্রকৃত মালিক ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির নিকট হস্তান্তর করা যায় না,
(গ) ব্যবহারী স্বত্ব হস্তান্তর করা যায় না,
(ঘ) ভােগ-দখলের অধিকার হস্তান্তর করা যায় না,
(ঙ) ভবিষ্যত ভরণ-পােষণ হস্তান্তর করা যায় না,
(চ) মামলা করার অধিকার হস্তান্তর করা যায় না,
(ছ) সরকারী পদ-পদবী বা বেতন হস্তান্তর করা যায় না,
(জ) বৃত্তি ও পেনশন হস্তান্তর করা যায় না,
(ঝ) প্রকৃতিবিরােধী স্বত্ব বা বেআইনী উদ্দেশ্যে প্রদত্ত স্বত্ব বা আইনত গ্রাহক হতে অক্ষম ব্যক্তিকে কোন কিছু হস্তান্তর করা যায় না,
(ঞ) ভূসম্পত্তির ইজারাদার তাদের স্বার্থ হস্তান্তর করতে পারে না।
এছাড়া নিম্নের সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় না :
* মামলার বিরােধীয় সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় না,
* ক্রোকবদ্ধ সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় না।
* মুসলিম আইনে ওয়াকফ হস্তান্তর করা যায় না,
* হিন্দু আইনে দেবােত্তর সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় না।
যে সকল সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায়
১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী- এই আইনে অথবা অন্যকোন আইনে নিষেধ না থাকলে সকল সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায়।
সম্পত্তি হস্তান্তর করার বিধান বা নিয়ম
সম্পত্তি হস্তান্তরের বিধান ভিন্ন ভিন্ন। যেমন :
(১) বিক্রয়, (২) বিনিময়, (৩) ইজারা, (৪) রেহেন, (৫) দান ইত্যাদি।
নিম্নে এগুলি হস্তান্তরের বিধান আলােচনা করা হলাে :
১) বিক্রয়ের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তরের বিধান :
(ক) স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের বিধান : স্থাবর সম্পত্তি মৌখিকভাবে হস্তান্তর করা যায় না। এটি লিখিত দলিল দ্বারা হস্তান্তর করতে হয়। এক্ষেত্রে যিনি দাতা প্রথমে তিনি দলিলে স্বাক্ষর করবেন এবং দুইজন সাক্ষী উক্ত দলিল প্রত্যয়ন করবে। ১০০ টাকার কম মূলের স্থাবর সম্পত্তি দখল প্রদানের মাধ্যমে হস্তান্তর করা যায় । তবে ২০০৪ সালের সংশােধনীর ৫৪ ধারা অনুযায়ী যে কোন মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় বা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দলিলটি অবশ্যই রেজিষ্ট্রি করতে হবে। ৮ ধারা অনুযায়ী স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের সাথে সাথে উক্ত সম্পত্তিতে দাতার যাবতীয় স্বত্ব বা স্বার্থ বা ভােগ-দখলের অধিকার গ্রহীতার উপর ন্যাস্ত হয়ে যায় ।
(খ) অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের বিধান : অস্থাবর সম্পত্তি মৌখিকভাবে হস্তান্তর করা যায়। এক্ষেত্রে দলিল রেজিষ্ট্রি করার প্রয়ােজন নেই। শুধু দখল অর্পণ করলেই অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর হয়ে যায়।
(২) বিনিময়ের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তরের বিধান :
দুই বা ততােধিক ব্যক্তি যখন আপােষে কোন স্থাবর বা অস্থাবর বস্তুর মালিকানার পরিবর্তে অন্য একটি বস্তুর মালিকানা পরস্পর পরস্পরকে হস্তান্তর করে এবং তা যদি নগদ টাকা না হয় বা উভয় বস্তুই যদি নগদ টাকা হয় তাহলে সেই আদান-প্রদানকে বিনিময় বলে। (ধারা-১১৮)। এক্ষেত্রে সকল পক্ষকে সংশ্লিষ্ট বস্তুর পূর্ণ মালিক হতে হবে এবং যদি এটি স্থাবর সম্পত্তি হয় তাহলে তা রেজিষ্ট্রি করতে হবে আর অস্থাবর সম্পত্তি হলে দখল অর্পণ করলেই বিনিময় হবে।
(৩) ইজারা বা লীজ এর মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তরের বিধান
কোন স্থাবর সম্পওি ভোগ দখলের অধিকার অন্য ব্যক্তির নিকট হস্তান্তর করাকে ইজারা বলে। অস্থাবর সম্পদ ইজারা দেয়া যায় না। ইজারার ক্ষেত্রে ইজারাদাতার স্বত্ব হস্তান্তর হয় না, শুধু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভােগ-দখলের অধিকার হস্তান্তর হয়।
১০৭ ধারা অনুযায়ী ইজারা তিন ধরনের হয়ে থাকে :
(ক) বাৎসরিক ভিত্তিতে ইজারা,
(খ) এক বছর অপেক্ষা বেশি সময়ের জন্য ইজারা,
(গ) বাৎসরিক খাজনা ধার্য করে স্থাবর সম্পত্তি ইজারা।
ইজারার ক্ষেত্রে ইজারাদাতা ও ইজারগ্রহীতা কর্তৃক সম্পাদিত ও দলিল রেজিষ্ট্রিকৃত হতে হবে।
(৪) রেহেন বা মর্টগেজ বা বন্ধক এর মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তরের বিধান
নগদ অর্থ ঋণ হিসেবে গ্রহণের নিশ্চয়তার উদ্দেশ্যে ভবিষ্যত দেনা সৃষ্টি করতে পারে এমন সম্পত্তির স্বত্ব অপরের নিকট হস্তান্তর করাকে রেহেন বা বন্ধক বা মর্টগেজ বলে।
* যিনি সম্পত্তির স্বার্থ হস্তান্তর করেন তাকে বলে 'রেহেন দাতা' ।
* যিনি গ্রহণ করেন তাকে বলে ‘রেহেন গ্রহীতা'।
* যে দলিলের মাধ্যমে রেহেন দেয়া হয় তাকে বলে 'রেহেন দলিল'।
* চুক্তি অনুযায়ী যে টাকা প্রদানের নিশ্চয়তা দেয়া হয় তাকে বলে 'রেহেনকৃত টাকা’
রেহেনের উপাদান ৩ টি ;
(১) দুইটি পক্ষ অর্থাৎ রেহেনদাতা ও রেহেনগ্রহীতা থাকবে ।
(২) চুক্তির বিষয় অর্থাৎ মাল ও ঋণ থাকবে ।
(৩) একপক্ষ প্রস্তাব প্রদান করবে অপরপক্ষ গ্রহণ করবে।
রেহেনের শর্ত
(ক) উভয়পক্ষকে সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হতে হবে।
(খ) রেহেনকৃত বস্তুর মূল্য থাকতে হবে।
(গ) রেহেনকৃত বস্তু হস্তান্তরযােগ্য হতে হবে।
(ঘ) রেহেনকৃত বস্তুতে রেহেনদাতার মালিকানা থাকতে হবে।
কে রেহেন বাতিল করতে পারে ।
(ক) রেহেনগ্রহীতা এককভাবে রেহেন বাতিল করতে পারে ।
(খ) রেহেনগ্রহীতার সম্মতি ছাড়া রেহেনদাতা রেহেন বাতিল করতে পারে না ।
রেহেনের প্রকারভেদ
রেহেন ৬ প্রকার
ক) সাধারণ রেহেন : সম্পত্তির দখল হস্তান্তর না করে রেহেনের টাকা ব্যক্তিগতভাবে পরিশােধের দায়িত্ব গ্রহণ করলে তাকে সাধারণ রেহেন বলে। এখানে শর্ত থাকে চুক্তি মােতাবেক ঋণ গ্রহীতা টাকা পরিশােধ করতে না পারলে ঋণদাতা উক্ত সম্পত্তি বিক্রয় করে তার প্রাপ্য টাকা গ্রহণ করতে পারবে।
(খ) শর্তাধীন বিক্রয়ের মাধ্যমে রেহেন : যদি কোন সম্পত্তি এই শর্তে বিক্রয় করা হয় যে, নির্দিষ্ট তারিখে টাকা পরিশােধ না করলে বিক্রয় চূড়ান্ত হবে অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ে টাকা পরিশােধ করলে বিক্রয় বাতিল হবে তাহলে তাকে শর্তাধীন বিক্রয়ের মাধ্যমে নেহেন বলে।
(গ) খাই খালাসী রেহেন : দাতা সম্পত্তির দখল গ্রহীতাকে প্রদান করবে, টাকা পরিশােধ না হওয়া পর্যন্ত দখল রাখবে তাকে খাই খালাসী রেহেন বলে ।
(ঘ) ইংলিশ রেহেন : দাতা নির্দিষ্ট তারিখে রেহেনের টাকা পরিশােধের অঙ্গীকার করে সম্পত্তি গ্রহীতার নিকট হস্তান্তর করবে। শর্ত থাকবে নির্দিষ্ট তারিখে টাকা পরিশােধ করলে গ্রহীতা দাতাকে সম্পত্তি ফিরিয়ে দিবে। এটি হলাে ইংলিশ রেহেন।
(ঙ) দলিল জমা দেওয়ার রেহেন : ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, চট্টগ্রাম শহরে বা সরকারী গেজেট দ্বারা নির্ধারিত অন্য কোন শহরে কোন ব্যক্তি যখন মহাজন বা তার প্রতিনিধির উপর জামানত সৃষ্টির জন্য দলিল জমা দেয়া হয় তাকে দলিল জমা দেওয়ার রেহেন বলে।
(চ) সংজ্ঞাহীন রেহেন : যে রেহেন উপরােক্ত কোন রেহেনের অন্তর্ভুক্ত হয় না তাকে সংজ্ঞাহীন রেহেন বলে ।
(৫) দানের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তরের বিধান
একজন দাতা তার স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি একজন জীবিত ব্যক্তির বরাবর হস্তান্তর করতে পারেন। সম্পত্তি যদি স্থাবর হয় তাহলে ১২৩ ধারা অনুযায়ী- দাতা কর্তৃক সম্পাদিত ও কমপক্ষে দুইজন সাক্ষী কর্তৃক প্রত্যায়িত ও রেজিষ্ট্রিকৃত হতে হবে। আর সম্পত্তি যদি অস্থাবর হয় তাহলে দখল অর্পণের মাধ্যমেই দান কার্য সম্পন্ন করা যায় ।
কেন বলা হয়ে থাকে যে, ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের শিরােনামটি ভুল নামের ব্যবহার
১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনটি সম্পত্তি হস্তান্তর বিষয়ক হলেও এতে সম্পত্তির সংজ্ঞা যেমন দেয়া হয়নি, তেমনি সকল ধরনের সম্পত্তি হস্তান্তরের বিধান সংযুক্ত করায় হয়নি। যেমন: সম্পত্তির সংজ্ঞা দেয়া হয়নি, বিলে সম্পত্তির সংজ্ঞা দেয়া হলেও বর্তমান আইনে তা স্থান পায়নি, স্থাবর সম্পত্তির সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে আংশিক, অস্থাবর সম্পত্তির সংজ্ঞা নেই। সুতরাং বলা যায় সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের শিরােনামটি যথাপােযুক্ত হয়নি ।
সম্পত্তি হস্তান্তর আইন কি স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন বা সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের দুর্বলতা কি কি।
(১) অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের বিধান নেই: সম্পত্তি হস্তান্তর আইন এ মূলত স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের বিধান রয়েছে। অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর কিভাবে হবে তা এই আইনে উপেক্ষিত হয়েছে। সুতরাং বলা যায় সম্পত্তি হস্তান্তর আইন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন নয়।
(২) ডিক্রি জারিতে নিরব: কোন ব্যক্তি দেউলিয়া হলে তার সম্পদ দেউলিয়া আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অর্থাৎ দেউলিয়া আদালত ডিক্রি জারি করে উক্ত সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে। কিন্তু সম্পত্তি হস্তান্তর আইন এ সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে নিরব। সুতরাং বলা যায় সম্পত্তি হস্তান্তর আইন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন নয় ।
(৩) বিচারাধীন সম্পত্তি হস্তান্তরে অক্ষম : কোন সম্পত্তি আদালতে বিচারাধীন থাকলে সেই সম্পত্তির উপর আদালত পূর্ণ বা আংশিক নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে। আদালত এরূপ নিষেধাজ্ঞা জারি করলে সম্পত্তি হস্তান্তর আইন কিছুই করতে পারে না। সুতরাং বলা যায় সম্পত্তি হস্তান্তর আইন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন নয় ।
(৪) ধর্মীয় উদ্দেশ্যে হস্তান্তর হলে এ আইন নিরব : দান বা ওয়াকফ এর মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তর হলে অথবা হিন্দু আইনের দেবােত্তর সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সম্পত্তি হস্তান্তর আইন প্রযােজ্য হবে না। অর্থাৎ ধর্মীয় উদ্দেশ্যে হস্তান্তর হলে এ আইন নিরব ভূমিকা পালন করে। সুতরাং বলা যায় সম্পত্তি হস্তান্তর আইন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন নয়।
(৫) মৃত ব্যক্তি কর্তৃক হস্তান্তর বা উইলের ক্ষেত্রে এ আইন প্রযােজ্য নয় : সম্পত্তি হস্তান্তর আইন অনুযায়ী শুধু জীবিত ব্যক্তিরাই সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে। কিন্তু উইল কার্যকর হয় যিনি উইল করবেন তিনি মারা যাওয়ার পর। অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির পক্ষেও সম্পত্তি হস্তান্তর হতে পারে। কিন্তু সম্পত্তি হস্তান্তর আইন এক্ষেত্রে একেবারেই নিরব। সুতরাং বলা যায় সম্পত্তি হস্তান্তর আইন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন নয়।
(৬) উত্তরাধিকার আইন সংযুক্ত নেই : কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার ওয়ারিশদের মধ্যে যার যার প্রাপ্য অংশ বন্টিত বা হস্তান্তরিত হয়। কিন্তু সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি সম্পর্কে কোন বিধান নেই। সুতরাং বলা যায় সম্পত্তি হস্তান্তর আইন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন নয়।
পরিশেষে বলা যায়, ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনটি সম্পত্তি হস্তান্তর বিষয়ক হলেও এতে সম্পত্তির সংজ্ঞা যেমন দেয়া হয়নি, তেমনি সকল ধরনের সম্পত্তি হস্তান্তরের বিধান সংযুক্ত করায় হয়নি। তাই বলা যায়, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন নয় ।