- Get link
- X
- Other Apps
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭
Specific Relief Act, 1877
এডভােকেটশীপ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা
প্রিলিমিনারি মৌখিক ভাইভা সহায়িকা
সংক্ষিপ্ত আলােচনা
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনটি প্রণয়ন করা হয় ১৮৭৭ সালে । সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনটি মুলত একটি প্রতিকারমূলক বা তত্ত্বগত আইন। এই আইনটিকে ন্যায়পরায়নতা ভিত্তিক আইন বলা হয়। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের প্রেক্ষিতে দেওয়ানি আদালত যে সুবিবেচনা আদেশ প্রদান করেন, তাকে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার বলে। আদালত মােকদ্দমার কোন পক্ষকে কাজ করার বা কাজ না করার আদেশ অথবা চুক্তিভুক্ত কোন পক্ষকে চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনে বাধ্য করার আদেশ প্রদান করে, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার প্রদান করতে পারেন। ফৌজদারি আইনের কোন সুবিধা এই আইনে পাওয়া যায় না। এই আইন কেবলমাত্র ব্যক্তিগত অধিকার বা প্রতিকার নিয়ে আলােচনা করে।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ
আইন প্রণয়ন--১৮৭৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি
কত নং আইন--১ নং আইন।
আইনের প্রকৃতি-তত্ত্বগত আইন (Substantive law)
আইনটি কার্যকর হয়-- -১লা মে ১৮৭৭ সালে।
মােট ধারা---৫৭ টি।
সর্বশেষ সংশােধিত হয়---২০০৪ সালের ২৭ নং আইন দ্বারা।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন সংক্রান্ত সাধারণ আলােচনা
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনটি প্রয়ােগ হবে না
১। চুক্তি নয় এমন কোন অঙ্গীকারের (Agreement) ব্যপারে ।
২। শুধুমাত্র সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন ছাড়া কোন ব্যক্তিকে কোন প্রতিকারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, যা সে কোন চুক্তির অধীনে পেতে পারত।
৩। দলিলসূহের উপর রেজিষ্ট্রেশন আইন ১৯০৮ এর প্রয়ােগকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে।
৪। শুধুমাত্র দন্ডমূলক আইন কার্যকর করার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার মঞ্জুর করা যায় না। (ধারা-৭]
সুনির্দিষ্ট প্রতিকারসমূহ ধারা-৫
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার প্রদান করা হয় নিম্নে উল্লেখিত ৫টি উপায়ে
১। নির্দিষ্ট সম্পত্তির দখল গ্রহণ করে এবং তা দাবীদারকে অর্পনের মাধ্যমে (Delivery of possession)
২। যা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে এমন কাজ করার আদেশ প্রদানের মাধ্যমে (Specific Performance of a Contract)
৩। যা না করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে এমন কাজ না করার আদেশ প্রদানের মাধ্যমে। (Injunction)
৪। ক্ষতিপূরনের রায় প্রদান ব্যতিত পক্ষ সমূহের অধিকার নির্ধারণ এবং ঘােষনার মাধ্যমে (Declaration of title) ।
৫। একজন রিসিভার বা তত্ত্বাবধায়ক নিয়ােগের মাধ্যমে (Appointment (of Receiver) ।
স্থাবর সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধার
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ধারা ৮ এবং ৯ স্থাবর সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধারের বিষয় নিয়ে আলােচনা করা হয়েছে।
৮ ধারায় মামলা
বাদী স্বত্বসহ দখল উদ্ধারের মামলা করতে চাইলে ৮ ধারার অধীন মামলা দায়ের করতে হবে। এই ক্ষেত্রে বাদীকে ৮ ধারার সাথে ৪২ ধারা (স্বত্ব ঘােষণা) উল্লেখ করতে হবে। কারণ ৮ ধারার অধীন মামলার ক্ষেত্রে বাদী দখল ছাড়াও স্বত্ব লাভের অধিকারী। মালিকানা প্রমাণ কে করবে, এই সম্পর্কিত বিধান আছে সাক্ষ্য আইনের ১১০ ধারায় ।
কে মামলা করতে পারে
সুনির্দিষ্ট স্থাবর সম্পত্তির দখলের অধিকারী ব্যক্তি।
কোন আইন অনুসরন করা হবে
৮ ধারার অধীনে সুনির্দিষ্ট স্থাবর সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে Code of Civil Procedure, 1908 এ নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরন করা হয়।
বাদীকে প্রমান করতে হবে
নির্দিষ্ট স্থাবর সম্পত্তিতে বাদীর স্বত্ব প্রমান করতে হবে। উক্ত সম্পত্তিতে বাদীর দখল ছিল কিনা তা প্রমান না করলেও চলবে। সাক্ষ্য আইনের ১১০ ধারার বিধান মতে দখল দাবিদার ব্যক্তিকে মালিকানা প্রমাণ করতে হবে।
মামলা দায়ের করার সময় সীমা
বেদখল হওয়ার দিন থেকে পরবর্তী ১২ বছরের মধ্যে। [অনুচ্ছেদ ১৪২, তামাদি আইন ১৯০৮]
কোথায় মামলা করবেন
দেওয়ানি আদালতে ।
মামলার কোর্ট ফি
বাদীকে মােকদ্দমার মূল্যমানের উপর ২% হারে এডভেলােরেম কোর্ট ফি প্রদান করতে হবে। সর্বোচ্চ এডভেলােরেম কোর্ট ফি হচ্ছে ৪০,০০০ টাকা।
৯ ধারায় মামলা
বাদী স্বত্ব ছাড়া শুধুমাত্র দখল পুনরুদ্ধারের জন্য মামলা দায়ের করতে হবে ৯ ধারায় অর্থাৎ বেআইনীভাবে বেদখলকৃত সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধারের জন্য ৯ ধারার অধীনে মামলা করতে হয়। ৯ ধারার নীতি হচ্ছে, যিনি দখলে আছেন, তিনি দখলে থাকবেন।
কে মামলা করতে পারে
দখলচ্যুত ব্যক্তি বা তার মাধ্যমে দাবিদার কোন ব্যক্তি দখল পুনরুদ্ধারের মামলা দায়ের করতে পারে।
বাদীকে প্রমান করতে হবে
ক) সম্পত্তিতে বাদীর দখল এবং বে-দখল
খ) বাদীকে তার সম্মতি ছাড়া অথবা যথাযথ আইন অনুসরন না করে দখলচ্যুত করা হয়েছে।
মামলা দায়ের করার সময়সীমা
বেদখল হওয়ার দিন থেকে পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে। [অনুচ্ছেদ ৩, তামাদি আইন ১৯০৮]।
মামলার কোর্ট ফি। (Half of Advalorem)
বাদীকে Advalorem কোর্ট ফি এর অর্ধেক ফি জমা দিতে হবে।
৯ ধারার অধীনে প্রদত্ত ডিক্রি বা আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিকার
৯ ধারার অধীনে দায়েরকৃত মামলায় আদালতের দেওয়া ডিক্রি বা আদেশের বিরুদ্ধে কোন আপিল বা রিভিউ করা যাবে না। তবে আদেশ বা ডিক্রির বিরুদ্ধে প্রতিকার হিসাবে রিভিশন দায়ের করা যাবে।
কোথায় মামলা করবেন
দেওয়ানি আদালতে।
প্রতিবন্ধকতা
৯ ধারায় স্থাবর সম্পত্তির ব্যাপারে নিজের স্বত্ব প্রতিষ্ঠা এবং তার দখল পুনরুদ্ধার করার জন্য কোন ব্যক্তিকে মামলা দায়েরে বাধা দিবে না।
সরকারের বিরুদ্ধে মামলা
৯ ধারা অনুসারে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যাবে না।
৮ ও ৯ ধারা তুলনামূলক আলোচনা
১। ৮ ধারায় মামলা দায়ের করার ক্ষেত্রে প্রমাণ করতে হবে জমির স্বত্ব ও দখল ।কিন্তু ৯ ধারায় মামলা দায়ের করার ক্ষেত্রে প্রমাণ করতে হবে জমির দখল ও বেদখল।
২। ৮ ধারায় মামলার তামাদির মেয়াদ ১২ বছর। কিন্তু ৯ ধারায় মামলার তামাদির মেয়াদ ৬ মাস।
৩। ৮ ধারায় সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করা যেতে পারে। কিন্তু ৯ ধারায় সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করা যায় না।
অস্থাবর সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধার। ধারা ১০-১১
ধারা-১০
১। সুনির্দিষ্ট অস্থাবর সম্পত্তি দখলের অধিকারী ব্যক্তি দেওয়ানি কার্যবিধি ১৯০৮ অনুসারে দখল পুনরুদ্ধার করতে পারবে ।
২। জিম্মাদার যে ব্যক্তির জন্য জিম্মাদার নিযুক্ত হয়েছে সেই ব্যক্তির স্বার্থে, অস্থাবর সম্পত্তির দখল পাওয়ার জন্য মামলা দায়ের করতে পারে ।
ধারা-১১
অস্থাবর সম্পত্তির মালিক নয়, কিন্তু দখলকারী বা নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তিকে কে নিম্নবর্ণিত, ক্ষেত্রে দখল লাভের অধিকারী ব্যক্তির নিকট প্রদানে বাধ্য করা যেতে পারে।
১। যখন দাবীকৃত সম্পত্তি দাবিদারের জিম্মাদারের (trustee) নিকট বা প্রতিনিধি হিসেবে বিবাদীর নিকট রয়েছে।
২। যখন টাকার মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমান (adequate) ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবে না।
৩। যখন দাবীকৃত বস্তুর ক্ষতির পরিমান নির্ণয় (Actual damage) করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হবে।
৪। যখন দাবীকৃত বস্তুর দখল দাবিদারের নিকট থেকে অন্যায়ভাবে হস্তান্তরিত করা হয়েছে।
চুক্তি অনুসারে সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন প্রসঙ্গে
যে চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করা যেতে পারে। ধারা ১২
আদালতের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাবলে নিম্ন বর্ণিত ক্ষেত্রে চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করা যেতে পারে।
১। যখন সম্মতিভুক্ত কার্যসম্পাদন পুরােপুরি বা আংশিক একটি অছি বা জিম্মার (trust) অন্তর্ভূক্ত হয় ।
২। যখন সম্মত্তিভুক্ত কার্যসম্পাদন না করলে কার্যত যে ক্ষতি হবে, তার পরিমান নির্ণয়ের কোন মানদন্ড (standard) না থাকলে।
৩। যখন সম্মতিভুক্ত কাজটি এমন হয় যে, তা সম্পাদন না করলে আর্থিক ক্ষতিপূরণের (Pecuniary Compensation) মাধ্যমে পর্যাপ্ত প্রতিকার লাভ করা যায় না।
৪। যখন এমন সম্ভাবনা থাকে যে, সম্মতিভুক্ত কার্যসম্পাদন না করার জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে না।
মামলা করার তামাদি
চুক্তি প্রবলের (Specific performance) এর মামলা করতে হয় ১ বছরের মধ্যে। অনুচ্ছেদ ১১৩, তামাদি আইন-১৯০৮।
কোর্ট ফিস
চুক্তি বলবৎ এর মামলার কোর্ট ফি Advalorem
ধারা-১৩ চুক্তির বিষয়বস্তু আংশিকভাবে বিলুপ্তি
যে চুক্তির বিষয়বস্তু আংশিকভাবে বিলুপ্তি হয়েছে উক্ত চুক্তির কার্যসম্পাদনে বাধ্য করা যেতে পারে।
ধারা-১৪ যখন চুক্তির অসম্পাদিত অংশ ক্ষুদ্র
যখন চুক্তির অসম্পাদিত অংশ ক্ষুদ্র হয় (Part Unperformed is small) এবং চুক্তি ভংগকারী পক্ষ এজন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে স্বীকৃত হলে, আদালত উক্ত চুক্তির বড় অংশটুকু সুনির্দিষ্টভাবে কার্যসম্পাদন করার এবং ক্ষুদ্র অংশের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ দিতে পারেন।
ধারা-১৫ যখন চুক্তির অসম্পাদিত অংশ বড়
যখন চুক্তির অসম্পাদিত অংশ বড় হয় (part unformed is large) অথবা আর্থিক ক্ষতিপূরণ যথেষ্ট না হয়, তাহলে আদালত সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের জন্য ডিক্রি দিবে না। তবে আদালত এই ক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের আদেশ প্রদান করতে পারেন, যদি বাদী পক্ষ বাকী সকল দাবী এবং ক্ষতিপূরণ পাবার অধিকার ত্যাগ করে।
ধারা-১৬ কোন চুক্তির একটি অংশ সম্পাদনযােগ্য / স্বতন্ত্র অংশের সম্পাদন
কোন চুক্তির একটি অংশ সম্পাদনযােগ্য এবং অপর অংশটি সম্পাদনযােগ্য নয়। সেক্ষেত্রে আদালত সম্পাদনযােগ্য অংশটি কার্যকর করার আদেশ দিতে পারেন। কোন চুক্তির স্বতন্ত্র অংশের সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন করা যায় ।
ধারা-১৭
শুধুমাত্র ১৪, ১৫ এবং ১৬ ধারার অধীনে মামলা করে চুক্তির অংশ বিশেষ সুনির্দিষ্টভাবে সম্পাদন করা সম্ভব।
ত্রুটিপূর্ণ স্বত্বসম্পন্ন বিক্রেতার বিরুদ্ধে ক্রেতার অধিকার ধারা-১৮
ত্রুটিপূর্ণ স্বত্ব সম্পন্ন বিক্রেতার ইজারাদাতার বিরুদ্ধে ক্রেতার বা ইজারাদারের নিম্নেবর্ণিত অধিকার রয়েছে।
১। বিক্রেতা বা ইজারাদাতা বিক্রয় বা ইজারা প্রদানের পর সম্পত্তিতে কোন স্বত্ব অর্জন করে, তাহলে উক্ত স্বত্বের জন্য চুক্তি পালন করতে বাধ্য করতে পারে।
২। স্বত্ব বৈধ করার জন্য অন্যান্য ব্যক্তিদের সম্মতি প্রয়ােজন হলে, বিক্রেতা বা ইজারাদাতাকে উক্ত সম্মতি সংগ্রহের জন্য বাধ্য করতে পারে।
৩। যেখানে বিক্রেতা দায়হীন সম্পত্তি বিক্রয়ের কথা প্রকাশ্যে ঘােষণা করে, কিন্তু বাস্তবে সম্পত্তি ক্রয়মূল্য অতিক্রম করে না এমন অর্থের বিনিময়ে বন্ধক রাখা হয়েছে, তাহলে ক্রেতা বিক্রেতাকে উক্ত সম্পত্তির বন্ধকমুক্ত এবং বন্ধকগ্রহীতার নিকট থেকে হস্তান্তর করতে বাধ্য করতে পারে।
৪। যেখানে বিক্রেতা বা ইজারাদাতা চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের জন্য মামলা দায়ের করে এবং মামলাটি ত্রুটিপূর্ণ স্বত্বের কারনে খারিজ হয়, তাহলে আদালত বিবাদীকে সুদসহ জমাকৃত অর্থ এবং মামলার খরচ ফেরৎ দেওয়ার আদেশ দিতে পারেন।
কতিপয় ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ মঞ্জুরের ক্ষমতা ধারা-১৯
চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের মামলায় বাদী কার্যসম্পাদনের অতিরিক্ত অথবা বিকল্প হিসেবে চুক্তি ভঙ্গের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারে । আদালত যদি দেখেন , শুধু সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন মঞ্জুর করা ন্যায় বিচারের জন্য যথেষ্ট নয়, সেক্ষেত্রে আদালত চুক্তি ভঙ্গের জন্য বাদীকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করার আদেশ প্রদান করতে পারেন।
সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনে ডিক্রি প্রদান প্রসংগে বিবেচনামূলক ক্ষমতা। ধারা-২২
সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের ক্ষেত্রে ডিক্রি প্রদানের এখতিয়ার হচ্ছে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা। তবে আদালতের স্বেচ্ছাধীন বা ইচ্ছাধীন (Discretionary Power) ক্ষমতা স্বেচ্ছাচারী (Arbitrary) হবে না। যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া ও বিচার বিভাগীয় মূলনীতি অনুসরন না করে আদালত তার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়ােগ করবে না। আদালতের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়ােগ করে সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের জন্য দেয়া ডিক্রি আপিল আদালতের মাধ্যমে সংশােধনযােগ্য। তবে নিম্নেবর্ণিত ক্ষেত্রে আদালত সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের জন্য ডিক্রি প্রদান না করার জন্য ইচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়ােগ করতে পারেন।
১। যে চুক্তি বাদীকে বিবাদীর উপর একটি অন্যায় সুবিধা প্রদান করে, যদিও বাদীর পক্ষ থেকে কোন জালিয়াতি ৰা ভুল বিবরণ নাও থাকতে পারে।
২। যে ক্ষেত্রে চুক্তির কার্যসম্পাদন বিবাদীকে অত্যন্ত ক্লেশে জড়িয়ে ফেলবে। যা সে জনতাে না, অপর দিকে বাদীর জন্য তেমন কোন ক্লেশ হয় না।
৩। যে ক্ষেত্রে বাদী সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনযােগ্য চুক্তির উল্লেখযােগ্য কাজ সম্পন্ন করেছে অথবা চুক্তির ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেক্ষেত্রে আদালত সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের ডিক্রি প্রদান করতে পারে।
যাদের পক্ষে চুক্তি কার্যকর করা যায়। ধারা ২৩
নিম্নে বর্ণিত ব্যক্তির পক্ষে চুক্তি সুনির্দিষ্ট ভাবে কার্যকর করা যায়-
১। চুক্তির যে কোন পক্ষ।
২ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি বা যে কোন পক্ষের প্রধান।
৩। যেখানে চুক্তি হয়, একটি বিবাহ সম্পর্কে নিস্পত্তি বা একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যকার সন্দেহপূর্ণ অধিকারের আপােষ মীমাংসা, সেখানে চুক্তি অনুসারে হিতকরভাবে অধিকারি যেকোন ব্যক্তি।
৪। আজীবন প্রজা, যিনি অন্য লােকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হলে তার পরবর্তী অধিকার।
৫। জীবনস্বত্ব ভােগীর সাথে যে ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ হয়েছে তার বিরুদ্ধে উক্ত ব্যক্তির জীবনস্বত্ব ভােগীর পরবর্তী ব্যক্তি।
৬ পাবলিক কোম্পানির উদ্যোক্তাগণ কোম্পানি গঠনের পূর্বেই কোম্পানির প্রয়োজনবশত চুক্তি করে এবং কোম্পানি গঠনের শর্তাবলী কেমন চুক্তিকে নির্বিঘ্ন করা হয়, সেখানে কোম্পানি।
৭ যে ক্ষেত্রে একটি পাবলিক কোম্পানি চুক্তি হয় এবং পরে আর একটি পাবলিক কোম্পানির সাথে মিলে এক নতুন কোম্পানি গঠন করে, সেক্ষেত্রে নতুন কোম্পানি।
যাদের পক্ষে চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন করা যায় না। ধারা ২৪
১. যে চুক্তি ভঙ্গের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারবে না।
২ যে নিজে চুক্তির প্রয়োজনীয় শর্ত ভঙ্গ করে বা শর্ত পালনে অসমর্থ হয় এবং যার ফলে তার নিজের অংশেরই কার্য সম্পাদন বাকি থাকে।
৩। যিনি ইতিমধ্যে তার প্রতিকার পেয়েছে এবং চুক্তিভঙ্গের জন্য ক্ষতিপূরণ পেয়েছে।
৪। যে চুক্তির পূর্বেই জানত তার বিষয়বস্তু নিস্পত্তি করা হয়েছিল এবং তখন তা কার্যকর ছিল।
Rectification of Instruments
দলিল সংশােধন
চুক্তিভুক্ত পক্ষগনের প্রকৃত উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য দলিলের ভুল সংশােধন করাকে দলিল সংশােধন বলে।
যখন দলিল সংশােধন করা যেতে পারে। ধারা- ৩১
যখন প্রতারনার মাধ্যমে বা পক্ষসমূহের পারস্পারিক ভুলের কারণে কোন চুক্তি বা অপর কোন লিখিত দলিল সত্যিকারভাবে তাদের উদ্দেশ্য প্রকাশ করে না, তখন আদালত তার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়ােগ করে দলিল সংশােধন করতে পারেন।
দলিল সংশােধনের আবেদন কে করেন
যে কোন পক্ষ অথবা তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি দলিল সংশােধনের মামলা দায়ের করতে পারেন।
কখন দলিল সংশােধন করা যায়
৩টি ক্ষেত্রে দলিল সংশােধন করা যায়
ক) প্রতারনার মাধ্যমে দলিল প্রনয়ন করলে
খ) দলিলে পারস্পরিক ভুল থাকলে
গ) দলিলের উদ্দেশ্য প্রকাশ না করলে
চুক্তি রদ। ধারা- ৩৫
চুক্তি রদ মানে চুক্তির কার্যসম্পাদন শুরু করতে বাধা প্রদান করা।
বিচার পূর্বক চুক্তি রদ। ধারা ৩৫
বিচার করার পূর্বেই নিম্ন বর্ণিত ক্ষেত্রে চুক্তি রদ করা যায়
১। যেখানে চুক্তি বাতিলযােগ্য (Voidable) অথবা বাদী কর্তৃক শেষ (Terminable) করা যায়।
২। যেখানে চুক্তিটি অবৈধ (Unlawful) এবং বাদীর থেকে বিবাদীর দোষ বেশি।
৩। বিক্রয় চুক্তি বা ইজারা গ্রহনের চুক্তির ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ প্রদানেই পরও ক্রেতা বা ইজারাদার ক্রয়মূল্য বা রেন্ট, প্রফিট ইত্যাদি অর্থ পরিশােধ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
কে চুক্তি রদের মামলা করতে পারে
লিখিত চুক্তিতে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে কোন ব্যক্তি চুক্তি রদ করার মামলা করতে পারে।
দলিল বাতিল বা বিলুপ্তি। ধারা-৩৯
দলিল বাতিল মানে দলিলটির কার্যকারিতা থাকবে না।
যে ক্ষেত্রে দলিল বাতিল বা বিলুপ্তির আদেশ প্রদান করা যায়। ধারা ৩৯
লিখিত চুক্তি যখন বাতিলযােগ্য (Voidable) বা বাতিল বা অবৈধ (Unlawful) তখন আদালত দলিল বাতিলের (Void) আদেশ দিতে পারেন।
কে দলিল বাতিল চাইতে পারে
যে কোন ব্যক্তি যার যুক্তিসংগত আশঙ্কা বা কারন আছে গুরুতর ক্ষতির।
ঘােষণামূলক মামলা বা ঘােষণামূলক ডিক্রি। ধারা-৪২
যে ব্যক্তির কোন সম্পত্তিতে স্বত্ব আছে বা যে ব্যক্তি কোন আইনভিত্তিক মর্যাদার অধিকারী, তিনি তার স্বত্ব বা অধিকার কোনরুপ হস্তক্ষেপ ছাড়াই ব্যবহার করতে পারবেন। কেউ যদি তার স্বত্ব বা আইনগত মর্যাদার অধিকার সম্পর্কে আপত্তি বা হস্তক্ষেপ করে তাহলে তিনি মামলা করে, তার স্বত্ব বা অধিকার সম্পর্কে ঘােষণা পেতে পারেন। এরুপ মামলাকে ঘােষণামূলক মামলা বলে।
ঘােষণামূলক মামলা কে করতে পারে?
ক) আইনসম্মত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ব্যক্তি
খ) কোন সম্পত্তিতে অধিকার আছে এমন ব্যক্তি।
ঘােষণামূলক মামলা করতে হয়
২টি বিষয়ে ঘােষণা চেয়ে বাদী আদালতে মােকদ্দমা দায়ের করতে পারে:
ক) আইনগত পরিচয়।
খ) সম্পত্তিতে স্বত্বের অধিকার
ঘােষণার ফলাফল। ধারা ৪৩
প্রদত্ত ঘােষণা শুধুমাত্র মামলার পক্ষমূহ এবং তাদের মাধ্যমে দাবিরত ব্যক্তির উপর এবং যেখানে পক্ষসমূহের মধ্যে কোন একটি পক্ষ হচ্ছে জিম্মাদার তেমন ব্যক্তিদের উপর উক্ত ঘােষণামূলক মামলার সিদ্ধান্ত অবশ্যই পালনীয় হবে।
রিসিভার নিয়ােগ। ধারা-৪৪
১। মামলা বিচারাধীন সময় রিসিভার নিয়ােগের বিষয়টি আদালতের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা।
২। রিসিভার নিয়ােগ তার অধিকার এবং দায়িত্ব কর্তব্য দেওয়ানি কার্যবিধি আইন কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত । [দেখুন আদেশ ৪০, দেওয়ানি কার্যবিধি]।
নিরােধমূলক প্রতিকার (Injunction)। ধারা ৫২-৫৭
আদালত নিরােধমূলক প্রতিকার মঞ্জুর করে অস্থায়ী (Temporary Injunction) বা চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Perpetual Injunction) জারির মাধ্যমে।
নিষেধাজ্ঞা শ্রেনীবিভাগ Classification of Injunction)
নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে কোন পক্ষকে কাজ করতে বাধ্য করা হয় অথবা কোন কাজ করা থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করা হয়।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে প্রধানত ৩ শ্রেনীর নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে
১। অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা [ধারা-৫২]
২। চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা [ধারা -৫২]
৩। বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা [ধারা - ৫৫]
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Temporary Injunction)। ধারা ৫৩
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে এমন নিষেধাজ্ঞা জারি যা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অথবা আদালতের পরবর্তী নিদের্শ না দেওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকে।
> মামলার যে কোন পর্যায়ে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা যায়।
> দেওয়ানি কার্যবিধি ১৯০৮ এর আদেশ ৩৯ দ্বারা স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা নিয়ন্ত্রিত হয়।
> অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে আদালত অমান্যকারীর সম্পত্তি ক্রোক এবং ৬ মাসের দেওয়ানি জেল।
> অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদালতের সিদ্ধান্ত হচ্ছে আদেশ।
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুরের নীতি
১। আপাত গ্রহণযােগ্য একটি কেস থাকা (Existence of prima facie and arguable case)
২। অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর না করলে অপূরনীয় ক্ষতি হবে। (Ineparable Loss)
৩। মােকদ্দমায় সঠিক ভারসাম্য (Balance of Convenience)
স্থায়ী/চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Perpetual injunctions)
> আদালত চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র শুনানির পর মামলার গুনাগুনের (Merits) উপর ভিত্তি করে দেয়া ডিক্রির মাধ্যমে মঞ্জুর করতে পারে।
> চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ হচ্ছে ডিক্রি।
> চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে আদালত বিবাদীকে চিরস্থায়ীভাবে কোন একটি অধিকার প্রয়ােগ করা থেকে অথবা কোন একটি কাজ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়।
যখন চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা হয়। ধারা-৫৪
যখন বিবাদী বাদীর সম্পত্তির অধিকার অথবা সম্পত্তির ভােগ করার অধিকারে অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করে অথবা হস্তক্ষেপ করার হুমকি প্রদান করে তখন আদালত নিম্নবর্ণিত ৫টি ক্ষেত্রে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করতে পারে।
১। যেখানে বিবাদী বাদীর জন্য সম্পত্তির জিম্মাদার (trustee)
২। যেখানে অধিকার লঙ্ঘনের কারনে সংঘটিত বাস্তব ক্ষতি অথবা সম্ভাব্য ক্ষতি নিরুপনের কোন মানদন্ড নেই।
৩। যেখানে অধিকার লঙ্ঘন এমন ধরনের যে, আর্থিক ক্ষতিপূরনের মাধ্যমে পর্যাপ্ত প্রতিকার করা যাবে না।
৪। যেখানে এমন সম্ভাবনা থাকে যে, অধিকার লঙ্ঘনের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে না।
৫ যেখানে বিচার বিভাগীয় কর্মধারায় জটিলতা নিবারনের জন্য ইনজংশন প্রয়োজনীয়।
বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা (Mandatory Injunction) । ধারা ৫৫
যখন একটি বাধ্যবাধকতা ভঙ্গ নিরোধ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট কাজ করা আবশ্যক হয় যা আদালত কর্তৃক কার্যকরযোগ্য, তখন আদালত তার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাবলে তা নিরোধ করার জন্য এবং একই সাথে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনে বাধ্য করার জন্য বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করতে পারেন।
যখন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখান করা হয়। ধারা ৫৬
নিম্নে বর্ণিত ১১টি ক্ষেত্রে আদালত নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করবে না যদি ইনজংশন চাওয়া হয়-
১। বিচার বিভাগীয় কার্যধারা স্থগিত রাখার জন্য ।
২। কোন অধীনস্থ আদালতের কার্যধারা স্থগিত রাখার জন্য।
৩। কোন ব্যক্তিকে আইন প্রণয়ন (Legislative body) বিষয়ক কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা থেকে বিরত রাখার জন্য।
৪। সরকারের কোন বিভাগের সরকারি কর্তব্যে ৰা বিদেশী সরকারের কোন কাজে হস্তক্ষেপ করার জন্য।
৫। কোন ফৌজদারি বিষয়ে কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য।
৬। যে চুক্তি সুনির্দিষ্ট ভাবে কার্যকর করা যায় না, তেমন চুক্তি ভঙ্গ নিরােধের উদ্দেশ্যে।
৭। উৎপাত নয় (Nuisance) এমন কাজ নিরােধ (Prevent) করার জন্য।
৮। বাদীর মৌন সম্মতি আছে এমন ক্রমাগত লংঘন নিরোধের জন্য।
৯। যখন জিম্মা ভঙ্গের (Breach of trust) প্রতিকার অন্য কোন সাধারণ কার্যধারার মাধ্যমে পাওয়া যায়।
১০। যখন আবেদনকারীর আচরণ এমন যে, তা তাকে আদালতের সাহায্য থেকে বঞ্চিত করে।
১১। যেখানে মামলার বিষয়বস্তুতে আবেদনকারীর কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই।
নেতিবাচক চুক্তি পালন করার জন্য নিষেধাজ্ঞা। ধারা-৫৭
যেখানে আদালত হ্যাঁ সূচক চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনে বাধ্য করতে পারে না, সেখানে আদালত না সূচক কার্যসম্পাদনে নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করতে পারে।
Video সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন এডভােকেটশীপ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা