- Get link
- X
- Other Apps
Section 9 civil procedure code
ধারা ৯ দেওয়ানী কার্যবিধি আইন
দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ার
ধারা ৯। বারিত না হলে আদালত সমস্ত প্রকার দেওয়ানী মামলার বিচার করবে।
অত্র আইনে বর্ণিত বিধানাবলী-সাপেক্ষে এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিষিদ্ধ না হলে সমস্ত প্রকার দেওয়ানী প্রকৃতির মামলার বিচার করার এখতিয়ার আদালতের থাকবে।
৯ ধারার ব্যাখ্যা
যে মামলা সম্পত্তি বা পদের অধিকার সম্পর্কে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়, তা দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা; উক্ত অধিকার ধর্মীয় আচার বা অনুষ্ঠানাদি বিষয়ক প্রশ্নের মীমাংসার উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করলেও তার ফলে দেওয়ানি প্রকৃতি নষ্ট হয় না ।
দেওয়ানী কার্যবিধি আইন ৯ ধারার বিশ্লেষণ
আদালতের এখতিয়ার
“আদালতের এখতিয়ার” (Jurisdiction of the Court) বলতে আইন দ্বারা নির্ধারিত সীমাবদ্ধতা সাপেক্ষে, বিচার কার্য সম্পন্ন করার জন্য আদালতের উপর অর্পিত ক্ষমতাকে বুঝায়। (Jurisdiction of the Court means the authority of a Court to administer justice subject to the limitations imposed by law.) অর্থাৎ, ‘আদালতের এখতিয়ার’ বলতে আদালতের উপর অর্পিত এমন এক ক্ষমতা প্রয়ােগ করার অধিকারকে বুঝায়, যার ভিত্তিতে কোন আদালতে বিচারের জন্য কোন মামলার শুনানী গ্রহণ, নিষ্পত্তিকরণ, ডিক্রী জারির মাধ্যমে রায় প্রদান ও বাস্তবায়িত করে থাকে। সাধারণ অর্থে, “এখতিয়ার” বলতে কোন মামলা, আপিল এবং আবেদনপত্র বিবেচনা করার ব্যাপারে আদালতের এখতিয়ারের ব্যক্তিকেই বুঝায়। কিন্তু প্রায়ােগিক অর্থে “এখতিয়ার” বলতে শুধুমাত্র মামলার বিষয়বস্তুর ব্যাপারকেই বুঝায় না, বরং আদালতের এখতিয়ারের আর্থিক ও স্থানীয় সীমাকেই বুঝিয়ে থাকে। “আদালতের এখতিয়ার” সম্পর্কে শুকলাল বনাম তারাচান্দ মামলায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, “এখতিয়ার” বলতে আদালতের এমন এক ক্ষমতাকে বুঝায়, যার ভিত্তিতে আদালত কোন মামলার বিচার্য বিষয়কে নিষ্পত্তি করে কিংবা তার সম্মুখে উপস্থাপিত বিষয়ের বিচার করে, আদালত তার উপর অর্পিত এই ক্ষমতা বলেই আইনগত বিতর্কের শুনানী এবং রায় প্রদানের এখতিয়ার প্রয়ােগ করে থাকেন। ১৯০৮ সনের দেওয়ানি কার্যবিধি আইনে ৯ ধারায় বলা হয়েছে যে, আদালত বিধিনিষেধ ব্যতীত সকল প্রকার দেওয়ানি মামলার বিচার করবেন। এই আইনে বর্ণিত ব্যবস্থা সাপেক্ষে এবং প্রত্যেক বা পরােক্ষভাবে নিষিদ্ধ না হলে সকল প্রকার দেওয়ানি প্রকৃতির মামলার বিচার করার এখতিয়ার আদালতের থাকবে। আদালতের এই এখতিয়ার শুধু মামলার বিষয়বস্তুর ব্যাপারেই নয়, বরং ইহার এখতিয়ারের স্থানীয় এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতাকেও বুঝাবে। এইভাবে, দেওয়ানি কার্যবিধির ৯ ধারার বিধান অনুসারে আদালতের এখতিয়ারের সংজ্ঞা প্রদান করা হয়ে থাকে।
কোন কোন মামলা দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ারভুক্ত
সকল প্রকার মামলাই কি দেওয়ানি আদালতের বিচারাধিকারের এখতিয়ারভুক্ত
দেওয়ানি কার্যবিধির ৯নং ধারা অনুযায়ী কেবলমাত্র দেওয়ানি প্রকৃতির মামলার বিচার করার এখতিয়ারই দেওয়ানি আদালতের রয়েছে। এই বিধান অনুযায়ী বিধি নিষেধ ব্যতীত আদালত সকল প্রকার দেওয়ানি মামলার বিচার করবেন। এই ধারা মতে, দেওয়ানি বিষয়ক মামলা বলতে ঐ ধরনের মামলাকেই বুঝায়, যখন মামলার প্রধান প্রশ্ন নাগরিক অধিকার নির্ধারণ সংক্রান্ত পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়। অতএব, একটি মামলাকে, তখনই দেওয়ানি সংক্রান্ত মামলার পর্যায় ভুক্ত বলে গন্য করা যাবে, যদি উহার ফলে একজন নাগরিকের দায়িত্ব ও অধিকার সংক্রান্ত প্রশ্নের উদ্ভব ঘটে এবং তা এমন পর্যায়ের হলে চলবে না, যা সম্পূর্ণভাবে সামাজিকতার প্রশ্নে জড়িত কাজেই, যদি মামলার প্রধান প্রশ্ন গোত্র সংক্রান্ত প্রশ্ন হয় বা ধর্মীয় আচার অনুষ্টানের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন হয়, তবে তা দেওয়ানি ধরনের মামলার পর্যায়ভুক্ত হবে না। যেমন, কোন ব্যক্তি, গােত্র বা ধর্ম সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়ার কারণে একজনের উপর ন্যস্ত অধিকার প্রাপ্ত হয়, তা হলে উহা দেওয়ানি ধরনের মামলার পর্যায়ভূক্ত হবে না এবং তা দেওয়ানি আদালত কর্তৃক উক্ত ধরনের মামলার বিচার করার অধিকারের ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হবে। কিন্তু দেওয়ানি কার্যবিধির ৯নং ধারার ব্যাখ্যায় লক্ষ্য করা যায় যে, যেখানে গােত্রীয় বা ধর্মীয় আচার অনুষ্টানের সাথে জড়িত প্রশ্নটি মামলার প্রধান প্রশ্ন নয় এবং তা শুধু একটি সামাজিক বিষয়ক প্রশ্ন মাত্র। এরূপ ক্ষেত্রে মামলার প্রধান প্রশ্নটি যদি দেওয়ানি ধরনের প্রশ্ন হয়; যেমন সম্পত্তি বা পদের অধিকার সম্পর্কিত প্রশ্ন ইত্যাদি, তা হলে প্রধান প্রশ্নটি যেহেতু দেওয়ানি ধরনের মামলার পর্যায়ভুক্ত, সেহেতু দেওয়ানি আদালতের গােত্রীয় প্রশ্ন বা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত প্রশ্নটি মীমাংসার পূর্ণ এখতিয়ার রয়েছে।
এই প্রসঙ্গে দেওয়ানী কার্যবিধির ৯নং ধারায় প্রদত্ত ব্যাখ্যাটি বিশেষ ভাবে উল্লেখযােগ্য। এই ধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, “যে মামলায় সম্পত্তি বা পদের অধিকার সম্পর্কে বিরােধিতা করা হয়, তা দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা; এই অধিকার ধর্মীয় কার্য বা উৎসব সম্পর্কিত প্রশ্নের উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করলেও তার ফলে দেওয়ানি মামলার প্রকৃতির নষ্ট হয় না।” অতএব, যে কোন মামলার ক্ষেত্রেই যদি আইনগত অধিকার নির্ণয়ের প্রশ্নের উত্থাপিত হয়, তা হলে উহা দেওয়ানি ধরনের মামলা বলে অভিহিত হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, যদি কোন ব্যক্তিকে তার গােত্র হতে বহিষ্কার করা হয়, তা হলে উহার দ্বারা আইনগত অধিকার নির্ণয়ের বিষয়টি জড়িয়ে যায়, যার ফলে ইহা দেওয়ানি ধরনের মামলার পর্যায়ভুক্ত বলে গণ্য হয়।
দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা কিভাবে দেওয়ানি আদালতে বিচারের আওতায় আসবে
“দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা” (Suits of Civil Nature) কিভাবে দেওয়ানি আদালতে বিচারের আওতায় আসবে, সে সম্পর্কে ১৯০৮ সনের দেওয়ানি কার্যবিধির ৯ ধারায় ব্যক্ত করা হয়েছে। দেওয়ানি কার্যবিধির ৯ ধারায় বলা হয়েছে যে, যখন কোন মামলা একজন নাগরিকের সম্পত্তি অথবা, পদের অধিকার সংক্রান্ত প্রশ্নের মীমাংসা মামলার প্রধান বিচার্য বিষয় হয়, তখনই উহা দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা হয় এবং দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ারভুক্ত হয়। কোন মামলাকে দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ারভুক্ত হতে হলে, সেক্ষেত্রে সম্পত্তি বা পদের অধিকারের প্রশ্নটি প্রধান-বিবেচ্য বিষয় হতে হবে এবং এরুপ হলেই মামলাটি দেওয়ানি আদালতের বিচারের এখতিয়ারভুক্ত হবে। সমাজ হতে অবৈধভাবে বহিষ্কারের বিরুদ্ধে প্রতিকারের জন্য দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করা যেতে পারে। এই প্রসঙ্গে উদাহরণস্বরূপ, নরহরী বনাম বাদ্রীনাথ মন্দির কমিটি (A.R 1952 S.C. 245) মামলার নজিরটি বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। এই মামলার সিদ্ধান্তে প্রকাশ, প্রত্যেক নাগরিকেরই সম্মানে সমাজে বসবাস করার অধিকার রয়েছে। যদি কোন ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদার প্রতি কিংবা তার আইনগত অধিকারের উপর অন্যায়ভাবে আঘাত করা হয়, তবে সেক্ষেত্রে ক্ষুদ্ধ ব্যক্তি ১৮৭৭ সনের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪১ ধারার বিধান অনুযায়ী, মর্যাদা লংঘনকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঘােষণামূলক ডিক্রী জারির প্রার্থনা করে দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করতে পারে। অনুরূপভাবে একটি মন্দিরের পূজারি কে হবেন এই বিষয়ে দুই ব্যক্তির মধ্যে বিরােধ দেখা দিলে সেক্ষেত্রে তর্কিত বিষয়গুলি যদি কোন পদের অধিকার সম্পর্কে হয়, তবে তা অবশ্যই দেওয়ানি আদালতের বিচার্য হবে। এইভাবে, উপরে উল্লেখিত কথামালার দ্বারা ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, যাবতীয় দেওয়ানি প্রকৃতির মামলাগুলি এককভাবে দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ারের উপরই বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ার
আদালতের এখতিয়ার বলতে আদালতের উপর অর্পিত এমন এক ক্ষমতা প্রয়ােগ করাকে বুঝায়, যার ভিত্ততে আদালতে বিচারের জন্য মামলার শুনানী গ্রহন, নিষ্পত্তিকরণ, ডিক্রী জারির মাধ্যমে রায় প্রদান ও বাস্তবায়িত করতে পারে। দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ারকে নিম্ন বর্ণিত ভাবে বিভক্ত করা যায়ঃ
১। বিষয়গত এখতিয়ার,
২। আদি এখতিয়ার,
৩। আর্থিক এখতিয়ার,
৪। আঞ্চলিক এখতিয়ার,
৫। আপিল এখতিয়ার।
দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা (Nature of Civil Suits) বা বিষয়গত এখতিয়ার ধারা - ৯
দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ৯ ধারা অনুসারে আদালত প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষ বিধি নিষেধ ব্যতীত সকল প্রকার দেওয়ানি প্রকৃতির মামলার বিচার করবেন। যখন কোন মামলায় একজন নাগরিকের সম্পত্তির অথবা পদের অধিকার (Right to Property or Right to Office) সংক্রান্ত প্রশ্নের মীমাংসা মামলার প্রধান বিচার্য বিষয় হয়, তখনই তা দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা হয় এবং দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ারভুক্ত হয়।
যখন কোন মামলা সম্পত্তি বা পদের অধিকার সম্পর্কে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় এবং উক্ত অধিকার যদি ধর্মীয় আচার বা আনুষ্ঠানিক বিষয়ক প্রশ্নের মীমাংসার উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করলেও তা দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা। সুতরাং মামলার বিষয়বস্তু দেওয়ানি প্রকৃতির না হলে দেওয়ানি আদালতে উক্ত মামলার বিচার করা যাবে না।
মামলা আমলে নেওয়ার ক্ষেত্রে দেওয়ানি আদালত দুটি বিষয় বিবেচনা করবেন
১। মামলাটি দেওয়ানি প্রকৃতির কিনা?
২। মামলাটি আমলে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন Express or Implied (ব্যক্ত/অব্যক্ত) বিধি নিষেধ আছে কিনা ?
কোন কোন মামলা দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ার বহির্ভূত
যে যে মামলা দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ার বহির্ভূত, তা নিম্নে প্রদান করা হলঃ
১) রাজস্ব আদালতে যেসব বিষয় নিয়ে মােকদ্দমা করা হয় সেসকল বিষয়ে দেওয়ানি মােকদ্দমা করা চলে না। দেওয়ানি আদালত রাজস্ব আদালতের কোন রায়ের উপর মন্তব্য করিবার অধিকার রাখে না।
২) ফৌজদারী আদালতে যেইসব বিষয় নিয়ে মােকদ্দমা করা হয় সেইসব বিষয়ে দেওয়ানি আদালতে কোন এখতিয়ার নাই । তবে ফৌজদারী আদালতেরও সম্পত্তির স্বত্ব নিয়ে কোন মােকদ্দমার অধিকার নেই ।
৩) ধর্মীয় প্রথা বা অনুষ্ঠান সম্পর্কিত কোন মামলা দেওয়ানি মামলা নয় ।
৪) বিশেষ আইনে যেক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, আইনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আদালতে কোনপ্রকার মামলা চলিবে না, ঐ সকল বিষয়ে দেওয়ানি মামলা চলিবে না।
মামলা দায়ের বা বিচারের বিধি নিষেধ
কিছু কিছু ক্ষেত্রে মামলা দায়ের করাতে আইনগত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে, সে সকল ক্ষেত্রে মামলা করা যায় না। দেওয়ানি কার্যবিধির আদেশ-২ এর নিয়ম ২ মোতাবেক, সমগ্ৰ দাবি মামলায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এটা যদি না করা হয় তবে দাবির কোন অংশ নিয়ে পরবর্তীতে মামলা করা যাবে না। আদেশ ৯ এর বিধি ৯ মােতাবেক, বাদির ত্রুটির কারনে তার বিরুদ্ধে মামলা খারিজ হলে, পুনরায় নতুন মামলা দায়ের চলবে না। দেওয়ানি কার্যবিধির আদেশ ২২ এর নিয়ম ৯ বলা হয়েছে যে, কোন মামলা খারিজ হলে বা নষ্ট হয়ে গেলে একই কারনে পুনরায় মামলা করা যাবে না এবং আদেশ ২৩ এর নিয়ম ১ বলা হয়েছে, আদালতের অনুমতি ব্যতিত বাদী যদি মামলা প্রত্যাহার করে, তবে সে এই বিষয় নিয়ে পুনরায় মামলা করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। দেওয়ানি কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ১০, ১১, ১২, ১৩, ৬৬, ৮৩, ৮৪, ৯১, ৯২ ধারাগুলােতে মামলা দায়ের বা বিচারের বিধি নিষেধ সম্পর্কিত বিধান বর্ণিত আছে।
দেওয়ানি মােকদ্দমা বলিতে কি বুঝায়
দেওয়ানি মােকদ্দমা বলিতে এমন এক ধরনের মােকদ্দমাকে বুঝায়, যে মােকদ্দমার দ্বারা দেশের কোন নাগরিকের দায়িত্ব ও অধিকার নির্ধারণ করা হয়। তবে, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সহিত সংশ্লিষ্ট কোন প্রশ্নকে দেওয়ানি মােকদ্দমার পর্যায়ভুক্ত করা যায় না। এইভাবে কোন গােত্র বা ধর্ম সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়ার কারণে একজনের উপর ন্যস্ত কোন অধিকারকেও দেওয়ানি সংক্রান্ত অধিকার হিসাবে গণ্য করা যায় না। এই ধরনের বিধি নিষেধ সাপেক্ষে অধিকার সংক্রান্ত মামলাগুলি দেওয়ানি আদালত কর্তৃক বিচার করিবার ক্ষেত্রে বাধাপ্রাপ্ত হবে। এইভাবে যে সকল মােকদ্দমা দেওয়ানি আদালতে বিচারের জন্য গ্রহণ করতে প্রকাশ্য অথবা পরােক্ষভাবে নিষেধ আছে সেই সমস্ত মামলা ব্যতীত সমস্ত মামলাই দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা দেওয়ানি আদালত উহার বিচার করিবেন। অতএব বিধি নিষেধ ব্যতীত সকল প্রকার দেওয়ানি ধরনের মামলার বিচারই দেওয়ানি আদালত কর্তৃক সম্পন্ন হতে পারে। তাই দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ৯নং ধারায় বলা হয়েছে। যে, এই আইনে বর্ণিত বিধি নিষেধ সাপেক্ষে এবং প্রতক্ষ্য বা পরােক্ষভাবে নিষিদ্ধ না হইলে, সকল প্রকার দেওয়ানি প্রকৃতির মামলার বিচার করিবার এখতিয়ার আদালতের থাকিবে। এই ধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, যে মামলায় সম্পত্তি বা পদের অধিকার সম্পর্কে বিরােধিতা হয়, তাই দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা এই অধিকার ধর্মীয় কার্য বা উৎসব সম্পর্কিত প্রশ্নের মীমাংসার উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করলেও এইরূপ মামলায় দেওয়ানি প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য ক্ষুন্ন বা বিনষ্ট হবে না। এই প্রসঙ্গে উদাহরণস্বরূপ- কোন ধর্মীয় পদাধিকার ব্যক্তি কর্তৃক তার পদে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার জন্য কৃত মামলা অথবা কোন উৎসবে কিংবা গােত্রীয় ভােজে কোন সদস্যকে নিমন্ত্রণ না করিবার জন্য মামলাসমূহের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। এই ধরনের মামলাগুলি যেহেতু আইনগত অধিকারের উপর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, সেহেতু ইহা দেওয়ানি আদালতের বিচারের আওতাভুক্ত।
“দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা” কি
“দেওয়ানি প্রকৃতির মােকদ্দমা” বলিতে কোন আইনগত বৈধ অধিকারের ভিত্তিতে এমন এক দেওয়ানি ধরণের মােকদ্দমা রুজু করাকে বুঝায়, যার ফলে নালিশের কারণ উদ্ভব হয়। একটি মােকদ্দমা সেইক্ষেত্রে দেওয়ানি প্রকৃতির মামলার পর্যায়ে পড়ে, যেক্ষেত্রে মােকদ্দমার প্রধান বিচার্য বিষয়টি নাগরিক অধিকার নির্ধারণ সংক্রান্ত হয়। কোন মামলাকে দেওয়ানি প্রকৃতির মামলার আওতাভূক্ত করতে হইলে, সেই মামলাটি অবশ্যই একজন নাগরিকের দায়িত্ব ও অধিকার কার্যকরী করার জন্যে হতে হবে, এবং মামলাটির প্রকৃতি এমন ধরণের হইলে চলিবে না, যার প্রকৃতি সম্পূর্ণভাবে সামাজিক ধরণের। যে মামলা দেওয়ানি ধরণের অধিকার নয়, সেইসব মামলা বিচার করার ব্যাপারে দেওয়ানি আদালত বাধাগ্রস্ত হয়। অতএব, দেওয়ানি আদালত শুধুমাত্র দেওয়ানি ‘প্রকৃতির মামলা বিচার করার ব্যাপারেই একচ্ছত্র অধিকার প্রয়ােগ করার অধিকারী।
"দেওয়ানি প্রকৃতির মােকদ্দমা” সম্পর্কে ১৯০৮ সনের দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ৯ ধারায় বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই আইনে বর্ণিত ব্যবস্থা সাপেক্ষে এবং প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে নিষিদ্ধ না হইলে সকল প্রকার দেওয়ানি প্রকৃতির মামলার বিচার করার এখতিয়ার আদালতের থাকিবে। যেসব মামলা দেওয়ানি আদালতে বিচারের জন্য গ্রহণ করতে প্রকাশ্য অথবা পরােক্ষভাবে নিষেধ আছে, কেবল সেইসব মামলা ব্যতীত সমস্ত দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা দেওয়ানি আদালত বিচার করিবেন। এই আইনের ৯ ধাবার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, যদি কোন মামলায় সম্পত্তি বা পদের অধিকার বিষয়ে প্রশ্ন উঠে, তবেই, সেই মামলাটি দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা হিসাবে গণ্য হবে। দেওয়ানি কার্যবিধির ৯ ধারার ব্যাখ্যা বলে এই অধিকার ধর্মীয় কার্য বা উৎসব সম্পর্কিত প্রশ্নের মীমাংসার উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হইলেও এই মামলা দেওয়ানি প্রকৃতির কোন বিধানকে খুন্ন করিবে না। কিন্তু তর্কিত বিষয়টি যদি কোন সামাজিক কিংবা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বিষয় সম্পর্কিত হয় এবং উহার সহিত যদি কাহারও কোন আইনগত অধিকারের প্রশ্ন জড়িত না থাকে, তবে সেইসব সামাজিক অথবা ধর্মীয় বিষয়ে উত্থাপিত প্রশ্নের মীমাংসার জন্য কোন মামলা দেওয়ানি আদালতে দায়ের করা যাইবে না। অনুরূপভাবে, কোন এক পক্ষের কার্য দ্বারা অপর পক্ষের যতই আর্থিক ক্ষতি সাধিত হােক না কেন, কিন্তু তাতে যদি কোন আইনগত অধিকার লংঘিত না হয় তবে সেইক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ তার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কোন দেওয়ানি মামলা দায়ের করতে পারবে না। এই প্রসঙ্গে দৃষ্টান্তস্বরূপ বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, চট্টগ্রাম বিপনী বিতানের নিকট রাস্তার এক পার্শ্বে বিপনী বিতানের জন্মলগ্ন হতেই একটি অতি সাধারণ চায়ের দোকান আছে। দোকানটি অতি সাধারণ হইলেও, এই দোকানের বেচা-কেনা অতিশয় প্রশংসনীয়। ঐ দোকানটির একচেটিয়া বেচা-কেনা দেখিয়া অপর এক ব্যক্তি ঐ প্রাচীনতম চায়ের দোকানের নিকট আর একটি জমকালাে আধুনিক চায়ের দোকান স্থাপন করিল। প্রতিদ্বন্দ্বী দোকানটি চালু করার পর হতেই ঐ এলাকার সমস্ত গ্রাহক নূতন দোকানে ভীর জমাইতে লাগিল। পূর্বের প্রাচীন দোকানটি গ্রাহক অভাবে-একেবারেই অচল হয়ে পড়িল। পরবর্তী দোকানের আধুনিকতা এবং সমৃদ্ধতার কারণে পূর্ববর্তী জরাজীর্ণ দোকানীর অপূরণীয় আর্থিক ক্ষতি সাধিত হতে লাগিল। এইক্ষেত্রে, পুরাতন দোকানীর আর্থিক ক্ষতি যতই ব্যাপক হােক না কেন, সে তার নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী দোকানীর বিরুদ্ধে কোন প্রকার দেওয়ানি মামলা দায়ের করতে পারবে না। কারণ, নূতন প্রতিদ্বন্দ্বী দোকানী তার পার্শ্ববর্তী পুরাতন দোকানীর ব্যাপারে কোনরূপ ‘আইনগত অধিকার লংঘন করে নাই। এই দৃষ্টান্তটির দ্বারা ইহাই সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। হয় যে, কোনরূপ আইনগত অধিকার কিংবা মর্যাদার উপর যদি কেহ আঘাতের সম্মুখীন হন, তবে সেই ব্যক্তি উহার প্রতিকারের জন্য দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে, যদি প্রত্যক্ষ অথবা পরােক্ষভাবে কোন আইনে নিষেধ না থাকে। এইভাবে যেক্ষেত্রে কোন মােকদ্দমার একজন নাগরিকের সম্পত্তি কিংবা পদে অধিকার সংক্রান্ত প্রশ্নের মীমাংসা মােকদ্দমার প্রধান বিচার্য বিষয় হয়, সেইক্ষেত্রে ঐ বিষয়গুলি দেওয়ানি প্রকৃতির মােকদ্দমার অন্তর্ভূক্ত হয়। চীতালী বনাম রাও মােকদ্দমার সিদ্ধান্তে প্রকাশ, “নাগরিক অধিকার বলিতে ঐসব অধিকারসমূহকে বুঝায়, যার সহিত কোন ব্যক্তির সম্পত্তির চুক্তি বা মর্যাদা সংশ্লিষ্ট, যা কোন ব্যক্তি একজন নাগরিক হিসায়ে উপভােগ করে এবং এইরূপ নাগরিক অধিকারসমূহের প্রশ্নটি কোন একটি মামলা রুজুর মাধ্যমে দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়” অর্থাৎ নাগরিক অধিকারগুলি কোন বিশেষ ব্যক্তি, সম্পত্তি কিংবা পদের অধিকারের প্রশ্নটির সহিত জড়িত। কলিকাতা হাইকোর্টের রুলিং অনুযায়ী যে কোন পদ বা মর্যাদা হল দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা, যা দেওয়ানি আদালতের বিচারাধিকারের আওতায় পড়ে।
আদি এখতিয়ার বা মূল এখতিয়ার (Original Jusrisdiction)
যে সকল আদালতের প্রাথমকিভাবে দেওয়ানি মামলা বিচারের জন্য আমলে নেওয়ার এখতিয়ার থাকে, তাকে আদি এখতিয়ার বা মূল এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত বলে। নিম্নে লিখিত দেওয়ানি আদালতে প্রাথমিক ভাবে মূল দেওয়ানি মামলা দায়ের করা যায় অর্থাৎ আদি এখতিয়ার আছে।
১। যুগ্ম জেলা জজ আদালত।
২। সিনিয়র সহকারী জজ আদালত।
৩। সহকারী জজ আদালত।
জেলা জজের এখতিয়ার
সাধারণত জেলা জজের ট্রেডমার্ক আইন, কপিরাইট আইন, প্রবেট (উইল সংক্রান্ত দলিল) বিষয়ে আদি এখতিয়ার আছে।
অতিরিক্ত জেলা জজের এখতিয়ার
অতিরিক্ত জেলা জজ, জেলা জজ কর্তৃক প্রদত্ত মামলার বিচার করে থাকেন। কিন্তু অতিরিক্ত জেলা জজের কোন মূল এখতিয়ার নেই। সুতরাং এই আদালতে কোন মামলা দায়ের করা যাবে না।
আর্থিক এখতিয়ার (Pecuinary Jurisdiction)
দেওয়ানি কার্যবিধির ১৫ ধারা অনুসারে,প্রত্যেকটি মামলা বিচার করার যােগ্যতাসম্পন্ন সর্বনিম্ন পর্যায়ের (Lowest Grade of Competent Court) আদালতে দায়ের করতে হবে। আদালতের আর্থিক এখতিয়ার নির্ধারনের মাধ্যমে সর্বনিম্ন স্তরের আদালত নির্ধারণ করা হয়। ধারা ৬ অনুসারে, কোন আদালত তার জন্য নির্ধারিত আর্থিক এখতিয়ারের বাইরে বেশি মূল্যসম্পন্ন বিষয়বস্তু বিষয়ক মামলার বিচার করবে না।
The Civil Courts Act, 1887 (Act No. XII of 1887) Civil Courts Act, 1887s (Amendment) 2021
দেওয়ানি আদালত আইন, 1887 (1887 সালের আইন নং XII), দেওয়ানি আদালত আইন, 1887 (সংশোধন) 2021
দেওয়ানি মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে সহকারী জজ সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা মূল্যমানের, সিনিয়র সহকারী জজ ২৫ লাখ টাকার এবং জেলা জজ ৫ কোটি টাকা মূল্যমানের মামলা গ্রহণ করতে পারবেন এবং আপিল শুনানির ক্ষেত্রে জেলা জজের এখতিয়ার পাঁচ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ কোটি টাকা করা হয়েছে। ৫ কোটি টাকার অধিক মূল্যমানের আপিল শুনানি হাইকোর্ট বিভাগে করতে পারবে।