- Get link
- X
- Other Apps
Section 33 Civil Procedure Code Judgement and Decree
ধারা ৩৩ রায় ও ডিক্রী দেওয়ানী কার্যবিধি আইন
ধাৱা ৩৩। রায় ও ডিক্রী Judgement and Decree
মামলা শুনানীর পর আদালত রায় ঘােষণা করবে এবং এরূপ রায়ের ভিত্তিতে ডিক্রী প্রদত্ত হবে।
৩৩ ধারার বিশ্লেষণ
দেওয়ানি কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ধারা-৩৩ এ রায় ও ডিক্রী সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, মামলা শুনানীর পর আদালত রায় ঘােষণা করবে এবং এরূপ রায়ের ভিত্তিতে ডিক্রী প্রদত্ত হবে। একটি রায়ে সাধারণত নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ সন্নিবেশিত হয়-
১) মামলার সংক্ষিপ্ত বিবৃতি
২) বিচার্য বিষয়াদি;
৩) গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ
৪) সিদ্ধান্তাদির অনুকুলে যুক্তি।
রায়, ডিক্রী এবং আদেশের মধ্যে পার্থক্য
আইনগত ফলাফলের দৃষ্টিতে রায়, ডিক্রী এবং আদেশের মধ্যে যে সকল উল্লেখযােগ্য পার্থক্যগুলি বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায় তা হল নিম্নরূপ; যথা:
১) 'রায়' (Judgment) শব্দটির সংজ্ঞা ১৯০৮ সনের দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের এই আইনের ২(১) ধারা মতে, “রায়” বলতে বিচারক কর্তৃক প্রদত্ত এমন এক বিবৃতিকে বুঝায় যার ভিত্তি হলো ডিগ্রী বা আদেশ।(Judgement means the statement given by the Judge of the grounds of a decree or order). অর্থাৎ ডিগ্রী বা আদেশের ভিত্তি হিসেবে বিচারক যে বিবৃতি প্রদান করেন তাই হল রায়। এইভাবে, একটি ডিক্রী কিংবা আদেশের সমর্থনে আদালত যেসব যুক্তি এবং কারণসমূহের উপর নির্ভর করেন, সেসব যুক্তি এবং কারণ সম্বলিত বিবৃতিকেও রায় বলা হয়ে থাকে। অপরদিকে, ডিক্রীর সংজ্ঞায় একই আইনের ২(২) ধারায় বলা হয়েছে যে, ডিক্রী হতে আদালত কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারিত এমন এক বক্তব্যকে বুঝায়, যা কোন মামলায় বিতর্কিত সমস্ত কিংবা যে কোন বিষয় সম্পর্কে পক্ষসমূহের অধিকার চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করে, এবং এই ডিক্রী প্রাথমিক অথবা চূড়ান্ত হতে পারে আরজি বাতিল এবং অত্র আইনের ৪৭ ধারা কিংবা ১৪৪ ধারায় বর্ণিত কোন প্রশ্ন বিচারে নিস্পত্তি হলে তাও ডিক্রী হিসাবে গণ্য হবে। তবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি ডিক্রীর অন্তর্ভূক্ত হবে না। যেমন:
(ক) যেসব আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যায় ; এবং (খ) আদালতের কোন নিয়ম বা নির্দেশ পালনে ব্যর্থতার কারণে কোন মামলা খারিজের আদেশ। (Decree is the formal expression of a court which conclusively decides the rights of the parties in dispute in the suit and may be either preliminary or final. It shall be considered to include the refusal to accept of a plaint and the resolution of any question within section 47 of section 144 of this Code, but shall not include:- (a) any refusal to accep from which an appeal lies as an appeal from an order, and (b) any order of dismissal for default).
ডিক্রী আংশিকভাবে প্রাথমিক এবং আংশিকভাবে চূড়ান্ত হতে পারে
এই আইনের ২(২) ধারায় বর্ণিত ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, একটি ডিক্রী’ সেক্ষেত্রেই প্রাথমিক বলে গণ্য হয়, যেক্ষেত্রে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য আরও ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়ােজন থাকে। কিন্তু মামলার বিষয়বস্তু যেক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবে নিস্পত্তি হয়, সেক্ষেত্রে ডিক্রীও নিষ্পত্তি হয়ে যায় । ডিক্রী আংশিকভাবে প্রাথমিক এবং আংশিকভাবে চূড়ান্ত হতে পারে।
পক্ষান্তরে, “আদেশ” শব্দটির সংজ্ঞা সম্পর্কে এই আইনের ২(১৪) ধাৱায় বলা হয়েছে যে, “আদেশ” বলতে দেওয়ানি আদালতের এমন কোন সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক প্রকাশকে বুঝায়, যা ডিক্রী নয়। (Order means the formal expression of any decision of a Civil Court which is not a decree), 'আদেশ’ কোন আরজির চূড়ান্ত পর্যায় নয় বিধায় ; ইহার দ্বারা মামলার কোন পক্ষেরই অধিকার চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হয় না। যে কোন দরখাস্ত বা আবেদন পত্রের কার্যধারা হতেও আদেশের উদ্ভব ঘটিতে পারে।
আদেশের উদাহরণস্বরূপ বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, একটি তারিখে কোন একটি মামলার শুনানির দিন ধার্য হলো, কিন্তু শুনানীর দিনই বাদী অথবা বিবাদী কোন পক্ষই হাজির না হওয়ার কারণে উভয়পক্ষের অনুপস্থিতিতে মামলাটি খারিজ বা ডিসমিস হয়ে গেল। ইহাই হলো আদালত কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ।
(২) রায় ডিক্রী এবং আদেশ একবার আদালত কর্তৃক স্বাক্ষরিত এবং ঘোষিত হলে অতঃপর কেবলমাত্র ১৯০৮ সনের দেওয়ানি কার্যবিধির ১৫২ ধারা অনুসারে করা ব্যতীত আর কোন সংশােধন বা সংযোজন করা চলবে না।
(৩) রায় হল একটি ডিক্রীর মূল ভিত্তি। কিন্তু ডিক্রী” এবং আদেশ হলো আদলতে বিচারকের রায়।
(৪) ডিক্রীর সাথে অবশ্যই রায়ের সামঞ্জস্য থাকতে হবে। কিন্তু আদেশে রায় কিংবা ডিক্রীর সামঞ্জস্য রক্ষা করার কোন প্রয়ােজন হয় না। আদেশ আদালতের নিকট আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত।
(৫) রায় অথবা ডিক্রীর ভিত্তিমূলে একটি মামলার পক্ষগণের মধ্যে উথাপিত বিচার্য বিষয় সম্পর্কে চূড়ান্ত নিস্পত্তি হয়। কিন্তু আদেশের দ্বারা মামলার কোন বিষয় চূড়ান্তভাবে নিস্পত্তি হয় না।
(৬) সাক্ষী প্রমাণের উপর ভিত্তি করে রায় প্রদান করা হয়। কিন্তু কিন্তু ডিক্রীর বা আদেশে' সাক্ষী প্রমাণের কোন প্রয়ােজন অনুভূত হয় না।
(৭) রায় অবশ্যই প্রকাশ্য আদালতে ঘােষিত হতে হবে। কিন্তু ডিক্রী প্রকাশ্য আদালতে ঘােষিত হওয়ার প্রয়ােজন নাই। তবে, আদেশ অবশ্যই দেওয়ানি আদালত কর্তৃক আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রকাশিত হতে হবে।
(৮) রায়ে অবশ্যই মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ, বিচার্য বিষয়সমূহ, তৎসম্পর্কে আদালতের সিদ্ধান্তসমূহ এবং এইগুলির সমর্থনে মামলার কারণসমূহের উল্লেখ অবশ্যই থাকতে হবে। পক্ষান্তরে, ডিক্রীতে, মামলার সকল পক্ষগণের নাম উল্লেখ করতে হবে। মামলার বিষয়বস্তু, যদি স্থাবর সম্পত্তি হয়, তবে সে সম্পত্তি সনাক্তকরণের জন্য যাবতীয় তথ্যাবলী, যেমন- সেটেলমেন্ট পরচার দাগ নম্বর ও অন্যান্য প্রয়ােজনীয় বিষয়গুলি অবশ্যই ডিক্রীতে উল্লেখ করতে হবে। মামলার আইনসঙ্গত খরচগুলিও ডিক্রীতে উল্লেখ থাকতে হবে। ডিক্রীতে রায় ঘােষণার তারিখ উল্লেখ করতে হবে। কিন্তু আদেশ কোন ডিক্রী বা রায়ের অন্তর্ভুক্ত নয়। ইহা আদালতের একটি আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত।
(৯) রায় এবং ডিক্রী উভয়ই আপিলযোগ্য। কিন্তু আদেশ সর্বক্ষেত্রেই রিভিশনযােগ্য।
(১০) রায় এবং ডিক্রীর বেলায় যদি আইনের কোন প্রশ্ন জড়িত হয়ে পড়ে, তবে হাইকোর্টে দ্বিতীয় আপিল আইন অনুযায়ী সমর্থনীয়। পক্ষান্তরে, আদেশের বেলায় কোন দ্বিতীয় আপিল আইন অনুযায়ী সমর্থনীয় নয়।
(১১) রায়ের ক্ষেত্রে কোন মামলার শুনানী সমাপ্ত হওয়ার পর আদালত তৎক্ষণাৎ অথবা পরবর্তী নির্ধারিত তারিখে প্রকাশ্যভাবে মামলার রায় প্রদান করে থাকেন। অপরদিকে, ডিক্রীর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, আদালত পক্ষসমূহের অধিকার চূড়ান্তভাবে স্থির করে আনুষ্ঠানিক প্রকাশের মাধ্যমে মামলার প্রতিকারের একটি সুস্পষ্ট বিবরণ দান করেন। কিন্তু আদেশের ক্ষেত্রে এরূপ কোন বাঁধাধরা নিয়ম নাই।
(১২) ডিক্রী প্রাথমিক কিংবা চূড়ান্ত অথবা আংশিকভাবে প্রাথমিক অথবা আংশিক চুড়ান্ত হতে পারে। কিন্তু আদেশ বা রায়ের ক্ষেত্রে এরূপ কোন শ্রেণিবিন্যাস নাই।
যে আইনগত ফলাফল রায়, ডিক্রী এবং আদেশের পার্থক্য হতে সৃষ্টি হয়
রায়, আদেশ অথবা ডিক্রী জারির ফলে মামলার কোন এক পক্ষের দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়। আদালত একটি মামলার পক্ষদ্বয়ের আরজি এবং জবাবের ভিত্তিতে বিচার্য-বিষয় নির্ধারণ করে মামলার শুনানীর দিন ধার্য করেন। শুনানীর দিনে আদালত উভয় পক্ষের সাক্ষীর জবানবন্দী ও জেরা লিপিবদ্ধ করেন এবং উভয় পক্ষের বা কোন এক পক্ষের দলিলভুক্ত কোন প্রমানাদি থাকলে তাও গ্রহণ করেন এবং তৎপর আদালত উভয় পক্ষের সওয়াল বা বক্তব্য শ্রবণ করে নির্ধারিত নিয়মে লিখিতভাবে রায় প্রদান করেন, এবং এই রায় অনুযায়ী ডিক্রী প্রস্তুত হয় । কিন্তু মামলার চূড়ান্ত শুনানীর দিনে বাদী অথবা বিবাদী কোন পক্ষই হাজির না হলে এবং এরূপ অনুপস্থিতির কারণে আদালত মামলাটি খারিজ বা dismiss করা হল। এই প্রশ্নের উত্তর ডিক্রীতে পাওয়া যাবে না। কোন মামলা বিচারে ডিসমিস হলে এই ডিসমিস আদেশ অনুযায়ীও ডিক্রী প্রস্তুত করতে হবে। এই প্রসঙ্গে দৃষ্টান্ত স্বরূপ বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, হাসান তার প্রতিপক্ষ হােসেনের বিরুদ্ধে পাঁচশত টাকার দাবিতে একটি মামলা দায়ের করল। হােসেন মামলায় উপস্থিত হয়ে জবাব দিল যে, তার নিকট হাসানের কোন পাওনা নাই এবং বিচারে আদালত তাই সাব্যস্ত করে রায় প্রদান করলেন এবং হাসানের মামলাটি ডিসমিস হল। এইক্ষেত্রেও মামলার রায় অনুযায়ী ডিক্রী প্রস্তুত করতে হবে।
বিচার্য বিষয় যথাযথভাবে প্রণীত না হলে করণীয়
বিচার্য বিষয় যথাযথভাবে প্রণীত না হলে কিংবা ভ্রান্তভাবে প্রণীত বা উপস্থাপিত হলে তার ফলাফল দ্বারা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে বিধায় আদালত প্রয়ােজনবােধে তা সংশােধন ও সংযােজন করতে পারেন। আইনগত ফলাফল সম্পর্কে ১৯০৮ সনের দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ১৪নং আদেশের ৫নং বিধির (১) নং উপবিধিতে বলা হয়েছে যে, ডিক্রী জারিকরণের পূর্বে যে কোন সময় আদালত প্রয়ােজন অনুসারে বিচার্য বিষয় সংশােধন বা অতিরিক্ত বিষয় প্রণয়ন করতে পারবেন, এবং পক্ষগণের মধ্যে যে বিষয়ে বিরােধ রয়েছে সেগুলি নিপাত করার জন্য আদালত বিচার্য বিষয়ের প্রয়ােজনীয় সকল সংশােধন ও সংযােজন করবেন।
একই আইনের ১৪নং আদেশের ৫নং বিধির (২) নং উপবিধিত বলা হয়েছে যে, ডিক্রী দেওয়ার পূর্বে যে কোন সময় আদালতের নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, কোন একটি বিচার্য বিষয় ভ্রান্তভাবে প্রণীত বা উপস্থাপিত হয়েছে তবে আদালত তা কেটে দিতে পারবেন।
পরিশেষে বলা যায় আইনগত ফলাফল উল্লেখ পূর্বক রায় ডিক্রী এবং আদেশের পার্থক্যসূচক মন্তব্যে বলা হয়েছে যে যদি কোন বিচারক রায় ঘোষণা করার পর এবং ডিক্রী প্রস্তুত হওয়ার পূর্বে কিংবা কোনো আদেশ প্রদানের পূর্বে যদি অন্যত্র বদলি হয়ে যায়, তবে তার পরবর্তী আদালত উক্ত রায় বা আদেশ অনুসারে ডিক্রী তে স্বাক্ষর করতে পারবেন। এইভাবে রায় ডিক্রী অথবা আদেশ একবার আদালত কর্তৃক স্বাক্ষরিত ও ঘোষিত হলে কেবল রিভিউ ব্যতীত আর কোন সংশোধন বা সংযোজন করা চলবে না। এখতিয়ার বিহীন কোন আদালত ডিক্রী প্রদান করে তা অবৈধ এবং বাতিল। এরূপ ডিক্রি জারি যোগ্য নয়।