- Get link
- X
- Other Apps
Sec. 3 The Code of Civil Procedure, 1908
দেওয়ানী কার্যবিধি 1908 এর ৩নং ধারার বিস্তারিত আলোচনা
ধারা ৩। আদালতের পর্যায়ক্রম-
এই বিধি মােতাবেক জেলা আদালত হাইকোর্ট বিভাগ এর অধীন এবং জেলা আদালতের নিম্নপর্যায়ভুক্ত প্রত্যেক দেওয়ানি আদালত ও ক্ষুদ্র বিষয়ক বিচারক আদালত হাইকোর্ট বিভাগ ও জেলা আদালতের অধীন ।
দেওয়ানী কার্যবিধি ৩ ধারার বিশ্লেষণ
এই ধারায় বাংলাদেশের আদালতের পর্যায় বর্ণনা করা হয়েছে। সকলের উপরে আছে হাইকোর্ট বিভাগ ও তাহার নিম্নে আছে জেলা আদালত ও তার নিম্নে আছে অন্যান্য
দেওয়ানি আদালত। স্মল কজ আদালত জেলা আদালতের নিম্নে।
দেওয়ানি আদালত কি?
দেওয়ানি আদালতের কোন সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেওয়া হয় নাই। তবে দেওয়ানি কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ধারা-৯ অনুযায়ী, এই আইনে বর্ণিত বিধানাবলি সাপেক্ষে এবং প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে নিষিদ্ধ না হইলে সকল প্রকার দেওয়ানি প্রকৃতির মামলার বিচার করায় এখতিয়ার আদালতের থাকিবে। এটা হতে এটা অনুমান করা হয় যে, যে সকল আদালত দেওয়ানি মামলার বিচার করে সেগুলােই দেওয়ানি আদালত নামে অভিহিত হবে। দেওয়ানি কার্যবিধির প্রস্তাবনায় যা বলা হয়েছে সেই অনুযায়ী নাগরিক বিবাদ বিচার করিবার এখতিয়ার এবং সম্পত্তি ও শরীরের অধিকার নির্ণয় করিবার এখতিয়ার যে আদালতের রয়েছে সে আদালতই হচ্ছে দেওয়ানি আদালত। অর্থাৎ ফৌজদারী আদালত ও সামরিক আদালত ব্যতিরেকে যেসব আদালত মূলত নাগরিক অধিকার বিষয়ক মােকদ্দমার বিচার করে থাকে, সেইসব আদালতকেই দেওয়ানি আদালত বলা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের দেওয়ানি আদালতগুলি নিম্নেরূপ-
১) সর্বোচ্চ বিচারালয় (আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ)।
২) জেলা জজের আদালত।
৩) অতিরিক্ত জেলা জজের আদালত।
৪) যুগ্ম জেলা জজের আদালত,
৫) সিনিয়র সহকারী জজের আদালত।
৬) সহকারী জজের আদালত।
দেওয়ানি আদালতসমূহের পর্যায়ক্রম-
দেওয়ানি কার্যবিধির ৩নং ধারায় বাংলাদেশের দেওয়ানি আদালতের পর্যায়ক্রমগুলি বিশদভাবে সন্নিবেশিত আছে। এই ধারার বিধান মােতাবেক, বাংলাদেশের যে সকল দেওয়ানি আদালত সমূহের অস্তিত্ব রয়েছে, সেগুলির পর্যায়ক্রম গঠণপ্রণালী সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এই ধারাটি বিশ্লেষণ করলে প্রতীয়মান হয় যে, জেলা ও দায়রা জজের আদালত শুধুমাত্র সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অধঃস্তন ও কর্তৃত্বাধীন। পর্যায়ক্রমভাবে বাংলাদেশের দেওয়ানি আদালতগুলি নিম্নরূপ; যথা-
1) Supreme Court, (Appellate and High Court Division) অর্থাৎ সর্বোচ্চ বিচারালয় (আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ)।
2) District Judge's Court. অর্থাৎ জেলা জজের আদালত।
3) Additional District Judge's Court. অর্থাৎ অতিরিক্ত জেলা জজের আদালত।
4) Joint District Judges Court বা যুগ্ম জেলা জজের আদালত,
5) Senior Assistant Judges Court বা সিনিয়র সহকারী জজের আদালত।
6) Assistant Judges Court বা সহকারী জজের আদালত।
1. Supreme Court. (সর্বোচ্চ আদালত)
সুপ্রীম কোর্ট হল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। ইহা বিচার বিভাগের শীর্ষমণী। বাংলাদেশ সংবিধানের ৯৪ (১) অনুচ্ছেদ মােতাবেক, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট নামে একটি সর্বোচ্চ বিচারালয় থাকবে, যার এখতিয়ারকে দুইটি ভাগে বিভক্ত করা যাবে- (১) হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ার এবং (২) আপিল বিভাগের এখতিয়ার। সংবিধানের অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে, হাইকোর্ট বিভাগের উপর মৌলিক ও আপিল সংক্রান্ত ও অন্যান্য এখতিয়ার থাকবে। হাইকোর্ট বিভাগের রায়, ডিক্রী আদেশ বা দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল শুনানী ও নিষ্পত্তি করার এখতিয়ার সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের রয়েছে। রাষ্ট্র প্রধানের মতানুযায়ী সুপ্রীম কোর্ট ইহার প্রত্যেক বিভাগ ও অধীনস্থ সকল আদালতের জন্য কার্যপ্রণালী নির্ধারণ করবেন।
2) District Judge's Court (জেলা জজের আদালত)
জেলার প্রধান আদালতকে বলা হয় জেলা জজের আদালত। (District Judge's Court) এই আদালতের উপর অত্র আইনের ২৪ ধারানুযায়ী বিচারাধীন কোন মামলা সে জেলায় এক আদালত হতে অন্য আদালতে স্থানান্তর বা প্রত্যাহার করার ক্ষমতা রয়েছে। দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিষয়ক মামলা নিষ্পত্তির জন্য জেলার সর্বোচ্চ আদালত হল জেলার প্রধান বিচারকের আদালত। ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তির জন্য জেলার প্রধান বিচারালয়কে দায়রা আদালত বলা হয়ে থাকে। জেলার-প্রধান বিচারককে সাহায্য করেন- অতিরিক্ত জেলা বিচারকগণ। অধঃস্তন বিচারকগণ, মুনসেফ ও ম্যাজিষ্ট্রেটগণ। জেলা বিচারকের আদালত জেলার অন্যান্য আদালতের কার্যাবিধি তদারক করেন এবং তাদের কার্য পরিচালনার জন্য সুপ্রীম কোর্টের আদেশ, নির্দেশকে প্রয়ােগ করে থাকেন। জেলা বিচারকের আদালত হতে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আপিল পেশ করা চলে।
জেলা জজের আদালত যে সকল সাধারণ ক্ষমতাসমূহের অধিকারী তা দেওয়ানি আবেদনক্রমে, সকল পক্ষকে নােটিশ দিয়ে এবং তাদের কাহারও কোন বক্তব্য শ্রবণের ইচ্ছা থাকলে তা শ্রবণ করে অথবা কোন নােটিশ না দিয়ে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে জেলা জজের আদালত যে কোন সময়-
ক) উহার নিকট বিচারাধীন কোন মামলা, আপিল বা অন্য কোন কার্যক্রম উহার অধীনস্থ কোন এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতে বিচার বা নিষ্পত্তির জন্য স্থানান্তরিত করতে পারেন, অথবা
খ) উহার অধীনস্থ কোন আদালত হতে কোন মামলা, আপিল বা অন্য কোন কার্যক্রম প্রত্যাহার করতে পারেন,এবং
অ) উহার বিচার বা নিষ্পত্তি করতে পারেন, অথবা
আ) অধীনস্থ কোন এখতিয়াসম্পন্ন আদালতে বিচার বা নিষ্পত্তির জন্য স্থানান্তর করতে পারেন, অথবা
ই) যে আদালত হতে উহা প্রত্যাহার করা হয়েছিল, পুনরায় সে আদালতে বিচার বা নিস্পত্তির জন্য প্রেরণ করতে পারেন।
3) Additional district judge's Court (অতিরিক্ত জেলা বিচারকের আদালত)
এই আদালতে দেওয়ানি এবং ফৌজদারি বিষয়ক মামলার শুনানী হয়। অতিরিক্ত জেলা জজের ক্ষমতা জেলা জজের ক্ষমতার সমান। তিনি সে সমস্ত মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন যেগুলাে জেলা জজ তার আদালতে হস্তান্তর করেন। অতিরিক্ত জেলা জজের রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে সাধারণত হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়ের করতে হয়।
4) Joint District Judge's Court (যুগ্ম জেলা জজের আদালত)
যুগ্ম জেলা জজ আদি এবং আপিল এই দুই ধরনের এখতিয়ার চর্চা করেন। আদি অধিক্ষেত্রে যুগ্ম জেলা জজের আর্থিক কোন সীমা নাই । অথাৎ কোন দেওয়ানি মামলার মামলমূল্য যদি ২৫ (পঁচিশ) লক্ষ টাকার উর্ধ্বে (যতই হােক না কেন) হয়, তাহলে উক্ত মামলা যুগ্ম জেলা জজের আদালতে দায়ের করতে হবে। যুগ্ম জেলা জজের আদালতে যেসব মামলার মামলামূল্য পাঁচ কোটি টাকার বেশি নয় সেসব মামলার রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজের কাছে আপিল চলবে। অন্যপক্ষে যে সব মামলার মামলামূল্য পাঁচ কোটি টাকার বেশি যেসব মামলার ক্ষেত্রে আপিল হাইকোর্ট বিভাগে করতে হবে। সিনিয়র সহকারী জজ কিংবা সহকারী জজের আদালত থেকে সেসব আপিল জেলা জজের আদালতে উঠে আসে সেগুলাে জেলা জজ তার প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে যুগ্ম জেলা জজের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেন। দেওয়ানি আদালত আইনের ২৫ ধারা অনুযায়ী যুগ্ম জেলা জজ স্বল্প এখতিয়ারী আদালত বা স্মল কজেজ কোর্ট ( Small Causes Court) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন ।
5) Senior Assistant Judges Court (সিনিয়র সহকারী জজের আদালত)
যেসব দেওয়ানি মামলার মামলামূল্য ২৫ (পঁচিশ) লক্ষ টাকার বেশি নয় সেসব মামলা সিনিয়র সহকারী জজের আদালতে দায়ের করার বিধান রয়েছে। এ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল জেলা জজের বরাবরে করতে হবে। দেওয়ানি আদালত আইনের ২৫ ধারা মতে সিনিয়র সহকারী জজের আদালত স্বল্প এখতিয়ারী আদালত বা স্মল ক্লজেজ কোর্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী এ আদালত পারিবারিক আদালত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আবার স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন অনুসারে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের দায়িত্ব এ আদালতের উপর ন্যস্ত হয়।
6) Assistant Judges Court (সহকারী জজের আদালত)
দেওয়ানি আদালতের মধ্যে সর্বনিম্ন এখতিয়ারের আদালতই হল সহকারী জজের আদালত। যেসব মামলার মামলামূল্য ১৫ (পনের) লক্ষ টাকার বেশি নয় সেসব মামলাই এ দায়ের করতে হবে। দেওয়ানি আদালত আইনের ২৫ ধারা মতে সহকারী জজের আদালত স্বল্প এখতিয়ারী আদালত বা স্মল ক্লজেজ কোর্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
Sec. 3 The Code of Civil Procedure, 1908 দেওয়ানি আদালত শ্রেণীবিভাগ