Skip to main content

Video Article Preposition Phrase Clause

এডভোকেটশীপ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা ফৌজদারি কার্যবিধি

ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮

Criminal Procedure Code 1898

এক নজরে ফৌজদারি কার্যবিধি

বৃটিশ ভারতের প্রথম ফৌজদারি কার্যবিধি লেজিসলেটিভ কাউন্সিল (ব্রিটিশ পার্লামেন্ট) এর মাধ্যমে প্রণয়ন হয়। ১৮৬১ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৭২ সালের আরেকটি আইন দ্বারা বাতিল হয় এবং এটা ছিল দ্বিতীয় ফৌজদারি কার্যবিধি । পুনরায় ১৮৭৫ এবং ১৮৭৭ সালে কার্যবিধিতে কিছু সংশােধন করা হয়। অতপর ১৮৮২ সালে আবার ফৌজদারি কার্যবিধি সংশােধন হয়। এইভাবে ১৬টি সংশােধনী পাস হয়। এসকল সংশােধনীকে বিবেচনা করে একটি পূর্ণাঙ্গ কার্যবিধি প্রণয়নের জন্য একটি সিলেক্ট কমিটি গঠন করা হয় এবং উক্ত সিলেক্ট কমিটির প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে ১৮৯৮ সালের ২২শে মার্চ বর্তমান ফৌজদারি কার্যবিধি পাস হয়। ১৯২৩ সালে ফৌজদারি কার্যবিধিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। বাংলাদেশ ১৯৮২ সালে ফৌজদারি কার্যবিধিতে ব্যাপকভাবে সংশােধন করে।

ফৌজদারি কার্যবিধির গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ

সর্বপ্রথম ফৌজদারি কার্যবিধি প্রণয়ন হয়------১৮৬১ সালে।

বর্তমান ফৌজদারি কার্যবিধি প্রণীত হয়- -১৮৯৮ সালের ২২শে মার্চ

কত নং আইন বলে প্রণীত হয়----- ৫ নং আইন

কার্যকর করা হয়--১লা জুলাই ১৮৯৮ সালে

আইনের প্রকৃতি-পদ্ধতিগত

মােট ধারা ---৫৬৫ টি

মােট তফসিল-৫টি

সর্বশেষ সংশােধনী-২০১২ সালে

ফৌজদারি কার্যবিধি সংক্রান্ত সাধারণ আলােচনা

সংজ্ঞাসমূহ

এডভোকেট (Advocate) কাকে বলে। ধারাঃ৪(ক)/ 4(a)

আদালতে আইন চর্চা করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা মুক্তার ।

এ্যাটর্নী জেনারেল (Attorney General) কাকে বলে। ধারা- ৪(কক) / 4(aa)

সরকারি আইনজীবী যাকে সরকার নিয়ােগ দেন। “এ্যাটর্নী জেনারেল” বলতে বাংলাদেশের জন্য নিযুক্ত এ্যাটর্নী জেনারেল বুঝাবে ও বাংলাদেশের অতিরিক্ত এ্যাটনী জেনারেল, ডেপুটি এ্যাটর্নী জেনারেল বা সহকারী এ্যাটর্নী জেনারেল বা সরকারি আইনজীবী বা বিভিন্ন সময়ে সরকার দ্বারা নিযুক্ত অনুরুপ দায়িত্ব প্রতিপালনের কর্মকর্তাকে আওতাভুক্ত করবে।

জামিনযােগ্য অপরাধ (Bailable offence) কি। ধারা ৪(খ)/(b)।

তফসিল-২ এ উল্লেখিত অপরাধ এবং বর্তমানে প্রচলিত আইনে যে সকল অপরাধগুলােকে জামিনযােগ্য করা হয়েছে, এগুলাে ছাড়া বাকি সৰ অপরাধ অজামিনযােগ্য। আইনগত হেফাজত থেকে কোন ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয়াকে জামিন বলে। জামিনযােগ্য অপরাধ এমন একটি অপরাধ যেখানে অধিকার বলে (As of right) জামিন দাবি করা যায়।

নালিশ (Complaint) কাকে বলে। ধারা ৪(জ) / 4(h)

ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ হচ্ছে নালিশ। তৰে , প্রতিবেদন নালিশ নয়। দেওয়ানি আদালতে যাকে আরজি বলা হয়, ফৌজদারি আদালতে তাকে নালিশ বলা হয়।

মৌখিকভাবে বা লিখিতভাবে করা কোন অভিযােগ নালিশ হবে, যদি তা

ক) ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট করা হয়;

খ) ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়।

গ) অভিযােগটি করা হবে জ্ঞাত বা অজ্ঞাত কোন ব্যক্তি অপরাধ করেছে এবং

ঘ) কোন পুলিশ রিপাের্ট নয়।

নালিশ ও First Information Report (FIR) এর মধ্যে পার্থক্য।

ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে প্রদত্ত মৌখিক বা লিখিত অভিযােগ হচ্ছে নালিশ । একটি অপরাধ সংঘটনের পর এখতিয়ারসম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট শপথপূর্বক যে অভিযােগ দাখিল করা হয় তাকে নালিশ বলে। এটাকে কোর্ট কেস বা সি.আর, কেসও বলে। অপরদিকে অপরাধ সংঘটনের পর কোন ব্যক্তি পুলিশের নিকট মৌখিক বা লিখিতভাবে যে তথ্য দেয় তাকে First Information Report (FIR) বলে। ধারা [১৫৪] । একে জি.আর কেস বা পুলিশ কেসও বলে ।

অনুসন্ধান(Inquiry) কে করেন। ধারা ৪(ট) / 4(k)

ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালত করে ।

মহানগর দায়রা আদালত কোনটি

দায়রা আদালত মহানগর দায়রা আদালতকে অন্তর্ভুক্ত করে। [ধারা 4hh]

তদন্ত Investigation) কে করেন। ধারা ৪(ঠ) / 4l)

পুলিশ অফিসার বা ম্যাজিস্ট্রেট অনুমােদিত যে কোন ব্যক্তি, যিনি ম্যাজিস্ট্রেট নন।

তদন্ত অফিসারের দায়িত্ব কি কি।

১। ঘটনাস্থলে যাওয়া।

২। মামলার ঘটনা ও অবস্থা নির্ণয় করা।

৩। সন্দেহভাজন অপরাধীকে খুঁজে গ্রেফতার করা।

৪। সাক্ষ্য যােগাড় করা।

৫। অভিযুক্তকে বিচারের সম্মুখীন করার বা না করার কারন বের করা।

অনুসন্ধান ও তদন্ত এর মধ্যে পার্থক্য কি

অনুসন্ধান ও তদন্ত একই বিষয় নয়। অনুসন্ধান আদালত বা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে করা হয়। কিন্ত তদন্ত পুলিশ অফিসার বা ম্যাজিষ্ট্রেট অনুমােদিত ব্যক্তি যিনি ম্যাজিস্ট্রেট নয়, তাকে দিয়ে করানাে হয়। অনুসন্ধান জুডিসিয়াল বা নন জুডিসিয়াল হতে পারে। তবে তদন্ত কখনাে জুডিসিয়াল হয় না, এটা একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া।

আমলযােগ্য অপরাধ ও আমলেঅযোগ্য অপরাধের মামলা। ধারা ৪(ঢ)/4(n)

যে সকল অপরাধ বা মামলায় পুলিশ ওয়ারেন্ট ছাড়া আসামি গ্রেফতার করতে পারে, তাকে আমলযােগ্য অপরাধ বলে। আমলযােগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি ছাড়া অর্থৎ Without Warrent আসামি গ্রেফতার করা যায়। সাধারণত গুরুতর অপরাধ যেমন খুন, ডাকাতি, রাষ্ট্রদ্রোহিতা ইত্যাদি আমলযােগ্য অপরাধ। লঘু অপরাধগুলাে সাধারণত আমলঅযােগ্য অপরাধ। আমলঅযােগ্য অপরাধের জন্য যে মামলা বিচার করার জন্য দাখিল করা হয় তাকে আমলঅযােগ্য মামলা বলে ।

অপরাধ (Offence) কাকে বলে। ধারা ৪(ণ)/4(0)

যে সব কাজ করা বা করা থেকে বিরত থাকা আইনে শাস্তিযােগ্য, এই সমস্ত কাজকে অপরাধ (Offence) বলে গণ্য করা হয়।

অপরাধকে জামিনের ভিত্তিতে নিম্নে বর্ণিতভাবে বর্ণনা করা যায়

১। জামিনযােগ্য অপরাধ, এবং

২। জামিন অযােগ্য অপরাধ।

গ্রেফতারের ভিত্তিতে

ক) আমলযােগ্য অপরাধ; এবং

খ) আমলঅযােগ্য অপরাধ।

মীমাংসার ভিত্তিতে

ক) মীমাংসা যােগ্য, এবং

খ) মীমাংসা অযােগ্য।

ফৌজদারি আদালতসমূহ

ফৌজদারি আদালতের শ্রেনী বিভাগ। ধারা ৬

ফৌজদারি আদালত ২ (দুই) প্রকারঃ

১। ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সমূহ (Court of Magistrate)

২। দায়রা আদালত সমূহ (Court of Session)

ম্যাজিস্ট্রেট আদালত

ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২ (দুই) প্রকারঃ

১। জুডিশিয়াল/বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট (Judicial Magistrate)

২। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (Executive Magistrate)

১লা নভেম্বর, ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক হলে, ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ব্যাপক পরিবর্তন করে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পদ সৃষ্টি করা হয়।

জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট

১। মহানগর এলাকায় চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। চীফ মেট্রোপলিটন অন্তর্ভূক্ত করবে অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপটিন ম্যাজিস্ট্রেট। মহানগরের বাইরের এলাকায় চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অন্তর্ভুক্ত করবে অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।

২। মহানগর এলাকায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। তিনি ১ম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রাপ্ত হবেন। মহানগরের বাইরে প্রথম শ্রেনীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। প্রথম শ্রেণীর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও বলা হয়।

৩। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট

> দ্বিতীয় শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট।

> তৃতীয় শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট।

দায়রা আদালত (Court of Session)। ধারা ৯

দায়রা আদালতে ৩ স্তরের বিচারক থাকেন

১। দায়রা জজ (Session Judge)

২। অতিরিক্ত দায়রা জজ (Additional Session Judge)

৩। যুগ দায়রা জজ (Joint Session Judge)

মহানগর এলাকায় দায়রা আদালতকে মহানগর দায়রা আদালত বলে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (Executive Magistrate) । ধারা ১০

১। সরকার বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসনের সদস্যদের থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ােগ করবে এবং যার মধ্যে একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হবে।

২। মহানগরীতে পুলিশ কমিশনারের উপর সরকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণ করতে পারবে।

বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট (Special Magistrate)। ধারা ১২

১। সরকার যে কোন ব্যক্তির উপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর ক্ষমতা প্রদান করতে পারে, তখন উক্ত ব্যক্তিকে বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট বলৰে ।

২। সরকার হাইকোর্ট বিভাগের সাথে পরামর্শ করে যে কোন ম্যাজিস্ট্রেট উপর ১ম, ২য় বা তৃতীয় শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রয়ােগ করতে পারে।

ম্যাজিস্ট্রেটগনের অধীনতা। ধারা ১৭

১। সকল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অধীন।

২। সকল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চীফ জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অধীন

৩। সকল জুডিশিয়াল/চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়রা আদালতের অধীন ।

৪। সকল মেট্রোপলিটন/ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেট্রোপলিটন দায়রা আদালতের অধীন।

৫। সকল যুগ্ম দায়রা জজ দায়রা আদালতের অধীন। (১৭ক)।

জাস্টিস অব দ্যা পিস। ধারা-২২ ও ২৫

১। সুপ্রীম কোর্টের বিচারকগণ পদাধিকার বলে সারা বাংলাদেশের জাস্টিস অব দ্যা পিস এবং দায়রা জজ ও চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেশন এবং মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটগণ পদাধিকারবলে তাদের নিজ নিজ এলাকার জন্য জস্টিস অব দ্যা পিস।

২। সরকার মফস্বল এলাকার জন্য যে কোন জাস্টিস অফ দ্যা পিস হিসেবে নিয়ােগ দিতে পারেন।

দন্ডবিধির অপরাধের বিচার

কে দন্ডবিধির অপরাধের বিচার করবেন । ধারা ২৮

১। হাইকোর্ট বিভাগ বা

২। দায়রা আদালত বা

৩। অপর কোন আদালত (তফসিল ২ এর কলাম ৮ উল্লেখিত)

অন্যান্য আইনে বর্ণিত অপরাধের বিচার আইনে আদালতের উল্লেখ থাকলে সেই আদালতে হবে।  (ধারা-২৯)। তবে এরূপ অদালতের উল্লেখ না থাকলে উক্ত অপরাধের বিচার হাইকোর্ট বা ফৌজদারী কার্যবিধি দ্বারা গঠিত যে আদালত এরূপ অপরাধের বিচার করতে পারে বলে ২য় তফসিলের ৮ম কলমে দেখানাে হয়েছে, সেই আদালতে বিচার হবে।

জুভেনাইল অপরাধের বিচার। ধারা (২৯খ)

১৫ বছরের কম বয়সী (জুভেনাইল) অপরাধীর বিচার করবেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা যে কোন ম্যাজিস্ট্রেট যিনি বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত যদি অপরাধটির শাস্তি মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন না হয় অর্থাৎ অপরাধীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাবাস যোগ্য হলে উল্লেখিত ম্যাজিস্ট্রেটগণ বিচার করার অধিকার পাবেন না।

যে অপরাধগুলাের শাস্তি মৃত্যুদন্ড নয়। ধারা-(২৯গ)

যে অপরাধগুলাের শাস্তি মৃত্যুদন্ড নয়, সেক্ষেত্রে সরকার হাইকোর্ট বিভাগের সাথে পরামর্শ করে-

১। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট/ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে বিচার করার ক্ষমতা দিতে পারেন অর্থাৎ মৃত্যুদন্ড ব্যতিত সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন পর্যন্ত কারাদন্ড দিতে পারবে। [২০০৯ সালের ৩২ নং আইন দ্বারা প্রতিস্থাপিত]

২ প্রথম শ্রেনীর মাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১০ বছরের অধিক কারাদণ্ডের শাস্তিযোগ্য অপরাধ ব্যতীত অন্য সকল অপরাধ বিচার করার ক্ষমতা প্রদান করতে পারবেন। অর্থাৎ ১০ বছরের নিচে বা ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড শাস্তিযােগ্য অপরাধগুলাের বিচার করতে পারবে।

বিভিন্ন শ্রেণীর আদালত যে দণ্ড দিতে পারেন

যে ব্যক্তি অপরাধ করেছে, সে যেন পুনরায় অপরাধ করতে না পারে, শান্তি বা দণ্ডাদেশ প্রদানের মাধ্যমে সে ব্যবস্থা করা হয়। শান্তি বা দও বিভিন্ন রকম হতে পারে। দণ্ডবিধি, ১৮৬০ সালের ৫৩ ধারাতে ৫ প্রকারে শাস্তির কথা উল্লেখ আছে।

১ । মৃত্যুদণ্ড

২। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

৩। কারাদণ্ড

৪। সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত

৫। অর্থদণ্ড

হাইকোর্ট বিভাগ ও দায়রা জজের শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা। ধারা ৩১

হাইকোর্ট বিভাগ। (ধারা ৩১(১)

আইনে অনুমােদিত যে কোন প্রকার শাস্তি প্রদান করতে পারবেন।

দায়রা জজ অতিরিক্ত দায়রা জজ। ধারা ৩১ (২)

আইনে অনুমােদিত যে কোন প্রকার শাস্তি প্রদান করতে পারবেন। তবে মৃত্যুদন্ড প্রদান করলে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমােদন লাগবে। মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং মৃত্যুদণ্ড নিস্পত্তিকরন (Confirmation) একই বিষয় নয়। ধারা ৩১(১) মতে আইন সম্মতভাবে হাইকোর্ট যেকোন দণ্ডাদেশ প্রদানের ক্ষমতা রাখে এবং একইভাবে (২) উপধারায় দায়রা জজ, অতিরিক্ত দায়রা জজকে একইরুপ ক্ষমতা প্রদান করে তবে তা শর্তাধীন। শর্তটি হচ্ছে, উক্ত দায়রা জজ আদালতের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অবশ্যই হাইকোর্ট-এর কাছ থেকে অনুমােদন সাপেক্ষ হতে হবে।

যুগ্ম দায়রা জজ। ধারা ৩১(৩)]

মৃত্যুদন্ড বা ১০ বছরের অধিক কারাদন্ড ছাড়া সকল প্রকারের শাস্তি দিতে পারবে।

ম্যাজিস্ট্রেট এর শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা। ধারা-৩২

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এবং প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট 

১। অনধিক ৫ বছরের কারাদন্ড

২। নিঃসঙ্গ কারাবাস (Solitary Confinement)

৩। অনধিক ১০,০০০ টাকা জরিমানা

৪। বেত্রাঘাত (Whipping)

দ্বিতীয় শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট

১। অনধিক ৩ বছরের কারাদন্ড

২। নি:সঙ্গ কারাবাস

৩। অনধিক / সর্বোচ্চ ৫০০০ টাকা জরিমানা

তৃতীয় শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট

১। অনধিক ২ বছর কারাদন্ড

২। অনধিক ২০০০ টাকা জরিমানা

ম্যাজিস্ট্রেট যে সকল দণ্ড প্রদানের ক্ষমতা লাভ করেছেন। সেই সমস্ত দণ্ডের মধ্যে একটির সাথে অপরটি যুক্ত করে আইনসম্মত যেকোন দণ্ড দিতে পারেন।

জরিমানা অনাদায়ে ম্যাজিস্ট্রেট যে শাস্তি প্রদান করতে পারেন। ধারা ৩৩

১। জরিমানা অনাদায়ে ম্যাজিস্ট্রেটগণ তাদের এখতিয়ারের মধ্য থেকে কারাদন্ড প্রদান করতে পারেন। অর্থাৎ কারাদণ্ডের মেয়াদ কার্যবিধি অনুসারে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতার বাইরে যাবে না।

২। ম্যাজিস্ট্রেট যে অপরাধের বিচার করবেন সেই অপরাধের জরিমানা অনাদায়ে উক্ত অপরাধের সর্বোচ্চ কারাদন্ডের এক চতুর্থাংশের বেশি সময়ের জন্য কারা দন্ডের আদেশ দিবেন না।

৩। জরিমানা অনাদায়ের কারাদন্ড মূল অপরাধের শাস্তি নয়।

৪। জরিমানা অনাদায়ে কারাদন্ড বিনাশ্রম হয়।

৫। দন্ডবিধি ৬৫ ধারা অনুসারে কারাদন্ড এবং অর্থদন্ডে দন্ডিত হলে জরিমানা অনাদায়ে উক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ কারাদন্ডের এক চতুর্থাংশ পর্যন্ত কারাদন্ড প্রদান করা যেতে পারে।

৬। অর্থদন্ড ও কারাদন্ড দেওয়ার শাস্তির বিধান থাকলে জরিমানা অনাদায়ে ফৌ: কা: ৩৩ ধারা অনুসরণ করা হবে।

৭। শুধুমাত্র জরিমানা/অর্থদন্ডের বিধান থাকলে: দন্ডবিধির ৬৭ ধারা অনুসরন করতে হবে।

৫০ টাকা পর্যন্ত--২ মাস পর্যন্ত

১০০ টাকা পর্যন্ত। --৪ মাস পর্যন্ত

১০০ টাকার উপরে -- ৬ মাস পর্যন্ত ।

বিশেষ ক্ষমতা প্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটের উচ্চতর ক্ষমতা। ধারা ৩৩ক

ফৌজদারি কার্যবিধির ২৯গ ধারায় বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন বা ৭ বছরের বেশি কারাদন্ড ছাড়া যে কোন প্রকারের শাস্তি প্রদান করতে পারে।

একই মামলায় ভিন্ন ভিন্ন অপরাধে দণ্ডিত হলে যে শাস্তি প্রদান করা যায়। ধারা ৩৫

১। যেক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি একই বিচারে দুই বা ততােধিক অপরাধের জন্য দণ্ডিত হলে, সেক্ষেত্রে দণ্ডবিধি (১৮৬০ সনের ৪৫নং আইন) এর ধারা-৭১ এর বিধান অনুযায়ী আদালত উক্ত ভিন্ন ভিন্ন অপরাধের জন্য নির্ধারিত ও আদালতের ক্ষমতার আওতাভুক্ত শাস্তি প্রদান করতে পারেন। অনুরুপ শান্তি কারাদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলে আদালত একসাথে চলবে মর্মে নির্দেশ প্রদান না করলে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী একটির পর অন্যটি চলবে।

২। আদালত একটিমাত্র অপরপাধের জন্য যে শাস্তি দিতে পারেন, তা অপেক্ষা একাধিক দন্ড পর পর চলার ক্ষেত্রে মােট শাস্তির পরিমাণ যদি অধিক হয়, তা হলে কেবল এর জন্য উক্ত আদালতকে বিচারের জন্য অপরাধীকে উচ্চতর আদালতে পাঠাতে হবে না। তবে শর্ত থাকে যে,

ক) কোন অবস্থাতে উক্তরুপ ব্যক্তিকে ১৪ (চৌদ্দ) বৎসরের বেশী কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে না;

খ) কোন ম্যাজিস্ট্রেট উক্তরুপ মামলার বিচার করলে মােট শাস্তির পরিমাণ উক্ত ম্যাজিস্ট্রেট তার সাধারণ এখতিয়ারে যে শাস্তি প্রদান করতে পারেন, তার দ্বিগুণের বেশী হবে না।

৩। আপিলের উদ্দেশ্যে এই ধারা অনুযায়ী একই বিচারে বিভিন্ন অপরাধের নিমিত্তে দেয়া পর পর চলার একাধিক দণ্ডের মােট পরিমাণকে শুধুমাত্র একটি শাস্তি মর্মে ধরতে হবে।

গ্রেফতার, পলায়ন ও পুন:গ্রেফতার

ফৌজদারি কার্যবিধিতে গ্রেফতার, পলায়ন ও পুনঃ গ্রেফতার সম্পর্কে বর্ণিত আছে ধারা ৪৬ থেকে ৬৭ পর্যন্ত মােট ২২টি ধারা। এই ২২টি ধারাকে ২টি ভাগে বিভক্ত করা যায় -

১। সাধারণভাবে গ্রেফতার:  ধারা ৪৬ থেকে ৫৩ পর্যন্ত

২। বিনা পরােয়ানায় গ্রেফতার:  ধারা ৫৪ থেকে ৬৭ পর্যন্ত

সাধারণত পুলিশ গ্রেফতারের কাজ করেন। পুলিশ দেহ স্পর্শ করে গ্রেফতার করতে পারে। তবে গ্রেফতারে বাধা দিলে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন ম্যাজিস্ট্রেটের দেয়া ওয়ারেন্ট বলে পুলিশ অফিসার যে কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেন। কিন্তু বিনা ওয়ারেন্টেও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেন। তবে ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে পুলিশ ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট হাজির করতে হবে।

পুলিশ অফিসার গ্রেফতার করার জন্য যে কোন স্থান সার্চ করতে পারেন, প্রয়ােজনে কোন স্থানের দরজা বা জানালা ভেঙ্গে সার্চ/তল্লাসি করতে পারেন। তবে উক্ত স্থানে কোন পর্দানশীন মহিলা থাকলে তাকে সরে যেতে বলবেন। পুলিশকে তল্লাশীর উদ্দেশ্যে কোন স্থানে প্রবেশে বাধা দেয়া দণ্ডবিধির ৩৩২ ধারায় অপরাধ ।গ্রেফতারকৃত আসামির পলায়ন প্রতিরােধের জন্য প্রয়ােজনের বেশি বলপ্রয়ােগ করা যাবে না। [ধারা-৫০] । যে পুলিশ অফিসার বলপ্রয়ােগের ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করেন, তিনি দণ্ডবিধির ২২০ ধারায় অপরাধী হবেন ।গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি জামিনের ব্যবস্থা করতে পারলে তার দেহ তল্লাশির প্রয়ােজন নেই। কিন্তু যার অপরাধ জামিন যােগ্য নয়, বা যিনি জামিনের ব্যবস্থা করতে পারেন নাই, তার দেহ তল্লাশি করে প্রাপ্ত বস্তু নিরাপদে রাখতে হবে। [ধারা-৫১] । মহিলার দেহ তল্লাশি একজন মহিলাকে দিয়ে করতে হবে। [ধারা-৫২]

কিভাবে আটক করা হয়। (Arrest how made)ঃ ধারা-৪৬

১। দেহ স্পর্শ বা বন্দী করে

২। গ্রেফতারে বাধা দিলে যে কোন উপায়ে

৩। মৃত্যুদন্ড বা যাজ্জীবন কারাদন্ড যােগ্য অপরাধে অভিযুক্ত না হলে, গ্রেফতার করতে গিয়ে মৃত্যু ঘটানাে যায় না।

বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার (Arrest without Warrant)

নিম্নে বর্ণিত ৯টি ক্ষেত্রে পুলিশ বিনা ওয়ারেন্টে যে কোন ব্যক্তিকে আটক করতে পারেন:

১। যুক্তিসংগত কারনে বা সন্দেহে কোন আমলযােগ্য অপরাধের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তিকে।

২। আইনগত কারন ছাড়া যার কাছে ঘর ভাঙ্গার কোন সরঞ্জাম আছে।

৩। এই কার্যবিধিনুসারে বা সরকারের আদেশ বলে যাকে অপরাধী ঘােষণা করা হয়েছে।

৪। যার নিকট চোরাইমাল আছে বা আছে বলে সন্দেহ করা হয় ।

৫। পুলিশ অফিসারের কাজে বাধা দিলে ।

৬। প্রতিরক্ষা বাহিনী থেকে পালানাে কোন ব্যক্তি।

৭। বাংলাদেশের বাইরে সংঘটিত অপরাধ, যা বাংলাদেশের আইনে আমলযােগ্য।

৮। মুক্তিপ্রাপ্ত আসামি এই কার্যবিধির ৫৬৫(৩) ধারার শর্ত ভঙ্গ করলে।

৯। অন্য কোন পুলিশ অফিসার যাকে গ্রেফতার করার অনুরােধ করলে । (ধারা-৫৪)

আদালত কোন ব্যক্তিকে হাজির করার জন্য নিম্নের প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে পারেন

১। সমন- ধারাঃ ৬৮ থেকে ৭৪ পর্যন্ত

২। ওয়ারেন্ট - ধারাঃ ৭৫-৮৬ পর্যন্ত

৩। ঘােষণা ও ক্রোক - ধারা ৮৭-৮৯ পর্যন্ত

আসামিকে আদালতে উপস্থিত হতে বাধ্য করার জন্য ৩টি পদ্ধতি আছে

ক) আসামির উপর সমন জারি করে।

খ) আসামির উপর গ্রেফতারি ওয়ারেন্ট জারি করে।

গ) আসামির বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে এবং সম্পত্তি ক্রোক করে ।

সমন - ৬৮ ধারা

১। সমন আদালত ইস্যু করে।

২। প্রত্যেক সমন প্রতিলিপিসহ (with duplicate) লিখিত হবে এবং আদালতের প্রিজাইডিং অফিসার বা সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক নির্দেশিত অপর কোন অফিসারের স্বাক্ষর ও সীলমােহর থাকবে।

৩। সমন জারি কে করবে। ধারা ৬৮

ক। পুলিশ অফিসার, বা

খ। আদালতের অফিসার, বা

গ। অপর কোন সরকারি কর্মচারী।

- যার বরাবর সমন দেওয়া হবে সম্ভব হলে তাকে দুটি প্রতিলিপির ১টি প্রদান করতে হবে এবং অন্য কপিতে স্বাক্ষর পূর্বক প্রাপ্তি স্বীকার করাবেন। (ধারা ৬৯)

- প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় ম্যানেজার বা কোন কর্মকর্তার উপর বা অন্য কোন প্রধান কর্মকর্তা বরাবর সমন প্রদান করতে হবে। (ধারা ৬৯)

- যার বরাবর সমন দেওয়া হয়, তাকে খুঁজে না পাওয়া গেলে পরিবারের সাবালক (Adult male member) সদস্যকে দিতে হবে। (ধারা ৭০)

- অন্য কোন উপায়ে সমন প্রদান করা সম্ভব না হলে সমনের একটি কপি উক্ত ব্যক্তির বাড়ীর প্রকাশ্যস্থানে ঝুলিয়ে দিবেন। ধারা- ৭১।

- প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর ক্ষেত্রে সমন জারি করতে হবে উক্ত কর্মচারীর অফিসের প্রধান বরাবর। (ধারা ৭২)।

গ্রেফতারি পরােয়ানা/ওয়ারেন্ট

গ্রেফতারি ওয়ারেন্ট বা গ্রেফতারি পরােয়ানা।‌ ধারা ৭৫

১। গ্রেফতারি পরােয়ানা আদালত জারী করে।

২। প্রত্যেক গ্রেফতারি পরােয়ানা লিখিত হবে।

৩। প্রত্যেক গ্রেফতারি পরােয়ানাতে প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষর থাকবে। ম্যাজিস্ট্রেট Bench এর ক্ষেত্রে যে কোন সদস্যর স্বাক্ষর থাকলেই হবে।

৪। প্রত্যেক গ্রেফতার পরােয়ানাতে আদালতের সীলমােহর থাকবে।

গ্রেফতার প্রকারভেদ

গ্রেফতারি পরােয়ানা ২ প্রকার। যথা: 

১। জামিনের অযােগ্য গ্রেফতারি পরােয়ানা।

২। জামিনের যােগ্য গ্রেফতারি পরােয়ানা।

গ্রেফতারি পরােয়ানা কতদিন বলবৎ থাকে

আসামি যতদিন পর্যন্ত গ্রেফতার না হয় বা আদালতে আত্মসমর্পণ না করে বা ইস্যুকৃত আদালত কর্তৃক পরােয়ানা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত, ততদিন ওয়ারেন্ট বা গ্রেফতারি পরােয়ানা বলবৎ থাকবে। [ধারা ৭৫(২)]।

গ্রেফতারি ওয়ারেন্ট কে বলবৎ করবে। ধারা ৭৭

এক বা একাধিক পুলিশ অফিসার ওয়ারেন্ট বলবৎ করবে। তবে ওয়ারেন্টটি তাৎক্ষনিক বলবৎ করার দরকার হলে এবং কোন পুলিশ কর্মকর্তাকে তাৎক্ষনিক খুঁজে পাওয়া না গেলে, উক্ত ওয়ারেন্ট জারীকারী আদালত যে কোন ব্যক্তিকে ওয়ারেন্ট বলবৎ করার নির্দেশ দিতে পারেন।

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি জামিনে মুক্তি। ধারা-৭৬

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি জামিনদার সহ একটি মুচলেকা (বন্ড) সম্পাদন করতে পারলে ওয়ারেন্ট প্রয়ােগকারী অফিসার বা পুলিশ অফিসার উক্ত ব্যক্তিকে জামিন দিতে পারেন। [ধারা ৭৬)

জমির মালিক, কৃষক ৰা জমির ম্যানেজারের কাছে ওয়ারেন্ট। ধারা ৭৮

প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট কোন পলাতক আসামি, ঘােষিত অপরাধী বা জামিন অযােগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের জন্য তার স্থানীয় এখতিয়ারের কোন জোতদার, কৃষক বা জমির ম্যানেজার বরাবর ওয়ারেন্ট ইস্যুর নির্দেশ প্রদান করতে পারেন।

আদালতের এখতিয়ারের বাইরে ওয়ারেন্ট কাকে ইস্যু করতে হয় । ধারা ৮৩

১। নিবহিী ম্যাজিষ্ট্রেট, বা

২। জেলা পুলিশ সুপারেন্টেড এর কাছে, ৰা

৩। মেট্রোপলিটন এলাকাতে পুলিশ কমিশনারের কাছে

হলিয়া ও ক্রোক

একই সাথে ওয়ারেন্ট ও হুলিয়া জারি আইন সম্মত নয়। সমন জারি ব্যর্থ হলে ওয়ারেন্ট জারি করা হয়। ওয়ারেন্ট ব্যর্থ হলে হুলিয়া জারি করা হয় এবং হুলিয়া জারি করার পর ফেরারি আসামির স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা যেতে পারে।

হুলিয়া জারি (Proclamation)। ধারা ৮৭

কোন পলাতক বা ফেরারি আসামিকে নির্দিষ্ট তারিখে ও নির্দিষ্ট স্থানে হাজির হওয়ার জন্য ৩০ দিনের কম নয়, এমন সময় দিয়ে বিচারক কর্তৃক স্বাক্ষরিত সীলমােহর যুক্ত ঘােষণাপত্রকে হুলিয় বলে। (ধারা ৮৭) হুলিয়া ঘােষনাপত্রটি গ্রাম বা শহরের প্রকাশ্য স্থানে পড়ে শােনাতে হবে এবং আসামির গৃহের বা আদালতের প্রকাশ্য স্থানে হুলিয়ার নকল টাঙ্গিয়ে দিতে হবে। এই ধরনের ঘােষিত অপরাধিকে জনসাধারণ কার্যবিধির ৫১ ধারায় গ্রেপ্তার করে পুলিশে সােপর্দ করতে পারে।

কে বেআইনী ভাবে আটক ব্যক্তির অনুসন্ধানের ওয়ারেন্ট জারি করতে পারে । ধারা ১০০

ক) মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট, বা

খ) প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিষ্ট্রেট, বা

গ) নিবহিী ম্যাজিস্ট্রেট

অপরাধ দমন (Prevention of Offences)

“Prevention is better than cure” অর্থাৎ নিরাময় থেকে প্রতিরােধই উত্তম। মানবদেহের মত সমাজের ক্ষেত্রে এই উক্তিটি প্রযােজ্য। অপরাধী যখন অপরাধ করে, তখন তাকে শাস্তি প্রদান করা হয়। কিন্তু মানুষ যাতে অপরাধ করা থেকে বিরত থাকে, সেদিকে ব্যবস্থা গ্রহণ সমাজের পক্ষে বেশি মঙ্গলজনক। ফৌজদারি কার্যবিধিতে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই তা দমন করার জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতিকারমূলক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে:

১। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট

২। বিশেষ ভাবে ক্ষমতা প্রাপ্ত নিবহিী ম্যাজিস্ট্রেট

অপরাধ দমনের জন্য জেলা ম্যাজিসেট বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে যে বিষয় সম্পর্কে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।

১। শান্তিরক্ষার জন্য মুচলেকা (ধারা ১০৬-১০৭)

২। সদাচরনের জন্য মুচলেকা (ধারা ১০৮-১১০)

৩। বেআইনী সমাবেশ (ধারা- ১২৭-১৩২)

৪। গণ উপদ্ৰব অপসারণ (ধারা- ১৩২ক-১৪৩)

৫। উপদ্রব বা আসন্ন বিপদের জরুরী ক্ষেত্রে তাৎক্ষনিক আদেশ (ধারা- ১৪৪ ধারা জারি)

৬। স্থাবর সম্পত্তি নিয়ে বিরােধের কারনে শান্তিভঙ্গ (ধারা ১৪৫-১৪৮)

৭। পুলিশের প্রতিরােধমূলক কার্য ( ধারা ১৪৯-১৫৩)

FIR case বা এফ আই আর মামলা কাকে বলে 

এফ.আই.আর বা এজাহার দায়েরের মাধ্যমে এফ আই আর মামলা শুরু হয়। এফ আই আর কেইসকে পুলিশ কেসও বলে। আমলযােগ্য যে অপরাধের সংঘটনে সংবাদ সর্ব প্রথম পুলিশ অফিসারকে প্রদান করা হয়, তাই এফ আই আর। ফৌজদারি কার্যবিধিতে এফ আই আর এর সংজ্ঞা না দেওয়া থাকলেও ধারা ১৫৪ তে এফ আই আর সম্পর্কিত বিধান রয়েছে।

কিভাবে এফ আই আর করা যেতে পারে

১। যেকোন ব্যক্তি মৌখিক বা লিখিতভাবে ১৫৪ ধারা অনুসারে আমলযােগ্য অপরাধ সংঘটনের সংবাদ প্রদান করলে, উক্ত তথ্যের মাধ্যমে।

২। পুলিশ কোন উৎস থেকে অপরাধ সংঘটনের সংবাদ পেলে (টেলিগ্রাম/টেলিফোন মাধ্যমে) [ধারা-১৫৭] উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে।

৩। ম্যাজিস্ট্রেট নালিশ পাওয়ার পর আমলে না নিয়ে পুলিশ অফিসারকে নির্দেশ দিতে পারে অভিযােগটি কে এফ আই আর হিসাবে গ্রহণ করার জন্য [ধারা ২০২]

জি.ডি. বা সাধারণ ডায়েরি কাকে বলে

যে কোন ব্যক্তি আমল অযােগ্য অপরাধ সংঘটনের সংবাদ পুলিশকে প্রদান করলে, পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়া এরুপ অপরাধ তদন্ত করবে না। এক্ষেত্রে থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার বিষয়টি কে সাধারণ ডায়রি অর্থাৎ জি.ডি. হিসাবে এন্ট্রি করে অভিযােগটিসহ অভিযােগ কারিকে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রেরণ করবেন। GD Entry করা হয় বিপি ফরম নং-৬৫ তে।

কোথায় এবং কার নিকট এফ আই আর দায়ের করতে হয়

থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার বা তার অনুপস্থিতিতে যিনি থানার দায়িত্বে থাকেন তার নিকট এফ আই আর বা এজাহার দায়ের করতে হয়। ভারপ্রাপ্ত অফিসারের সংজ্ঞা ফৌঃ কাঃ ৪(ঢ়)- তে দেওয়া আছে।

এফ আই আর বা এজাহারে কে স্বাক্ষর দান করেন

সংবাদাতাকে এফ আই আর পড়ে শুনানাের পর তিনি এফ আই আর এ স্বাক্ষর বা টিপসহি প্রদান করবেন। স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করলে দণ্ডবিধি ১৮০ ধারানুসারে ৩ মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

এফ আই আর এর সাক্ষ্যগত মূল্য

এফ আই আর এর কোন সাক্ষ্যগত মূল্য নেই।

সি,আর কেইস বা CR Case কাকে বলে

ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট দাখিলকৃত নালিশে Complaint Register Case নম্বর পড়লে তাকে সি, আর, কেইস বলে।

আমলে নেওয়া অর্থ কি

সাধারণ অর্থে কোন বিষয়ে আদালত বা বিচারকের জুডিশিয়াল নজরে নেওয়াকেই আমলে গ্রহণ বলে।

মামলা আমলে নেয়া। ধারা-১৯০

চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, ১ম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট ৩টি উপায়ে মামলা আমলে নিতে পারে।

১. অভিযােগ পেয়ে বা নালিশ পেয়ে Complaint

২. পুলিশের লিখিত রিপাের্টের মাধ্যমে

৩. পুলিশ ব্যতিত অন্য যে কোন ব্যক্তির থেকে তথ্য পেয়ে, যে ব্যক্তি ঘটনাটি সম্পর্কে জানে।

দায়রা আদালত মামলা আমলে নেয় ১৯৩ ধারায় তবে দায়রা আদালত কোন মামলা বিচারার্থে বা বিচারের জন্য গ্রহণ করবে না, যদি না মামলাটি ১৯০ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেট আমলে নেওয়ার পর পাঠায়।

কে অপরাধ আমলে নিতে পারেন। ধারা-১৯০

ধারা ১৯০ অনুসারে নিম্নেবর্ণিত ম্যাজিস্ট্রেটগন অপরাধ আমলে নিতে পারেনঃ

১। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট

২। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট

৩। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট

৪। প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট

৫। বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট

মনে রাখুন যে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরকার বা হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ সাপেক্ষে ২য় বা ৩য় শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে ক্ষমতা প্রদান করতে পারেন (ক) নালিশ বা অভিযােগ বা (খ) পুলিশ রিপাের্টের মাধ্যমে মামলা আমলে নেওয়ার জন্য। সে ক্ষেত্রে উক্ত মামলা বিচার করার বা বিচারের জন্য প্রেরনের এখতিয়ার থাকতে হবে। এরুপ ক্ষমতা প্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটকে বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট বলা হয়।

ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে নালিশ বা অভিযােগ করলে ম্যাজিস্ট্রেটের করনীয়

ধারা-২০০ মতে ফরিয়াদীর জবানবন্দী গ্রহণ 

নালিশ আমলে নেওয়া ম্যাজিস্ট্রেট ফরিয়াদী বা বাদী কে এবং সাক্ষী থাকলে সাক্ষীকে শপথ গ্রহন পূর্বক জবানবন্দি গ্রহণ করবেন। এটা বাধ্যতামূলক।

২টি ক্ষেত্রে অভিযােগকারীকে পরীক্ষা করার প্রয়োজন নেই।

১। যখন লিখিত অভিযােগ করা হয় এবং আদালত বা সরকারী কর্মচারী তার সরকারী কর্তব্য সম্পাদনের সময় বা ধারণা করা হয় যে সরকারী কর্তব্য সম্পাদনের সময় এই অভিযােগ করেন, তখন ফরিয়াদীর অনুরুপ জবানবন্দি গ্রহণের দরকার আছে বলে এখানে কিছুই উল্লেখিত হয় নাই।

২। যখন ধারা ১৯২-এর আওতায় মামলা হস্তান্তর করা হয় এবং হস্তান্তরকারী ম্যাজিস্ট্রেট পূর্বেই ফরিয়াদীর এবং সাক্ষী থাকলে স্বাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন, তখন যে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে মামলা হস্তান্তর করা হয়, তিনি পুনরায় তাদের জবানবন্দি গ্ৰহন করতে বাধ্য হবেন না।

ধারা-২০১ - ঘটনা আমলে নিবার ক্ষমতা ম্যাজিষ্ট্রেটের না থাকলে তখনকার পদ্ধতি

মামলা আমলে নেওয়ার ক্ষমতা না থাকলে ম্যাজিস্ট্রেট যথার্থ আদালতে দাখিল করার জন্য Complaint ফেরত দিবে।

ধারা-২০২ - পরােয়ানা ইস্যু স্থগিত রাখা

ম্যাজিস্ট্রেট অভিযােগ পাওয়ার পর আমলে না নিয়ে এবং ওয়ারেন্ট জারী স্থগিত রেখে নালিশের সত্য, মিথ্যা উদঘাটনের জন্য নিজেই ঘটনা সম্পর্কে Inquiry (অনুসন্ধান) করতে পারেন অথবা সে তার অধস্তন আদালতে পাঠাবে, অথবা তিনি পুলিশ অফিসার কে নির্দেশ দিতে পারেন অভিযােগটি কে এফ আই আর (FIR) হিসাবে গ্রহণ করার জন্য। পুলিশের নিকট পাঠালে তখন এটা GR Case হিসাবে গণ্য হবে। [ধারা- ১৫৬(৩)] অথবা সে তদন্তের জন্য ২০২ ধারায় সংশ্লিষ্ট থানাকে অথবা কোন ব্যক্তি কে দায়িত্ব দিবেন।

ধারা-২০৩ - নালিশ খারিজকরণ

যদি বাদীর শপথ গ্রহণ পূর্বক দেওয়া জবানবন্দি এবং ২০২ ধারায় পরিচালিত অনুসন্ধান বা তদন্ত দেখা যায়, অভিযােগ বা নালিশটি মিথ্যা, যথার্থ নয়, মামলা পরিচালনা করার মত কোন কারন নেই, তাহলে অভিযােগ খারিজ করে দিবে। ( Dismiss the case with summary reason.)

ধারা-২০৪ - পরােয়ানা ইস্যু

যদি মামলা আমলে নেওয়ার মত পর্যন্ত কারন থাকে তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযােগ আমলে নিয়ে আসামি হাজির হওয়ার জন্য ওয়ারেন্ট জারী করবেন । তবে বাদী সাক্ষীর তালিকা জমা না দিলে আসামির বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করা যাবে না। ওয়ারেন্ট জারির ফি পরিশােধ (Process fee) না করলে বা না দিলে অভিযােগ ডিসমিস করে দিতে পারবেন ম্যাজিস্ট্রেট।

ধারা ২০৫ - ম্যাজিষ্ট্রেট আসামির ব্যক্তিগত হাজিরা রেহাই দিতে পারবেন।

(১) যখন কোন ম্যাজিষ্ট্রেট সমন জারি করেন, তখন যুক্তিসংগত কারন থাকলে তিনি আসামিকে ব্যক্তিগত হাজিরা হতে রেহাই দিয়া তাকে এ্যাডভােকেটের মাধ্যমে উপস্থিত হবার অনুমতি দিতে পারবেন।
(২) কিন্তু তদন্ত বা বিচারকারি ম্যাজিষ্ট্রেট তার বিচারিক ক্ষমতায় মােকদ্দমার যে কোন পর্যায়ে আসামিকে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হবার নির্দেশ দিতে পারবেন।

Dismissal under 203, ২০৩ ধারায় মামলা খারিজ আদেশের প্রতিকার

1. Revision to session Judge under section 439A
2. No fresh Complaint.

Dismiss Under Section 204, ২০৪ ধারায় মামলা খারিজের প্রতিকার

Allow Fresh Complaint কারন মামলাটা ডিসমিস হয়েছিল প্রসেস ফি না দেওয়ার জন্য।

GR Case এবং CR Case এর তুলনামূলক আলোচনা

GR Case - Start with Thana/Police Station
CR Case - Court/Magistrate Court
GR Case- Process fee লাগবে না।
CR Case- Process fee লাগবে।
CR Case- অভিযােগ ফেরত দিতে পারে পুলিশের কাছে, তখন এটা GR Case হবে ।
GR Case- ফেরৎযােগ্য নয়।
GR মানে- General Registered Case.
CR মানে- Complaint Registered Case.
GR Case হয়- FIR/Ejhar এর মাধ্যমে
CR Case হয়- Complaint/ অভিযােগ/ নালিশের মাধ্যমে।
CR Case - খারিজ হয় ।
GR Case- খারিজ হয় না।
CR Case - Cognigable or non Cognigable.
GR Case- Only Cognigable but mixing with non Cognigable.

আমলযােগ্য মামলার সংবাদ । ধারা-১৫৪

থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারের কাছে মৌখিকভাবে আমলযােগ্য অপরাধ অনুষ্ঠান বিষয়ক প্রদত্ত প্রত্যেক সংবাদ, উক্ত অফিসার নিজে বা তার নির্দেশমত অন্য কেউ উক্ত সংবাদ লিখবেন এবং সংবাদ দাতাকে তা পড়ে শুনাবেন এবং সংবাদ দাতা তাতে স্বাক্ষর করবেন। এছাড়াও সংবাদ দাতা লিখিতভাবেও আমলযােগ্য অপরাধ সংঘটনের তথ্য প্রদান করতে পারে। তবে লিখিতভাবে প্রদত্ত সংবাদেও সংবাদ দাতার সাক্ষর নিতে হবে।

১৫৪ ধারার বিধান মনে রাখার সহজ উপায়। 6W + H

১. W = What = কি সংবাদ = আমলযােগ্য অপরাধের
২. W = Who = কে = সংবাদ দাতা।
৩. W = Why = কেন = ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য
৪, W = Where = কোথায় সংবাদ জানাতে হৰে = থানাতে
৫. W. Whom = কাকে সংবাদ জানাতে হবে না = থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে।
৬, W = When = কখন = অপরাধ সংঘটনের সাথে সাথে
৭, H = How = কিভাবে জানাতে হবে = মৌখিক বা লিখিতভাবে

১৫৪ ধারার বিধান এক নজরে

১। সংবাদটি আমলযােগ্য অপরাধ সম্পর্কিত হবে।
২। সংবাদটি লিখিত বা মৌখিক হতে হবে। মৌখিক হলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা তার নির্দেশে এটা লিখিত হবে এবং সংবাদ দাতা স্বাক্ষর করবে।
৩। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সংবাদটির সারমর্ম সরকারের নির্ধারিত ফর্ম অনুসারে রক্ষিত বইতে লিপিবদ্ধ করবেন।

দোষ স্বীকারােক্তি (Confession) । ধারা-১৬৪ ও ৩৬৪

দোষ স্বীকারােক্তি।

যখন আসামি নিজের কৃত অপরাধ স্বীকার করে নিজেকে জড়িয়ে বিবৃতি দেয় তাকে দোষ স্বীকারােক্তিমূলক বক্তব্য বলে।

কে দোষ স্বীকারমূলক বক্তব্য গ্রহণ করতে পারে ?

ক) মেট্রোপলিটন ম্যজিস্ট্রেট
খ) প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট
গ) ক্ষমতা প্রাপ্ত দ্বিতীয় শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট
তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট ১৬৪ ধারায় দোষস্বীকারােক্তি নিতে পারে না।

আসামির জবানবন্দি যেভাবে লিখতে হয়। ধারা-৩৬৪

১। আসামিকে যে ভাষায় জবানবন্দি গ্রহণ করা হবে ঠিক ঐ ভাষায় বা ইংরেজিতে লিখতে হবে। আসামিকে করা প্রতিটি প্রশ্ন ও প্রতিটি জবাব সহ সম্পূর্ণ জবানবন্দিটি লিখতে হবে।
২। আসামির জবানবন্দি গ্রহন করার পর আসামিকে তা পড়ে শুনাতে হবে এবং আসামি এবং ম্যাজিস্ট্রেট বা জজ উক্ত জবানবন্দিতে স্বাক্ষর করবেন। [ধারা ৩৬৪(২)]
৩। জবানবন্দির ভিত্তিতে যে সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে তাতে ম্যাজিস্ট্রেট বা জজ এর স্বাক্ষর থাকবে । ধারা ৩৬৪(২)

আসামির জবানবন্দি গ্রহন করার পদ্ধতি বা ফরমালিটিস

আসামিকে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট হাজির করার পর আসামির হ্যান্ডকাফ খুলে দেওয়ার জন্য ও পুলিশকে বাইরে যাবার জন্য তাৎক্ষণিক আদেশ দিবেন । ম্যাজিস্ট্রেট আসামি কে বলবেন: আপনি এখন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে আছেন, আপনি দোষ স্বীকার করুন আর না করুন, আপনাকে পুলিশের কাছে পাঠানাে হবে না। আসামিকে ধীর সুস্থে চিন্তা করার জন্য সাধারণত ৩ ঘন্টা সময় দিতে হবে। ৩ ঘন্টা সময় অতিবাহিত হবার পর ম্যাজিস্ট্রেট বলবেন আপনি দোষ স্বীকার করতে বাধ্য নন এবং দোষ স্বীকার করলে তা আপনার বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে পারে।

তদন্ত (Investigation) কাকে বলে। ধারা ৪(ঠ)

পুলিশ অফিসার বা ম্যাজিস্ট্রেট থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অপর কোন ব্যক্তি (ম্যাজিস্ট্রেট নয়) কর্তৃক সাক্ষ্য প্রমান সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পরিচালিত সকল কার্যক্রম কে তদন্ত বলে। ফৌজদারি কার্যবিধি - ধারা ৪ (ঠ)

তদন্ত সম্পন্ন করার সময়সীমা। ধারা ৬১, ১৬৭

১। ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারায় উল্লেখিত ২৪ ঘন্টা সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে না পারলে, থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার বা তদন্তকারি পুলিশ আসামিকে নিকটতম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রেরণ করবেন এবং তদন্তের স্বার্থে আসামিকে পুলিশি হেফাজতে রাখার জন্য রিমান্ড চাইবেন।
২। ম্যাজিস্ট্রেট আসামিকে একটানা ১৫ দিনের বেশি পুলিশের হেফাজতে আটক রাখার অনুমতি দিবে না।
৩। মামলার তদন্ত ১২০ দিনের মধ্যে শেষ করতে না পারলে আসামি জামিনে মুক্তি পেতে পারে।

Remand রিমান্ড আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা

পুলিশ রিমান্ড বা পুলিশের হেফাজতে রাখার আদেশ দিতে পারেন

১। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট
২। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
৩। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট
৪। প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট
৫। দ্বিতীয় শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট বিশেষ ভাবে সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত ।

পুলিশ ডায়েরী (Police Diary) কাকে বলে। ধারা- ১৭২

পুলিশ ডায়েরী বা কেস ডায়েরী - ধারা ১৭২

তদন্তকারী পুলিশ অফিসার মামলা তদন্তকালে তার প্রতিদিনের মামলা তদন্তের ধারা বিবারণীসহ মামলার অগ্রগতি প্রতিবেদন যে নির্ধারিত বি.পি ফরমে লিপিবদ্ধ করে রাখেন তাকে কেস ডায়েরী বা পুলিশ ডায়েরী বলে।

পুলিশ ডায়েরীতে উল্লেখ থাকে

১। থানায় অপরাধের সংবাদটি কখন পৌছেছে।
২। কোন সময় তিনি তদন্ত শুরু এবং শেষ করেছেন?
৩। তিনি কোন কোন স্থান পরিদর্শন করেছেন।
৪। তদন্তকালে যে পরিস্থিতি তিনি দেখতে পেরেছেন তার একটি বিবরণ।
৫। কোথায় তল্লাশি করেছেন এবং কোন আলামত বা কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে কি না?
৬। কি কি তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
৭। ১৬১ ধারায় সাক্ষীদের দেওয়া উদ্ধৃতি লিখতে হবে।
কে পুলিশ ডায়েরী তলব করতে পারে।
১। শুধুমাত্র যেকোনো ফৌজদারি আদালত উক্ত আদালতের অনুসন্ধান, ইনকোয়ারি inquiry বা বিচারে (Trial) থাকা মামলায় পুলিশ ডায়েরী চেয়ে পাঠাতে পারে।
২। ডায়রিটি মামলায় সাক্ষ্য হিসাবে নয়, শুধু অনুসন্ধান বা বিচারে সহায়তা পেতে ব্যবহার করা যায়।
৩। অভিযুক্ত ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধির কেউ পুলিশ ডাইরি চাওয়ার অধিকারী নয়। তবে তদন্তকারি পুলিশ তার স্মৃতি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ব্যবহার করতে পারেন।

পুলিশ অফিসারের তদন্ত রিপাের্ট। ধারা ১৭৩

অযথা বিলম্ব না করে তদন্ত শেষ হওয়ার সাথে সাথে থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ১৭৩ ধারার অধীনে ম্যাজিস্ট্রেটকে, যে প্রতিবেদন প্রেরণ করবেন তাই পুলিশ রিপাের্ট।

পুলিশ রিপোর্টের প্রকারভেদ

পুলিশ রিপোর্ট প্রধানত ২ প্রকার

১। চূড়ান্ত প্রতিবেদন (Final Report)
২। চার্জ শীট (Charge Sheet)

চূড়ান্ত প্রতিবেদন বা Final Report

এজাহারে বা প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে বর্ণিত ঘটনা তদন্তের পর সঠিক বলে মনে না হলে বা অপরাধ সংঘটিত হলেও তার পর্যাপ্ত পরিমান সাক্ষ্য প্রমান না থাকলে তদন্তকারি পুলিশ অফিসার আসামিকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য যে রিপাের্ট পেশ করেন তাকে চূড়ান্ত রিপাের্ট বা ফাইনাল রিপাের্ট বলে।

ফাইনাল রিপাের্টের প্রকারভেদ

চূড়ান্ত রিপাের্ট ৫ প্রকার। যথা:

১। চূড়ান্ত রিপাের্ট সত্য (Final Report True)
২। চূড়ান্ত রিপাের্ট মিথ্যা (Final Report False)
৩। চূড়ান্ত রিপাের্ট তথ্যগতভুল (Final Report as Mistake of Fact)
৪। চূড়ান্ত রিপাের্ট আইনগত ভুল (Final Report as Mistake of Law)
৫। চূড়ান্ত রিপাের্ট আমল অযােগ্য (Final Report as Non-Cognigable)

চার্জশীট (Charge Sheet)। ধারা ১৭৩

থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার মামলা তদন্ত শেষে যখন জানতে পারেন মামলার উল্লেখিত অপরাধটি সত্য, তাহলে তিনি অভিযুক্ত আসামিদের বিচারের জন্য এবং অভিযুক্ত নয় এমন আসামিদের অব্যাহতির জন্য বিবরণ দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট যে রিপাের্ট পেশ করেন তাকে চার্জশিট বলে।

সুরতহাল রিপাের্ট (Inquest Report) ধারা-১৭৪

কোন ব্যক্তি আকস্মিভাবে মৃত্যু বরণ করলে বা আত্মহত্যা করলে বা খুন হলে কিংবা দুর্ঘটনায় মারা গেলে পুলিশ মৃত দেহ তদন্ত করে যে রিপাের্ট তৈরি করেন তাকে সুরতহাল রিপাের্ট বলে। পুলিশ আকস্মিকভাবে মৃত্যু বরনের বা আত্মহত্যা বা খুন ৰা দুর্ঘটনায় মারা গেলে সুরতহাল রিপাের্ট তৈরি করার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত নিকটতম নির্বাহী ম্যাজিসেটিকে অবিলম্বে
ঐ সংবাদ প্রদান করবেন। তদন্তকারি পুলিশ দুই বা ততােধিক ব্যক্তির উপস্থিতিতে মৃত দেহটি তদন্ত করার জন্য ১৭৫ ধারায় তাদের বরাবর সমন ইস্যু করতে পারেন। মৃত্যুর কারন উদঘাটনের জন্য মৃত ব্যক্তির দেহটি তদন্ত অফিসার, নিকটতম সিভিল সার্জন বা সরকার কর্তৃক নিযুক্ত ডাক্তারের কাছে পঠাবেন।

ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর কারন

অনুসন্ধান। ধারা- ১৭৬

পুলিশি হেফাজতে মারা গেলে নিকটতম নিবহিী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশের পরিবর্তে মৃত্যুর কারন অনুসন্ধান করবেন।

কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা ধারা- ১৭৬(২)

মৃতদেহ পরীক্ষা বা মৃত্যুর কারন উদঘাটনের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মৃতদেহ কবর থেকে তুলিতে পারেন।

ইনকোয়ারী ও বিচারে ফৌজদারি আদালতের অধিক্ষেত্র। ধারা ১৭৭-১৮৯

প্রকৃতিগতভাবে সকল অপরাধই স্থানভিত্তিক। কোন কাজকে অপরাধ বলে চিহ্নিত করতে হলে স্থানের বিবেচনা করতে হয় সবার আগে । অপরাধ যে এলাকায় সংঘটিত হয় সে এলাকার আদালত ঐ অপরাধের বিচার করেন।

ইনকোয়ারী ও বিচারের সাধারণ স্থান। ধারা ১৭৭

যে এলাকাতে অপরাধ সংঘটিত হয় সে এলাকার ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালত ঐ অপরাধের ইনকোয়ারী (অনুসন্ধান) ও বিচার করবেন। তবে হাইকোর্ট ডিভিশন ধারা ৫২৬ঙ(১) অনুসারে ১৭৭-১৮৪ ধারায় বিচার করার ক্ষমতা নেই এমন ম্যাজিস্ট্রেটকেও বিচার করার নির্দেশ দিতে পারেন।

বিভিন্ন দায়রা বিভাগের মামলা বিচারের আদেশ। ধারা ১৭৮

সরকার বিভিন্ন দায়রা বিভাগ মামলার বিচারে আদেশ প্রদান করতে পারেন।

ধারা-১৭৯

যে জেলায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বা যেখানে উক্ত অপরাধের কারন দেখা দেয়, সেখানে অভিযুক্ত বিচার করা যায় ।

অভিযােগ বা চার্জ গঠন (Form of Charges) । ধারা ২২১-২৪০

অভিযােগে বা চার্জে যে সকল বিবরণ থাকবে। ধারা-২২১
১। অপরাধের নাম।
২। অপরাধের নির্দিষ্ট নাম না থাকলে উক্ত অপরাধের সংজ্ঞা সুস্পষ্টভাবে প্রদান করতে হবে।
৩। উক্ত অপরাধ যে আইনে এবং কত ধারায় আওতায় পড়ে তা উল্লেখ করতে হবে।
৪। অভিযােগ গঠন হলে ধরে নেওয়া হবে অপরাধটি সংঘটিত করার সকল উপাদান বিদ্যমান বা শর্ত পূরণ হয়েছে।
৫। অভিযােগ ইংরেজিতে বা আদালতের ভাষায় লিখতে হয় ।
৬। পরবর্তী অপরাধের শাস্তি বৃদ্ধি বা ভিন্নধরনের শাস্তি প্রদানের দরকার হলে, অভিযােগে বা চার্জে পূর্ববর্তী দন্ডের ঘটনা তারিখ ও স্থান উল্লেখ করতে হবে। চার্জে
আদালত শাস্তিদানের পূর্বে যে কোন সময় পূর্ববর্তী দন্ডর বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার আদেশ। দিতে পারেন।
৭। যখন আসামির বিরুদ্ধে আনিত অভিযােগ পর্যাপ্তরুপে জ্ঞাত করানাে যায় না তখন চার্জে অবশ্যই অপরাধটির সংঘটনের পদ্ধতি উল্লেখ করতে হবে।

সময় স্থান ও ব্যক্তি সম্পর্কে বিবরণ। ধারা-২২২

চার্জে অপরাধের সময়, স্থান ও অপরাধী সম্পর্কে বর্ণনা থাকবে। অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ বা অসাধুভাবে অর্থ আত্মসাতের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ না করে যে পরিমান টাকা আত্মসাত করেছে এবং যে তারিখে অপরাধ করেছে চার্জে তা উল্লেখ করলেই যথেষ্ট হবে। তবে বিভিন্ন তারিখ উল্লেখ করার ক্ষেত্রে প্রথম ও শেষ তারিখের মধ্যবর্তী সময় ১ বছরের বেশি হবে না। এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন তারিখে করা অর্থ আত্মসাতের ঘটনাকে একটি মাত্র অভিযােগ হিসাবে গণ্য হবে।

ফৌজদারি মামলার বিচার

২ প্রকারের ফৌজদারি আদালতে ফৌজদারি মামলার বিচার করে থাকেন:

১। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচার
২। দায়রা আদালতে বিচার

ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচার

মামলা বিচারের সময় ম্যাজিস্ট্রেটগণ নিম্ন বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করবেন:

যখন আসামি অব্যাহতি দেওয়া যাবে (When an accused shall be discharged)। ধারা-২৪১ক

ম্যাজিস্ট্রেট ফরিয়াদির ও আসামির বক্তব্য শােনার পর যদি মনে করেন, যে আসামির বিরুদ্ধে আনিত অভিযােগ ভিত্তিহীন, তাহলে আসামি অব্যাহতি (Discharged) পাবে।

ফরিয়াদির প্রতিকার

আসামিকে ডিসচার্জ বা অব্যাহতি দিলে ফরিয়াদি রিভিশন দায়ের করতে পারেন। আসামি অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষেত্রে আদালত নিম্নের বিষয় গুলাে আমলে নিতে পারেন।
ক) তদন্তকারি কর্মকর্তার নিকট প্রদত্ত জবানবন্দি ।
খ) ফরিয়াদি কর্তৃক প্রদত্ত মামলার নথি পত্রসহ পেশকৃত সকল কাগজপত্র।
গ) আসামির জবানবন্দি গ্রহণ।
ঘ) বাদী ও আসামির বক্তব্য।
ঙ) প্রাথমিক তথ্য বিবরনী ।
তবে আসামি কর্তৃক দাখিলকৃত দলিলপত্র এই ক্ষেত্রে আদালত বিবেচনায় নেয় না।

অভিযােগ গঠন (Charge to be framed) ধারা-২৪২

আসামি অপরাধ করেছে বলে প্রতিয়মান হলে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযােগ গঠন করতে এবং আসামিকে জিজ্ঞাসা করবেন তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযােগ তিনি স্বীকার করনে কি না।

দোষ স্বীকারের পর দন্ড/শাস্তি (Conviction on admission of truth of accusation)। ধারা-২৪৩

আসামি দোষ বা অভিযােগ স্বীকার করলে ম্যাজিস্ট্রেট তাকে শাস্তি দিতে পারেন।

আসামির প্রতিকার

আসামি আপিল করতে পারবেন না। তবে রিভিশন দায়ের করতে পারবেন ৪৩৯ ও ৪৩৯ক ধারায়।

অভিযােগ অস্বীকার করলে পদ্ধতি (Procedure when no such admission is made)। ধারা- ২৪৪

আসামি দোষ স্বীকার না করলে ম্যাজিস্ট্রেট সাক্ষ্য গ্রহনের মাধ্যমে বিচার করবেন। আদালত নিজে অভিযােগ করলে ম্যাজিস্ট্রেটে ফরিয়াদি হিসাবে কার বক্তব্য শুনতে বাধ্য নয়।

খালাস (Acquittal) এবং দন্ডাদেশ (Sentence)। ধারা-২৪৫

আসামি নির্দোষ প্রমাণিত হলে আসামি খালাস পাবেন। কিন্তু অপরাধি প্রমানিত হলে তিনি আসামিকে দোষী সাব্যস্থ করে শাস্তি দিতে পারেন।

ফরিয়াদি অনুপস্থিত (Non-apperance of Complainant)। ধারা- ২৪৭

ফরিয়াদি/অভিযােগকারি শুনানির দিন অনুপস্থিত থাকলে ম্যাজিস্ট্রেট আসামিকে খালাস দিতে পারেন। তবে সরকারি কর্মকর্তা অভিযােগকারি হলে হাজির না হলেও মামলা
অগ্রসর হবে।

নালিশের প্রত্যাহার (Withdrawal of Complaint)। ধারা- ২৪৮

চূড়ান্ত আদেশের পূর্বে ফরিয়াদির আবেদনের প্রেক্ষিতে ম্যাজিস্ট্রেট নালিশ প্রত্যাহার করার অনুমতি দিতে পারেন। নালিশ প্রত্যাহার হলে আসামি খালাস পাবে।

অভিযােগকারি না থাকলে মামলার কার্যক্রম বন্ধ করার ক্ষমতা। ধারা-২৪৯

অভিযােগ ছাড়া অন্য কোন ভাবে মামলা দায়েরকৃত মামলাতে অভিযােগকারি না থাকলে
১। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট
২। প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট
৩। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ক্রমে অপর কোন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কারন লিপিবদ্ধ করে মামলার রায় প্রদান না করে মামলার কার্যক্রম বন্ধ করে আসামিকে মুক্তি দিতে পারেন।

মিথ্যা তুচ্ছ ও বিরক্তকর অভিযােগ। ধারা-২৫০

১। আসামির বিরুদ্ধে আনিত অভিযােগ মিথ্যা এবং তুচ্ছ বা বিরক্তিকর হলে ম্যাজিস্ট্রেট আসামিকে অব্যাহতি প্রদান করবেন এবং সংবাদ দাতা বা অভিযােগকারিকে কারন দর্শাতে বলবেন যে, কেন তার বিরুদ্ধে ক্ষতি পূরনের আদেশ দেওয়া হবে না।
২। ফরিয়াদি / সংবাদ দাতা/ অভিযােগকারীর কারন দর্শানোর পর ম্যাজিস্ট্রেট যদি সন্তুষ্ট হন অভিযােগটি মিথ্যা তুচ্ছ ও বিরক্তিকর তাহলে ফরিয়াদিকে অনধিক ১০০০ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ বাবদ আসামিকে প্রদান করার আদেশ দিতে পারেন। এমনকি ক্ষতিপূরণ আদেশ ছাড়া ম্যাজিস্ট্রেট আদেশ দিতে পারেন যে, ক্ষতিপূরণ প্রদানকারী ব্যক্তি অনাবিক ৬ মাসের কারাদণ্ডে বা অনধিক ৩০০০ টাকা অর্থদন্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে তৃতীয় শ্রেনীর ম্যাজিষ্ট্রে এই ক্ষেত্রে অনধিক ৫০০ টাকা ক্ষতিপূরনের আদেশ দিতে পারেন।
৩ ফরিয়াদি সংবাদ দাতা ক্ষতিপূরণ প্রদানে ব্যর্থ হলে ৩০ দিন পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
৪। দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষতিপূরনের আদেশের বিরুদ্ধে বা অন্য কোন ম্যাজিস্ট্রেটে ১০০ টাকার বেশি ক্ষতিপূরনের আদেশের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরন সম্পর্কে আপিল দায়ের করা যাবে।

অব্যাহতি এবং খালাস

অব্যাহতি আদেশ দেওয়া হয় চার্জ বা অভিযােগ গঠনের আগে বা অভিযােগ গঠনের সময়। অন্যদিকে খালাস আদেশ দেওয়া হয় চূড়ান্ত শুনানীর পর।

চার্জ প্রস্তুত না করার ফল।

১। শুধুমাত্র চার্জ প্রস্তুত হয়নি বলেই আদালতের কোন সিদ্ধান্ত বা শাস্তির আদেশ বাতিল হবে না, যদি না আপিল বা রিভিশন আদালত মনে করেন যে চার্জ গঠন না করার কারনে ন্যায় বিচার ব্যহত হয়েছে।
২। ন্যায় বিচার যদি বিঘ্নিত হয় তাহলে আপিল / রিভিশন আদালত চার্জ গঠন করে পুনরায় বিচার করার জন্য পাঠাবেন ।

সংক্ষিপ্ত বিচার। ধারা-২৬০

সংক্ষিপ্ত বিচার করার ক্ষমতা (Power to try summarily): ধারা-২৬০
১ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট
২ প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট
৩ প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট এর ক্ষমতা প্রাপ্ত যে কোন ম্যাজিস্ট্রেট

সংক্ষিপ্ত বিচারে শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা

সংক্ষিপ্ত বিচারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ বছর মেয়াদে কারাবাস দেওয়া যায়।

দায়রা আদালতে বিচার 265A to 265J

ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মত দায়রা আদালতে ও মামলার বিচার করা হয়। এই আদালত ও আসামিকে অব্যাহতি, চার্জগঠন, খালাস বা শাস্তি প্রদানের আদেশ দিয়ে থাকে।

কে মামলা পরিচালনা করবে (Who Conduct the Trial) ৪ ধারা- 265 A

দায়রা আদালতে প্রত্যেকটি বিচারে সরকারি আইনজীবী অভিযােগকারীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করবেন।
আসামিকে উপস্থিত করার পর সরকারি আইনজীবী আসামির বিরুদ্ধে আনিত অভিযােগ বর্ণনা করবেন এবং কি সাক্ষ্য দ্বারা তিনি উক্ত অভিযোেগ প্রমান করবেন তা
বর্ণনা করার মাধ্যমে নিজ বক্তব্য শুরু করবেন। [ধারা-265B]

অব্যাহতি (Discharge)। ধারা-265C

আসামি ও অভিযােগকারীর বক্তব্য শুনার পর আদালত যদি মামলা চালানাের যথেষ্ট কারন খুঁজে না পান, তাহলে আসামিকে রেহাই বা অব্যাহতি/ডিসচার্জ করে দিবেন।

অভিযােগ গঠন (Framing Charge)। ধারা-265D

উভয় পক্ষের শুনানীর পর আদালত যদি মনে করে আসামি অপরাধ করেছে, তাহলে তিনি লিখিত অভিযােগ গঠন করবেন এবং তা আসামিকে পড়ে শুনাবেন এবং বলবেন যে, সে দোষ স্বীকার করে বা বিচার প্রার্থনা করে কিনা?

দোষ স্বীকারের পর শাস্তিরাদেশ (Conviction on plea of guilty) ধারা-265E

আসামি দোষ স্বীকার করলে আদালত শাস্তি প্রদান করতে পারেন। 

অভিযােগকারী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহনের তারিখ (Date for prosecution evidence)। ধারা-265F

আসামি দোষ স্বীকার না করে বিচারের জন্য প্রার্থনা করলে আদালত সাক্ষীদের জীবানবন্দী গ্রহনের জন্য তারিখ ধার্য্য করবেন এবং সাক্ষ্য উপস্থিত হতে বা দলিল বা অন্য কিছু দাখিল করার জন্য সমন ইস্যু করতে পারে।

অভিযােগকারি পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ (Taking Evidence of Prosecution) । ধারা-265G

নির্ধারিত তারিখে অভিযােগকারী পক্ষের সাক্ষীর জবানবন্দি, জেরা বা পুন জবানবন্দি গ্রহণ চলবে।

খালাস (Acquittal)। ধারা-265H

সাক্ষ্য গ্রহনের পর আদালত যদি দেখে আসামি অপরাধ করেছে অনুরুপ কোন সাক্ষ্য প্রমান নাই, তাহলে খালাস দিবেন।

আত্মপক্ষ সমর্থনের আহ্বান (Entering upon defence)। ধারা-265I

খালাস না দিলে আসামিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য সাক্ষ্য দিতে বলবেন। আসামিপক্ষ যদি সাক্ষি হাজির করে তবে তাকে সাফাই সাক্ষী বলে।

যুক্তিতর্ক (Argument)। ধারা-265J

উভয় পক্ষের জবানবন্দি গৃহীত হবার পর সরকারি আইনজীবী তার বক্তব্যের সার সংক্ষেপ দাখিল করবেন এবং আসামি পক্ষের আইনজীবী বা আসামি জবাব দিবেন। তবে আসামি পক্ষের আইনজীবী বা আসামি কোন আইনগত প্রশ্ন উত্থাপন করলে সরকারি আইনজীবী আদালতের অনুমতি নিয়ে তার বক্তব্য দাখিল করতে পারবেন।

খালাস বা দোষী সাব্যস্থর রায় (Julgument of Acquittal or Conviction)। ধারা 245k

উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক এবং আইনগত প্রশ্ন (যদি থাকে) শ্রবনের পর আদালত মামলার রায় প্রদান করবেন। অর্থাৎ আসামি হয় খালাস না হয় দোষী সাব্যস্থ বা শাস্তি
পাবে।

অপরাধীর সহযােগীকে ক্ষমা প্রদর্শন। ধারা-৩৩৭

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট অভিযােগ তদন্ত অনুসন্ধান বা বিচারের যে কোন পর্যায়ে অপরাধীর সহযােগীকে ক্ষমা করতে পারেন যদি
অপরাধটি
১। দায়রা আদালতে বিচারযােগ্য বা ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড যােগ্য কোন অপরাধের
২। দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ২১১ এর আওতায় ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ডে দন্ডনীয় হয়।
৩। দন্ডবিধির ১৮৬০ এর ২১৬ক, ৩৬৯, ৪০১, ৪৩৫ ও ৪৭৭ক- এ দন্ডনীয় হয়।
সাক্ষ্য গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে এবং অপরাধের সহযােগী পূর্ণাঙ্গ ও সত্য ঘটনা প্রকাশ করলে তাকে ক্ষমা করা যাবে।

আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার। ধারা- ৩৩৯বি

সাধারণ নিয়ম হচ্ছে আসামির উপস্থিতিতে বিচার করতে হয়। কিন্তু ৩৩৯বি ধারা হচ্ছে এটার ব্যতিক্রম।
ধাৱা ৮৭ ও ৮৮ বিধান প্রথমে পালন করার পর, আদালতের যদি বিশ্বাস হয়, যে আসামি গ্রেফতার হওয়ার আশু সম্ভাবনা নাই । তাহলে অপরাধ আমলে নেওয়া আদালত বহুল প্রচারিত কমপক্ষে ২টি বাংলা দৈনিক জাতীয় প্রত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, আসামিকে একটি নির্দিষ্ট দিনে হাজির হতে বলবেন। হাজির হতে ব্যর্থ হলে বিচার শুরু হবে উক্ত আসামির অনুপস্থিতিতে । তবে আসামি উপস্থিত হবার পর বা জামিনে মুক্ত হবার পর আসামি পলাতক বা হাজির হতে ব্যর্থ হলে এই ধারা প্রযােজ্য হবে না।

অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থন ও সাক্ষী হওয়ার যােগ্যতা। ধারা ৩৪০

আসামি বা অভিযুক্ত কোন ব্যক্তিকে এডভােকেটের মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযােগ দিতে হবে ।বিচারাধীন মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি আসামি পক্ষে সাক্ষী হবার যােগ্য হবে এবং তার বিরুদ্ধে বা তার সাথে একই বিচারে অভিযুক্ত অপর কোন আসামির বিরুদ্ধে প্রণীত চার্জ মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য শপথ গ্রহণপূর্বক সাক্ষ্য দিতে পারবেন। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি লিখিতভাবে অনুরােধ না করলে তাকে সাক্ষী হিসেবে ডাকা
হবে না অথবা সাক্ষ্য দিতে ব্যর্থ হলে বিচারের কোন পক্ষ বা আদালত সেই বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারবে না।

সাক্ষ্য গ্রহনের পদ্ধতি। ধারা-৩৫৩

আসামির উপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ করতে হয়।

ধারা-৩৫৫

প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণের সময় ম্যাজিস্ট্রেট প্রত্যেকটি সাক্ষীর সাক্ষ্যের সারমর্মের একটি স্মারকলিপি (Memorandum of the substance of the evidence) নিজ হাতে লিখবেন এবং স্বাক্ষর করবেন। যদি ম্যাজিস্ট্রেট নিজ হাতে স্বারকলিপি প্রণয়ন না করতে পারেন, তাহলে তিনি তাঁর অসামর্থ্যের কারণ লিখিত করবেন এবং অন্য কাউকে সাক্ষ্য লেখার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন।

ধারা-৩৫৬

দায়রা জজ ও ম্যাজিস্ট্রেট প্রত্যেকটি সাক্ষীর সাক্ষ্য আদালতের ভাষায় লিখে নেবেন বা তার উপস্থিতিতে বা তার নির্দেশনায় অন্য কেউ লিখবেন এবং দায়রা জজ ও ম্যাজিস্ট্রেট তাতে স্বাক্ষর করবেন। সাক্ষ্য ইংরেজিতে দিলে দায়রা জজ ৰা ম্যাজিস্ট্রেট নিজ হাতে উক্ত ভাষায় লিখবেন এবং আসামির জন্য আদলতে ভাষায় উক্ত সাক্ষের অনুবাদ প্রণয়ন করবেন।

ধারা-৩৫৭

দায়রা জজ ৰা ম্যাজিস্টেট সাক্ষীর সাক্ষ্য নিজ হাতে ও তার নিজের মাতৃভাষায় লিখবেন এবং তাতে স্বাক্ষর করবেন।

ধারা-৩৫৯

সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রশ্ন ও উত্তর আকারে না লিখে বর্ণনামূলক ভাবে লিখতে হবে । তবে ম্যাজিস্ট্রেট বা দায়রা জজ চাইলে প্রশ্ন-উত্তর আকারে লিখতে পারেন।

ধারা-৩৬১

আসামি বা তার আইনজীবী যদি সাক্ষ্য না বুঝে তাহলে, তাকে ব্যাখ্যা করে দিতে হবে।

ধারা-৩৬৩

দায়রা জজ ৰা ম্যাজিস্ট্রেট একজন সাক্ষীর আচরণ হাবভাব মন্তব্য আকারে নথিভুক্ত করবেন।

ধারা-৩৬৫

সুপ্রিম কোর্ট সময় সময়ে বিধি প্রনয়নের মাধ্যমে হাইকোর্ট বিভাগের সাক্ষ্য গ্রহণের পদ্ধতি নির্ধারণ করবেন।

রায়ের বিষয়বস্তু। ধারা- ৩৬৭

একটি রায়ে অন্তর্ভুক্ত থাকে
১। প্রিজাইডিং অফিসার নিজে রায় আদালতের ভাষায় বা ইংরেজি ভাষায় লিখবেন।
২। বিচার্য বিষয়।
৩। বিচার্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও সিদ্ধান্তের কারন।
৪। আসামি যে অপরাধে দন্ডিত ও শান্তি পেল।
৫। প্রিজাইডিং অফিসার নিজে রায় না লিখলে তিনি রায়ের প্রত্যেকটি পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর করবেন।
৬। খালাস প্রদানের রায়ে উল্লেখ থাকবে কোন অপরাধ থেকে খালাস প্রদান করা হল এবং নির্দেশ থাকবে আসামি কে মুক্তি দেওয়ার জন্য।

মৃত্যু দণ্ডের আদেশ (Sentence of Death)। ধারা ৩৬৮(১)

কোন ব্যক্তি কে মৃত্যু দন্ডাদেশ প্রদান করা হলে উক্ত দন্ডাদেশে নির্দেশ থাকবে যে, মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাকে তার গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।

যাবজ্জীবন কারাদন্ড Sentence of Lifetime Imprisonment)। ধারা ৩৬৮ (২)

যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত ব্যক্তিকে কোথায় প্রেরণ করতে হবে, তা উল্লেখ থাকবে না।

আদালত রায় পরিবর্তন করে না। ধারা- ৩৬৯

Clerical Error বা করনিক ভুল সংশােধন করা ছাড়া আদালত সাধারণত রায় সংশােধন বা পরিবর্তন বা পূনর্বিবেচনা করবে না।

ধারা- ৩৭১- রায় এর অনুলিপি। Copy of Judgment

১। আসামির আবেদনক্রমে রায়ের অনুলিপি বিনা মুল্যে প্রদান করতে হবে।
২। দায়রা জজ মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত আসামিকে জানাবেন, যে কতদিনের ভিতর আপিল করতে পারবে।

মৃত্যু দন্ডের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের অনুমােদন । ধারা ৩৭৪ ও ৩৭৬

১. দায়রা আদালত মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিলে তা কার্যকর করার আগে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমােদনের জন্য মামলার কার্যক্রম দাখিল করবেন।
২. হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদন্ডের শাস্তি বহাল বা অপর কোন শাস্তির আদেশ বা অপরাধী সাব্যস্থ বা আসামিকে খালাস প্রদান করতে পারেন। [ধারা ৩৭৬]
৩, আসামি আপিল করলে বা আপীলের জন্য নির্ধারিত সময় না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্ট শাস্তির অনুমােদনের আদেশ প্রদান করবে না। [ধারা ৩৭৬]
৪. হাইকোর্ট অনুমােদন দিলে হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট অফিসার অবিলম্বে উক্ত আদেশের একটি নকল হাইকোর্ট বিভাগের সীলমােহরকৃত ও তার সরকারি স্বাক্ষর দ্বারা সত্যায়িত করে দায়রা আদালতে প্রেরণ করবেন।

গর্ভবর্তী স্ত্রী লােকের মৃত্যু দন্ড স্থগিত। ধারা ৩৮২

 হাইকোর্ট বিভাগ গর্ভবর্তী স্ত্রীলােকের মৃত্যু দন্ড স্থগিত বা হ্রাস করে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করতে পারেন।

শাস্তি কার্যকর করার ক্ষেত্রে

ওয়ারেন্ট

ধারা-৩৮৪

কারাদন্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রত্যেক ওয়ারেন্ট আসামি যে কারাগারে বা অপর যে স্থানে আটক আছে, সে কারাগারের বা স্থানের ভারপ্রাপ্ত অফিসারকে প্রেরণ করা হবে। যেমন- আসামি কারাগারে থাকলে ওয়ারেন্ট জেলারের কাছে প্রদান করতে হবে। (ধারা৩৮৫)

জরিমানা আদায়ের ওয়ারেন্ট। ধারা- ৩৮৬

শান্তিদানকারী আদালত ২টি উপায়ে জরিমানা আদায় করার জন্য ওয়ারেন্ট প্রদান করতে পারেন:
১। অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক বা বিক্রয় করার জন্য, বা
২। জেলার কালেক্টরকে ওয়ারেন্ট প্রদান করতে বলতে পারেন আসামির স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি দেওয়ানি পদ্ধতি অনুসরণ করে জরিমানা আদায়ের জন্য। তবে আসামি যদি আরােপিত অর্থদণ্ড না দিয়ে কারাভােগ করে, তাহলে আদালত আসামিকে পুনরায় কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড মওকুফের আদেশ, নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে অর্থদণ্ড আদায় বা সম্পত্তি ক্রোক বা বিক্রয় করে জরিমানা আদায় করার জন্য পরােয়ানা জারি করবে না।

কে শাস্তি কার্যকারীর জন্য ওয়ারেন্ট জারি করতে পারে।

ধারা-৩৮৯

যে জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট শাস্তি প্রদান করেছে।

বেত্রাঘাত সম্পর্কিত শাস্তি কার্যকর

বেত্রাদন্ডে দন্ডিত। ধারা-৩৯১

শুধুমাত্র বেত্রাদন্ডে দন্ডিত হলে আদালত যে সময় ও স্থানে উপস্থিত হবার জন্য আদেশ দিবেন সেই সময় ঐ স্থানে হাজির হবার জন্য আদালতের জামিন নামা দাখিল করলে বা কারাদন্ড ছাড়াও বেত্রাদন্ড দিলে তখন দন্ডের তারিখ থেকে ১৫ দিন অতিক্রান্ত হলে বা আপিল থাকলে আপিল আদালত শাস্তি বহাল না করা পর্যন্ত বেত্ৰদন্ড কার্যকর করা যাবে না।

শাস্তি স্থগিত, হ্রাস ও মওকুফ

আদালত শাস্তি প্রদান করে এবং সে শাস্তি কার্যকর করার দায়িত্ব থাকে সরকারের। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার অপরাধের জন্য দণ্ডিত ব্যক্তির শাস্তি স্থগিত, হ্রাস বা
মওকুফ করতে পারেন শর্তহীনভাবে বা শর্তযুক্তভাবে। শাস্তি স্থগিত রাখা এবং মওকুফ করা এক বিষয় নয়। স্থগিত রাখা বলতে শাস্তির আদেশ কার্যকর করতে বিলম্ব করা বুঝায় এবং মওকুফ বলতে বুঝায় শাস্তি রহিত করে দেয়া বুঝায়।

শাস্তি স্থগিত বা মওকুফ করার ক্ষমতা। ধারা-৪০১

১। সরকার যে কোন সময় বিনা শর্তে বা শর্তে দণ্ড কার্যকর স্থগিত বা সম্পূর্ণ বা আংশিক মওকুফ করতে পারবেন।
২। শান্তি স্থগিত বা মওকুফ এর দরখাস্ত সরকারের নিকট দাখিল করতে হয়। সরকার দরখাস্ত পেয়ে শাস্তি প্রদানকারি আদালতের প্রিজাইডিং জজ এর মতামত চাইবেন, দরখাস্তটি গ্রহণ করা উচিৎ কি উচিৎ নয় বিষয়ের উপর।

শাস্তি হ্রাস/ কমানাের ক্ষমতা। ধারা। ৪০২

সরকার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সম্মতি ছাড়া মৃত্যুদণ্ড, বা যাবজ্জীবন কমিয়ে যেকোন মেয়াদে কারাদণ্ড বা জরিমানা দিতে পারেন।

মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা। ধারা ৪০২ক

সরকার ৪০১ ও ৪০২ ধারায় মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে যে ক্ষমতা প্রয়ােগ করতে পারবে রাষ্ট্রপতিও একই ক্ষমতা প্রয়ােগ করতে পারবে।

একবার দণ্ডিত বা খালাসপ্রাপ্ত ব্যক্তি একই অপরাধের জন্য তাকে পুনরায় বিচার করা যাইবে না। (Person once convicted or acquitted not to be tried for same offence)। ধারা ৪০৩

এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত কোন ব্যক্তিকে একবার দণ্ডিত বা খালাস প্রদান করলে ঐ একই অপরাধের জন্য উক্ত ব্যক্তির পুনরায় বিচার করা যাবে না। এই ধারায় Double Jeopardy নীতির প্রতিফলন হয়েছে। এইছাড়াও সাক্ষ্য আইনের ৪০ ধারা, দেওয়ানি কার্যবিধির ১১ ধারা (Res Judicata), জেনারেল ক্লজেজ এ্যাক্ট এর ২৬ ধারা, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৫(২) এ একই ধরনের নীতির প্রতিফলন হয়েছে।

আপিল। ধারা ৪০৪ থেকে ৪৩১

আপিল:

নিম্ন আদালত কর্তৃক প্রদত্ত কোন মামলার রায়ের বিরুদ্ধে যে কোন সংক্ষুদ্ধ পক্ষ উক্ত মামলার রায় বাতিল বা সংশােধন বা বিচারিক পর্যালােচনার জন্য উচ্চ আদালতে মেমােরেন্ডাম আকারে যে দরখাস্ত দাখিল করা হয়, তাকে আপিল বলে।

আপিল কে দায়ের করবে

আপিলকারী বা তার আইনজীবী আপিল দায়ের করবে। যে আদেশের/রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে তার ১টি নকল আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।

ধারা ৪১৯ - আপিলের আবেদনপত্র

ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে আপিল লিখিত আবেদনপত্রের আকারে করতে হয় অর্থাৎ Petition of Appeal বলে। তবে দেওয়ানীর ক্ষেত্রে Memorandum (স্মারকলিপি ) of Appeal বলে।

ধারা ৪১৮ - আপিল দায়ের করা যায় যে বিষয়ে

২টি বিষয়ে আপিল গ্রহণযােগ্য হয় -
১। ঘটনার প্রশ্নে
২। আইনের প্রশ্নে

যে সকল ক্ষেত্রে আপিল চলবে

ধারা ৪০৪ - অপর কোন ভাবে বিধান না থাকলে আপিল চলবে না।

আপিলের বিধান না থাকলে ফৌজদারি আদালতের রায় (Judgment) বা আদেশের বিরুদ্ধে কোন আপিল চলবে না। তবে আপিলের বিধান থাকলে ফৌজদারি আদালতের রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল চলবে।

ধারা ৪০৫ - ক্রোককৃত সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের আবেদন অগ্রাহ্য হলে উহার বিরুদ্ধে আপিল

ক্রোককৃত সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের জন্য ৮৯ ধারায় যে দরখাস্ত করা হয়েছে, তা যদি নাকচ হয় তাহলে আপিল করা যাবে।

ধারা ৪০৬ - শান্তি রক্ষা বা সদাচরণের মুচলেকার আদেশের বিরুদ্ধে আপিল

শান্তিরক্ষার বা সদাচরনের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট ১১৮ ধারার অধীনে মুচলেকার আদেশ দিলে তার বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে আপিল চলবে।

ধারা ৪০৬ক - জামানত গ্রহণ করতে অস্বীকার করা বা জামানত নাকচ করার আদেশের বিরুদ্ধে আপিল

জামানত গ্রহণ করতে অস্বীকার বা জামানত নাকচ করার আদেশের বিরুদ্ধে আপিল

ক) চিফ মেট্রোপলিটন বা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদেশ দিলে আপিল করতে হবে দায়রা আদালতে।
খ) অন্য কোন মেট্রোপলিটন আদেশ দিলে আপিল করতে হবে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট।
গ) অন্য যে কোন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশের বিরুদ্ধে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট।
ঘ) অন্য যে কোন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশের বিরুদ্ধে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট।

ধারা ৪১৫ক - কতিপয় ক্ষেত্রে আপিলের বিশেষ অধিকার

যখন একাধিক ব্যক্তি একই বিচারে দণ্ডিত হয় তখন তাদের যেকোন একজনের বিরুদ্ধে আপিলযােগ্য রায় বা আদেশ দিলে সকলে আপিল করতে পারবে।

দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল

ধারা ৪০৭ - দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট প্রদত্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল

দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক দেয়া শাস্তির আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে হবে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট।

ধারা ৪০৮ - যুগ্ম দায়রা জজ বা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট প্রদত্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল

যুগ্ন দায়রা জজ বা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে দায়রা জজের নিকট আপিল করতে হয়। তবে যুগ্ম দায়রা জজ ৫ বছরের বেশি কারাদণ্ড দিলে আপিল যাবে হাইকোর্ট বিভাগে এবং কোন ব্যক্তি মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট বা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট যখন দণ্ডবিধির ১২৪ ধারায় দেশদ্রোহীর বিচারে দণ্ডিত হয়, তখন তার বিরুদ্ধে আপিল করতে হবে হাইকোর্ট বিভাগে।

ধারা ৪০৯ - কিভাবে দায়রা আদালতে আপিলের শুনানী হয়

দায়রা আদালতের আপিল দায়রা জজ নিজে বা অতিরিক্ত দায়রা জজ শুনানী‌ করবেন। সরকার বা দায়রা জজ, অতিরিক্ত দায়রা জজ কোন আপিল শুনবে, তা নির্ধারণ
করবে।

ধারা ৪১০ - দায়রা আদালত প্রদত্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল

দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল যাবে হাইকোর্ট বিভাগে।

আপিল ও রিভিশন দায়েরর সময়

১. মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি আপিল করতে পারে-- ৭ দিনের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে। [তামাদি আইনের অনুচ্ছেদ ১৫০]
২. মৃত্যুদণ্ড ও খালাসের আদেশ ছাড়া অন্যান আদেশের বিরুদ্ধে আপিল/ রিভিশন দায়ের করতে হয়---৬০ দিনের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে। [তামাদি আইনের অনুচ্ছেদ ১৫৫]
৩. মৃত্যুদণ্ড ও খালাসের আদেশ ছাড়া অন্যান আদেশের বিরুদ্ধে আপিল/ রিভিশন দায়ের করতে হয়---৩০ দিনের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে ছাড়া অনান্য আদালতে। [তামাদি আইনের অনুচ্ছেদ ১৫৪]

যে সকল ক্ষেত্রে আপিল চলবে না

ধারা ৪১২- দোষ স্বীকার

আসামি দোষ স্বীকার করার ফলে দণ্ডপ্রাপ্ত হলে আপিল চলবে না।

ধারা ৪১৩ - তুচ্ছ মামলায় আপিল নাই

১। দায়রা আদালত অনধিক ১ মাস কারাদণ্ড দিলে আপিল চলবে না।
২। দায়রা আদালত বা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট অনধিক ৫০ টাকা জরিমানা করলে আপিল চলবে না।
৩। মূল শাস্তি স্বরুপ কারাদণ্ড না দিয়ে জরিমানা অনাদায়ে কারাদণ্ডের আদেশ দিলে তার বিরুদ্ধে আপিল চলবে না।

ধারা ৪১৪ - সংক্ষিপ্ত বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল

সংক্ষিপ্ত বিচারের অনধিক ২০০ টাকা জরিমানা করলে সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল চলে না।

ধারা ৪১৭ - খালাসের বিরুদ্ধে আপিল

ম্যাজিস্ট্রেট বা দায়রা আদালতের শুধু দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে নয় খালাসের বিরুদ্ধেও আপিল করা যায়।

খালাসের বিরুদ্ধে কোথায় আপিল দায়ের করতে হয়

১। দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্টেট থেকে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপিল যাবে দায়রা জজের কাছে
২. দায়রা জজ , অতিরিক্ত দায়রা জজ ও যুগ্ম দায়রা জজের খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপিল যাবে হাইকোর্ট বিভাগে।

কখন দায়রা আদালতে আপিল করতে হবে

মূল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বা আপিল দেওয়া খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করতে হয় দায়রা আদালতে।

কখন হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করতে হয়।

মূল দায়রা আদালত বা আপিলে দেয়া খালাসের বিরুদ্ধে আপিল যাবে হাইকোর্ট বিভাগে।

কে খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারে এবং ফৌজদারি মামলায় দ্বিতীয় আপিল।

পাবলিক প্রসিকিউটর সরকারে নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে মূল মামলায় এবং আপিলে প্রদত্ত খালাসের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করতে পারে ৬ মাসের মধ্যে।

খালাসের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের সময়সীমা

১। পাবলিক প্রসিকিউটর আপিল দায়ের করবে ৬ মাসের মধ্যে। (তামাদি আইনের অনুচ্ছেদ ১৫৭)
২। অভিযোগকারী আপিল দায়ের করবে ৬০ দিনের মধ্যে। [ধারা ৪১৭(৩)].

ধারা ৪১৭ক - অপর্যাপ্ত দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল

১। অপর্যাপ্ত দণ্ডের বিরুদ্ধে পাবলিক প্রসিকিউটর আপিল করতে পারবে তামাদি আইনের অনুচ্ছেদ ১৫৫ অনুসারে ৬০ দিনের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে।অভিযােগকারী আপিল করতে পারবে ধারা ৪১৭ ক (২) অনুসারে ৬০ দিনের মধ্যে আপিল আদালতে। প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রদত্ত অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে পাবলিক প্রসিকিউটর হাইকোর্ট বিভাগ আপিল করতে পারে। আবার দায়রা জজ কর্তৃক প্রদত্ত অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশ বিরুদ্ধেও পাবলিক প্রসিকিউটর হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়ের করতে পারেন। CR Case এর ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে অভিযােগকারী সংশিষ্ট আপিল বিভাগে আপিল করতে পারেন।
GR Case এর ক্ষেত্রে পাবলিক প্রসিকিউটর এবং CR Case এর ক্ষেত্রে অভিযােগকারী আপিল করবে।
২। শাস্তি বৃদ্ধি করতে হলে আসামি পক্ষকে কারন দর্শানাে নােটিশ দিতে হবে যেকেন তার বিরুদ্ধে শাস্তি বাড়ানাে হবে না।

ধারা ৪২০ - আপিলকারী কারাগার থাকলে 

আপিলকারী কারাগারে থাকলে তার রায়ের নকলসহ আবেদনপত্র কারাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে দাখিল করবে এবং উক্ত ভারপ্রাপ্ত অফিসার আদালতে আপিল দাখিল করবে।

ধারা ৪২১ - আপিল সরাসরি খারিজ

আপিল আদালত নিম্ন আদালত কর্তৃক রায়ে হস্তক্ষেপ করার মত পর্যাপ্ত কারন না পেলে আপিল সরাসরি খারিজ করে দেবে। আপিল খারিজ না হলে আপিলকারি বা তার আইনজীবীকে এবং এই বিষয়ে নিযুক্ত সরকারি অফিসারকে নােটিশ দিবেন আপিল শােনার সময় ও স্থান উল্লেখ করে। [ ধারা -৪২২]

ধারা ৪২৩ - আপিল আদালতের ক্ষমতা:

> আপিল খারিজ করে দিতে পারেন,
> নিম্ন আদালতের রায় বা আদেশ বহাল বা পরিবর্তন বা শাস্তি বৃদ্ধি বা হ্রাস করতে পারেন।

ধারা ৪২৬ - আপিল পেন্ডিং থাকলে শাস্তি স্থগিত

আপিল পেন্ডিং থাকলে আদালত শাস্তি স্থগিত করে আসামিকে জামিনে মুক্তি দিতে পারেন। আপিল আদালত অতিরিক্ত সাক্ষ্য গ্রহণ করতে বা গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারেন। (ধারা-৪২৮]

আপিলকারীকে জামিনে মুক্তিদান (ধারা ৪২৬ (২ক)]
যদি দণ্ড ১ বছরের বেশি না হয় আপিলকারী কে আদালত জামিনে মুক্তি দিবে এবং যতদিন সে জামিনে মুক্ত থাকবে ততদিন পর্যন্ত কারাদণ্ড স্থগিত থাকবে। আপিলকারী যখন শেষ পর্যন্ত কারাদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দণ্ডিত হয়, তখন সে সময়ের জন্য সে মুক্ত ছিল, দণ্ডের মেয়াদ হিসাবের সময় তা বাদ প্রদান করতে হবে।

খালাসের বিরুদ্ধে আপিল হলে আসামি গ্রেফতার । ধারা ৪২৭

ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৭ ধারা অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগ বা আপিল আদালত খালাসপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের আদেশ বা গ্রেফতারি পরােয়ানা জারি করতে পারেন, যদি ধারা ৪২৭ অনুসারে খালাসের বিরুদ্ধ আপিল দায়ের করা হয়।

ধারা ৪২৯

আপিল আদালতের বিচারকগণ রায়ের ব্যাপারে সমসংখ্যক বিভক্ত হলে অপর একজন বিচারকের কাছে আপিল দাখিল করতে হবে।

ধারা ৪৩১ - আপিল অ্যাবেটমেন্ট

আপিলকারীর মৃত্যু হলে আপিল বাতিল হয়ে যাবে। তবে জরিমানা/অর্থদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করলে এবং আপিলকারীর মৃত্যু হলেও আপিল এ্যাবেট হবে না।

রিভিশন ক্ষমতা

উচ্চ আদালতের বিচারক নিম্ন আদালত সমূহের বিচারকদের কার্যক্রম তদারক করতে পারেন। এই তদারকি করার আইনগত নাম হচ্ছে রিভিশন। সাধারণ বিচার চলাকালে বিচারকগণ ভুল করতে পারেন আবার উক্ত ভুলের সংশােধনের জন্য আইনে রিভিশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফৌজদারি মামলায় ২টি আদালতের রিভিশন এখতিয়ার আছে। যথা:
১। হাইকোর্ট বিভাগ,
২। দায়রা জজ/অতিরিক্ত দায়রা জজ

হাইকোর্ট বিভাগের রিভিশনের ক্ষমতা । ধারা ৪৩৯

১। ৪৩৯ ধারায় হাইকোর্ট বিভাগ কে রিভিশনের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
২। হাইকোর্ট কারন দর্শানাে নােটিশ প্রদান করে আসামির শাস্তি বৃদ্ধি করতে পারবে।
৩। রিভিশন ক্ষমতাবলে হাইকোর্ট খালাসের আদেশ দণ্ডে পরিণত করতে পারবে না।
৪। ৪৩৯ক ধারায় দায়রা জজ কোন আদেশ দিলে তার বিরুদ্ধে রিভিশন ক্ষমতা প্রয়ােগ করতে পারবে না।
৫। আপিলযােগ্য মামলায় আপিল দায়ের না করে রিভিশন দায়ের করা যাবে না।

রিভিশন দায়েরের সময়সীমা

৬০ দিনের মধ্যে রিভিশন দায়ের করতে হবে।

দায়রা জজের রিভিশনের ক্ষমতা । ধারা ৪৩৯ক

১। ৪৩৯-ক ধারায় দায়রা জজকে ৪৩৯ ধারাতে রিভিশনের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের প্রদত্ত সকল ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে 
২। রিভিশনের ক্ষেত্রে দায়রা জজের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত । কারন দ্বিতীয় রিভিশনের সুযােগ নেই।
৩। অতিরিক্ত দায়রা জজ এই ধারায় রিভিশন ক্ষমতা প্রয়ােগ করতে পারবেন।
৪। রিভিশন নিষ্পত্তি করতে হয় ৯০ দিনের মধ্যে [ধারা-৪৪২ক-]
৫। ম্যাজিস্ট্রেট ২০৩ ধারায় মামলা খারিজ হলে দায়রা জজের কাছে রিভিশন দায়ের করতে হয়।
৬। আপিল ও রিভিশন নিষ্পত্তি করার সময়সীমা নির্দেশনামূলক ।
৭। ম্যাজিস্ট্রেট নারাজি পিটিশন প্রত্যাখান করলে তার বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে রিভিশন দায়ের করতে হয়।

আপিল ও রিভিশন নিস্পত্তির সময়সীমা

১। আপিল ও রিভিশন নিষ্পত্তির বিধানটি আছে ৪৪২-ক ধারায়।
২। আপিল রেসপন্ডেন্ট বরাবর নােটিশ জারির থেকে ৯০ দিনের মধ্যে আপিল নিস্পত্তি করতে হবে।
৩। রিভিশনের ক্ষেত্রে পক্ষগণের বরাবর নােটিশ জারীর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে রিভিশন নিষ্পত্তি করতে হবে।

উন্মাদের বিচার

আসামি উন্মাদ হলে ম্যাজিস্ট্রেটের করনীয়। ধারা ৪৬৪

যখন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কোন উন্মাদ ব্যক্তির বিচার বা অনুসন্ধান হবে

১। আসামি উন্মাদ হলে ম্যাজিস্ট্রেট বিষয়টি অনুসন্ধান করবেন এবং তাকে জেলার সিভিল সার্জন বা সরকার নির্দেশিত মেডিকেল অফিসার দ্বারা পরীক্ষা করবেন।
২। ম্যাজিস্ট্রেট উক্ত মেডিকেল অফিসার বা সিভিল সার্জনকে সাক্ষী হিসাবে পরীক্ষা করবেন।
৩। ম্যাজিস্ট্রেট যদি দেখেন আসামি মানসিকভাবে অসুস্থ এবং ফলে আত্মপক্ষ সমর্থনে অপারগ, তাহলে তিনি মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখবেন।

আসামি উন্মাদ হলে দায়রা আদালতের করনীয়। ধারা ৪৬৫

যখন দায়রা আদালতে কোন উন্মাদের বিচার হবে:

১। দায়রা আদালত নিজেই আসামির মানসিক অসুস্থতা ও অসামর্থ্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন এবং মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখবেন, যদি তিনি দেখেন যে আসামি উন্মাদ।
২। আসামি মানসিক অসুস্থতা ও আত্মপক্ষ সমর্থনে অপারগতার বিষয়ে বিচার তার অপরাধের বিচারের অংশ বলে বিবেচিত হবে।

হেবিয়াস কর্পাস Habeas Corpus। ধারা ৪৯১

১। হেবিয়াস কর্পাস জাতীয় আদেশ দানের ক্ষমতা ৪৯১ ধারায় শুধুমাত্র হাইকোর্ট বিভাগকে প্রদান করা হয়েছে।
২। ৪৯১ ধারা নিবর্তনমূলক আটক আইনের আওতায় আটক ব্যক্তিদের প্রতি প্রয়ােগযােগ্য হবে না।

৪৯১ ধারায় হাইকোর্ট যে সকল নির্দেশ প্রদান করতে পারেন

১। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কোন ব্যক্তিকে আদালতে হাজিরের
২। সরকারি বা বেসরকারি হেফাজতে বেআইনীভাবে বা অযৌক্তিকভাবে আটক ব্যক্তির মুক্তির।
৩। কারাগারে আটক কোন ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দী গ্রহণের জন্য আদালতে হাজিরের ।
৪। আটক কোন বন্দীকে বিচার বা সাক্ষ্য দেবার জন্য বিচারাধীন কোর্ট মার্শালে ৰা কমিশনের নিকট হাজির করার।
৫। কোন বন্দিকে একজনের হেফাজত থেকে অন্য জনের হেফাজতে বিচারের জন্য স্থানান্তর করার।

পাবলিক প্রসিকিউটর Public Prosecutor। ধারা 4t ও ৪৯২

সংজ্ঞাঃ ধারা 4t

সরকারি আইনজীবী বলতে ৪৯২ ধারা অনুসারে নিযুক্ত কোন ব্যক্তিকে বুঝায় এবং পাবলিক প্রসিকিউটরের নির্দেশে যে ব্যক্তি কাজ করে, তিনিও এই সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবেন।

সরকারি আইনজীবী নিয়ােগের ক্ষমতা। ধারা ৪৯২

১। সরকার ৪৯২ ধারায় এক বা একাধিক পাবলিক প্রসিকিউটর বা সরকারি আইনজীবী নিয়ােগ দিতে পারবেন।
২। যেক্ষেত্রে পাবলিক প্রসিকিউটর অনুপস্থিত থাকে বা তাকে নিয়ােগ দেওয়া হয়নি, সেক্ষেত্রে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিম্নপদস্থ পুলিশ অফিসার ব্যতিত যে কোন ব্যক্তিকে পি পি হিসাবে নিয়ােগ দিতে পারবেন।

মামলা প্রত্যাহারের ফল Effect of Withdrawal । ধারা ৪৯৪

১। পাবলিক প্রসিকিউটর আদালতের অনুমতি নিয়ে মামলা প্রত্যাহার করতে পারবে।
২। চার্জ গঠনের পূর্বে মামলা প্রত্যাহার করলে আসামি অব্যাহতি পাবে ।
৩। চার্জ গঠনের পরে মামলা প্রত্যাহার করলে আসামি খালাস পাবে।

জামিন (Bail) কাকে বলে।

গ্রেফতারকৃত বা আটককৃত কোন আসামিকে আইনগতভাবে সাময়িক মুক্তি প্রদান করাকে জামিন বলে।
জামিনের বিবেচনায় অপরাধ ২ প্রকার
১। জামিনযােগ্য অপরাধ
২। জামিন অযােগ্য অপরাধ

জামিননামা (Bail Bond) কাকে বলে।

যে ব্যক্তিকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়, তিনি আদালতে রাখা যে নির্ধারিত ফরম পূরন করেন তাকে জামিননামা বলে। জামিননামাতে আদালত বা পুলিশ যে পরিমাণ অর্থ নির্ধারণ করেন তা উল্লেখ করতে হয়।

জামিনদার (Surety) কাকে বলে।

জামিনদার হচ্ছে এমন একজন ব্যক্তি, যিনি জামিননামায় স্বাক্ষর করেন এই শর্তে যে, যাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সে যদি কোন শর্ত পূরন করতে ব্যর্থ হয় বা হাজির না হয়, তাহলে উক্ত স্বাক্ষরকারি ব্যক্তি জামিননামায় উল্লেখিত অর্থ পরিশােধ করবেন ।

জামিনযােগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন মঞ্জুরের পদ্ধতি। ধারা ৪৯৬

জামিনযােগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি গ্রেফতার হলে বা কোন থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার দ্বারা বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার হলে বা আটক থাকলে বা আদালতে উপস্থিত
থাকলে তাকে জামিনদার সহ বা জামিনদার ব্যতিত মুচলেকা সম্পাদন করে জামিনে মুক্তি দিতে পারেন। ৪৯৬ ধারায় জামিনযােগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে আসামি As of Right জামিন মঞ্জুরের প্রার্থনা করতে পারেন এবং ৪৯৬ ধারায় জামিন দেওয়া আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক।

জামিন অযােগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন মঞ্জুরের পদ্ধতি: ধারা ৪৯৭

৪৯৭ ধারায় যখন জামিনে মুক্তি পাবে
১। জামিনের অযােগ্য অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি গ্রেফতার বা কোন থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার দ্বারা বিনা ওয়ারেন্টে আটক থাকলে বা আদালতে উপস্থিত হলে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে। এটা আদালতের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা।
২। মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডনীয় বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় কোন অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিনে মুক্তি পেতে পারে যদি
ক) অভিযুক্ত ব্যক্তির বয়স ১৬ বছরের কম হয়
খ) অভিযুক্ত ব্যক্তি স্ত্রী লােক হয় বা
গ) অভিযুক্ত ব্যক্তি অসুস্থ বা অক্ষম হয়
এটা আদালতের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা
৩। তদন্ত বা অনুসন্ধানের সময় যদি তদন্ত কর্মকর্তা বা আদালত বুঝতে পারেন যে আসামি জামিন অযােগ্য অপরাধ করেছে বলে বিশ্বাস করার কোন যুক্তিযুক্ত কারন নাই তাহলে আসামি জামিন পাবেন।
৪। বিচার সমাপ্তির পর এবং রায় ঘােষণার পূর্বে আদালত যদি মনে করেন আসামি নির্দোষ হওয়ায় যুক্তিযুক্ত কারন আছে, তাহলে আসামি জামিন পাবেন।

৪৯৭ ধারায় যখন আসামি জামিনে মুক্তি পাবেন না

জামিনে অযােগ্য অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি গ্রেফতার বা কোন থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার দ্বারা বিনা ওয়ারেন্টে আটক থাকলে বা আদালতে উপস্থিত হলে যদি দেখা যায় অভিযুক্ত আসামি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে শাস্তিযােগ্য কোন অপরাধে দোষী হতে পারে। বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারন আছে তাহলে তাকে জামিনে মুক্তি প্রদান করা যাবে না। এই ক্ষেত্রে জামিন না দেওয়া আদালতের জন্য আদেশসূচক।

আগাম জামিন (Anticipatory Bail)। ধারা ৪৯৮

আটক বা গ্রেফতারের আশংকা আছে এমন ব্যক্তির গ্রেফতার হবার পূর্বেই জামিন মঞ্জুর করলে তাকে আগাম জামিন বলে ।

কে আগাম জামিন দিতে পারেন

১। হাইকোর্ট বিভাগ
২। দায়রা আদালত
জামিনদারের অব্যাহতি ধারা ৫০২
জামিনদার অব্যাহতি চেয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট দরখাস্ত দাখিল করলে, ম্যাজিস্ট্রেট জামিনে মুক্ত আসামিকে আদালত হাজির হওয়ার জন্য গ্রেফতারী ওয়ারেন্ট প্রদান করবেন।
উক্ত ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে বা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পন করলে ম্যাজিস্ট্রেট মুচলেকাটি বাতিল করবেন এবং নতুন জামিনদার সংগ্রহ করতে বলবে এবং সে যদি সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তাকে জেলে প্রেরণ করবেন।

কে জামিননামা বাজেয়াপ্তির আদেশ দিতে পারেন। ধারা ৫১৪

১। যে আদালত জামিননামাটি গ্রহণ করেছিল বা
২। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা
৩। প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট
জামিননামা বাজেয়াপ্তির আদেশ আপিলযােগ্য তবে আপিল না করলেও রিভিশন দায়ের করা যাবে। [ধারা ৫১৫)।

ধারাঃ ৫০৯ - চিকিৎসক সাক্ষীর জবানবন্দি

চিকিৎসক সাক্ষীর জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযােগ্য। আদালত চাইলে সমন জারি করে তাকে হাজির হতে বলতে পারে এবং জবানবন্দির বিষয়বস্তু সম্পর্কে পরীক্ষা করতে পারেন।

ধারা: ৫০৯-ক - ময়না তদন্তের রিপাের্ট

ময়না তদন্তের রিপাের্ট নিম্নেবর্ণিত ক্ষেত্রে সাক্ষী হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
১। ময়না তদন্তের রিপাের্ট তৈরিকারি সিভিল সার্জন বা মেডিকেল অফিসার মারা যান বা
২। ময়না তদন্তের রিপাের্ট তৈরিকারি সাক্ষ্য দিতে অপারগ হন বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করেন। বা
৩। তার হাজিরা ব্যয় বা বিলম্ব সাপেক্ষ বা অসুবিধা ছাড়া তার উপস্থিতি সম্ভব নয়।

ধারা ৫১০

সরকার দ্বারা নিযুক্ত রাসায়নিক পরীক্ষক, রক্ত পরীক্ষক, হস্তলিপি বিশেষজ্ঞ, হস্তরেখা বিশারদ বা আগ্নেয়াস্ত্র বিশারদকে আদালতে তাদেরকে তলব না করেই তাদের রিপাের্টকে দালিলিক সাক্ষ্য হিসাবে ব্যবহার করা যাবে।

ফৌজদারি মামলা স্থানান্তর

কখনাে কখনাে এক আদালত থেকে অন্য আদালতে বা এক এলাকা থেকে অন্য এলাকাতে ফৌজদারি মামলা স্থানান্তর করার দরকার হয় ।
কে ফৌজদারি মামলা স্থানান্তর করতে পারে
১। আপিল বিভাগ [ধারা ৫২৫ক।
২। হাইকোর্ট বিভাগ [ধারা ৫২৬]
৩। দায়রা জজ [ধারা ৫২৬খ]

মামলা ও আপিল স্থানান্তরের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের ক্ষমতা। ধারা ৫২৫ক

আপিল বিভাগ কোন বিশেষ মামলা বা আপিল
১। হাইকোর্ট বিভাগের এক স্থায়ীবেঞ্চ থেকে অন্য স্থায়ী বেঞ্চে অথবা
২। এক ফৌজদারি আদালত থেকে অন্য কোন একই বা উচ্চতর ক্ষমতা সম্পন্ন ফৌজদারি আদালতে স্থানান্তর করতে পারেন।
মামলা স্থানান্তর করার শর্তসমূহ
১। ন্যায় বিচারের স্বার্থে বা
২। পক্ষগুলাে ৰা সাক্ষীগণের আসার সুবিধার্থে

মামলা ও আপিল স্থানান্তরের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতা ধারা-৫২৬

হাইকোর্ট বিভাগ মামলা ও আপিল প্রত্যাহার বা স্থানান্তর করে নিজে বিচার বা দায়রা আদালতে প্রেরণ করতে পারে নিম্নবর্ণিত পাঁচটি ক্ষেত্রে-
১। কোন ফৌজদারি আদালতে ন্যায়সংগত ও নিরপেক্ষ অনুসন্ধানে বা বিচার পাওয়া যাবে না 
২। আইনের প্রশ্নে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে ।
৩। সন্তোষজনক অনুসন্ধানের বা তদন্তের স্বার্থে।
৪। মামলার পক্ষদের বা সাক্ষীদের সাধারন সুবিধার জন্য
৫। ন্যায় বিচারের স্বার্থে।

দায়রা জজের মামলা স্থানান্তর করার ক্ষমতা। ধারা ৫২৬-খ

১। দায়রা জজ ন্যায় বিচারের স্বার্থে একই দায়রা বিভাগের এক ফৌজদারি আদালত থেকে অন্য কোন ফৌজদারি আদালতে মামলা স্থানান্তর করার আদেশ দিতে পারেন ।
২) দায়রা জজের কাছে যারা মামলা স্থানান্তরের জন্য আবেদন করতে পারে
ক) স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষগণ
খ) নিম্নপদস্থ আদালতের রিপাের্টের ভিত্তিতে
গ) নিজস্ব উদ্যোগে ।

ধারা ৫২৮ - দায়রা জজ কর্তৃক মামলা/আপিল প্রত্যাহার

১। দায়রা জজ সহকারী বা যুগ্ম দায়রা জজের থেকে মামলা প্রত্যাহার করে নিতে পারেন বা যে মামলা প্রদান করেছিলেন তা তলব করতে পারেন।
২। দায়রা জজ কোন অতিরিক্ত দায়রা জজ কে যে মামলা বা আপিল প্রদান করেছিলেন তা তিনি প্রত্যাহার করে নিতে পারেন।

উপরে বর্ণিত দুটি ক্ষেত্রে প্রত্যাহারকৃত মামলা বা আপিল দায়রা জজ নিজেই বিচার কররে পারেন বা অপর কোন আদালতকে তা বিচারের জন্য প্রেরণ করতে পারেন।

চীফ মেট্রোপলিটন/চীফ জুডিসিয়াল/জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক মামলা প্রত্যাহার। ধারা-৫২৮

১। চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তার নিম্নপদস্থ কোন ম্যাজিস্ট্রেটের থেকে কোন মামলা প্রত্যাহার বা যে মামলা
বিচারের জন্য প্রদান করেছিলেন তা ফেরৎ নিয়ে নিজে বিচার বা অনুসন্ধান বা অন্য কোন ম্যাজিস্ট্রেট কে বিচারের জন্য পাঠাতে পারেন।
২। সরকার হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে চীফ মেট্রোপলিটন বা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে কোন বিশেষ শ্রেণীর মামলা প্রত্যাহার করার ক্ষমতা প্রদান করতে পারেন।

Popular posts from this blog

সাক্ষ্য আইন (সংশোধন), ২০২২ Evidence Act (Amendment) 2022

সাক্ষ্য আইন (সংশোধন), ২০২২ ডিজিটাল রেকর্ড বা ইলেক্ট্রনিক রেকর্ড কি? ডিজিটাল রেকর্ড বা ইলেক্ট্রনিক রেকর্ডের প্রমাণ: ডিজিটাল স্বাক্ষর সনদ কি? প্রত্যয়নকারী কর্তৃপক্ষ কি? ধারা ৪৫: বিশেষজ্ঞদের মতামত ধারা ৪৫ক: শারীরিক বা ফরেনসিক প্রমাণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত ধারা ৪৭ক: ডিজিটাল স্বাক্ষর সম্পর্কে মতামত যেখানে প্রাসঙ্গিক। ধারা-৬৫ক: ডিজিটাল রেকর্ড সম্পর্কিত প্রমাণের জন্য বিশেষ বিধান ধারা-৬৫খ: ডিজিটাল রেকর্ডের গ্রহণযোগ্যতা ধারা-৬৭ক: ডিজিটাল স্বাক্ষরের প্রমাণ ধারা-৭৩ক: শারীরিক বা ফরেনসিক সাক্ষ্য হিসাবে অনুমান ধারা-৭৩খ:- অন্যদের সাথে শারীরিক বা ফরেনসিক সাক্ষ্য তুলনা, স্বীকৃত বা প্রমাণিত ধারা-৮১ক। ডিজিটাল আকারে গেজেট হিসাবে অনুমান ধারা-৮৫ক: ডিজিটাল আকারে চুক্তির অনুমান। ধারা-৮৫খ: ডিজিটাল রেকর্ড এবং ডিজিটাল স্বাক্ষরের অনুমান ধারা ৮৭গ: ডিজিটাল স্বাক্ষর সনদ সম্পর্কে অনুমান ধারা-৮৮ক: ডিজিটাল কমিউনিকেশন সম্পর্কে অনুমান ধারা-৮৯ক: শারীরিক বা ফরেনসিক সাক্ষ্য হিসাবে অনুমান। ধারা-৯০ক: পাঁচ বছরের পুরনো ডিজিটাল রেকর্ডের অনুমান। ধারা-১৪৬: জেরায় আইনসঙ্গত প্রশ্ন। সাক্ষ্য আইন (সংশোধন), ২০

Write a paragraph on Pahela Baishakh পহেলা বৈশাখ

Write a paragraph on Pahela Baishakh (পহেলা বৈশাখ) Pahela Baishakh Pahela Baishakh is the part of our culture. It is the first day in Bangla calendar. This day is celebrated throughout the country. The main programme of this day is held in Ramna Botamul. Different socio-cultural organizations celebrate this day with due solemnity. People of all sorts of ages and lives attend this function. Colourful processions are brought out. Watery rice and hilsha fish are served during this function. Women and children put on traditional dresses. The whole country wears a festive look. Different cultural programmes are arranged where singers sing traditional bangla songs. Discussion meetings are held. Radio and television put on special programmes. Newspapers and dailies publish supplementary. Fairs are held here and there on this occasion. Shopkeepers and traders arrange ‘halk hata’ and sweet-meats are distributed. In villages, people go to others’ houses and exchange greetings. Thus Pahela Baisha

Most Important Preposition List of Appropriate Prepositions A to Z

The Most Important Prepositions List of Appropriate Prepositions A to Z Appropriate Prepositions starting with the letter "A" The Most Important Appropriate Prepositions starting with A Abide by (মেনে চলা): I shall abide by the rules of this country. Abound in / Abound with ( প্রচুর) : Tigers abound in the African forests. This jungle abounds with (Or, in) tigers. Absent from (a place) (অনুপস্থিত থাকা): He was absent from the parents meeting called by the principal. Absorbed in (মগ্ন): He is absorbed in writing his biography. Abstain from (বিরত থাকা): I shall abstain from doing any wrong with others. Abide with (সঙ্গে থাকা): He abides with his parents in the USA. Abide in (বাস করা): I abide in Narayangonj. Abound with (পূর্ণ থাকা): The Padma abounds with hilsa, a very tasty fish. Abhorance of (ঘৃণা): A sinner has no abhorance of sin. Abhorent to (ঘৃণা): Smoking is abhorent to me. Access to (প্রবেশাধিকার): I have free access to the manager of this company. Accompanied by a