- Get link
- X
- Other Apps
নির্বাচন মতবাদ
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৩৫ ধারা
নির্বাচন মতবাদ কাকে বলে? নির্বাচন মতবাদের উপাদান বা শর্তাবলী বা বৈশিষ্ট কি? এই নীতির ভিত্তি কি? নির্বাচন মতবাদের ব্যতিক্রম। নির্বাচন মতবাদে ইংলিশ ও বাংলাদেশী আইনের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় । কুপার বনাম কুপার মামলা।
উত্তর: নির্বাচন মতবাদ (Doctrine of Election) কাকে বলে ?
১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৩৫ ধারায় নির্বাচন মতবাদের উল্লেখ রয়েছে। যেক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি এমন কোন সম্পত্তি হস্তান্তর করতে চায়, যা হস্তান্তর করার অধিকার তার নেই এবং উক্ত সম্পত্তির বিনিময়ে প্রকৃত মালিককে কিছু সুবিধা প্রদান করতে চায়, তাহলে প্রকৃত মালিক সেই সুবিধা গ্রহণ করে উক্ত হস্তান্তর মেনে নিতে পারেন অথবা উক্ত সুবিধা প্রত্যাখ্যান করে সেই হস্তান্তর অস্বীকার করতে পারেন। তবে প্রকৃত মালিক যদি সুবিধা গ্রহণ করেন তাহলে হস্তান্তর মেনে নিতে হবে । আর সুবিধা গ্রহণ না করলে হস্তান্তর অস্বীকার করতে পারেন। এটিই হলাে নির্বাচন মতবাদ।
যেমন : 'ক' একটি ফার্মের মালিক, যার মূল্য ১০০০ টাকা। 'খ' হেবানামার মাধ্যমে এটি 'গ' কে দান করলাে এবং একই দলিলে 'ক' কে ১৫০০ টাকা দিল। এই অবস্থায় 'ক' ১৫০০ টাকা গ্রহণ করবে নাকি টাকা প্রত্যাখ্যান করে উক্ত ফার্মটির মালিকানা রাখবে তা নির্বাচন করবে। অর্থাৎ এই দুইটির মধ্যে যে কোন একটি নির্বাচন করতে হবে।
নির্বাচন মতবাদের উপাদান বা শর্তাবলী বা বৈশিষ্ট্য:
নির্বাচন মতবাদের উপাদান বা শর্তাবলী বা বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলাে :
১। সম্পত্তি হস্তান্তর করতে হবে ।
২। হস্তান্তরকারীর স্বত্ব নেই এমন সম্পত্তি হস্তান্তর করতে হবে ।
৩। সম্পত্তিতে হস্তান্তরগ্রহণকারীর মালিকানা স্বত্ব থাকতে হবে।
8 তৃতীয় ব্যক্তির বরাবর হস্তান্তর করতে হবে।
৫। হস্তান্তরকারী কর্তৃক হস্তান্তরগ্রহণকারীকে কিছু সুবিধা প্রদান করতে হবে।
৬। হস্তান্তরগ্রহণকারী কর্তৃক উক্ত সুবিধা গ্রহণ করতে হবে ।
৭। একসাথে দুইটি হস্তান্তর হতে হবে ।
নির্বাচন নীতির ভিত্তি:
কোন ব্যক্তি যদি এমন কোন সম্পত্তি হস্তান্তর করতে চায়, যা হস্তান্তর করার অধিকার তার নেই এবং উক্ত সম্পত্তির বিনিময়ে প্রকৃত মালিককে কিছু সুবিধা প্রদান করতে চায়, তাহলে প্রকৃত মালিক সেই সুবিধা গ্রহণ করে উক্ত হস্তান্তর মেনে নিতে পারেন অথবা উক্ত সুবিধা প্রত্যাখ্যান করে সেই হস্তান্তর অস্বীকার করতে পারেন। তবে প্রকৃত মালিক যদি সুবিধা গ্রহণ করেন তাহলে হস্তান্তর মেনে নিতে হবে। আর সুবিধা গ্রহণ না করলে হস্তান্তর অস্বীকার করতে পারেন। এটিই হলাে নির্বাচন মতবাদ। অর্থাৎ এই নীতির ভিত্তি হলাে- কোন সুবিধা গ্রহণ করলে তার দায়-দায়িত্বও বহন করতে হবে । কোন সুবিধা গ্রহণ করলে তার দায় এড়ানাে যাবে না।
নির্বাচন মতবাদের ব্যতিক্রম:
১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৩৫ ধারায় নির্বাচন মতবাদের ব্যতিক্রম উল্লেখ করা হয়েছে। নিম্নে তা আলােচনা করা হলাে :
১। নির্বাচনের পূর্বে দাতার মৃত্যু হলে : নির্বাচনের পূর্বে যদি দাতার মৃত্যু হয় তাহলে গ্রহীতাকে যে সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল তার ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে ।
যেমন : ‘ক’ একটি ফার্মের মালিক যার মূল্য ১০০০ টাকা। ‘খ’ হেবানামার মাধ্যমে ‘গ’ কে সেটি দান করলাে এবং একই দলিলে ‘ক' কে ১২০০ টাকা দিলাে। ক’ কর্তৃক নির্বাচনের পূর্বেই যদি ‘খ’ মারা যায়, তাহলে ‘খ’ এর ওয়ারিশকে অবশ্যই উক্ত ১২০০ টাকার মধ্যে ১০০০ টাকা ‘গ’ কে প্রদান করতে হবে ।
২। ভিন্ন কোন সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে : দাতা সম্পত্তি হস্তান্তরের বিনিময়ে মালিককে কোন সুবিধা দিয়ে থাকলে, মালিক যদি তার সম্পত্তি রাখতে চায় তাহলে উক্ত সুবিধা ত্যাগ করতে হবে। তবে একই লেনদেনে ভিন্ন কোন সুবিধা দেওয়া হলে তিনি তা পরিত্যাগ করতে বাধ্য নন।
৩। অধিকার প্রয়ােগ না করলে: কোন সম্পত্তি হস্তান্তরের পর মালিক যদি তার অধিকার প্রয়ােগ না করে তাহলে তিনি নির্বাচন করেছেন বলে ধরা হবে ।
৪। দুই বছর সুবিধা ভােগ করলে : মালিক অসম্মতি জ্ঞাপন না করে দুই বছর যাবৎ সুবিধা ভােগ করলে তিনি সমস্ত বিষয় অবগত ছিলেন এবং তদন্তের অধিকার বর্জন করেছেন বলে ধরা হবে।
৫। পূর্ব মর্যাদায় ফিরে যাওয়া সম্ভব না হলে : সম্পত্তির মালিক যদি এমন কাজ করে যে, হস্তান্তরের সময় সম্পত্তি যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায় আর ফিরে যাওয়া যাচ্ছে না তাহলে তিনি তদন্তের অধিকার ত্যাগ করেছেন বলে ধরা হবে। '
যেমন : ‘ক’ ‘গ’ এর একটি সম্পত্তি ‘খ’ কে দান করল । একই দলিলে ‘ক’ ‘গ’ কে একটি ফার্ম দিয়ে দিল। কিছু দিন পর ‘গ’ উক্ত ফার্মটি নিঃশেষ করে ফেলল। এক্ষেত্রে ‘গ’ ‘খ’ এর অনুকূলে সম্পত্তি হস্তান্তর অনুমােদন করেছে বলে ধরা হবে।
৬। মালিক এক বছরের মধ্যে সিদ্ধান্ত না জানালে : সম্পত্তির মালিক সম্পত্তি হস্তান্তরের এক বছরের মধ্যে তার সম্মতি বা অসম্মতি না জানালে দাতা বা তার ওয়ারিশ নির্বাচন করার দাবী জানাতে পারবে। এই দাবী পাওয়ার যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে নির্বাচন না করলে মালিক উক্ত হস্তান্তর অনুমােদন করেছে বলে ধরা হবে। কিন্তু উক্ত নির্বাচন করা সম্পর্কে আইনত অক্ষম থাকলে তার অক্ষমতার অবসান না ঘটা পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত থাকবে।
নির্বাচন মতবাদে ইংলিশ ও বাংলাদেশী আইনের মধ্যে পার্থক্য:
নির্বাচন মতবাদ সম্পর্কে ইংলিশ ও বাংলাদেশী আইনের মধ্যে পার্থক্য নিম্নে উল্লেখ করা হলাে:
(১) আইনগত পার্থক্য- ইংলিশ আইনে এটি ইংলিশ ইকুইটির একটি আইন কিন্তু বাংলাদেশী আইনে এটি একটি আইন।
(২) নীতিগত পার্থক্য। ইংলিশ আইনে হস্তান্তরকারী ক্ষতিপূরণ নীতি প্রয়োগ করে কিন্তু বাংলাদেশি আইনে হস্তান্তরকারী বাজেয়াপ্ত নীতি প্রয়োগ করে।
(৩) অধিকারগত পার্থক্য : ইংলিশ আইনে হস্তান্তরের সাথে সাথে মালিক সমস্ত অধিকার হারায় না কিন্তু বাংলাদেশি আইনে হস্তান্তরের সাথে সাথে মালিক সমস্ত অধিকার হারায়।
কুপার বনাম কুপার মামলা :
ক’ একটি দলিলের মাধ্যমে ‘খ’ এর একটি সম্পত্তি ‘গ’ কে হস্তান্তর করলাে এবং একই দলিলে ‘ক’ নিজের একটি সম্পত্তি ‘খ’ এর বরাবর হস্তান্তর করলাে। এই ক্ষেত্রে ‘খ’ যদি দলিলটি গ্রহণ করে সম্পত্তির দাবী ‘গ’ এর বরাবর ত্যাগ করে তাহলে উক্ত সম্পত্তিতে ‘গ’ এর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। সুতরাং ‘খ’ কে নির্বাচন করতে হবে যে, সে উক্ত সুবিধা গ্রহণ করে সম্পত্তি হস্তান্তর মেনে নিবে অথবা সুবিধা প্রত্যাখ্যান করে হস্তান্তর অস্বীকার করবে। এটিই ছিলাে কুপার বনাম কুপার মামলা-১৮৭৪ এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।
Video সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ নির্বাচন মতবাদ উদ্দেশ্য বৈশিষ্ট্য ব্যতিক্রম