- Get link
- X
- Other Apps
প্রতারণা কাকে বলে?
তামাদির ক্ষেত্রে প্রতারণার ফলাফল আলোচনা কর ।
মামলা করার অধিকারের পুবে মৃত্যু হলে তার ফলাফল কি?
বিরুদ্ধ বা জবর দখল মতবাদ অলােচনা কর।
বিরুদ্ধ দখল বা জবর দখলের উপাদান কি কি?
স্বত্বের অধিকার কখন বিলুপ্ত হয়?
জবর দখলের দাবি দখলকারী কি নিরঙ্কুশ বা চূড়ান্ত স্বত্ব প্রদান করে।
দলিল ব্যতীত অন্যের অস্থাবর সম্পত্তি অর্জনের আইনগত বিধান আলােচনা কর।
প্রতারণা (Fraud) কাকে বলে
প্রতারণার কোন সংজ্ঞা তামাদি আইনে দেয়া হয়নি। তবে ১৭ ধারা পর্যালােচনা করে বলা যায় প্রতারণা হচ্ছে এমন কোন উক্তি বা কাজ, যা উক্তিকারী নিজে সত্য বলে বিশ্বাস করে না, কিন্তু অপরকে সত্য বলে বিশ্বাস করাতে চেষ্টা করে এই উদ্দেশ্যে যে, সে নিজে লাভবান হবে এবং অন্যকে ঠকাবে।
ব্রিটিশ কমন ল' অনুযায়ী প্রতারণা হলাে মিথ্যা জেনে বা কোন কিছুর সত্যতা যাচাই না করে কোন তথ্য সম্পর্কে এই উদ্দেশ্যে বর্ণনা করা যে, অপরপক্ষ সেই অনুসারে কাজ করবে এবং সেই কাজটি করে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তামাদির ক্ষেত্রে প্রতারণার ফলাফল ।
তামাদি আইনের ১৮ ধারা অনুযায়ী যেক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি মামলা দায়ের করার অধিকারী হয় কিন্তু প্রতারণার মাধ্যমে তাকে জানতে দেয়া হয় না অথবা প্রয়ােজনীয় দলিলপত্র প্রতারণা করে গােপন রাখা হয় সেক্ষেত্রে
(১) দোষী ব্যক্তি বা তার সহযােগীর বিরুদ্ধে, অথবা
(২) যে ব্যক্তি সরল বিশ্বাসে বা মূল্যের বিনিময় ভিন্ন তার স্বত্ব দাবি করে, তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারবেন। এক্ষেত্রে যেই দিন তিনি প্রতারণার কথা জানতে পেরেছেন সেই দিন থেকে অথবা গােপন থাকা দলিল যেই দিন উপস্থাপন করতে সমর্থ হন সেই দিন থেকে তামাদি মেয়াদ গণনা করতে হবে । (হাসান আলী বনাম গুরুদাস কাপালী, 33 CWN 248
উদাহরণ : 'এ' এবং 'বি' একটি জমির যৌথ মালিক। ‘বি’ তার অংশটুকু ‘সি’ এর নিকট বিক্রি করে। 'বি' এবং 'সি' উভয়ে এই জমি বিক্রির বিষয়টি ‘এ’ এর নিকট গােপন রাখে। এখন এই জমি বিক্রির সাথে সাথে ‘এ’ অগ্রক্রয়ের মামলা করার অধিকার লাভ করে। কিন্তু বিষয়টি গােপন রাখায় 'এ' তামাদি মেয়াদের মধ্যে বিষয়টি জানতে পারে নাই। এক্ষেত্রে তামাদি আইনের ১৮ ধারা অনুযায়ী ‘এ’ উক্ত যােগসাজসের বিষয়টি যেদিন জানতে পারবে, সেদিন থেকে তামাদি মেয়াদ গণনা শুরু হবে।
মামলা রুজু করার অধিকারের পূর্বে মৃত্যু হলে তার ফলাফল :
(১) মােকদ্দমা দায়েরের পূর্বে বাদীর মৃত্যু হলে :
যদি মােকদ্দমা দায়ের করার পূর্বে বাদী মৃত্যুবরণ করেন তাহলে মৃত ব্যক্তির আইনগত প্রতিনিধি মােকদ্দমা দায়ের করবেন । যদি উক্ত প্রতিনিধি আইনগতভাবে অযােগ্য হন তাহলে যেদিন তিনি মােকদ্দমা দায়েরের যােগ্যতা সম্পন্ন হবেন সেই দিন থেকে তামাদি মেয়াদ গণনা শুরু হবে। ধারা-১৭ (১),
উদাহরণ = ‘A’ ‘B’ এর একটি জমি দখল করেছে, কিন্তু ‘B’ মােকদ্দমা দায়ের করেনি। কিছুদিন পরে ‘B’ মারা গেল । এক্ষেত্রে ‘B’ এর আইনগত প্রতিনিধি মােকদ্দমা দায়ের করবেন । যদি তিনি আইনগতভাবে অযােগ্য হন তাহলে যেদিন তিনি মােকদ্দমা দায়েরের যােগ্য হবেন সেই দিন থেকে তামাদি মেয়াদ গণনা শুরু হবে ।
(২) মােকদ্দমা দায়েরের পূর্বে বিবাদীর মৃত্যু হলে : যদি মােকদ্দমা দায়ের করার পূর্বে বিবাদী মৃত্যুবরণ করেন তাহলে মৃত ব্যক্তির আইনগত প্রতিনিধিকে বিবাদী করে মােকদ্দমা দায়ের করা হবে। যদি তিনি আইনগতভাবে অযােগ্য হন তাহলে যেদিন তিনি আইনগতভাবে যােগ্য হবেন সেই দিন থেকে তামাদি মেয়াদ গণনা শুরু হবে। [ধারা-১৭(২)],
উদাহরণ= ‘A’ ‘B’ এর একটি জমি দখল করেছে, কিন্তু ‘B’ মােকদ্দমা দায়ের করেনি। কিছুদিন পরে 'A' মারা গেল। এক্ষেত্রে ‘A’ এর আইনগত প্রতিনিধিকে বিবাদী করে মােকদ্দমা করা হবে। তিনি আইনগত অযােগ্য হলে যেদিন তিনি যােগ্য হবেন সেই দিন থেকে তামাদি মেয়াদ গণনা শুরু হবে।
(৩) অন্যান্য ক্ষেত্রে : অগ্রক্রয়, স্থাবর সম্পত্তি দখল, বংশগত পদ লাভ ইত্যাদি সম্পর্কিত মােকদ্দমার ক্ষেত্রে উপরের ১ এবং ২ নং প্রযোজ্য হবে না। (ধারা-১৭(৩)].
পরিশেষে বলা যায়, কোন ব্যক্তির অধিকার বিলুপ্ত হােক বা কেউ জোরপূর্বক বা প্রতারণা করে কোন সম্পদের চূড়ান্ত স্বত্ত্বের অধিকারী হােক এটি তামাদি আইনের উদ্দেশ্য নয়। কারণ এই আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কেউ তার অধিকারের দাবী করতে বিলম্ব করলেই কেবল অধিকার হারাবে না। অর্থাৎ সে যদি যুক্তি সংগত কারণ দর্শাতে পারে তাহলে নির্দিষ্ট মেয়াদের পরেও সে তার দাবী আদায় করতে পারবে।
বিরুদ্ধ দখল বা জবর-দখল মতবাদ:
১৯০৮ সালের তামাদি আইনে বিরুদ্ধ দখল বা জবর-দখলের সংজ্ঞা দেয়া নেই। তবে বিভিন্ন পর্যালােচনায় বলা যায়, কোন আইনগত স্বত্বের বিপরীতে প্রতিকূল দখলই হলাে বিরুদ্ধ দখল বা জবর-দখল।
সাধারণত ১২ বছর বা তার বেশি সময় ধরে অন্যের সম্পত্তি জোর করে দখলে রাখলে যদি প্রকৃত মালিক আইনের আশ্রয় গ্রহণ না করে, তাহলে দখলকারীর স্বত্ব অর্জিত হয়। এই ধরনের দখলকে বিরুদ্ধ দখল ৰা জবর-দখল বলা হয় ।
বিচারপতি Markby বলেন : প্রকৃত মালিক ভিন্ন অপর ব্যক্তি কর্তৃক কোন স্থাবর সম্পত্তি দখল করাকে জবর দখল বলে । [Ranis Vs. Buxton] [4 ch, Div, 537]
বিচারপতি Fry বলেন : অধিকার হারাবার ক্ষেত্রে এক ব্যক্তি অপরের জমিতে প্রবেশ করে তার প্রকৃত মালিককে তা থেকে বিতাড়িত করে। একে জবর দখল বলে । বিজয়চন্দ্র ব্যানার্জি বনাম কালি প্রসন্ন মুখার্জি [LL.R 4 Cal. 327, 329 Sc]
বিরুদ্ধ দখল বা জবর দখলের উপাদানঃ
১৯০৮ সালের তামাদি আইন অনুযায়ী বিরুদ্ধ দখল বা জবর দখলের উপাদান নিয়ে উল্লেখ করা হলো :
১।জমির দখল থাকতে হবে,
২। স্বশরীরে দখল থাকতে হবে,
৩। অবৈধ ভাবে দখল থাকতে হবে,
8। প্রকাশ্য দখল থাকতে হবে,
৫। জবর দখলের ইচ্ছা থাকতে হবে,
৬। জবর দখল বাদীর বিরুদ্ধে হতে হবে,
৭। বাদীর বৈধ স্বত্ব থাকতে হবে,
৮। বাদীর স্বত্ব অস্বীকার করতে হবে,
৯। ১২ বছরের মধ্যে বাদীকে মামলা করতে হবে,
১০। প্রকৃত মালিকের জ্ঞাতসারে হতে হবে,
১১। দখল রাখার চেষ্টা করতে হবে,
১২। বাদী স্বত্ব হারাবে এবং বিবাদীর স্বত্ব অর্জিত হবে ।
দলিল ব্যতীত অন্যের সম্পত্তি অর্জন করলে তার বিধান নিয়ে আলােচনা:
১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী কোন সম্পত্তির খাস দখল পাওয়ার জন্য এই আইনের ১ম তফসিলে বর্ণিত বিধান অনুসারে ১২ বছরের মধ্যে প্রকৃত মালিককে খাস দখল উদ্ধারের জন্য মামলা করতে হবে। এই মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে বাদীর অধিকার বিলুপ্ত হবে।
উদাহরণ: A ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি B এর একটি খাসজমি দখল করে। B ঐ দিনই দখল পুনরুদ্ধারের জন্য মােকদ্দমা দায়েরর অধিকার লাভ করলাে। অর্থাৎ ‘B’ কে ২০৩১ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে খাস দখল পুনরুদ্ধারের জন্য মােকদ্দমা দায়ের করতে হবে। এই মেয়াদের মধ্যে B' মােকদ্দমা দায়ের না করলে তার অধিকার বিলুপ্ত হবে। সুতরাং বলা যায়, জবর দখলের কারণে সাধারণত মূল মালিকের অধিকার বিলুপ্ত হয়না বা দখলকারী চূড়ান্ত অধিকার লাভ করে না। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিকার না চাইলে বা আদালতে উক্ত অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য আবেদন না করলে অধিকার বিলুপ্ত হয়ে যায় অর্থাৎ জবরদখলকারী চূড়ান্ত অধিকার লাভ করে।