- Get link
- X
- Other Apps
বাংলার ইতিহাস ইউরোপীয়দের আগমন ও বৃটিশ আমল
বাংলায় ইউরোপীয়দের মধ্যে যাদের প্রথম আগমন ঘটে কারা হচ্ছেন পর্তুগিজ। ভারতের আসার জলপথ আবিষ্কৃত হয় ১৪৮৭ সালে। ১৪৮৭ সালে সর্বপ্রথম বার্থলোমিউ দিয়াজ উত্তমাশা অন্তরীপে পৌঁছেন এবং ১৪৯৮ সালে ভাস্কো দা গামা সেই পথ দিয়েই ভারতবর্ষে পৌঁছেন। ভাস্কো দা গামা ভারতের কালিকট বন্দরে আসেন। ভারতে আসতে তিনি আরব নাবিকদের সাহায্য নিয়েছিলেন। ইউরোপীয়দের মধ্যে যারা প্রথম ভারতে আসে ও ঘাঁটি স্থাপন করে তাদের মধ্যে ওলন্দাজরাই সর্বপ্রথম ১৫১৬ সালে ঘাঁটি স্থাপন করেন ডাচ বা নেদারল্যান্ডের অধিবাসীদের ওলন্দাজ বলে ডাকা হয়। ডেনমার্কের অধিবাসীদের দিনেমার বলা হয়।ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠিত হয় ১৬০০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উদ্দেশ্য ছিল এদেশে ব্যবসা করা। ভারত উপমহাদেশের বাংলায় ইংরেজদের প্রথম কুঠি স্থাপিত হয় সুরাটে ১৬০৮ সালে। কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গ স্থাপন করা হয় ১৭০০ সালে। এ উপমহাদেশে ফরাসিরাই ইউরোপীয়দের মধ্যে সবার শেষে আসে এবং এদের আসার উদ্দেশ্য ছিল সাম্রাজ্যের স্থাপন করা। বাংলার প্রথম নবাব ছিলেন মুর্শিদকুলী খান। মুর্শিদকুলী খান বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করেন।
সিরাজ-উদ-দৌলার বীরত্ব, মীর জাফর গংয়ের বিশ্বাসঘাতকতা ও বাংলায় ইংরেজ প্রভূত্ব প্রতিষ্ঠা
সিরাজ-উদ-দৌলা ১৭৫৬ সালে বাংলার নবাব হন। বাংলার প্রথম স্বাধীন নবাব ছিলেন মুর্শিদকুলী খান।
বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব ছিলেন সিরাজ-উদ-দৌলা।
সিরাজ-উদ-দৌলা কলকাতার নাম রাখেন আলিনগর।১৭৫৬ সালের অন্ধকূপ হত্যা ছিল একটি মিথ্যা অভিযোগ। হলওয়ে সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে বৃটিশদের ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গে ১২৩ জন ইংরেজকে আটকে রেখে নির্মমভাবে হত্যার মিথ্যা অভিযোগ বা কাহিনী প্রচার করেন। এটাই ইতিহাসে অন্ধকূপ হত্যা নামে পরিচিত। পরবর্তীতে এটা মিথ্যা প্রমাণ করা হয়। এই অভিযোগের ভিত্তিতে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে ইংরেজরা যুদ্ধ করে। পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয় ২৩ জুন, ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রাণ্তরে।
এই যুদ্ধে দুটি পক্ষ ছিল - বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ও ইংরেজ সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভ। এই যুদ্ধে পরাজিত হন বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা। সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের মূল কারণ ছিল প্রধান সেনাপতি মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতা। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে হত্যা করেন মোহাম্মদী বেগ। ১৭৬৪ সালে ইংরেজ ও মীর কাশেমের বিরুদ্ধে বক্সারের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে মীর কাসিম পরাজিত হন।
বৃটিশ ভাইসরয়দের গুরুত্বপূর্ণ অবদান বা স্মরণীয় ঘটনা
লর্ড ক্লাইভ মোগল সম্রাট শাহ আলমের সঙ্গে চুক্তি করে ১৭৬৫ সালে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। ইংরেজি ১৭৭০ সালে অর্থাৎ ১১৭৬ বঙ্গাব্দে লর্ড কাটিয়ার এর সময়ে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর ঘটে। ১৭৭০ সালে ১১৭৬বঙ্গাব্দে লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস ১ম গভর্নর জেনারেল হন। তিনি দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা ১৭৭২ সালে রহিত করেন। লর্ড কর্নওয়ালিস ১৭৯০ সালে দশশালা বন্দোবস্ত চালু করেন। লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ১৮২৯ সালে সতীদাহ প্রথা বিলোপ করেন। রাজা রামমোহন রায় এর সময়ে। লর্ড ডালহৌসি ১৮৫৩ রেল যোগাযোগ স্থাপন করেন। লর্ড ক্যানিং, ১৮৫৮ সালে ক্ষমতা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে সরাসরি রাণী ভিক্টোরিয়ার হাতে অর্পণ করেন। ভারতের বন্ধু নামে খ্যাত লর্ড রিপন ১৮৬১ সালে প্রথম আদমশুমারি চালু করেন। লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ করেন এবং নতুন বাংলা প্রদেশের রাজধানী ঢাকা করেন। লর্ড হার্ডিঞ্জ (২য়) ১৯১৫ সালে রাজধানী কোলকাতা হতে দিল্লীতে স্থানান্তর করেন। ১৯৪২ সালে লর্ড লিনলিথগো এর সময়ে, ভারত ছাড় আন্দোলন শুরু হয়।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন:
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন নাম ছিল ফকির আন্দোলন। ফকির আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন ফকির মজনু শাহ।
এই আন্দোলনে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন- ভবানী পাঠক। তিতুমীরের আন্দোলনের প্রধান নেতা যার প্রকৃত নাম ছিল সৈয়দ নিসার আলী তিনি মৃত্যুবরণ করেন ১৮৩১ সালে। তিনিই ছিলেন প্রথম বাঙালি শহীদ। বাঁশের কেল্লা ১৮৩১ সালে নারিকেলবাড়িয়ায়
ধ্বংস হয়। সিপাহী বিদ্রোহ ব্যারাকপুর থেকে শুরু হয় ১৮৫৭ সালে। এনফিল্ড রাইফেলের চর্বির টোটায় গরু ও শূকরের মাংস মেশানোর গুজব ছড়ানো হয়। ফলে
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে। ভারত সরাসরি রাণী ভিক্টোরিয়ার শাসনাধীন হয়। নীল বিদ্রোহের অবসান ঘটে ১৮৬০ সালে। ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব হয় ১৮ শতকের শেষের দিকে। গুরুত্বপূর্ণ নাটক নীল দর্পণ রচয়িতা দীনবন্ধু মিত্র। চাকমা বিদ্রোহের সময়কাল ১৭৭৬ সাল থেকে ১৭৮৭ সাল পর্যন্ত। প্রধান নেতা ছিলেন জুম্মা খান। সাঁওতাল বিদ্রোহ সময়কাল ছিল ১৮৫৫ সাল থেকে ১৮৫৬ সাল পর্যন্ত। প্রধান নেতা ছিলেন ২ ভাই - কানু আর সিদু। ১৮২৮ সালে রাজা রামমোহন রায় ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ‘ব্রাহ্ম ধর্ম’ প্রবর্তন করেন। তিনি একেশ্বরবাদ প্রবর্তন করেন ও প্রচার করেন। তিনি সতীদাহ প্রথা রহিতকরণে ভূমিকা রাখেন যা ছিল ১৮২৯ সালে, লর্ড বেন্টিঙ্কের আমলে।তাকে রাজা উপাধি দেন সম্রাট দ্বিতীয় আকবর। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হুগলির ইমামবাড়া নির্মাণ করেন এবং মুসলমানদের শিক্ষার জন্য সর্বস্ব দান করেন। ১৯৫৬ সালে লর্ড ডালহৌসীর সময়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ প্রচলনে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ এবং সংস্কৃত কলেজে সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নওয়াব আব্দুল লতিফ মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠা করেন ১৮৬৩ সালে। তিনি ১৮৬৩ সালে মুসলিম সাহিত্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১ম মুসলমান আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন।১৮৭৭ সালে সৈয়দ আমীর আলী সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের ১ম প্রিভি কাউন্সিল সদস্য ছিলেন। তার লিখিত বিখ্যাত গ্রন্থ- ‘দি স্পিরিট অফ ইসলাম’, 'এ শর্ট হিস্টোরি অফ দি সেরাসিনম’। স্যার সৈয়দ আহমদ খান আলীগড় আন্দোলন গড়ে তোলেন।তিনি ১৮৭৭ সালে আলীগড় অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৮৬ সালে তিনি আলীগড় মোহামেডান এডুকেশন কনফারেন্স এর আয়োজন করেন। কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৫ সালে। কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম। মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৬ সালে এবং মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন নবাব সলিমুল্লাহ। মুসলিম লীগের প্রকৃত নাম নিখিল ভারত মুসলিম লীগ।
বৃটিশ আমলে রাজনৈতিক আন্দোলন ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা :
অহিংসা ও অসহযোগ আন্দোলনের প্রবক্তা ছিলেন মহাত্মা গান্ধী এবং মহাত্মা গান্ধীর প্রকৃত নাম ছিল মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল ১৯১৯ সালে। রবীন্দ্রনাথ ‘নাইট’ উপাধি প্রত্যাখ্যান করেন যে কারণে তা হল এন এ এর মাধ্যমে জালিওয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। খেলাফত আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল ১৯২০ সালে এবং এর নেতৃত্ব দেন মাওলানা মুহম্মদ আলী ও মাওলানা শওকত আলী।বৃটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন করেন মাস্টারদা সূর্যসেন এবং তিনি চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করেন ১৮ এপ্রিল, ১৯৩০ সাল। মাস্টারদা’কে ফাঁসি দেয়া হয় ১৯৩১ সালে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ক্ষুদিরামকে ফাঁসি দেয়া হয়। মাস্টারদা সূর্যসেনের সঙ্গে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত ছিলেন প্রীতিলতা ওযাদ্দেদার।ভারত ছাড় আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ১৯৪২ সালে। বাংলায় দূর্ভিক্ষ অর্থাৎ যাকে আমরা বলি পঞ্চাশের মন্বন্তর এটা ঘটেছিল ১৯৪৩ সালে ১৩৫০ বঙ্গাব্দে। ১৯৩৯ সালে দ্বি-জাতিতত্ত্বের প্রবক্তা ছিলেন মুহম্মদ আলী জিন্নাহ। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের প্রবক্তা ছিলেন এ কে ফজলুল হক।ঋন সালিসী আইন প্রবর্তন করেন এ কে ফজলুল হক।বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী অর্থাৎ অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন এ কে ফজলুল হক। ভারত বিভক্তির সময় বাংলার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির জন্য যে কমিশন গঠিত হয়েছিল তার নাম র্যাডক্লিফ কমিশন।ভারত-পাকিস্তান বিভক্ত হয় তখন বৃটিশ গভর্নর ছিলেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন।
ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতা
পাকিস্তান স্বাধীন হয়েছিল ১৪ আগস্ট ১৯৪৭ সালে আর ভারত স্বাধীন হয়েছিল ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ সালে। ধন্যবাদ।