- Get link
- X
- Other Apps
বেগম ফজিলাতুন্নেসা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্রী এবং তিনি ছিলেন ঢাকা ইডেন কলেজের অধ্যক্ষা।
অবাক হলেও এটাই ছিল বাস্তব যে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নিয়ম ছিলো, আর তা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একজন ছাত্র যদি একজন ছাত্রীর সাথে কথা বলতে চায়, তবে তাকে
প্রক্টর বরাবর দরখাস্ত দিয়ে তার থেকে অনুমতি নিতে হতো। একমাত্র প্রক্টরের অনুমতি পেলেই সে মেয়েটির সাথে কথা বলতে পারতো, তাছাড়া সম্ভব ছিল না। এমনকি তার ক্লাসের কোন ছাত্রীর সাথেও কথা বলা যেত না।
তখন ছিল ডিসেম্বর মাস, ১৯২৭ সাল, ঘটনাটি ঘটেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাত্র ৬ বছর পর। সেদিন কোলকাতা থেকে একজন যুবক এলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখবেন বলে। তার সাথে কয়েকজন বন্ধু বান্ধব ছিল তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখছেন। তখন
কার্জন হলের নাম ছিলো বিজ্ঞান ভবন।
সেই ব্যক্তি তার বন্ধুদের কে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে যখন কার্জন হলের সামনে আসলেন, তখন সে যুবক লক্ষ্য করলেন যে দূরে একটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে। সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ছাত্রী হবে। গায়ে ছিল একটা থ্রী কোয়ার্টার হাতার ব্লাউজ আর সুতির শাড়ি। সেই ব্যক্তি তার বন্ধুদেরকে এই মেয়েটির নাম জিজ্ঞাসা করল। তখন তার বন্ধুরা উত্তর দিল, এ হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম নারী ছাত্রী। তখন সেই যুবক এই মেয়েটির সম্পর্কে খুবই কৌতুহলী হয়ে উঠল এবং বলল, আমি এই মেয়ের সাথে কথা বলব। এই বলে যখন সেই যুবকটি মেয়েটির সাথে কথা বলতে যাবে, তখনই তার বন্ধুরা তাকে থামিয়ে দিল এবং বলল তুমি এটা করতে পারবে না। তার বন্ধুরা বলল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা পড়ছি এবং আমরা জানি যে কোন মেয়ের সাথে কোন ছেলে কথা বলার অনুমতি নেই যদি কথা বলতে হয় তাহলে প্রক্টরের অনুমতি লাগে। আর যদি তুমি প্রক্টরের অনুমতি ছাড়া কথা বল, তাহলে তোমার শাস্তি হবে।
সেই যুবক বলল, 'আমি মানি না কোন বাধা, আমি মানি না কোন আইন। আমি অবশ্যই মেয়েটির সাথে কথা বলবো।' তখন সেই যুবক হাঁটতে হাঁটতে সেই মেয়েটির সামনে যেয়ে দাঁড়ালো এবং তাকে বলল, আমি শুনেছি আপনি কিনা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম নারী ছাত্রী। শুনে খুব ভালো লাগলো। তো কি নাম আপনার? মেয়েটি মাথা নিচু করে উত্তর দিল, আমার নাম ফজিলাতুন্নেছা। যুবকটি আবার জিজ্ঞাসা করলো, আপনি কোন সাবজেক্টে পড়েন? মেয়েটি বলল, গণিতে পড়ি। যুবককে আবার প্রশ্ন করল, আপনার গ্রামের বাড়ি কোথায়? মেয়েটি উত্তর দিলো, টাঙ্গাইলের করটিয়ায়। তখন যুবকটি আবার জানতে চাইল, ঢাকায় তিনি কোথায় থাকছেন? মেয়েটির থেকে উত্তর এলো, সিদ্দিকবাজার। এবার যুবকটি বললেন, আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম নারী ছাত্রী, এ কারণে আমি আপনার সাথে কথা বলে আমি খুব আপ্লুত হয়েছি।
তখন যুবকটি বলল, আজই সন্ধ্যায় আমি আপনার সাথে দেখা করতে আসবো। তারপর মেয়েটি চলে গেলো। এত সব কিছু দূরে দাঁড়িয়ে থেকে সহকারী প্রক্টর স্যার দেখছিলেন, এই ঘটনার ঠিক তিনদিন পর যা ঘটলো। দিনটা ছিল ২৯ ডিসেম্বর ১৯২৭, কলা ভবন আর বিজ্ঞান ভবনের নোটিশ বোর্ডে হাতে লেখা একটি বিজ্ঞপ্তি টাঙ্গানো হলো, এতে যুবকের নাম লেখা আছে, তার বাবার নাম লেখা আছে এবং তাতে লেখা রয়েছে এই যুবকের আজীবনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
এই ঘটনার পর এই যুবক আর কোনদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ করেন নি। এই যুবক যখন বৃদ্ধ হলেন এবং যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন ছিল ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট । যে যুবকটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল, অথচ এই যুবকটির মৃত্যুর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে তাকে সমাহিত করা হলো।
সেই যুবকে টি আর কেউ নয় তিনি হচ্ছেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
আর যে মেয়েটির কথা এখানে বলা হয়েছে তিনি আর কেউ নন তিনি হচ্ছেন, টাঙ্গাইলের সদর থানার নামদার কুমুল্লী গ্রামে জন্ম নেয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, বাংলাদেশের নারী শিক্ষার অগ্রদূত, মহিয়সী নারী বেগম ফজিলতুন্নেসা জোহা।
বেগম ফজিলতুন্নেসা জোহা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলমান ছাত্রী ও ঢাকা ইডেন কলেজের তিনি ১৯৪৮ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনিই প্রথম বাঙালিদের মধ্যে একমাত্র মুসলমান ছাত্রী যিনি উচ্চ শিক্ষার্থে স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে যান।
বেগম ফজিলতুন্নেসা সম্পর্কে বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায় কাজী মোতাহার হোসেনের লেখা থেকে।
Video বেগম ফজিলাতুন্নেছা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্রী