Skip to main content

Video Article Preposition Phrase Clause

জাল দলিল সনাক্ত করার উপায় এবং দলিল জালিয়াতির শাস্তি

 জাল দলিল সনাক্ত করার উপায় এবং দলিল জালিয়াতির শাস্তির বিধান ও প্রতিকার

জাল দলিল কি?

জমিজমা বাড়ি বা স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। বাংলাদেশি যে প্রচলিত আইন রয়েছে সম্পত্তি হস্তান্তর বিষয় সে ক্ষেত্রে জমির দলিল সম্পাদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখানে দলিল সম্পাদন বলতে দলিল লিখিত এবং রেজিস্ট্রিকৃত বুঝায়।

 কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততই জমি সংক্রান্ত দলিল জালিয়াতির ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে সাথে সাথে এ সংক্রান্ত মামলা মোকদ্দমা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে । জীবনের সমস্ত পুঁজি দিয়ে একখণ্ড জমি কিনে প্রতারিত হয়ে পথে পথে অনেকে ঘুরছেন, মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়ছেন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাবার উপায় হচ্ছে দলিল চেনা এবং দলিল জাল কিনা তা চিহ্নিত করতে পারার সক্ষমতা। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষিত হলেই এ বিষয়ে সক্ষমতা অর্জন করা যায় না পাশাপাশি প্রয়োজন কিছু কৌশল যার মাধ্যমে আপনি স্বল্প শিক্ষিত হলেও দলিল জাল কিনা বা আপনি প্রতারিত হবেন কিনা জমি ক্রয় করার পূর্বেই সহজেই আপনি বুঝতে পারবেন।


কিভাবে জাল দলিল হতে পারেঃ

অনেক সময় দেখা যায়, প্রকৃত মালিকের অগোচরে তৃতীয় একজন ব্যক্তি মালিক সেজে আপনার কাছে দলিল বিক্রি করতে আসবে। এ ধরনের লোকের সাথে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কিছু অসৎ কর্মচারীর যোগসাজশ থাকে বলে দলিল জাল করা সহজ হয়। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সীল ও সইও ভুয়া হতে পারে। তাছাড়া দলিল সম্পাদন কারীর সই জাল করে ভুয়া দলিল তৈরি হতে পারে। বণ্টননামা দলিলের ক্ষেত্রে সহ-শরিকদের সম্পূর্ণ অগোচরে ভুয়া বণ্টননামা করে দলিল জাল হতে পারে। যদি আদালত থেকে বণ্টননামা সম্পন্ন করা না হয়, সে ক্ষেত্রে দলিল জালের সম্ভাবনা বেশি থাকে। আবার দেখা যায় অশিক্ষিত বা কম শিক্ষিত লোক যারা দলিল সম্পর্কে বা জায়গা জমি সম্পর্কে একটা ধারণা রাখেন না, তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করা হয়। মালিক প্রবাসী বলে প্রতারক চক্র মূল দলিল থেকে জালিয়াতি করতে পারে। আবার অনেক সময় দেখা যায় দলিলে ঘষামাজা থাকে, বা ওভাররাইটিং থাকে অথবা দলিল কাটাছেঁড়া করেও দলিল জাল করতে পারে। আরো এক ধরনের প্রতারণা হচ্ছে দলিলের মূল তারিখ ঠিক রেখে দলিলের বর্ণনায় দাগ নম্বর, তফসীল বর্ণনা ইত্যাদি জাল করতে পারে। এজমালি সম্পত্তিতে ভাইবোন মিলে পিতা বা মাতার যে সম্পত্তি ভোগ করে থাকে, সেক্ষেত্রে ভাইয়েরা বোনদের না জানিয়ে কিংবা ভাই-বোনদের মধ্য থেকে কাউকে বাদ দিয়ে দলিল তাদের নামে করে থাকে। আমমোক্তার বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দ্বারা সম্পন্ন কোনো দলিল জাল হতে পারে। আবার অনেক সময় ভেস্টেড প্রপার্টি বা ভিপি জমি বিক্রয় করা হয় বা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি মালিক  জীবিত দেখিয়ে বিক্রয় করা হয়।

 কিভাবে জাল দলিল সনাক্ত করা যায়:

নিম্নলিখিত উপায় অবলম্বন করলে আপনি দলিল জাল কিংবা আসল তা শনাক্ত করতে পারবেন।

১। জমি ক্রয়ের পূর্বে বিক্রেতাকে জানিয়ে দিবেন যে, বিক্রয়ের পূর্বে তিনি সমস্ত দলিল গুলো যাচাইয়ের জন্য পেতে চান। যদি বিক্রেতা দিতে রাজি থাকেন তাহলে আপনি তার কাছ থেকে দলিল গুলো নিয়ে যাচাই শুরু করবেন। বিক্রেতার কাছ আপনি যে সমস্ত দলিল চাইবেন তা হল, সিএস থেকে আর এস এবং বি এস পর্যন্ত যে সমস্ত দলিল হস্তান্তরিত হয়েছে, বিশেষ করে ভায়া দলিল চেয়ে নিতে হবে। এরপর আপনি সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যাবেন। সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে জেনে নিবেন দলিল গুলোর ক্রমিক নম্বর, দলিল নম্বর ঠিক আছে কি না।

২। যখন কোনো দলিল নিয়ে আপনার সন্দেহ হয়, তখন ওই দলিলটি নিয়ে প্রথমে রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দেখবেন যে, দলিলটির রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শেষ হয়েছে কি-না। এক্ষেত্রে বালাম বহি দেখলেই বুঝতে পারবেন নকল করুন কাজ শেষ হয়েছে কিনা। যদি দেখেন যে রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শেষ হয় নাই, তখন দলিলটি সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিসে সংরক্ষণ করা মুল দলিলের সাথে মিলিয়ে দেখবেন। আর যদি দেখেন যে, রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শেষ হয়েছে, তখন আপনাকে সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিসে বা জেলা সদরের রেকর্ড রুমে যেতে হবে। যেহেতু দলিলের প্রকৃতি অনুযায়ী চারটি রেজিস্ট্রার বা ভলিউমে দলিলটি সংরক্ষিত থাকে, তখন উক্ত সংরক্ষণ করা বালাম বহির সাথে দলিলটি মিলিয়ে দেখবেন। এ জন্য আপনাকে নিয়ম অনুযায়ী দলিল তল্লাশি জন্য নির্দিষ্ট ফি জমা দিতে হবে। নির্দিষ্ট ফিস প্রদান করে নির্দিষ্ট আবেদন ফর্মে আবেদন করতে হবে।

৩। জমির মিউটেশন বা নামজারি সম্পর্কে যেভাবে খোঁজ নিবেন: সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট দলিলে উল্লিখিত জমির মিউটেশন বা নামজারি সম্পর্কে খোঁজ নিবেন। নামজারিতে যাদের নাম আসার কথা তাদের নাম সঠিকভাবে এসেছে কিনা তা লক্ষ্য করবেন। জমিটি টি যদি একাধিক বার বিক্রি হয়ে থাকে, তখন লক্ষ্য করবেন, জমিটি যতবার বিক্রি হয়েছে, জরিপ খতিয়ানে জমির ঠিকানা ও দাগ নম্বরের পরিমাণ ততবার ঠিকভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে কিনা। যদি আপনি দেখেন যে, সিএস বা পরবর্তী যেকোনো জরিপের সঙ্গে বর্তমান বিক্রেতার খতিয়ানের কোনো গরমিল বা হেরফের রয়েছে, তখন ধরে নিতে হবে যে, এই জমির দলিল সমস্যা আছে।

৪। যদি বুঝতে পারেন যে রেজিস্ট্রি অফিসের বা ভূমি অফিসের সীল জাল করে দলিল টি তৈরি করা হয়েছে, তখন সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিস বা ভূমি অফিসে গিয়ে বিভিন্ন সীল যাচাই করেও দলিল জালিয়াতি ধরা যায়।

৫। যদি মূল মালিক সম্পর্কে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে, তখন সবচেয়ে ভাল হল যে, আপনি সংশ্লিষ্ট এলাকায় যেয়ে পার্শ্ববর্তী স্থানীয় লোকদের সাথে কথা বলে প্রকৃত মালিক কে তা জানতে পারবেন। 

৬। যদি মনে করেন দলিলে স্বাক্ষর জালিয়াতি হয়েছে, বা অন্য লোককে দাঁড় করিয়ে মালিক সাজানো হয়েছে বলে মনে হয়, এক্ষেত্রে  স্বাক্ষর বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে স্বাক্ষরের সত্যতা যাচাই করিয়ে নেওয়া যেতে পারে। জাল দলিলের তারিখ, সই, সীল, কাগজ ইত্যাদিতে অসংলগ্ন বা অমিল খুঁজে পাবেন। তাই দলিলটি ভালো করে দেখুন - কোন অসংলগ্নতা চোখে পড়ে কিনা।

৭। জমির পরিমাণে কোন হেরফের আছে কিনা তা লক্ষ্য করার মাধ্যমে আপনি জমির প্রতারণা ধরতে পারবেন। যতবার জমিটি বিক্রি হয়েছে, জরিপ খতিয়ানে ততবার বিক্রির সময় জমির পরিমাণ ঠিক আছে কিনা বা যেভাবে বন্টিত হয়েছে সে বণ্টননামা পরিমাণ ঠিক আছে কিনা তা লক্ষ্য করবেন। আপনি মাঠ পর্চার মাধ্যমেও জমির পরিমাণ নিজেই যাচাই করতে পারবেন। এজন্য উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসারের কার্যালয়ে গিয়ে নির্দিষ্ট এলাকার মাঠ পর্চা উঠানোর জন্য নির্দিষ্ট ফিস প্রদান করে আবেদনের মাধ্যমে মাঠপর্চা উঠিয়ে নিতে পারবেন।সংশ্লিষ্ট জমির মাঠপর্চা অন্য ব্যক্তির নামে হলে সেখানে জাল-জালিয়াতি ঘটনা ঘটতে পারে।

৮। যদি দলিলটি হেবা বা দানের ঘোষণাপত্র হয়, তখন আপনাকে যাচাই করতে হবে দাতা এবং গ্রহীতা সম্পর্কে।  যেহেতু হেবা দলিল নির্দিষ্ট কয়েকটি সম্পর্কের মধ্যে হয়ে থাকে যেমন স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা ও ছেলে-মেয়ে, আপন ভাই-বোন, নানা-নানী ও নাতি-নাতনী, দাদা-দাদী ও নাতি-নাতনী। যদি দেখেন যে এক কয়েকটি সম্পর্কের বাইরে দলিল সম্পাদন করা হয়েছে তাহলে তা বাতিল হয়ে যাবে এবং এ দলিল দ্বারা আপনি প্রতারিত হবেন। তাছাড়া হেবা বা দান সূত্রে জমি ক্রয় করার পূর্বে দেখতে হবে জমিতে দলিল গ্রহীতা দখলে আছেন কিনা, যদি দখলে না থাকেন তাহলে আপনি বিপদে পড়তে পারেন। 

৯। যদি দলিলটি পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দলিল হয় তাহলে লক্ষ্য করবেন সেই দলিলটি নির্দিষ্ট ফরমেটে প্রস্তুত হয়েছে কিনা। কারণ বর্তমান বিধান অনুযায়ী পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দলিল প্রস্তুতের জন্য উনিশটি কলাম রয়েছে।

১০। এবার আপনি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প এর ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি দিবেন। দলিলে ব্যবহৃত নন-জুডিসিয়াল স্টাম্প সাধারনত সনদপ্রাপ্ত কোন স্টাম্প-ভেন্ডারের কাছ থেকে ক্রয় করা হয়। যারা স্টাম্প বিক্রয় করেন অর্থাৎ স্টাম্প-ভেন্ডারগণ এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট রেজিস্টার বহিতে স্টাম্প ক্রেতার নাম লিখে রাখেন এবং স্টাম্পে নির্দিষ্ট নম্বর ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে আপনি লক্ষ্য করবেন যে স্ট্যাম্প ভেন্ডার এর মাধ্যমে ক্রয় কৃত স্টাম্প ক্রেতার নাম এবং ব্যবহৃত নম্বর ঠিক আছে কিনা। যদি গরমিল পাওয়া যায় তাহলে জালিয়াতির বিষয় জড়িত আছে।

ফৌজদারী আদালতে দলিল জালিয়াতির সাজাঃ 

 আইন কখনো একজন জালিয়াতি কে প্রশ্রয় দেয় না। তাছাড়া জালিয়াতির মাধ্যমে লোক ঠকিয়ে, প্রতারণা করে, অন্যায় মূলক কাজে সহায়তা করে যে ব্যক্তি কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান, তিনি আইনের দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধী।  এ ধরনের জালিয়াতি সম্পর্কে বাংলাদেশে প্রচলিত দণ্ডবিধির ৪০৬/৪২০ এবং ৪৬৩ থেকে ৪৭৭ ধারা পর্যন্ত অপরাধের সংজ্ঞা এবং অপরাধের শাস্তি বিধান বর্ণিত আছে। 

 দণ্ডবিধি আইনের ৪৬৩ ধারায় বলা হয়েছে  যে, জালিয়াতির অপরাধের আবশ্যকীয় উপাদান দুটি- প্রথমতঃ মিথ্যা দলিল প্রস্তুত করা, দ্বিতীয়তঃ প্রতারণামূলক ইচ্ছা নিয়ে কোন ব্যক্তিকে ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা দলিল প্রস্তুত করা।

দণ্ডবিধির ৪৭০ ও ৪৭১ ধারায় মিথ্যা বা জাল দলিল কাকে বলে এ বিষয়ে সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে এবং শাস্তির বিধান করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, 'জাল বা মিথ্যা দলিল হচ্ছে, যে দলিল জাল প্রক্রিয়ায় সম্পাদন করা হয়েছে এবং যদি কোনো ব্যক্তি প্রতারণামূলকভাবে কোনো জাল দলিল জেনে শুনে মূল দলিল হিসেবে ব্যবহার করেন, তাহলে তিনি দায়ী হবেন এবং দলিল জালিয়াতির অপরাধে দন্ডিত হবেন।'

দণ্ডবিধির ৪৬৪ ধারায় মিথ্যা দলিল প্রণয়নের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, 'প্রথমত, কোনো দলিল কিংবা অংশবিশেষ এমন ব্যক্তি কর্তৃক প্রণীত স্বাক্ষরিত, সিলমোহরকৃত বা সম্পাদিত বলে বিশ্বাস জন্মানোর উদ্দেশ্যে, যা প্রকৃত ব্যক্তি কর্তৃক সম্পাদিত হয়নি; দ্বিতীয়ত, কোনো ব্যক্তি কর্তৃক দলিল সম্পাদিত হওয়ার পর প্রতারণামূলক ভাবে বাতিল করে; তৃতীয়ত, যদি কোনো ব্যক্তি প্রতারণামূলক কোনো মাতাল বা মানসিক বিকারগ্রস্থ ব্যক্তি দ্বারা কোন দলিল স্বাক্ষরিত, সিলমোহর বা পরিবর্তন করান, যা বুঝতে অক্ষম, তা হলে এ ক্ষেত্রগুলোতে দলিল জালিয়াতি করা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে।' এ ধারার দুটো ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, 'কোনো ব্যক্তি তাঁর নিজ নাম স্বাক্ষর করলেও যদি অন্য ব্যক্তির স্বাক্ষর হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে জালিয়াতি হতে পারে। মৃত লোকের নামে মিথ্যা দলিল প্রণয়ন করা হলে জালিয়াতি হিসেবে গণ্য হবে।'

একটি দলিল যখন অসৎ উদ্দেশ্য বা প্রতারণার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়, তখনই তা জাল রূপে গণ্য হবে। এ বিষয়ে একটি বিখ্যাত মামলা 'মনু মিয়া বনাম রাষ্ট্র' মামলায় রায়ে বলা হয়েছে, 'কোনো দলিলকে জাল বলতে হলে অবশ্যই তা অসৎ ও প্রতারণার উদ্দেশ্যে সম্পাদিত হতে হবে। [42 DLR 191]।কেননা অপরকে প্রতারিত করার অসৎ উদ্দেশ্যে কোন দলিল সম্পাদন করলে উহাকে জালিয়াতি বলা যায়।'

জালিয়াতির শাস্তি সম্পর্কে দণ্ডবিধির ৪৬৫ ধারায় বলা হয়েছে, 'যদি কোনো ব্যক্তি জালিয়াতি করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি দু বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডসহ উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন।'

আদালতের নথি বা সহকারী রেজিস্ট্রার ইত্যাদিতে জালিয়াতি সম্পর্কে দণ্ডবিধির ৪৬৬ ধারায় বলা হয়েছে, 'যদি কোনো ব্যক্তি বিচারালয়ের নথিপত্র বা মামলার বিবরণী বলে গণ্য কোনো দলিল বা জন্মনামকরণ বিয়ে বা শবসংক্রান্ত রেজিষ্টার হিসাবে গণ্য বা বা সরকারি সার্টিফিকেট জাল করেন অথবা মামলার কোনো রায়ের কপি জাল করেন, তাহলে দায়ী ব্যক্তি সাত বছর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদণ্ডসহ অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। এ অপরাধ জামিনযোগ্য নয়।'

মূল্যবান জামানত, উইল প্রভৃতি জাল সম্পর্কে দণ্ডবিধির ৪৬৭ ধারায় বলা হয়েছে, 'যদি কোনো ব্যক্তি মূল্যবান জামানত, উইল প্রভৃতি জাল করেন, তাহলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।'

এরকম জালিয়াতির অপরাধের সহায়তার জন্য শাস্তির বিধান করা হয়েছে। যা ৪৬৭ ধারার অধীন দণ্ডনীয় অপরাধ।

দণ্ডবিধির ৪৭৪ ধারায় বলা হয়েছে, '৪৬৬ ও ৪৬৭ ধারানুযায়ী প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতির জন্য সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ জরিমানার বিধান আছে।'

দেওয়ানি আদালতে প্রতিকার: 

আপনি যদি দলিল টি বাতিল করতে চান বা অকার্যকর হিসেবে ঘোষণা করাতে চান তাহলে আপনাকে দেওয়ানি আদালতে আসতে হবে। দেওয়ানি আদালতে  প্রচলিত সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধারা অনুযায়ী দলিল বাতিলের মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে। এই আইনে বলা হয়েছে যে, 'কোনো ব্যক্তি, যার বিরুদ্ধে লিখিত দলিলটি জাল, বাতিল বা বাতিল যোগ্য যা বলবত থাকলে তার গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে এমন অবস্থায় তিনি তা বাতিল বা বাতিলযোগ্য ঘোষণার জন্য সরাসরি দলিল বাতিলের মামলা দায়ের করতে পারেন এবং আদালত তার ইচ্ছাধীন ক্ষমতার বলে তেমন রায় প্রদান করতে এবং চুক্তি বিলুপ্ত হিসেবে বাতিল করার নির্দেশ প্রদান করতে পারেন।'

দেওয়ানী আদালতের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার পেতে হলে যে বিষয়গুলো প্রমান করতে হয় তা হলো:

১.দলিলটি জাল, বাতিল বা বাতিলযোগ্য,

২.দলিলটি বাতিল না হলে বাদীর অপূরণীয় ক্ষতির আশংকা,

৩.আদালত ন্যায় বিচারের স্বার্থে তা বাতিল করতে সক্ষম।

এই ধারাটি ব্যাখ্যা করলে বোঝা যায় যে, বাদী যদি কোনো সম্পত্তি দখলে থাকাকালীন বিবাদী কর্তৃক বা অন্য কোনো মাধ্যমে সত্ব দখল বিহীন অবস্থায় কোনো জাল দলিল সম্পাদন করে প্রতারনার আশ্রয় নেয় তাহলে বাদী সরাসরি ৩৯ ধারা মতে দলিলটি বাতিলের আদেশ চাইতে পারে।

যিনি কোন দলিলকে জাল বা জোর পূর্বকভাবে দলিল সম্পাদিত হয়েছে বলে দাবি করবেন তাকে তার দাবির সত্যতা প্রমাণ করতে হবে। [সাক্ষ্য আইন ১০১ ধারা, ২৬ ডিএলআর ৩৯২]।

এক্ষেত্রে তামাদির মেয়াদ হল, জাল দলিল সম্পর্কে জানার ৩ বছরের মধ্যে ঐ দলিল বাতিলের মামলা করতে হাবে। নচেৎ তা তামাদি দোষে বাতিল হবে [তামদি আইন ১ম তফসিলের ৯১ অনু:]।

আর যদি বাদী ভুয়া বা জাল দলিলের মাধ্যমে তার নিজের স্বত্বাধীন সম্পত্তি থেকে বেদখল হন,  তাহলে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী স্বত্ব সাব্যস্তে খাস দখলের মামলা করতে পারে এবং আর্জির প্রার্থনায় দফায় দলিলটি বাতিল চাইতে পারে। এর সঙ্গে এই আইনের ৪২ ধারায় পৃথক ঘোষণাও চাইতে পারে।

যখন আদালত বিচার শেষে যে রায় এবং ডিক্রি প্রদান করবেন তখন তার একটি নকল সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিসে প্রেরন করতে হবে। উক্ত রায় এবং ডিক্রি নকলের কপি পেয়ে রেজিস্ট্রার অফিসার সংশ্লিষ্ট বালাম বহিতে দলিল বাতিলের বিষয়টি লিপিবদ্ধ করে রাখবেন।

দলিল বাতিলের মামলা করার জন্য কোর্ট ফি আইনের দ্বিতীয় তফসিলে ১৭(৩) অনুচ্ছেদ উল্লিখিত হারে কোর্ট ফি প্রদান করতে হবে। দলিল বাতিলের মামলার সাথে অন্য প্রতিকার যেমন দখল পাবার প্রার্থনা ও করা যাবে তবে এর জন্য অতিরিক্ত কোর্ট ফি দিতে হবে। [কোর্ট ফি আইন ৭(৪) (গ) ধারা]।

যদি জালিয়াতির প্রতিকার দেওয়ানি আইনে চাওয়া হয়, তখন দন্ডবিধি আইনে মামলা চলবে না কারণ একই বিষয়ে দুটি পৃথক আদালতে মামলা-মোকদ্দমা চলতে থাকলে তা রেস জুডিকাটা দোষে মামলা বাতিল হয়ে যাবে।  তবে জালিয়াতি-সংক্রান্ত কোনো কারণে যদি দেওয়ানি আদালতে দলিল বাতিলসহ স্বত্ব দখলের প্রতিকার কিংবা এ মর্মে ঘোষণামূলক প্রতিকার চাওয়া হয়, তবে ফৌজদারী আদালতে জালিয়াতির সাজা প্রদানের জন্য পৃথক মামলা করা যাবে কি-না, এসম্পর্কে নির্দিষ্ট বিধিবিধান রয়েছে।

ফৌজদারী কার্যবিধির ১৯৫(১) ধারানুযায়ী, 'কোনো আদালত এমন কোনো অপরাধের প্রতিকার আমলে নেবেন না, যা কোনো দলিল সম্পর্কে কোনো অপরাধ সংঘটিত করেছে বলে অভিযোগ করা হয়, যা কোনো আদালতে বিচারধীন।' এ ধারার মাধ্যমে এটাই বুঝানো হয়েছে যে, জালিয়াতি সংক্রান্ত কোনো বিচার কার্যচলাকালে আদালতের লিখিত অভিযোগ ব্যতীত কোনো দলিল জালিয়াতি-সংক্রান্ত ধারার অধীন অপরাধের বিচার অন্য আদালত করতে পারেন না।

আপনি প্রতারিত হচ্ছেন কিনা, দেখে নিন

তাহলে উপরোক্ত আলোচনায় বুঝা গেল যে, আপনি জমি কিনেন বা বাড়ি কিনেন বা দালান কিনেন কিংবা স্থাবর যেকোনো সম্পত্তি কিনেন না কেন, কেনার পূর্বেই আপনি ভালো করে দেখে নিবেন, আপনি প্রতারিত হচ্ছেন কিনা অর্থাৎ বায়া দলিল ভালো করে দেখে নেওয়া আপনার কর্তব্য। তা না হলে ক্রয় করার পরে সমূহ বিপদের সম্মুখীন হবেন।

ধন্যবাদ

Shameem Sarwar

shameem.sarwar@yahoo.com

Video জাল দলিল সনাক্ত করার উপায় এবং দলিল জালিয়াতির শাস্তি

Popular posts from this blog

সাক্ষ্য আইন (সংশোধন), ২০২২ Evidence Act (Amendment) 2022

সাক্ষ্য আইন (সংশোধন), ২০২২ ডিজিটাল রেকর্ড বা ইলেক্ট্রনিক রেকর্ড কি? ডিজিটাল রেকর্ড বা ইলেক্ট্রনিক রেকর্ডের প্রমাণ: ডিজিটাল স্বাক্ষর সনদ কি? প্রত্যয়নকারী কর্তৃপক্ষ কি? ধারা ৪৫: বিশেষজ্ঞদের মতামত ধারা ৪৫ক: শারীরিক বা ফরেনসিক প্রমাণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত ধারা ৪৭ক: ডিজিটাল স্বাক্ষর সম্পর্কে মতামত যেখানে প্রাসঙ্গিক। ধারা-৬৫ক: ডিজিটাল রেকর্ড সম্পর্কিত প্রমাণের জন্য বিশেষ বিধান ধারা-৬৫খ: ডিজিটাল রেকর্ডের গ্রহণযোগ্যতা ধারা-৬৭ক: ডিজিটাল স্বাক্ষরের প্রমাণ ধারা-৭৩ক: শারীরিক বা ফরেনসিক সাক্ষ্য হিসাবে অনুমান ধারা-৭৩খ:- অন্যদের সাথে শারীরিক বা ফরেনসিক সাক্ষ্য তুলনা, স্বীকৃত বা প্রমাণিত ধারা-৮১ক। ডিজিটাল আকারে গেজেট হিসাবে অনুমান ধারা-৮৫ক: ডিজিটাল আকারে চুক্তির অনুমান। ধারা-৮৫খ: ডিজিটাল রেকর্ড এবং ডিজিটাল স্বাক্ষরের অনুমান ধারা ৮৭গ: ডিজিটাল স্বাক্ষর সনদ সম্পর্কে অনুমান ধারা-৮৮ক: ডিজিটাল কমিউনিকেশন সম্পর্কে অনুমান ধারা-৮৯ক: শারীরিক বা ফরেনসিক সাক্ষ্য হিসাবে অনুমান। ধারা-৯০ক: পাঁচ বছরের পুরনো ডিজিটাল রেকর্ডের অনুমান। ধারা-১৪৬: জেরায় আইনসঙ্গত প্রশ্ন। সাক্ষ্য আইন (সংশোধন), ২০

Write a paragraph on Pahela Baishakh পহেলা বৈশাখ

Write a paragraph on Pahela Baishakh (পহেলা বৈশাখ) Pahela Baishakh Pahela Baishakh is the part of our culture. It is the first day in Bangla calendar. This day is celebrated throughout the country. The main programme of this day is held in Ramna Botamul. Different socio-cultural organizations celebrate this day with due solemnity. People of all sorts of ages and lives attend this function. Colourful processions are brought out. Watery rice and hilsha fish are served during this function. Women and children put on traditional dresses. The whole country wears a festive look. Different cultural programmes are arranged where singers sing traditional bangla songs. Discussion meetings are held. Radio and television put on special programmes. Newspapers and dailies publish supplementary. Fairs are held here and there on this occasion. Shopkeepers and traders arrange ‘halk hata’ and sweet-meats are distributed. In villages, people go to others’ houses and exchange greetings. Thus Pahela Baisha

Most Important Preposition List of Appropriate Prepositions A to Z

The Most Important Prepositions List of Appropriate Prepositions A to Z Appropriate Prepositions starting with the letter "A" The Most Important Appropriate Prepositions starting with A Abide by (মেনে চলা): I shall abide by the rules of this country. Abound in / Abound with ( প্রচুর) : Tigers abound in the African forests. This jungle abounds with (Or, in) tigers. Absent from (a place) (অনুপস্থিত থাকা): He was absent from the parents meeting called by the principal. Absorbed in (মগ্ন): He is absorbed in writing his biography. Abstain from (বিরত থাকা): I shall abstain from doing any wrong with others. Abide with (সঙ্গে থাকা): He abides with his parents in the USA. Abide in (বাস করা): I abide in Narayangonj. Abound with (পূর্ণ থাকা): The Padma abounds with hilsa, a very tasty fish. Abhorance of (ঘৃণা): A sinner has no abhorance of sin. Abhorent to (ঘৃণা): Smoking is abhorent to me. Access to (প্রবেশাধিকার): I have free access to the manager of this company. Accompanied by a