- Get link
- X
- Other Apps
বৈরী সাক্ষী কাকে বলে বৈরী সাক্ষীর সাক্ষ্যের মূল্যায়ন কতটুকু
(Hostile
witness) কাকে বলে? বৈরী সাক্ষীর সাক্ষ্যের মূল্যায়ন কতটুকু? কোন পক্ষ কি তার
নিজ সাক্ষীকে জেরা করতে পারে? যদি পারে তবে কিভাবে? জেরার সময় আইনসংগত কোন কোন প্রশ্ন করা যায় অথবা সাক্ষীর বক্তব্য
বহির্ভুত অতিরিক্ত জেরা করা যায় কি না? সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে অভিযোগ আনয়নের পদ্ধতি কি? বিচারিক কার্যক্রমে কিছু প্রশ্ন কেন করা যায় না?
বৈরী সাক্ষী (Hostile witness) কাকে বলে:
সাক্ষ্য
আইনে বৈরী সাক্ষ্যের
কোন সংজ্ঞা প্রদান করা হয় নি। ১৫৪ ধারা পর্যালোচনা করে বলা যায়-মামলার পক্ষগণ সাধারণত তাদের বক্তব্যের
সমর্থনে সাক্ষী হাজীর করেন। কিন্তু কখনো কখনো দেখা যায়, যে পক্ষ সাক্ষী হাজীর
করেন সাক্ষী সেই পক্ষের সমর্থন না করে বিপক্ষকে সমর্থন
করেন।
এটি হলো বৈরী সাক্ষী। অর্থাৎ বলা যায়- সাক্ষী যদি নিজ পক্ষ ত্যাগ করে অন্য পক্ষের সমর্থনে
সাক্ষ্য প্রদান করে তাহলে তাকে বৈরী সাক্ষী বলে।
বৈরী সাক্ষীর সাক্ষ্যের মূল্যায়ন:
অনেক
ক্ষেত্রে সাক্ষী নিজ পক্ষ ত্যাগ করে অন্য পক্ষের সমর্থনে সাক্ষ্য প্রদান করে, একে
বৈরী সাক্ষী
বলে। যদিও আদালতে এই সাক্ষীর গুরুত্ব নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে তবুও বৈরী সাক্ষীকে
ছোট করে দেখা যায় না। কয়েকটি মামলার নজীর পর্যালোচনা করলে বৈরী সাক্ষীর মূল্যায়ন
করা যাবে।
ইউনুস বনাম রাষ্ট্র মামলা : এই
মামলায় হাইকোর্ট বলেন যে, কোন সাক্ষীকে বৈরী সাক্ষী হিসেবে
ঘোষণা করলে তার সকল সাক্ষ্য মিথ্যা হয়ে যায় না। কারণ সাক্ষী কোন এক পয়েন্টে মিথ্যা
বললে অন্যান্য পয়েন্টেও মিথ্যা বলবে এমনটি যুক্তিযুক্ত নয়। সুতরাং আদালতকে বৈরী সাক্ষীর
সাক্ষ্যকে মূল্যায়ন করতে হবে।
সুরুজ মিয়া বনাম রাষ্ট্র : কোন
সাক্ষীকে বৈরী সাক্ষী হিসেবে ঘোষণা করে জেরা করলেই তার বক্তব্য
অগ্রাহ্য হবে সাক্ষ্য আইনে এমন কোন নিয়ম নেই। আবার বৈরী সাক্ষীর সম্পূর্ণ সাক্ষ্য বা
অংশবিশেষ গ্রহণ করার রীতিও এই আইনে নেই। এক্ষেত্রে আদালতকে বৈরী সাক্ষীর সাক্ষ্যকে
পরীক্ষা করে দেখতে হয়।
ইসলাম বনাম রাষ্ট্র: কোন
সাক্ষীকে বৈরী সাক্ষী ঘোষণা করার কারণেই শুধু তার সাক্ষ্য মূল্যহীন
হয়ে যায় না। তবে অন্যান্য সাক্ষীর সাক্ষ্যের সাথে বৈরী সাক্ষীর সাক্ষ্য বিবেচনা
করার পর তা
মূল্যহীন হতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়- বৈরী সাক্ষীর সাক্ষ্য বিবেচনা
করে আদালত যদি তা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করেন তাহলে গ্রহণ করতে পারেন। আর
বিশ্বাসযোগ্য মনে না হলে তা গ্রহণ নাও করতে পারেন।
কোন পক্ষ কি তার নিজ সাক্ষীকে জেরা করতে পারে:
মামলার পক্ষগণ সাধারণত তাদের বক্তব্যের সমর্থনে
সাক্ষী হাজীর করেন। কিন্তু কখনো কখনো দেখা যায় যে পক্ষ সাক্ষী হাজীর করেন
সাক্ষী সেই পক্ষের সমর্থন না করে বিপক্ষকে সমর্থন করেন।
এটি হলো বৈরী সাক্ষী। এই ধরনের সাক্ষীকে আদালতের অনুমতি নিয়ে জেরা করা যায়।
সাধারণত বিপক্ষের সাক্ষীকে যে ধরনের প্রশ্ন করা যায়, বৈরী সাক্ষীকেও সেই ধরনের প্রশ্ন
করা যায়। কোন প্রলোভন বা বিবেক তাড়িত হয়ে সত্যের পক্ষে
অবস্থান নেয়ার কারণে বা অন্য কোন কারণে সাক্ষী অনেক সময় নিজের পক্ষকে
সমর্থন না করে অন্য পক্ষের সমর্থনে বিবৃতি প্রদান করেন।
সাধারণত পূর্ব থেকে এই ধরনের সাক্ষীকে বোঝা যায় না। কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর পর ২/৩ টি
প্রশ্ন করলেই বৈরী সাক্ষীকে চেনা যায়। অর্থাৎ তাকে প্রশ্ন করা হলে সে নিজের পক্ষে উত্তর
না দিয়ে অন্য পক্ষের সমর্থনে উত্তর দিতে থাকে। এ পর্যায়ে নিজের সাক্ষীকে বৈরী
সাক্ষী হিসেবে
ঘোষণা করতে হয় এবং আদালতের অনুমতি নিয়ে তাকে জেরা করা যায়।
নিজের সাক্ষীকে জেরা করার সময় কোন পদ্ধতি
অবলম্বন করতে হয় :
কোন মামলায় বাদী পক্ষ যদি নিজের পক্ষের সাক্ষীর
জবানবন্দী নেয়, তাহলে বিবাদী পক্ষ উক্ত সাক্ষীকে জেরা করার অধিকার লাভ করে।
যদি বিবাদী পক্ষ বাদী পক্ষের সাক্ষীকে জের না করে
তাহলে আদালত ধরে নিবেন যে, বিবাদী পক্ষ বাদী পক্ষের জবানবন্দী মেনে নিয়েছেন। বাদীর
জবানবন্দী নেয়া হয় সাধারণত মামলার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে। তবে তাকে জেরা করার
সময় উক্ত বিষয়ের বাইরেও জেরা করা হয়। এক্ষেত্রে আইনগত বাধা নেই। সুতরাং বলা যায়
একজন সাক্ষীকে তার জেরাতে বিবৃত ঘটনার বাইরেও প্রশ্ন করা যায়। তঁবে সাক্ষীকে অপমানজনক
প্রশ্ন করা যাবে না। এছাড়া নিম্নোক্তভাবে সাক্ষীকে জেরা করা যায় বা প্রশ্ন করা যায় :
সাক্ষ্য আইনের ১৪৩ ধারা অনুযায়ী- জেরার সময়
সাক্ষীকে ইংগিতবাহী প্রশ্ন করা যায়। তবে একাধিক ইংগিতবাহী প্রশ্ন একত্র
করে একটি প্রশ্ন আকারে করা যাবে না।
সাক্ষ্য আইনের ১৪৬ ধারা অনুযায়ী- জবানবন্দীর
সময় সাক্ষী যে সাক্ষ্য দিয়াছেন, সে সম্পর্কে
প্রশ্ন করা যায় আবার উক্ত সাক্ষীর সমাজিক মর্যাদা জানার জন্য বা তার বক্তব্যের সত্যতা
পরীক্ষার জন্য অন্য প্রশ্ন করা যায়।
সাক্ষ্য আইনের ১৫১ ধারা অনুযায়ী- অপমানজনক বা
কুৎসামূলক বা বিরক্তিকর প্রশ্ন করা যাবে না।
সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে অভিযোগ আনয়নের পদ্ধতি:
সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে অভিযোগ আনয়নের
পদ্ধতি সম্পর্কে সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ ধারায় বিধান বর্ণিত হয়েছে। উক্ত
ধারা অনুযায়ী- যে সকল উপায়ে সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে
অভিযোগ আনা যায় তা নিম্নরূপ :
(১) বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে সাক্ষ্যে দেওয়ানোর
মাধ্যমে : যে সকল ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রদান করবেন,
তারা যে বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি নয় বা বিশ্বাসের অযোগ্য ব্যক্তি এই বিষয়ে যাদের জানা
আছে এমন বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে সাক্ষ্য দেওয়ানোর মাধ্যমে সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা
সম্পর্কে অভিযোগ আনা যায়।
(২) পূর্বের বক্তব্যের বিরোধী প্রমাণের মাধ্যমে :
সাক্ষীর বর্ণনা যদি তার পুর্বের কোন বক্তব্যের
বিরোধী হয় তাহলে সাক্ষীর বিশ্বাসযােগ্যতা সম্পর্কে অভিযোগ আনা যায়।
(৩) সাক্ষী প্রলোভনে পড়েছেন তা প্রমাণের মাধ্যমে
: সাক্ষী ঘুষ নিয়েছেন বা অন্য কোন প্রলোভনে
সম্মত হয়েছেন এরূপ প্রমাণের মাধ্যমে সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে অভিযোগ
আনা যায়।
(৪) সাক্ষীর চরিত্র খারাপ তা প্রমাণের মাধ্যমে : মামলা
যদি ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা সংক্রান্ত হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট নারী
সাধারণভাবেই দুশ্চরিত্রা তা প্রমাণের মাধ্যমে সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা
সম্পর্কে অভিযোগ আনা যায়।
বিচারিক কার্যক্রমে কিছু প্রশ্ন কেন করা যায় না :
সাক্ষ্য আইনের ১২১ থেকে ১৩১ ধারা এবং ১৪৮-১৪৯
ধারা অনুযায়ী- আইনসম্মত প্রশ্ন হলেও বা প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হলেও একজন
সাক্ষীকে কিছু কিছু প্রশ্ন করা যায় না বা কিছু প্রশ্নের উত্তরদানে বাধ্য
করা যায় না। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো :
(১) বিচারকের রায় : কোন
বিচারক যদি সাক্ষী হন তাহলে তিনি বিচারকার্য পরিচালনার সময় তাঁর
আচারণ বা তার বিচার সম্পর্কীয় কান প্রশ্নের উত্তর প্রদানে তাঁকে বাধ্য করা যযায না।
[ধারা-১২১]
স্বামী-প্ত্রীর পত্রালাপ : বিবাহ
বলবৎ থাকাকালীন সময়ে স্বামী-স্ত্রীর কোন তথ্য সম্পর্কে প্রশ্ন
করা যায় না। [ধারা-১২২]
(৩) রাষ্ট্রীয় চিঠি-পত্র :
রাষ্ট্রীয় কোন গোপন চিঠি-পত্র সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধান কর্মকর্তার
অনুমতি ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা যায় না। [ধারা-১২৩, ১২৪]
(৪) পুলিশের কাজ :
পুলিশের সংগৃহীত তথ্যের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করা যায় না। [ধারা-১২৫]
(৫) ম্যাজিষ্ট্রেট এর কাজ : ম্যাজিষ্ট্রেট
এর সংগৃহীত তথ্যের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করা যায় না। [ধারা-১২৫]
(৬) রাজস্ব অফিসারের কাজ : রাজস্ব
অফিসারের সংগৃহীত তথ্যের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করা যায়
না। [ধারা-১২৫]
(৭) পেশা সম্পর্কিত তথ্য আদান-প্রদান : অ্যাডভোকেট,
ব্যারিস্টার, এ্যাটর্নি ইত্যাদি আইনজীবী হিসেবে তাদের মক্কেলদের নিকট
থেকে যে সকল তথ্য পেয়ে থাকেন তা মক্কেলের অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করতে
পারেন না। [ধারা-১২৬]
(৮) দোভাষীর সাথে তথ্য আদান-প্রদান :
দোভাষীর ক্ষেত্রেও ১২৬ ধারা প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ দোভাযী
যে সকল তথ্য পেয়ে থাকেন তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করতে পারেন
না। [ধারা-১২৬]
(৯) আইন উপদেষ্টার সাথে তথ্য আদান-প্রদান : কোন মক্কেল
তার আইনজীবীর সাথে কি পরামর্শ করেছেন বা উক্ত মক্কেলের
নিকট থেকে আইনজীবী যে সকল দলিল দেখেছেন মক্কেলের অনুমতি ছাড়া সেই সম্পর্কে
উক্ত আইনজীবীকে প্রশ্ন করা যায় না। তবে বেআইনী সংবাদ বা কোন অপরাধ
বা প্রতারণা পরিলক্ষিত হলে আইনজীবী তা প্রকাশ করতে
পারেন । [ধারা-১২৯]
(১০) মামলার পক্ষ নয় এমন ব্যক্তির দলিল উপস্থাপন
: মামলার পক্ষ নয় এমন ব্যক্তিকে বা তার
প্রতিনিধিকে দলিল দাখিল করতে বাধ্য করা যায় না। তবে যিনি দলিল দাখিল করাতে
চান তার সাথে লিখিত কোন সম্মতিপত্র থাকলে উক্ত দলিল দাখিল করতে বাধ্য করা
যায়। [ ধারা-১৩০]
(১১) বিশেষ দলিল উপস্থাপন : কোন
ব্যক্তির নিকট যদি এমন দলিল থাকে যে, উক্ত দলিল অন্যের
নিকট থাকলেও তা দাখিল করতে তিনি অস্বীকার করার অধিকারী হতেন, তাহলে শেষের
ব্যক্তি সম্মতি প্রদান না করলে উক্ত দলিলটি দাখিল করার জন্য প্রথম
ব্যক্তিকে(অর্থাৎ যার নিকট দলিল রয়েছে) বাধ্য করা যাবে না। [ধারা-১৩১]
(১২) চরিত্রকে কটাক্ষ করে প্রশ্ন : কোন
ব্যক্তির চরিত্রকে কটাক্ষ করে প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে আদালত
স্বাধীন নয়। এক্ষেত্রে আদালতের অধিকার সীমিত। [ধারা-১৪৮-১৪৯]