- Get link
- X
- Other Apps
এস্টোপেল Estoppel প্রতিবন্ধ কাকে বলে? এর উপাদান কি এস্টোপেল প্রকারভেদ প্রশ্ন উত্তর সাক্ষ্য আইন ১৮৭২
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ কাকে বলে? এর উপাদান কি কি? এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধের প্রকারভেদ বা সাক্ষ্য আইনের ১১৫ ধারা অনুযায়ী প্রতিবন্ধকতা নীতির ব্যাখ্যা। সাক্ষ্য আইনে এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধের গুরুত্ব। এস্টোপেল ও রেস-জুডিকাটা বা দোবারা নীতির পার্থক্য কি। একজন নাবালক কি চুক্তি পরিহার করার জন্য তার নাবালকত্বের অযুহাত প্রদর্শন করতে প্রতিবন্ধকিত হবে? কোন্ কোন্ পক্ষগণের বিরুদ্ধে এস্টোপেল নীতি বলবৎ হবে?
উত্তর:
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ (Estoppel) কাকে বলে :
সাক্ষ্য আইনের ১১৫ ধারা অনুযায়ী- যখন কোন ব্যক্তি তার কোন ঘোষণা দ্বারা বা কোন কাজ দ্বারা বা কোন কাজ থেকে বিরতি দ্বারা অন্য কোন ব্যক্তিকে কোন কিছু সত্য বলে বিশ্বাস করিয়েছেন এবং সেই বিশ্বাসের ভিত্তিতে কাজ করতে দিয়েছেন তখন তাদের মধ্যে বা তাদের প্রতিনিধির মধ্যে কোন মামলায় প্রথম ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধি উক্ত বিষয়ের সত্যতা অস্বীকার করতে পারবেন না। এটিই হলো এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ।
উদাহরণ : ‘ক’ ১০১ নং দাগের একটি জমি ‘খ’ এর নিকট এই বলে মূল্যের বিনিময়ে বিক্রি করে যে, জমিটি বিক্রি করার অধিকার তার আছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে উক্ত জমিটি তার পিতার। কিছুদিন পর ‘ক’ এর পিতা মৃত্যুবরণ করলে উত্তরাধিকার সূত্রে জমিটি ‘ক’ এর মালিকানায় আসে। এ সময় ‘খ’ জমির মালিকানা হস্তান্তর করতে বললে ‘ক’ তা অস্বীকার করে। সে জানায় জমিটি বিক্রির সময় তার মালিকানা স্বত্ব ছিল না। এক্ষেত্রে এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ নীতি প্রযােজ্য হবে।
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধের এর উপাদান:
নিম্নে এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধের উপাদান বা মতবাদ বা শর্ত উল্লেখ করা হলাে :
(১) একাধিক পক্ষ থাকতে হবে : এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ নীতি কার্যকর করতে হলে অবশ্যই একাধিক পক্ষ থাকতে হবে।
(২) ঘোষণা, কাজ বা বিরতি : কোন ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধি কর্তৃক কোন ঘোষণা, কাজ বা কাজ থেকে বিরতি থাকতে হবে।
(৩) অন্য পক্ষের নিকট ঘোষণা প্রদান : কোন ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধি কর্তৃক কোন ঘোষণা কাজ বা কাজ থেকে বিরতি অপর কোন ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধির নিকট করতে হবে।
(৪ ) পরবর্তী ঘোষণা পূর্বের ঘোষণার পরিপন্থি : কোন ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধি পরবর্তীতে এমন দাবী করবেন যা তার পূর্বের ঘোষণার পরিপন্থি।
(৫) অন্য পক্ষকে প্রভাবিত করা : কোন ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধি কর্তৃক কান ঘোষণা, কাজ বা কাজ থেকে বিরতি দ্বারা অপর কোন ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধিকে প্রভাবিত করতে হবে।
(৬) ঘোষণা অনুযায়ী অন্য পক্ষকে কাজ করতে হবে : কোন ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধি কর্তৃক কোন ঘোষণা অনুযায়ী অপর পক্ষকে কাজ করতে হবে।
(৭ ) অস্পষ্টতা না থাকা : এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধনীতি স্পষ্ট হতে হবে। অস্পষ্টতা বা অনিশ্চয়তাবোধক বক্তব্য থাকলে এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধনীতি কার্যকর হবে না।
(৮) প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে সুবিধা গ্রহণকারীর অজ্ঞতা : যিনি এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধনীতির সুবিধা গ্রহণ করতে চান তাকে প্রকৃত ঘটনা বা প্রকৃত সত্য সম্পর্কে অজ্ঞতা থাকতে হবে এবং সুবিধা গ্রহণকারীকেই প্রমাণ করতে হবে যে তিনি প্রকৃত সত্য জানতেন না।
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধের প্রকারভেদ অথবা সাক্ষ্য আইনের ১১৫ ধারা অনুযায়ী প্রতিবন্ধকতা নীতির ব্যাখ্যা:
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ সাধারণত তিনভাবে হতে পারে। যেমন : (১) এস্টোপেল বাই রেকর্ড, (২) এস্টোপেল বাই ডীড, (৩) এস্টোপেল ইন পেইস।
নিম্নে এই নীতিগুলির ব্যাখ্যা প্রদান করা হলাে :
(১) এস্টোপেল বাই রেকর্ড : এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ নীতির এই নীতিটি এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতের রায় থেকে উৎপত্তি হয়। যেমন : একই রেকর্ড বার বার দাখিল করা যায় না। একবারই দাখিল করা যায়। মামলার বিচার চলাকালীন সময়ে পক্ষগণ যেভাবে বলেছেন তার উপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত নিম্পত্তি হলে পরবর্তীতে ঐ বিষয়ে দ্বিতীয়বার দাবী উত্থাপন করা যায় না।
(২) এস্টোপেল বাই ডীড : এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ নীতির এই নীতিটি চুক্তি ছাড়া অন্য কিছু থেকে উত্থাপিত হয়। যেমন : মিথ্যা বর্ণনা দ্বারা কোন দলিল দাখিল করা হলো এবং পরবর্তীতে সঠিক দলিল দাখিল করা হলো। এক্ষেত্রে এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ নীতির সম্মুখীন হতে হবে।
(৩) এস্টোপেল ইন পেইস : এস্টোপেল বা প্রতিবদ্ধ নীতির এই নীতিটি দলিল বহির্ভুত বিষয় থেকে উত্থাপিত হয়। এটি ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে এবং বিভিন্ন মতবাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়।
সাক্ষ্য আইনে এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধের গুরুত্বঃ
মানুষ সব সময় সত্য কথা বলে এটিই ধরে নেয়া হয়। কোন মানুষ এক সময় এক কথা বলবে আবার পরবর্তীতে ঐ একই বিষয়ে ভিন্ন কথা বলবে এটি কেউ আশা করে না বা এটি কারো কাম্য নয়। বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে আমাদেরকে অনেক কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে যে ব্যক্তির কথা বা ঘােষণায় বিশ্বাস করে কোন কাজ করা হয় সেই ব্যক্তির দায়িত্ব হলাে তার ঘোষণার উপর অটল থাকা। তিনি যদি পরবর্তীতে তার পূর্বের ঘোষণা অস্বীকার করেন তাহলে ক্ষতিগ্রন্থ ব্যক্তি এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধনীতির আশ্রয় নিয়ে প্রতিকার লাভ করতে পারেন। এক্ষেত্রে ঘোষণাকারীকে তার পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী কাজ করতে হয়। সুতরাং বলা যায় সাক্ষ্য আইনে এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধনীতির গুরুত্ব অপরিসীম।
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ ও রেস-জুড়িকাটা বা দোবারা নীতির পার্থক্য।
নিম্নে এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ ও রেস-জুডিকাটার পার্থক্য উল্লেখ করা হলো :
(১) সংজ্ঞাগত পার্থক্য :
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ
কোন ব্যক্তি তার কোন ঘোষণা দ্বারা বা কোন কাজ দ্বারা বা কোন কাজ থেকে বিরতি দ্বারা অন্য কোন ব্যক্তিকে কোন কিছু সত্য বলে বিশ্বাস করিয়েছেন এবং সেই বিশ্বাসের ভিত্তিতে কাজ করতে দিয়েছেন তখন তাদের মধ্যে বা তাদের প্রতিনিধির মধ্যে কোন মামলায় প্রথম ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধি উক্ত বিষয়ের সত্যতা অস্বীকার করতে পারবেন না। এটিই হলো এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ।
রেস-জুডিকাটা বা দোবারা নীতি
কোন বিষয় একবার মামলায় নিস্পত্তি হয়ে গেলে সেই বিষয় পুনরায় মামলা করা যাবে না। এটি হলো রেস-জুডিকাটা বা দোবারা নীতি
(২) প্রতিশব্দগত পার্থক্য :
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধকে ইংরেজিতে Estoppel বলে।
রেস-জুডিকাটা বা দোবারা নীতি
রেস-জুডিকাটা বা দোবারা নীতিকে ইংরেজিতে Res Judicata বলে।
(৩) ভাষাগত পার্থক্য :
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ
এস্টোপেল শব্দটি ফরাসী ভাষা থেকে উদ্ভুত।
রেস-জুডিকাটা বা দোবারা
রেস-জুডিকাটা বা দোবারা নীতি একটি রোমান শব্দ।
(৪) ধারাগত পার্থক্য :
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ সাক্ষ্য আইনের ১১৫-১১৭ ধারায় উল্লিখিত হয়েছে।
রেস-জুডিকাটা বা দোবারা নীতি
রেস-জুডিকাটা বা দোবারা নীতি দেওয়ানি কার্যবিধির ১১ ধারায় উল্লিখিত হয়েছে।
(৫) প্রতিষ্ঠাগত পার্থক্য :
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ ব্যক্তি স্বার্থের উপর প্রতিষ্ঠিত।
রেস-জুডিকাটা বা দোবারা নীতি
রেস-জুড়িকাটা বা দোবারা নীতি জনস্বার্থের উপর প্রতিষ্ঠিত।
(৬) বাধাগত পার্থক্য :
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ নীতি কোন পক্ষকে তাদের ঘোষণার পরিপন্থি কিছু প্রমাণ করতে বাধা দেয়।
রেস-জুডিকাটা বা দোবারা নীতি
রেস-জুডিকাটা বা দোবারা নীতি আদালতকে বিচার্য বিষয়ের এখতিয়ার বহির্ভুত করে।
(৭) নীতিগত পার্থক্য :
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধনীতি অনুযায়ী কোন ব্যক্তি এক এক সময় এক এক কথা বলতে পারে না।
রেস-জুডিকাটা বা দোবারা নীতি
রেস-জুডিকাটা বা দোবারা নীতি অনুযায়ী কোন ব্যক্তিকে একই বিষয়ে একাধিকবার বিচারের সম্মুখীন করা যায় না।
(৮) মান্যগত পার্থক্য :
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ নীতিতে কোন ব্যক্তি পরবর্তীতে যা সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়,তা করতে দেয় না।
রেস-জুডিকাটা বা দোবারা নীতি
রেস-জুডিকাটা বা দোবারা নীতিতে পূর্ববর্তী রায়ের সত্যতা চূড়ান্তভাবে মানা হয়।
(৯) প্রকৃতিগত পার্থক্য :
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধনীতি কোন পক্ষের মুখ বন্ধ করে দেয়।
রেস-জুডিকাটা বা দোবারা নীতি
রেস-জুডিকাটা বা দোবারা নীতি সাক্ষ্য প্রদানের একটি নিয়ম।
(১০) অবস্থানগত পার্থক্য :
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ
এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ নীতি কোন ব্যক্তির পূর্বের ঘোষণা বা কাজের অবস্থান পরিবর্তন করতে দেয় না।
রেস-জুডিকাটা বা দোবারা নীতি
রেস-জুডিকাটা বা দোবারা নীতি নিম্পত্তিকৃত বিষয় আদালতকে তদন্ত করতে দেয় না।
একজন নাবালক কি চুক্তি পরিহার করার জন্য তার নাবালকত্বের অযুহাত প্রদর্শন করতে প্রতিবন্ধকিত হবেঃ
একজন নাবালক কোন চুক্তি পরিহার করার জন্য তার নাবালকত্বের অযুহাত প্রদর্শন করতে প্রতিবন্ধকিত হবে কিনা তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
নাবালক সাধারণত কোন চুক্তি পালনে বাধ্য নয়। অর্থাৎ নাবালককে চুক্তি পালন করতে বাধ্য করা যায় না। এমনকি নাবালক যদি প্রতারণার মাধ্যমে তার নাবালকত্বের পরিচয় গোপন করে কোন চুক্তি সম্পাদন করে তবুও তাকে তা পালন করতে বাধ্য করা যায় না। নাবালককে কোনভাবেই তার নাবালকত্বের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা যায় না। সুতরাং একজন নাবালক কোন চুক্তি পরিহার করার জন্য তার নাবালকত্বের অযুহাত প্রদর্শন করতে প্রতিবন্ধকিত হবে না।
যে সকল পক্ষগণের বিরুদ্ধে এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ মতবাদ বলবৎ হবে :
কোন্ কোন্ পক্ষগণের বিরুদ্ধে এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ মতবাদ বলবৎ হবে তা সাক্ষ্য আইনে সুস্পষ্ট লিপিবদ্ধ নেই। তবে এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ এর সংজ্ঞা পর্যালোচনা করে বলা যায় নিম্নের পক্ষগণের বিরুদ্ধে এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ মতবাদ বলবৎ হবে :
(১) সংজ্ঞা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট পক্ষের বিরুদ্ধে : যখন কোন ব্যক্তি তার কোন ঘোষণা দ্বারা বা কোন কাজ দ্বারা বা কোন কাজ থেকে বিরতি দ্বারা অন্য কোন ব্যক্তিকে কোন কিছু সত্য বলে বিশ্বাস করিয়েছেন এবং সেই বিশ্বাসের ভিত্তিতে কাজ করতে দিয়েছেন তখন তাদের মধ্যে বা তাদের প্রতিনিধির মধ্যে কোন মামলায় প্রথম ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধি উক্ত বিষয়ের সত্যতা অস্বীকার করতে পারবেন না। অর্থাৎ এক্ষেত্রে এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ মতবাদ বলবৎ হবে।
(২) রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে : রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ মতবাদ বলবৎ হবে।
(৩) অগ্রক্রয়ের ক্ষেত্রে : অগ্রক্রয়ের ক্ষেত্রে এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ মতবাদ বলবৎ হবে।
(৪) কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে : কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে এস্টোপেল বা প্রতিবন্ধ মতবাদ বলবৎ হবে।
Video এস্টোপেল Estoppel প্রতিবন্ধ কাকে বলে? এর উপাদান কি এস্টোপেল প্রকারভেদ