- Get link
- X
- Other Apps
অনুমান কাকে বলে? অনুমানের গুরুত্ব কতটুকু ? ত্রিশ বছরের পুরাতন দলিলের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে অনুমান কি?
বিভিন্ন প্রকার অনুমান অর্থাৎ অনুমান করতে পারে, অনুমান করবেন এবং চূড়ান্ত প্রমাণের ব্যাখ্যা।
অনুমান (Presumption) কাকে বলে:
সাক্ষ্য আইনের অনুমানের সুনির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা
প্রদান করা হয়নি। তবে বিভিন্ন পর্যালোচনায় বলা
যায়-
প্রমাণ ছাড়া কোন বিষয় সাময়িকভাবে ধরে নেয়া
হলে বা মেনে নেয়া হলে তাকে অনুমান (Presumption) বলে।
অনুমানের গুরুত্ব:
প্রমাণ ছাড়া কোন বিষয় সাময়িকভাবে ধরে নেয়া বা
মেনে নেয়া হলো অনুমান। কিছু অনুমান খণ্ডনযোগ্য আবার কিছু অনুমান অখণ্ডনীয় হয়। যে
অনুমানগুলি অখণ্ডনীয় সেগুলি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের জন্য চূড়ান্ত প্রমাণ হিসেবে
গণ্য হয়। আদালত অখণ্ডনীয় অনুমানের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করতে পারেন। অন্যদিকে খণ্ডনযোগ্য অনুমান যদি সাক্ষ্য ছাড়া মিথ্যা প্রমাণ
করা না
যায় তাহলে এই ধরনের অনুমানের উপর ভিত্তি করেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। সুতরাং
বলা যায় অনুমানের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। কারণ অনেক ক্ষেত্রে আদালত ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার
জন্য অনুমানের উপর নির্ভর করেন।
ত্রিশ বছরের পুরাতন দলিলের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে অনুমান:
সাক্ষ্য আইনের ৯০ ধারায় ত্রিশ বছরের পুরাতন দলিল
সম্পর্কে বিধান বর্ণিত হয়েছে।
উক্ত ধারার বিধান অনুযায়ী- ত্রিশ বছরের পুরাতন
দলিল যার নিকট থাকার কথা সেই ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধি যদি তা হাজীর করেন
তাহলে আদালত তা যথার্থ বলে অনুমান করতে পারেন। অর্থাৎ
যার হেফাজতে ত্রিশ বছরের দলিল থাকার কথা সেই ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধি যদি উক্ত দলিল
আদালতে হাজীর করেন তাহলে আদালত উক্ত দলিলের হস্তাক্ষর, স্বাক্ষর, প্রত্যয়ন, সম্পাদনের
পদ্ধতি সব কিছুই আইনসঙ্গতভাবে হয়েছে বলে অনুমান করে নিবেন। এই
ধরনের দলিল অন্যান্য দলিলের ন্যায় সাক্ষী দ্বারা প্রমাণ করতে হয় না। শুধু সঠিক
ব্যক্তির হেফাজতে
ছিল তা প্রামাণ করলেই হয়।
বিভিন্ন প্রকার অনুমান আলোচনা অথবা অনুমান করতে পারে, ‘অনুমান
করবেন, চূড়ান্ত প্রমাণ ব্যাখ্যা:
সাক্ষ্য আইনে অনুমানের সুনির্দিষ্ট কোন
শ্রেণিবিভাগ করা হয় নি। তবে নিম্নোক্তভাবে অনুমানের প্রকারভেদ
আলোচনা করা যায় : (১) খণ্ডনীয় অনুমান, (২) অথণ্ডনীয় অনুমান বা চূড়া্ন্ত প্রমাণ।
(১) খন্ডনীয় অনুমান: যে
অনুমানকে খন্ডন করা যায় তাকে খন্ডনীয় অনুমান বলে। অন্যভাবে বলা
যায়- মিথ্যা প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত যে অনুমান সত্য বলে ধরা হয় তাকে খণ্ডনীয়
অনুমান বলে।
খণ্ডনীয় অনুমানকে দুইভাগে ভাগ করা যায় : (ক) অনুমান
করতে পারে, (খ) অবশ্যই অনুমান করবেন।
(ক) অনুমান
করতে পারে : সাক্ষ্য আইনের যেখানে এইরূপ বিধান আছে যে, আদালত কোন
বিষয় ধরে নিতে পারেন, সেখানে উক্ত বিষয় মিথ্যা প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত আদালত
তা সত্য বলে ধরে নিবেন। এটি হলো অনুমান করতে পারে।
নিম্নের বিষয় আদালত অনুমান করতে পারেন :
(i)বিদেশী
আদালতের প্রত্যায়িত অনুলিপি: বিদেশী আদালতের প্রত্যায়িত অনুলিপি
আমাদের দেশের আদালত যথার্থ বলে অনুমান করতে
পারেন।
(ii) পুস্তক
বা মানচিত্র বা তালিকা সম্পর্কে অনুমান :
জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়ের তথ্য প্রমাণের জন্য পুস্তক বা মানচিত্র বা কোন
তালিকা আদালতে দাখিল করা হলে আদালত তা যথার্থ বলে অনুমান করতে পারেন।
(iii) টেলিগ্রাফ
সম্পর্কে অনুমান: টেলিগ্রাফ অফিস থেকে যে তারবার্তা প্রেরণ করা হয়
আদালত তা যথার্থ বলে অনুমান করতে পারেন।
(iv) ত্রিশ
বছরের পুরাতন দলিল সম্পর্কে অনুমান : ত্রিশ বছরের
পুরাতন দলিল যার নিকট
থাকার কথা সেই ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধি যদি তা হাজীর করেন তাহলে আদালত
তা যথার্থ বলে অনুমান করতে পারেন।
(v)কতিপয়
বিষয় সম্পর্কে অনুমান: সাধারণ বা প্রাকৃতিক ঘটনাবলী, মানবিক আচরণ,
সরকারি বা বেসরকারি যে সকল কাজ ঘটা সম্ভব আদালত তা যথার্থ বলে
অনুমান করতে পারেন।
(খ) অবশ্যই ‘অনুমান করবেন : সাক্ষ্য আইনের যেখানে এইরূপ বিধান
আছে যে, আদালত
কোন বিষয় অবশ্যই সত্য বলে ধরে নিবেন, সেখানে উক্ত বিষয় মিথ্যা প্রমাণিত না
হওয়া পর্যন্ত আদালত তা সত্য বলে ধরে নিবেন। নিম্নের বিষয় আদালত অবশ্যই অনুমান
করবেন :
(i)
সহিমোহরযুক্ত নকল : আদালত
কোন সহিমোহরযুক্ত নকল, দলিলকে মূল দলিলের অবিকল নকল বলে অবশ্যই ধরে নিবেন।
(ii)
অপরাধ স্বীকারোক্তি : অভিযুক্ত
ব্যক্তি যদি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ স্বীকার করে নেয়
তাহলে আদালত তা অবশ্যই সত্য বলে অনুমান করবেন।
(iii)
ইংল্যান্ডে ও আয়ারল্যান্ডে
গৃহীত দলিল : ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডে সাক্ষ্যরূপে ব্যবহৃত
হয় এমন দলিল সত্য বলে আমাদের দেশের আদালত অবশ্যই অনুমান করবেন।
(iv)
মানচিত্র বা নকশা : সরকারী
তত্ত্বাবধানে প্রণীত মানচিত্র বা নকশা অবশ্যই আদালত
সঠিক বলে অনুমান করবেন।
(v)পুস্তক
বা গেজেট : সরকারী তত্ত্বাবধানে প্রণীত পুস্তক বা গেজেট
অবশ্যই আদালত
সঠিক বলে অনুমান করবেন
(v)
পাওয়ার অব এটর্নি (আম মোক্তারনামা)
: কোন পাওয়ার অব এটর্নি যদি নোটারী পাবলিক
বা আদালত বা জজ বা ম্যাজিষ্ট্রেট বা সরকারের কোন প্রতিনিধির সম্মুখে
সম্পাদিত হয় তাহলে আদালত তা অবশ্যই সত্য বলে অনুমান করবেন।
(vi)&
দাখিল হয়নি এমন দলিল :
আইনসঙ্গতভাবে নোটিশ দেয়া সত্ত্বেও যে দলিল দাখিল করা হয়নি এরূপ দলিল আইন
অনুযায়ী সম্পাদিত বলে আদালত অবশ্যই অনুমান করবেন।
(vil) দন্ডবিধির
সাধারণ ব্যতিক্রম: যদি
কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দন্ডবিধির সাধারণ ব্যতিক্রমের মধ্যে পড়ে তাহলে
তা প্রমাণের দায়িত্ব অভিযুক্ত ব্যক্তির। অন্যথায় আদালত সাধারণ ব্যতিক্রম
অনুপস্থিত বলে অবশ্যই ধারণা করবেন।
২) অখণ্ডনীয় অনুমান বা চূড়ান্ত প্রমাণ: যা
মিথ্যা প্রমাণের জন্য কোন সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় না অথবা
যা সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করা যায় না তাকে অখণ্ডনীয় অনুমান বা চূড়ান্ত প্রমাণ
বলে। নিম্নের বিষয়
আদালতে অখণ্ডনীয় অনুমান বা চূড়ান্ত প্রমাণ বলে গণ্য হয় :
(i)
আদালতের পূর্ববর্তী রায় :
প্রবেট, নৌ-বিভাগ সম্পর্কীয় বিষয়, ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা
বিষয়ে আদালতের
পূর্বববর্তী রায় গ্রহণীয় এবং এটি সকলের উপর বাধ্যকর।
[ধারা-৪১]
(ii)
বিবাহ বজায় থাকাকালীন
সন্তানের জন্মই তার বৈধতার প্রমাণ : কোন বিবাহ বজায়
থাকাকালীন অথবা বিবাহ বিচ্ছেদের ২৮০ দিনের মধ্যে কোন নারী অবিবাহিতা
থাকা অবস্থায় সন্তান জন্মদান করলে উক্ত সন্তানের জন্মই তার বৈধতার
প্রমাণ হিসেবে গণ্য হবে। [ধারা-১১২]