- Get link
- X
- Other Apps
মৌখিক সাক্ষ্য কাকে বলেে? what is oral evidence?
“মৌখিক সাক্ষ্য সকল ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ হতে হবে”- এ দ্বারা কি বুঝায়? এর ব্যতিক্রম আছে কি? উৎকৃষ্ট সাক্ষ্য মতবাদ কাকে বলে? মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষ্যের গ্রহণীয়তার উপর এই মতবাদের প্রভাব কি?
মৌখিক সাক্ষ্য (Oral evidence) কাকে বলে:
সাক্ষ্য আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী- মামলার বিচার্য বিষয় সম্পর্কে বা কোন মামলার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে সাক্ষীকে আদালত যে বিবৃতি প্রদানের জন্য অনুমতি প্রদান করেন, সাক্ষী প্রদত্ত সেই বিবৃতিকে মৌখিক সাক্ষ্য বলে।
অর্থাৎ সাক্ষীর সাক্ষ্য যখন মামলার বিচার্য বিষয় সম্পর্কিত হয় এবং আদালত কর্তৃক তা অনুমোদনপ্রাপ্ত হয় তখন তা মৌখিক সাক্ষ্য হিসেবে গৃহীত হয়।
সাক্ষ্য আইনের ৫৯ ধারা অনুযায়ী- লিখিত বিষয়বস্তু ছাড়া অন্য সকল বিষয় মৌখিক সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করা যেতে পারে।
মৌখিক সাক্ষ্য সকল ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ হতে হবে” অথবা মৌখিক সাক্ষ্যের সর্বোত্তম নিয়ম:
সাক্ষ্য আইনের ৬০ ধারায় মৌখিক সাক্ষ্যের বিধান বর্ণিত হয়েছে। উক্ত ধারা অনুযায়ী-
(১) দেখার বিষয় হলে নিজ চোখে দেখতে হবে : সাক্ষ্য যদি দেখা সংক্রান্ত কোন বিষয় হয়, তাহলে সাক্ষীকে তা নিজ চোখে দেখতে হবে। অর্থাৎ সাক্ষীকে আদালতে বলতে হবে যে, বিষয়টি তিনি নিজ চোখে দেখেছেন।
(২) শোনার বিষয় হলে নিজ কানে শুনতে হবে : সাক্ষ্য যদি শোনা সংক্রান্ত কোন বিষয় হয়, তাহলে সাক্ষীকে তা নিজ কানে শুনতে হবে। অর্থাৎ সাক্ষীকে আদালতে বলতে হবে যে, বিষয়টি তিনি নিজ কানে শুনেছেন।
(৩) উপলব্ধির বিষয় হলে নিজে উপলব্ধি করতে হবে : সাক্ষ্য যদি উপলব্ধি সংক্রান্ত কোন বিষয় হয় তাহলে সাক্ষীকে তা নিজ ইন্দ্রিয় (ত্বক, জিহ্বা) দ্বারা উপলব্ধি করতে হবে। অর্থাৎ সাক্ষীকে আদালতে বলতে হবে যে, বিষয়টি তিনি নিজে উপলব্ধি করেছেন।
(৪) অভিমতের বিষয় হলে নিজের অভিমত হতে হবে : সাক্ষ্য যদি অভিমত সংক্রান্ত কোন বিষয় হয় তাহলে উক্ত অভিমত সাক্ষীর নিজের হতে হবে। অর্থাৎ সাক্ষীকে আদালতে বলতে হবে যে, অভিমতটি তার নিজের ।
মৌখিক সাক্ষ্য সকল ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ হতে হবে এর ব্যতিক্রম:
সাধারণত জনশ্রুতিমূলক সাক্ষ্য আদালতে গ্রহণীয় হয় না। তবে সাক্ষ্য আইনের ৩২ এবং ৩৩ ধারা অনুযায়ী জনশ্রুতিমূলক সাক্ষ্য আদালতে গ্রহণীয় হয়। এগুলোকেই ‘মৌখিক সাক্ষ্য সকলক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ হতে হবে’ এই নীতির ব্যতিক্রম হিসেবে উল্লেখ করা যায়।
নিম্নে ব্যতিক্রমণ্ডলি উল্লেখ করা হলো:
(১) স্বাভাবিক কাজের বর্ণনা : যদি কোন সাক্ষী তার স্বাভাবিক কাজের বর্ণনা প্রদান করেন। তাহলে মৌখিক সাক্ষ্য প্রত্যক্ষ না হওয়া সত্ত্বেও আদালতে তা গ্রহণীয় হয়।
(২) খাতা বা ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ বিষয় : স্বাভাবিক নিয়মে কোন ব্যক্তি যদি খাতা বা ডায়েরিতে কোন বিষয় লিখে রাখেন তাহলে মৌখিক সাক্ষ্য প্রত্যক্ষ না হওয়া সত্ত্বেও আদালতে তা গ্রহণীয় হয়।
(৩) মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া বিবৃতি : মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কিত রখে যাওয়া বিবৃতি আদালতে তা গ্রহণীয় হয়।
(৪) নিজের স্বার্থ বিরোধী বিবৃতি : কোন সাক্ষী যদি নিজের স্বার্থ বিরোধী কোন বিবৃতি প্রদান করে তাহলে আদালতে তা গ্রহণীয় হয়।
(৫) দলিল বা উইলের বিবৃতি : দলিল বা উইল দ্বারা বিবৃতি আদালতে তা গ্রহণীয় হয়।
(৬) অনেক ব্যক্তির বিবৃতি : অনেক লোক যখন কোন বিবৃতি প্রদান করে তখন আদালতে তা গ্রহণীয় হয়। এখানে অনেক লোক বলতে কত লোক বোঝানো হয়েছে তা নির্দিষ্ট করা হয় নি। আদালতই তা নির্ধারণ করবেন।
(৭) জনগণের স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয় : কোন বিবৃতি যদি জনগণের স্বার্থের পক্ষে প্রদান করা হয় তাহলে আদালতে তা গ্রহণীয় হয়।
(৮) আত্মীয়তার অস্তিত্ব সম্পর্কিত বিষয় : রক্তের সম্পর্ক বা বৈবাহিক বা দত্তক সম্পর্কিত বিষয়ের অস্তিত্বের প্রশ্ন হলে উক্ত বিষয়ে অবগত আছেন এমন ব্যক্তি যদি বিরোধ সৃষ্টির পূর্বে কোন বিবৃতি প্রদান করেন তাহলে আদালতে তা গ্রহণীয় হয়।
(৯) উপরের বিষয়ের লিখিত বিবৃতি : উপরের বিষয়ে যদি কোন লিখিত বিবৃতি থাকে এবং তা বিরোধ সৃষ্টির পূর্বে হয় তাহলে আদালতে তা গ্রহণীয় হয়।
(১০) গ্রন্থে প্রকাশিত অভিমত : কোন ব্যক্তির গ্রন্থে প্রকাশিত অভিমত যদি সাক্ষ্যের বিষয় হয় এবং উক্ত গ্রন্থ যদি বাজারে বিক্রি হয় তাহলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে উক্ত গ্রন্থকারকে আদালতে হাজির না করে তার গ্রন্থ আদালতে দাখিল করা যেতে পারে। যেমন : উক্ত ব্যক্তি মৃত হলে, উক্ত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া না গেলে, উক্ত ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রদানে অসামর্থ হলে, আদালতের বিবেচনায় উক্ত ব্যক্তিকে হাজীর করানোর ব্যয় ও সময় সাপেক্ষ হলে ইত্যাদি।
উৎকৃষ্ট সাক্ষ্য মতবাদ:
সাক্ষ্যের উপর নির্ভর করে আদালতকে বিচারকার্য পরিচালনা করতে হয়। সাক্ষ্যের দ্বারাই মামলার বিচার্য বিষয়ের সত্যতা নির্ধারণ করতে হয়। বলা যায় সাক্ষ্য হলো মামলার সুবিচারের অন্যতম একটি মাধ্যম। এই মাধ্যম যদি সঠিকভাবে পরিচালিত না হয় তাহলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
সাক্ষ্য প্রধানত দুই প্রকার : (১) মৌখিক সাক্ষ্য, (২) দালিলিক সাক্ষ্য। এই উভয় সাক্ষ্য উৎকৃষ্ট হওয়া জরুরী। এটিই হলো সাক্ষ্য আইনের মূলনীতি।
সাক্ষ্য মৌখিক হোক আর দালিলিক হোক এটি সর্বদা উৎকৃষ্ট হতে হবে। যেমন : সাক্ষ যদি মৌখিক হয় তাহলে অবশ্যই তা প্রত্যক্ষ হতে হবে। অর্থাৎ দেখার,বিষয় হলে নি্জ চোখে দেখতে হবে, শোনার বিষয় হলে নিজ কানে শুনতে হবে, ত্বক বা জিহ্বা দ্বারা উপলল্ধিব বিষয় হলে নিজে উপলব্ধি করতে হবে, অভিমতের বিষয় হলে নিজের অভিমত হতে হবে।
আবার সাক্ষ্য যদি দালিলিক হয় তাহলে আদালতে মূল দলিল উপস্থাপন করতে হবে। যদি কোন কারণে মূল দলিল উপস্থাপন করা সম্ভব না হয় তাহলে তার উপযুক্ত কারণ প্রদর্শন করতে হবে। এটিই হলো উৎকৃষ্ট সাক্ষ্য মতবাদ।
মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষ্যের গ্রহণীয়তার উপর উৎকৃষ্ট মতবাদের প্রভাব।
মৌখিক সাক্ষ্যে উৎকৃষ্ট মতবাদের প্রভাব : সাক্ষ্য আইনের ৬০ ধারা অনুযায়ী উৎকৃষ্ট সাক্ষ্য মতবাদে মৌখিক সাক্ষ্য অবশ্যই প্রত্যক্ষ হতে হবে। অর্থাৎ-সাক্ষ্য যদি দেখা সংক্রান্ত কোন বিষয় হয় তাহলে সাক্ষীকে তা নিজ চোখে দেখতে হবে। অর্থাৎ সাক্ষাকে আদালতে বলতে হবে যে, বিষয়টি তিনি নিজ চোখে দেখেছেন। সাক্ষ্য যদি শোনা সংক্রান্ত কোন বিষয় হয় তাহলে সাক্ষীকে তা নিজ কানে শুনতে হবে। অর্থাৎ সাক্ষীকে আদালতে বলতে হবে যে, বিষয়টি তিনি নিজ কানে শুনেছেন। সাক্ষ্য যদি উপলবন্ধি সংক্রান্ত কোন বিষয় হয় তাহলে সাক্ষীকে তা নিজ ইন্দ্রিয় (তৃক, জিহ্বা) দ্বারা উপলন্ধি করতে হবে অর্থাৎ সাক্ষীকে আদালতে বলতে হবে যে, বিষয়টি তিনি নিজে উপলব্ধি করেছেন। সাক্ষ্য যদি অভিমত সংক্রান্ত কোন বিষয় হয় তাহলে উক্ত অভিমত সাক্ষীর নিজের হতে হবে। অর্গাৎ সাক্ষীকে আদালতে বলতে হবে যে, অভিমতটি তার নিজের। এক্ষেত্রে অন্যের দেখা বা অন্যের শোনা বা অন্যের উপলব্ধি করা বা অন্যের অভিমত ব্যক্ত মৌখিক সাক্ষ্য হিসেবে আদালতে তা গ্রহনীয় হবে না।
দালিলিক সাক্ষ্যে উৎকষ্ট মতবাদের প্রভাব : সাক্ষ্য আইনের ৬১, ৬২, ৬৪, ৬৫ ধারা অনুযায়ী দালিলিক সাক্ষ্যও উৎকৃষ্ট সাক্ষ্য মতবাদ অনুযায়ী হতে হবে। যেমন: ৬১ ধারায় বলা হয়েছে দলিলের বিষয়বস্তু প্রাথমিক সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করা যায়। ৬২ ধারা অনুযায়ী প্রাথমিক সাক্ষ্য বলতে মূল দলিলকে বোঝানো হয়েছে। ৬৪ ধারায় বলা হয়েছে- ৬৫ ধারার ব্যতিক্রম ছাড়া অন্য সকল ক্ষেত্রে দলিল অবশ্যই প্রাথমিক সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করতে হবে। সুতরাং বলা যায় দালিলিক সাক্ষ্যের ক্ষেত্রেও উৎকৃষ্ট মতবাদের প্রভাব রয়েছে।
Thank you
Shameem Sarwar
shameem.sarwar@yahoo.com