- Get link
- X
- Other Apps
মৃত্যুকালীন ঘােষণা Dying Declaration কাকে বলে?
ভিডিও শর্ট নোটস্ অন ল, Video Short Notes on Law
মৃত্যুকালীন ঘােষণা কী? মৃত্যুকালীন ঘােষণা কিভাবে প্রমাণ করা যায়? মৃত্যুকালীন ঘােষণা সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণীয় হওয়ার ক্ষেত্রসমূহ কি কি ? মৃত্যুকালীন ঘােষণা দানকারী যদি দৈবাৎ বেঁচে যায় তাহলে তার ঘােষণা কি ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযােগ্য? মুত্যুকালীন ঘােষণা বিষয়ে ইংলিশ আইন ও বাংলাদেশী আইনের মধ্যে পার্থকা কি? তদন্তকালে কোন পুলিশ অফিসাবের
নিকট যদি এটা করা হয়, তাহলে কি সাক্ষ্য গ্রহণ করা যায়? মৃত্যুকালীন ঘােষণার সাক্ষ্যগত মূ ল্য কতটুকু?
মৃত্যুকালীন ঘােষণা (Dying Declaration) কাকে বলে?
কোন মানুষ তার মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যুর কারণ বা আংশকা প্রকাশ করে যদি প্রাসঙ্গিক ঘােষণা
প্রদান করে তাহলে তা মৃত্যুকালীন ঘােষণা হিসেবে গণ্য হয়।
সাক্ষ্য আইনের ৩২(১) ধারা অনুযায়ী- কোন মামলায় কোন মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপিত হলে, উক্ত ব্যক্তি যদি এমন কোন বিবৃতি দিয়ে যায়, যার মধ্যে মৃত্যুর কারণ বর্ণনা করা হয়েছে তাহলে সেই বিবৃতিকে মৃত্যুকালীন ঘােষণা বলে।
ইংলিশ আইনে মৃত্যুকালীন ঘােষণার ক্ষেত্রে ঘােষণাকারীর মৃত্যু হতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশী আইনে মৃত্যুকালীন ঘােষণার ক্ষেত্রে ঘোষণাকারীর মৃত্যু না হলে তা সহায়ক সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
মৃত্যুকালীন ঘােষণা কিভাবে প্রমাণ করা যায় ঃ
কোন মানুষ তার মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যুর কারণ বা আংশকা প্রকাশ করে যদি প্রাসঙ্গিক ঘােষণা প্রদান করে তাহলে তা মৃত্যুকালীন ঘােষণা হিসেবে গণ্য হয়।
মৃত্যুকালীন ঘােষণা পুলিশ অফিসারের নিকট দেয়া হােক বা ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট দেয়া হােক বা সাধারণ মানুষের নিকট দেয়া হােক সকল ক্ষেত্রেই তা গ্রহণীয় হবে। এক্ষেত্রে যিনি মৃত্যুকালীন ঘােষণা লিখেছেন তাকে আদালতে সাক্ষ্য দিতে হবে। সাক্ষ্য যদি
মােখিক হয় তাহলে যিনি তা শুনেছেন মর্মে আদালতে সাক্ষ্য দিতে হবে। এভাবে মৃত্যুকালীন ঘোষণা প্রমাণ করা যায়।
মৃত্যুকালীন ঘােষণা সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণীয় হওয়ার ক্ষেত্রসমূহ কি কি?
সাক্ষ্য আইন অনুযামী মৃত্যুকালীন ঘােষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মৃত্যুর পর উক্ত মানুষকে আর কোনদিন পাওয়া যাবে না। কাজেই তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে আর কোন তথ্য পাওয়া যাবে না। এছাড়া মৃত্যুর সময় সাধারণত কোন মানুষ মিথ্যা কথা বলে না, সুতরাং এই ঘােষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে গণ্য করা হয়। নিম্নে কেন মৃত্যুকালীন ঘােষণা সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয় তা উল্লেখ করা হলাে :
(১) মৃত্যুর কারণ সম্পর্কিত ঘােষণা : কোন মামলায় কোন মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে
প্রশ্ন উত্থাপিত হলে, উক্ত ব্যক্তি যদি এমন কোন বিবৃতি দিয়ে যায়, যার মধ্যে মৃত্যুর কারণ বর্ণনা করা হয়েছে তাহলে সেই বিবৃতি প্রাসঙ্গিক হবে।
(২) স্বার্থবিরােধী বিবৃতি প্রদান করা হলে : বিবৃতিদানকারী যদি নিজের স্বার্থের বিরােধী কোন বিবৃতি প্রদান করেন তাহলে তা প্রাসঙ্গিক হবে।
(৩) আত্মীয়তার অস্তিত্ব সম্পর্কে ঘােষণা : কোন মামলায় যদি পক্ষগণের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক
বা দত্তক বা বৈবাহিক বিষয়ে প্রশ্ন উঠে তাহলে এই সকল বিষয়ে জানার সুযােগ আছে, এমন ব্যক্তির ঘােষণা প্রাসঙ্গিক হবে।
(৪) অনেক লােকের বিবৃতি বা ঘােষণা : অনেক লােক কোন বিবৃতি বা ঘােষণা প্রদান করলে তা প্রাসঙ্গিক হয়।
(৫) দলিল বা উইলের ঘােষণা : দলিল বা উইলের ঘােষণা বা বিবৃতি প্রাসঙ্গিক হয়।
(৬) জনসাধারণের অধিকার সম্পর্কিত বিবৃতি : কোন বিবৃতি যদি জনসাধারণের অধিকার সম্পর্কিত হয় এবং উক্ত অধিকার বিষয়ে কোন বিরােধ সৃষ্টির পূর্বেই যদি তা করা হয় তাহলে তা প্রাসঙ্গিক হবে।
(৭) স্বাভাবিক কাজের অংশ হিসেবে বিবৃতি প্রদান : কোন ব্যক্তির বিবৃতি প্রদান যদি তার দৈনন্দিন কাজের অংশ হিসেবে করা হয়, যেমন : নিয়মিত ডায়েরী লেখা, তাহলে তা প্রাসঙ্গিক হবে।
মৃত্যুকালীন ঘােষণা দানকারী যদি দৈবাৎ বেঁচে যায় তাহলে তার ঘােষণা কি ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযােগ্য?
মৃত্যুকালীন ঘােষণা দানকারী যদি দৈবাৎ বেঁচে যায় তাহলে ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের (৩১) ধারা অনুযায়ী তার ঘােষণা সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণীয় হবে না।
কারণ উক্ত ব্যক্তি বেঁচে থাকলে পরবর্তীতে তার ঘােষণা পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু মৃত্যুকালীন ঘােষণা দানকারী দৈবাৎ বেঁচে গেলে বাংলাদেশী আইন অনুযায়ী তার ঘােষণা একেবারে বাতিল হয় না। উক্ত বিবৃতি বা ঘোষণা সাক্ষ্য আইনের ১৫৭ ধারা অনুযায়ী সমর্থনমূলক সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
মুত্যুকালীন ঘােষণা বিষয়ে ইংলিশ আইন ও বাংলাদেশী আইনের মধ্যে পার্থক্য কি?
নিমে মুত্যুকালীন ঘােষণা বিষয়ে ইংলিশ আইন ও বাংলাদেশী আইনের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করা হলাে :
পার্থক্যের বিষয়
ইংলিশ আইন
১) ইংলিশ আইনে মুত্যুকালীন ঘােষণা শুধু ফৌজদারি মামলায় গ্রহণীয় হবে।
২) ইংলিশ আইনে মুত্যুকালীন ঘােষণায় মৃত্যুর আশংকা থাকতে হবে।
৩) ইংলিশ আইনে মৃত্যুকালীন ঘােষণাকারীর অবশ্যই মৃত্যু হতে হবে।
৪) ইংলিশ আইনে মৃত্যুকালীন ঘােষণা শুধু নরহত্যা সংক্রান্ত মামলায় প্রয়ােগ হয়।
বাংলাদেশী আইন
১) বাংলাদেশী আইনে মুত্যুকালীন ঘােষণা অন্য মামলায় গ্রহণীয় হতে পারে।
২) বাংলাদেশী আইনে মুত্যুকালীন ঘােষণায় মৃত্যুর আশংকা থাকার প্রয়োজন নেই।
৩) বাংলাদেশী আইনে মৃত্যুকালীন ঘােষণাকারীর অবশ্যই মৃত্যু হতে হবে- এমন কোন বিধান নেই।মৃত্যুকালীন ঘােষণাকারীর মৃত্যু না হলে উক্ত ঘােষণা সমর্থনমূলক সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
৪) বাংলাদেশী আইনে মৃত্যুকালীন ঘােষণা যে কোন মামলায় প্রয়োগ হতে পারে।
তদন্তকালে কোন পুলিশ অফিসাবের নিকট যদি এটা করা হয়, তাহলে কি সাক্ষ্য গ্রহণ করা যায়?
মৃত্যুকালীন ঘােষণা কার নিকট দিতে হবে অর্থাৎ কার নিকট মৃত্যুকালীন ঘােষণা প্রদান করলে
গ্রহণীয় হবে আর কার নিকট প্রদান করলে গ্রহণীয় হবে না সেই সম্পর্কে সাক্ষ্য আইনে সুনির্দিষ্ট
কোন বিধান উল্লিখিত হয় নি। সুতরাং মৃত্যুকালীন ঘােষণা পুলিশ অফিসারের নিকট দেয়া হােক
বা ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট দেয়া হােক বা সাধারণ মানুষের নিকট দেয়া হােক সকল ক্ষেত্রেই তা গ্রহণীয় হবে।
শহীদুল্লাহ খান বনাম রাষ্ট্র মামলায় আদালত সিদ্ধান্ত প্রদান করেন যে, পুলিশ অফিসারের তদন্ত
অবস্থায় বিবৃতি প্রদান করা হলে তা গ্রহণীয় হবে।
সুতরাং বলা যায়, তদন্তকালে কোন পুলিশ অফিসারের নিকট মৃত্যুকালীন ঘােষণা প্রদান করা হলে তা সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায়।
মৃত্যুকালীন ঘোষণার সাক্ষ্যগত মুল্য:
সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী মৃত্যুকালীন ঘাষণা খুবই গুরুত্বূপূর্ণ। মূলত: দুইটি কারণে এই ঘােষণাকে
বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয় :
(১) কোন মানুষ মৃত্যুবরণ করলে উক্ত মানুষকে আর কোনদিন পাওয়া যাবে না। কাজেই তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে আর কোন তথ্য পাওয়া যাবে না। উক্ত মানুষের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কিত সর্বশেষ তথ্য হলে মৃত্যুকালীন ঘােষণা। সুতরাং এর সাক্ষ্যগত মূল্য
অনেক বেশী।
(২) কোন মানুষ যে কোন ধর্মেরই অনুসারীই হােক না কেন বা কোন ধর্মের অনুসারী না হলেও মৃত্যুর সময় তার মনে একটা সাধারণ ভয় উপস্থিত হয়। কাজেই এই সময়ে সাধারণত কোন মানুষ মিথ্যা কথা বলে না। কাজেই এই ঘােষণা আদালত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেন।
খলিলুর রহমান বনাম রাষ্ট্র মামলা অনুযায়ী- শুধুমাত্র মৃত্যুকালীন ঘােষণার উপর ভিত্তি করে কোন মানুষকে শাস্তি দেয়া ঠিক হবে না। অর্থাৎ যদি আর কোন সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকে, মৃত্যুকালীন ঘােষণাই একমাত্র সাক্ষ্য হয় তাহলে এর উপর ভিত্তি করে শাস্তি প্রদান করা ঠিক হবে না।