- Get link
- X
- Other Apps
দালিলিক সাক্ষ্য কাকে বলে? What is Documentary Evidence
দালিলিক সাক্ষ্য কাকে বলে? মৌখিক ও দালিলিক বা দলিলভুক্ত সাক্ষ্যের পার্থকা কি? দলিলভুক্ত সাক্ষ্যের প্রমাণ সম্পর্কিত বিধিগুলি কি কি? সাক্ষীদেরকে দলিল দ্বারা অগ্রাহ্য করা যায় কিন্ত দলিলসমূহকে সাক্ষী দ্বারা অগ্রাহ্য করা যায় না-এর ব্যতিক্রম কি কি? কখন আদালত কতকগুলি দলিল সম্পর্কে বিশেষ ঘটনা অবশ্যই অনুমান করবেন?
দালিলিক সাক্ষ্য (Documentary Evidence) কাকে বলে?
সাক্ষ্য আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী-কোন মামলার বিচার্য বিষয় সম্পর্কিত যে কোন দলিল যদি আদালতে পরিদর্শনের জন্য উপস্থাপন করা হয় তাহলে তাকে দালিলিক সাক্ষ্য বলে। দালিলিক সাক্ষ্য একটি উৎকৃষ্ট সাক্ষ্য। দালিলিক সাক্ষ্য দ্বারা মামলার বিচার্য বিষয় প্রমাণ করা অথবা মিথ্যা প্রমাণ করা অত্যন্ত সহজ।
মৌথিক ও দালিলিক বা দলিলভূক্ত সাক্ষ্যের পার্থক্য;
নিম্নে মৌখিক ও দালিলিক বা দলিলভুক্ত সাক্ষ্যের পার্থক্য উল্লেখ করা হলা :
পার্থক্যের বিষয়
মৌখিক সাক্ষ্য
১। বিচার্য বিষয় সম্পর্কে আদালত সাক্ষীকে যে সকল বিবৃতি প্রদান করার অনুমতি দেন তাকে মৌখিক সাক্ষ্য বলে।
২। মৌখিক সাক্ষ্যকে ইংরেজিতে Oral evidence বলে।
৩। দালিলিক সাক্ষ্যের তুলনায় মৌখিক সাক্ষ্যের গুরুত্ব কম।
৪। দলিলের লিখিত বিষয় ছাড়া অন্য সকল বিষয় মৌখিক সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করা যায়।
৫। প্রত্যক্ষভাবে লব্ধ জ্ঞান মৌখিক সাক্ষ্য হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করতে হয়।
৬। মৌখিক সাক্ষ্য প্রমাণ হতেও পারে আবার প্রমাণ নাও হতে পারে।
দালিলিক বা দলিলভূক্ত সাক্ষ্য
১। আদালত কর্তৃক পরিদর্শনের জন্য যে সকল দলিল উপস্থাপন করা হয় তাকে দালিলিক সাক্ষ্য বলে।
২। দালিলিক সাক্ষ্যকে ইংরেজিতে Documentary evidence বলে।
৩। মৌখিক সাক্ষ্যের তুলনায় দালিলিক সাক্ষ্যের গুরুত্ব বেশি।
৪। প্রাথমিক বা মাধ্যমিক সাক্ষ্য দ্বারা দলিলের বিষয়বস্তু প্রমাণ করা যায়।
৫। হিসেবে মূল দলিল আদালতে উপস্থাপন করতে হয়।
৬। দালিলিক সাক্ষ্য সর্বক্ষেত্রে প্রমাণযোগ্য।
দলিলভুক্ত সাক্ষ্যের প্রমাণ সম্পর্কিত বিধি ।
সাক্ষ্য আইনের ৬১ ধারা অনুযায়ী-
দলিলভুক্ত সাক্ষ্য দুই ভাবে প্রমাণ করা যায়। যথা: (১) প্রাথমিক সাক্ষ্য দ্বারা, (২) মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য দ্বারা।
(১) প্রাথমিক সাক্ষ্য (Primary Evidence) দ্বারা দলিলের বিষয়বস্তু প্রমাণ ।
সাক্ষ্য আইনের ৬২ ধারা অনুযায়ী- যে দলিল প্রমাণের জন্য আদালতে দাখিল করতে হয় তাকে প্রাথমিক সাক্ষ্য বা Primary Evidence বলে।
দলিল যদি বিভিন্ন প্রতিলিপিতে বিভক্ত হয় তাহলে তার প্রত্যেক ভাগই প্রাথমিক সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হয়। অর্থাৎ একটি দলিল যদি অনেকগুলি ফটোকপি হয় তাহলে প্রত্যেক কপি একটি অন্যটির প্রাথমিক সাক্ষ্য হিসেবে কাজ করে। তবে ফটোকপি মূল দলিলের প্রমাণ নয়। আবার একটি খবরের কাগজ অন্য একটি খবরের কাগজের নকল নয়। কাজেই তাদের প্রত্যেকটিই মূল দলিল।
(২) মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য (Secondary Evidence) দ্বারা দলিলের বিষয়বস্তু প্রমাণ :
সাক্ষ্য আইনের ৬৩ ধারা অনুযায়ী নিম্নের বিষয়গুলি মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য :
(ক) সত্যায়িত জাবেদা নকল,
(খ) যান্ত্রিক পদ্ধতিতে মূল দলিলের নকল বা ফটোকপি,
(গ) মূল দলিল থেকে প্রস্তুত করা নকল,
(ঘ) যে পক্ষ দলিল সম্পাদন করেনি তার বিরুদ্ধে সম্পাদিত দলিলের প্রতিলিপি,
(ঙ) কোন দলিলের প্রত্যক্ষদর্শীর মৌখিক সাক্ষ্য।
সাক্ষ্য আইনের ৬৫ ধারা অনুযায়ী নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য দ্বারা দলিলের বিষয় বস্তু প্রমাণ করা যেতে পারে:
(i) দলিলটি অভিযুক্ত ব্যক্তির দখলে থাকলে : যার বিরুদ্ধে মূল দলিলটি প্রমাণ করতে হবে দলিলটি যদি তার নিকট থাকে তাহলে মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য প্রদান করা যায়।
(ii) দ্বলিলটি আদালতের এখতিয়ারের বাইরে থাকলে : মূল দলিলটি এমন ব্যক্তির নিকট থাকে যে, আদালতের এখতিয়ারের বাইরে অথবা আদালতের নোটিশ পাওয়া সত্ত্বেও দালিলটি হাজীর করা হচ্ছে না তাহলে মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য প্রদান করা যায়।
(iii) দলিলটি হারিয়ে গেলে : মূল দলিলটি যদি হারিয়ে যায় তাহলে মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য প্রদান করা যায়।
(iv) দলিলটি নষ্ট হয়ে গেলে : মূল দলিলটি যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য প্রদান করা যায়।
(v) অভিযুক্ত ব্যক্তি দলিলের অস্তিত্ব স্বীকার করলে : যার বিরুদ্ধে দলিলটি প্রমাণ করতে হবে সেই ব্যক্তি অথবা তার প্রতিনিধি যদি মূল দলিলের অস্তিত্ব স্বীকার করেন তাহলে মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য প্রদান করা যায়।
(vi) দলিলটি স্থানান্তরের অযোগ্য হলে : মূল দলিলটি যদি এমন হয় যে, তা সহজে স্থানান্তর করা যায় না তাহলে মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য প্রদান করা যায়।
(vii) সরকারি দলিল হলে : মূল দলিলটি সাক্ষ্য আইনের ৭৪ ধারা অনুযায়ী সরকারি দলিল হলে মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য গ্রদান করা যায়।
(vili) মূল দলিলে অনেক দলিলের বিবরণ থাকলে : মুল দলিলে যদি অনেক দলিলের বিবরণ থাকে এবং তা যদি আদালতের পক্ষে প্রমাণ করা সুবিধাজনক না হয় তাহলে মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য প্রদান করা যায়।
(viii) নকল ব্যবহারের বিধান থাকলে: মূল দলিলটি যদি এমন হয় যে, তার নকল ব্যবহারের বিধান আছে তাহলে, মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য প্রদান করা যায়।
সাক্ষীদেরকে দলিল দ্বারা অগ্রাহ্য করা যায় কিন্তু দলিলসমূহকে সাক্ষী দ্বারা অগ্রাহ্য করা যায় না-এর ব্যতিক্রম
দলিলভুক্ত সাক্ষ্য দ্বারা মৌখিক সাক্ষ্য বর্জন করা যায়’ -এর ব্যতিক্রমগুলি সাক্ষ্য আইনের ৯১ ও ৯২ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে। নিম্নে সেগুলি আলোচনা করা হলো :
(১) সরকারি কর্মচারীর নিয়োগপত্র : সরকারি কর্মচারির নিয়োগপত্র যদি লিখিত হওয়া আবশ্যক হয় এবং সংশ্লিষ্ট পদে উক্ত ব্যক্তি কাজ করে থাকেন তাহলে তার লিখিত নিয়োগপত্র প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই। (ধারা-৯১]
(২) উইলের প্রবেট : উইলের প্রবেট বা উইলের সত্যতা প্রমাণীকরণ পত্র স্বীকৃত হলে উক্ত উইল প্রবেট বা উইলের সত্যতা প্রমাণীকরণ পত্র দ্বারা প্রমাণ করা যাবে। (ধারা-৯১]
৩) পৃথক পৃথক মৌখিক চুক্তি : কোন বিষয়ে যদি পৃথক পৃথক মৌখিক চুক্তি থাকে এবং দলিলটি যদি উক্ত বিষয়ে নীরব থাকে তাহলে সেই ধরনের চুক্তি প্রমাণ করা যায়। [ধারা-৯২)
৪) পূর্ব শৃর্তযুক্ত মৌখিক চুক্তি : কোন চুক্তির বিষয়ে পূর্ব শর্তযুক্ত মৌখিক চুক্তি থাকলে তার অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায়। [ধারা-৯২)
৫) পরবর্তী মৌখিক চুক্তি : কোন চুক্তি সংশোধন করার উদ্দেশ্যে পরবর্তীকালে সুস্পষ্ট মৌখিক চুক্তি করা হলে তা প্রমাণ করা যায়। (ধারা-৯২)
৬) অকার্যকর দলিল : প্রতারণার মাধ্যমে বা ভয়-ভীতি দেখিয়ে বা কোন পক্ষের অযোগ্যতার, অভাবে বা অন্য কোন ভুলের কারণে দলিলটি অকার্যকর হয়ে পড়লে সেই বিষয়ে প্রমাণ করা যায়। [ধারা-৯২)
৭) দলিলের ভাষা : কোন দলিলের ভাষা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সাথে কিভাবে সম্পর্কযুক্ত তার বর্ণনা প্রসঙ্গে যা প্রয়োজন তা প্রমাণ করা যেতে পারে। [ধারা-৯২]
৮) প্রথা বা রীতি-নীতি : কোন প্রথা বা রীতি-নীতি যদি কোন চুক্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত হয় তাহলে সেই প্রথা বা রীতি-নীতি উক্ত চুক্তিতে সুস্পষ্ট উল্লেখ না থাকলেও তা প্রমাণ করা যায়। [ধারা-৯২]
যখন আদালত কতকগুলি দলিল সম্পর্কে বিশেষ ঘটনা অবশ্যই অনুমান করবেন:
যখন আদালত কতকগুলি দলিল সম্পর্কে বিশেষ ঘটনা অবশ্যই অনুমান করবে তা সাক্ষ্য আইনের ৭৯ থেকে ৮৫ এবং ৮৯ ও ৯০ ধারায় বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো :
(১) সত্যায়িত নকলের শুদ্ধতা সম্পর্কে অনুমান : আইনগতভাবে সত্যায়িত করা হলে উক্ত কপিকে মূল দলিলের অবিকল নকল হিসেবে আদালত অনুমান করবে। (ধারা-৭৯)
(২) জবানবন্দী বা অপরাধ স্বীকার সংক্রান্ত দলিল সম্পর্কে অনুমান : কোন স্বাক্ষীর জবানবন্দী অথবা অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধ স্বীকার করলে আদালত তা অকৃত্রিম বলে অনুমান করবেন। [ধারা-৮০]
(৩) ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডে গৃহীত দলিল সম্পর্কে অনুমান : ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডে যে সকল দলিল সাক্ষ্যরূপে ব্যবহৃত হয় তা আমাদের দেশেও সাক্ষ্যরূপে ব্যবহৃত হবে। এই ধরনের দলিলের সীল, স্বাক্ষর, স্ট্যাম্প ইত্যাদিকে আদালত অকৃত্রিম বলে অনুমান করবেন। [ধারা-৮২]
(৪) সরকারের কর্তৃত্বাধীনে প্রণীত মানচিত্র বা নকশা সম্পর্কে অনুমান : যে সকল মানচিত্র বা নকশা সরকারের কতৃত্বাধীনে তৈরি হয় তাকে আদালত অকৃত্রিম বলে অনুমান করবেন। [ধারা-৮৩]
(৫) পুস্তক বা গেজেট সম্পর্কে অনুমান : যে সকল পুস্তক বা গেজেট সরকারের কতৃত্বাধীনে প্রকাশিত হয় তাকে আদালত অকৃত্রিম বলে অনুমান করবেন। [ধারা-৮৪]
(৬) আদালতের রায়ের বিবরণ সম্পর্কে অনুমান : আদালতের রায়ের বিবরণ যে সকল পুস্তকে প্রকাশিত হয় তাকে আদালত অকৃত্রিম বলে অনুমান করবেন। [ধারা-৮৪]
(৭) Power of Attorney (মোক্তারনামা) সম্পর্কে অনুমান : কোন নোটারী পাবলিক, আদালত, জজ, ম্যাজিষ্ট্রেট, সরকারের নিযুক্ত প্রতিনিধি ইত্যাদির সামনে Power of Attorney বা মোক্তারনামা করা হলে তাকে আদালত অকৃত্রিম বলে অনুমান করবেন। [ধারা-৮৫]
(৮) দাখিল করা হয়নি এমন দলিল সম্পর্কে অনুমান : যে দলিল আদালতে উপস্থাপনের জন্য নোটিশ করা হয়েছে কিন্তু উপস্থাপন করা হয়নি, এমন দলিল সম্পাদিত হয়েছে বলে আদালত অনুমান করবেন। [ধারা-৮৯]
(৯) ত্রিশ বছরের পুরাতন দলিল সম্পর্কে অনুমান : ত্রিশ বছরের পুরাতন দলিল যার হেফাজতে থাকার কথা তিনি নিজে অথবা তার প্রতিনিধি আদালতে দাখিল করলে তাকে আদালত অকৃত্রিম বলে অনুমান করবেন। [ধারা-৯০]
Thank you
Shameem Sarwar
shameem.sarwar@yahoo.com
Video দালিলিক সাক্ষ্য কাকে বলে? What is Documentary Evidence