- Get link
- X
- Other Apps
পুলিশ তদন্ত
পুলিশ তদন্ত কাকে বলে এবং তদন্তের বিভিন্ন ধাপগুলো কি? ফৌজদারি মামলা তদন্তের ব্যাপারে পুলিশ কে প্রচুর ক্ষমতা দেয়া হয়েছে কেন? নালিশ কি ও মামলা গ্রহনের পদ্ধতি কি? হাইকোর্ট বিভাগের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা কতটুকু?
What is police investigation and the steps towards the police investigation? The reason why police is given huge power regarding investigation. What is complaint and procedure of taking complain case? How much is the inherent power of High court? Short notes on law. Crpc 1898
প্রশ্ন: পুলিশ তদন্ত কাকে বলে বা ইনভেস্টিগেশন কাকে বলে?
উত্তর: কোন কিছু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করাকে তদন্ত বলে। ফৌজদারি কার্যবিধির 4 (1) (এল) ধারা অনুযায়ী তদন্ত হল-সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহের জন্য কোন পুলিশ অফিসার অথবা ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি কর্তৃক যিনি ম্যাজিস্ট্রেট নন পরিচালিত কার্যক্রমকেই তদন্ত বলে।
'Investigation includes all the proceedings under this code for the collection of evidence conducted by a police officer or by any person other than a magistrate who is authorised by magistrate in this behalf.'
তদন্ত শেষ করে পুলিশ অফিসার উক্ত তদন্তের রিপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট দাখিল করেন। এই রিপোর্ট দুই ধরনের হয়ে থাকে। ১। চূড়ান্ত রিপোর্ট Final report
2। অভিযোগ পত্র Charge sheet.
চূড়ান্ত রিপোর্ট সম্পর্কে ফৌজদারি কার্যবিধিতে সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি। তবে পুলিশ রেগুলেশন অফ বাংলাদেশ এর 275 ধারা অনুযায়ী বলা যায়, এজাহার বা এফ আই আর এ কোন অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম থাকা সত্ত্বেও পুলিশ যদি তদন্ত শেষে তার নাম বিচারের জন্য সুপারিশ না করে ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট রিপোর্ট জমা দেয় তাকে চূড়ান্ত রিপোর্ট বা ফাইনাল রিপোর্ট বলে। সাধারণত এজাহারে নাম থাকলেও অপরাধের সাথে যদি সেই ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া না যায় বা সেই ব্যক্তিকে নির্দেশ মনে হয় তাহলে তদন্ত শেষে চূড়ান্ত বা ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হয়।
অভিযোগ পত্র সম্পর্কে ফৌজদারি কার্যবিধিতে সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি তবে পুলিশ রেগুলেশন অব বাংলাদেশ-এর 272 ধারা অনুযায়ী বলা যায় পুলিশ যদি তদন্ত শেষে এজাহারে উল্লেখিত অভিযোগ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগের যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে উক্ত ব্যক্তির নাম বিচারের জন্য সুপারিশ করে ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট রিপোর্ট জমা দেওয়া হয় তাকে অভিযোগ পত্র বা চার্জশিট বলে।
প্রশ্ন: ফৌজদারি মামলা তদন্তের ব্যাপারে পুলিশক কতটুকু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: ফৌজদারি কার্যবিধির 156 - 173 ধারা অনুযায়ী পুলিশি তদন্তের বিভিন্ন স্তর বা ফৌজদারি মামলা তদন্তের ব্যাপারে পুলিশকে অসীম ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
১। কোন স্থানীয় এলাকার ক্ষমতাবান ম্যাজিস্ট্রেট যে সকল আমলযোগ্য অপরাধের বিচার করতে পারেন, থানার ভারপ্রাপ্ত যেকোনো অফিসার ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশের ছাড়াই সেই সকল অপরাধের তদন্ত করতে পারেন। ধারা 156
২। থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারের আমলযোগ্য অপরাধ সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করলে ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট উক্ত সংগঠনের একটি রিপোর্ট প্রেরন করবেন এবং ঘটনা সম্পর্কে তদন্ত করার জন্য নিজে ঘটনাস্থলে রওয়ানা হবেন অথবা তার অধঃস্তন অফিসার কে প্রেরণ করবেন যিনি সরকার কর্তৃক আদেশ দ্বারা নির্ধারিত পদ অপেক্ষা নিম্নপদস্থ নন। ধারা 158
৩। সরকার নির্দেশ প্রদান করলে 157 ধারা অনুযায়ী প্রেরিত রিপোর্ট সরকার আদেশ দ্বারা নির্ধারিত ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারের মাধ্যমে দাখিল করতে হবে। এই ঊর্ধ্বতন অফিসার এর উপযুক্ত মনে করবেন থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারকে সেইরূপ পরামর্শ দিবেন। তিনি উক্ত পরামর্শ রিপোর্টে লিপিবদ্ধ করে ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট প্রেরণ করবেন। ধারা 158
৪। নিউজ থানার বা পার্শ্ববর্তী থানার যে ব্যক্তি ঘটনা সম্পর্কে জানেন, তাকে হাজির হওয়ার জন্য তদন্তকারী পুলিশ অফিসার লিখিত আদেশ প্রদান করতে পারবেন। অতঃপর উক্ত ব্যক্তিকে হাজির হতে হবে। ধারা 160
৫। তদন্তকারী পুলিশ অফিসার অথবা তার চাহিদা অনুযায়ী কাজ করছে এমন ক্ষমতা সম্পন্ন অন্য অফিসার যে ব্যক্তি ঘটনা সম্পর্কে জানেন তাকে পরীক্ষা করতে পারবেন। ধারা 161
৬। তদন্তের সময় পুলিশ অফিসারের নিকট যে বিবৃতি প্রদান করা হয় তা যদি লিপিবদ্ধ করা হয় তাহলে তাদের তিনি স্বাক্ষর প্রদান করবেন না। ধারা 162
৭। পুলিশ অফিসার বা কর্তৃত্ব সম্পন্ন ব্যক্তি সাক্ষ্য আইনের 24 ধারায় বর্ণিত কোন প্রলোভন হুমকি বা প্রতিশ্রুতি দিবেন না। তবে তদন্তের সময় কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় বিবৃতি প্রদান করতে চাইলে পুলিশ অফিসার তাকে বাধা দিবেন না। ধারা 163
৮। অপরাধ তদন্তের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় কোন জিনিস সংশ্লিষ্ট থানার কোন স্থানে পাওয়া যাবে বলে মনে করলে তখন উক্ত অফিসার লিখিত ভাবে নথিভূক্ত করবেন এবং উক্ত জিনিসের জন্য তল্লাশি করবেন বা করাবেন। ধারা 165
৯। কোন ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা বা এস আই পদে নিচে নয় এমন তদন্তকারী কর্মকর্তা তার নিজ থানার সীমানার মধ্যে যেমন ভাবে তল্লাশি করার ব্যবস্থা করতে পারতেন, সেইরূপ একই জেলার অন্য থানার বা ভিন্ন জেলার কোন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তার নিজ থানার সীমার মধ্যে যে কোন স্থানে তল্লাশি করার ব্যবস্থা করতে বলতে পারবেন। ধারা 166
১০। ফৌজদারি কার্যবিধির 161 ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় কোন ব্যক্তিকে আটক করা হলে 24 ঘণ্টার বেশি সময় তাকে আটক রাখা যাবে না। যদি প্রতীয়মান হয় যে 24 ঘন্টার মধ্যে তদন্ত কাজ সমাপ্ত করা যাবে না তখন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অথবা সাব-ইন্সপেক্টর পদের নিচে নয় এমন অফিসার নির্ধারিত ডায়েরিতে লিখিত ঘটনার নকল নিকটবর্তী ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট প্রেরণ করবেন এবং একই সময়ে আসামিকেও উক্ত ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট প্রেরণ করবেন। ধারা 167
১১। অধস্তন কোন পুলিশ অফিসার এই অধ্যায়ে অনুযায়ী তদন্ত করলে উক্ত তদন্তের ফলাফল সম্পর্কে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে রিপোর্ট দিবেন। ধারা 168১২। তদন্তকারী অফিসার যদি মনে করেন যে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ বা সন্দেহের কোন কারণ নেই তাহলে উক্ত ব্যক্তি আটক থাকলে তাকে জামিনদার সহ বা জামিনদার ছাড়া মুচলেকার পর ছেড়ে দেবেন। উক্ত মুচলেকার শর্ত থাকবে যে প্রয়োজন হলে তাকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে হাজির হতে হবে। ধারা 169
১৩। তদন্তকারী অফিসার যদি মনে করেন যে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ বা সন্দেহের কোন কারণ আছে তাহলে থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারের জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট সোপর্দ করবেন। ধারা 170
১৪। কোন ফরিয়াদি বা সাক্ষী দিগকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যাওয়ার পথে পুলিশের সাথে যেতে বলা যাবে না। ধারা 171
১৫। তদন্তকারী পুলিশ অফিসার প্রতিদিন ডায়েরিতে তার তদন্তের অগ্রগতি লিপিবদ্ধ করবেন। কখন তার নিকট খবর পৌঁছে ছিল, কখন তিনি তদন্ত শুরু করেছেন, কখন তদন্ত শেষ করেছেন, কোন কোন স্থান তিনি তদন্তের জন্য পরিদর্শন করেছেন ইত্যাদি উক্ত ডাইরিতে উল্লেখ করবেন। ধারা 172
১৬। তদন্ত শেষে অহেতুক বিলম্ব না করে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফরমে রিপোর্ট প্রদান করবেন। উক্ত রিপোর্ট পক্ষসমূহের নাম, আসামি গ্রেপ্তার হলে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে কিনা অথবা তাক মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে কিনা, ছেড়ে দেওয়া হলে জামিনদার সহ নাকি জামিনদার ছাড়া ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করতে হবে। ধারা 173
প্রশ্ন: নালিশ কাকে বলে?
উত্তর: ফৌজদারি কার্যবিধির ৪(১)(এইচ) ধারা অনুযায়ী নালিশ হল-এই আইন অনুসারে ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট কোন জানা-অজানা ব্যক্তির অপরাধ সম্পর্কে মৌখিক বা লিখিত ভাবে আইনসঙ্গত প্রতিকার চেয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে যে আবেদন করা হয় তাকে নালিশ বলে। তবে এ ক্ষেত্রে পুলিশ অফিসারের রিপোর্ট অন্তর্ভুক্ত হবে না।
'Complaint means the allegations made orally or in writing to a magistrate with a view to taking action under this code that some person whether known or unknown has committed an offence but it does not include the report of a Police officer.'
কোন আমলযোগ্য বা ও আমলযোগ্য অপরাধের অভিযোগ আনা হলে নালিশ কারীর শপথ গ্রহণ পূর্বক আদালত তা আমলে নিতে পারেন। এইভাবে আদালত কর্তৃক মামলা আমলে নেয়ার পদ্ধতি কে অপরাধীর বিচার চেয়ে গ্রহণ বা নালিশ বলে।
মামলা গ্রহণের পদ্ধতি নিম্নরূপ:
নালিশ কারই বা ফরিয়াদি নিকট থেকে অভিযোগের দরখাস্ত পেলে সাক্ষী গ্রহণ করে ম্যাজিস্ট্রেট মামলা গ্রহণ করতে পারেন। পুলিশ রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে ম্যাজিস্ট্রেট মামলা গ্রহণ করতে পারেন। নিজে দেখে বা অন্যের নিকট শুনে ম্যাজিস্ট্রেট মামলা গ্রহণ করতে পারেন। সরকারি কর্মচারীর আইনানুগ কর্তৃত্ব সম্পর্কিত অপরাধ হলে উক্ত কর্মচারীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত ম্যাজিস্ট্রেট মামলা গ্রহণ করতে পারেন না। রাষ্ট্র বিরোধী অপরাধ ধর্মের প্রতি অবমাননা জনগণের অনিষ্ট সাধন এ বিবৃতি ইত্যাদি অপরাধের ক্ষেত্রে সরকারের আদেশ মতে পুলিশ ছাড়া বিচারের জন্য গ্রহণ করা যায় না। ব্যাভিচারের অপরাধ হলে সাক্ষীকে নালিশ করতে হয়। সাক্ষী অসমর্থ হলে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে অন্য ব্যক্তি ও বিচারের জন্য মামলা দাখিল করতে পারে।
প্রশ্ন: ফৌজদারী কার্যবিধি 561 (এ )ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা কতটুকু?
উত্তর: ফৌজদারী কার্যবিধি 561 এ ধারায় হাইকোর্ট বিভাগের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে-এই বিধির অধীন প্রদত্ত কোন আদেশ কার্যকর করার জন্য অথবা কোন আদালতের কার্যক্রম এর অপব্যবহার প্রতিরোধ করার জন্য অথবা অন্যকোন ভাবে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনো আদেশ প্রদানের বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের যে অন্তর্নিহিত সহজাত ক্ষমতা আছে তা এই কার্যবিধির কোন কিছু সীমাবদ্ধতা বা প্রভাবিত করবে না।
'Nothing in this code shall be deemed to limit or affect the inherent power of the High Court division to make such orders as may be necessary to give effect to any order under this code, or to prevent abuse of the process of any Court or otherwise to secure the ends of Justice.'
এটি মূলত হাইকোর্ট বিভাগের নিজস্ব ক্ষমতা। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য হাইকোর্ট বিভাগ এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকেন। যে সকল ক্ষেত্রে অন্তর্নিহিত সহজাত ক্ষমতা প্রয়োগ করা যেতে পারে তাহলো-ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী কোনো আদেশ কার্যকর করার জন্য। আদালতের কোন পরোয়ানার যেন অপব্যবহার না হয় সেজন্য। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য। ফৌজদারি কার্যবিধি 561(a) ধারায় এই বিধিতে বর্ণিত হয়নি এমন ক্ষমতা ও হাইকোর্ট বিভাগ কে প্রদান করা হয়েছে অর্থাৎ কোনো আবেদন ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী বেশ করা না হলেও হাইকোর্ট বিভাগ তা প্রয়োজন মনে করলে গ্রহণ করতে পারেন এবং ন্যায় বিচারের স্বার্থে প্রয়োজনীয় আদেশ দিতে পারেন। যদি কখনো এমন হয় যে কোন বিষয় এই বিধিতে নেই সেক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগ তার সহজাত বা অন্তর্নিহিত ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে। দেওয়ানী কার্যবিধি অনুযায়ী এই অন্তর্নিহিত ক্ষমতা সকল দেওয়ানী আদালত কে প্রদান করা হয়েছে কিন্তু ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী এই ক্ষমতা শুধু হাইকোর্ট বিভাগ কে প্রদান করা হয়েছে।
ধন্যবাদ সবাইকে