- Get link
- X
- Other Apps
কিভাবে টিকা আবিষ্কার করা হয়, এবং কেন এত সময় লাগে একটা টিকা আবিষ্কার করতে। বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ব্রাইটন ইংলিশ বিডি পরিচালিত প্রোগ্রামে আমি শামীম সারওয়ার স্বাগত জানাচ্ছি। আজকের আলোচনার বিষয়বস্তুতে কিভাবে নতুন একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা হয় এবং কেন এত সময় লাগে এই বিষয়ে কথা বলব।
চিহ্নিত করতে হয় ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াটিকে যেটা রোগের সৃষ্টি করে।
প্রথমেই চিহ্নিত করতে হয় ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াটিকে যেটা রোগের সৃষ্টি করে। কখনো কখনো প্যাথোজেন নিজেই দুর্বল বা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এবং এটা ভ্যাকসিন হিসেবে কাজ করে।
কিন্তু এটা সবসময় সম্ভব হয় না। এই সমস্ত ক্ষেত্রে পরবর্তী ধাপ হলো প্যাথোজেন এন্টিজেন কে চিহ্নিত করা। আমাদের দরকার হয় ইউনিক প্রোটিন বা গ্লাইকোপ্রোটিন মার্কার্স যেটা নতুন একটি ভ্যাকসিন তৈরিতে ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। কিছু কিছু প্যাথোজেন এর ক্ষেত্রে এই সমস্ত এন্টিজেন একই রকম থাকে।
ফ্লু জাতীয় ভাইরাস নিজেদের পরিবর্তন করে
অন্যান্য প্যাথোজেন যেমন ফ্লু জাতীয় ভাইরাস। এগুলি নিজেদের পরিবর্তন করে। বা তাদের এন্টিজেন মিউটেড করে। তাই এগুলোকে প্রতিবছর নতুন করে এনালাইজ করতে হয়। একবার প্যাথোজেন চিহ্নিত করা হলে সিদ্ধান্ত নিতে হয় এগুলা কিভাবে ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজে লাগানো যায়। আর এগুলোকে বলা হয় ভ্যাকসিন প্ল্যাটফর্ম।
সাব ইউনিট ভ্যাকসিন
এখানে অনেকগুলো অপশন রয়েছে। যেমন সাব ইউনিট ভ্যাকসিন যেটা প্যাথোজেন এর কিছু অংশ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। ভাইরাল ভেক্টর বা নিউক্লিক এসিড ভিত্তিক ভ্যাকসিন এর মত নতুন নতুন অধিক এক্সপেরিমেন্টাল প্রযুক্তি রয়েছে।এরপর কিভাবে ভ্যাকসিনকে প্রয়োগ করা হবে। চামড়ার নিচে ইনজেকশনের মাধ্যমে, নাকি পোলিও ভ্যাকসিন এর মত মুখে নেওয়ার মাধ্যমে, নাকি কিছু ভ্যাকসিন এর মত নাক দিয়ে নেয়ার মাধ্যমে। এর প্রত্যেকটি ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলাফলকে প্রভাবিত করে।
প্রথমে সেল কালচার এর পর এনিমেল এর উপর প্রয়োগ করা হয়।
ধরা যাক ভ্যাকসিন প্ল্যাটফর্ম ও ও ভ্যাকসিন এর ধরন ঠিক করা হলো। এরপর এটাকে পরীক্ষা করা হয়। প্রথমে সেল কালচার এর পর এনিমেল এর উপর প্রয়োগ করা হয়। এর মধ্যে কিছু গভীর পর্যবেক্ষণে রয়েছে। যে সমস্ত জীব জন্তুর উপর প্রয়োগ করা হয়েছে, সেগুলো নির্দিষ্ট রোগের ক্ষেত্রে কার্যকর হচ্ছে কিনা। অর্থাৎ তাদের রক্ষা করতে পারছে কিনা। যদি দেখা যায় রোগটি মারাত্মক অথবা কার্যকর চিকিৎসা নেই, তখন মানুষের দেহে প্রয়োগ করে পর্যবেক্ষণ করা হয়। যখন দেখা যায় ভ্যাকসিনটি প্রাণীর দেহে প্রয়োগ করে এর কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে, তখন এটাকে হাই স্ট্যান্ডার্ড মেনটেন করে মানুষের জন্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে কিনা তা প্রমাণ করতে হয়। উপরের বিষয়গুলো প্রমাণিত হলে জিএমপি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। যদি ভ্যাকসিনটি এই সমস্ত ধাপ অতিক্রম করে, তখনই মানুষের দেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সময় আসে। সাধারনত এই পর্বটি তিনটি ধাপ রয়েছে। এবং এই তিনটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমে ভ্যাকসিনটি কয়েকজন স্বাস্থ্যবান লোকের দেহে প্রয়োগ করা হয় নিশ্চিত হবার জন্য যে ভ্যাকসিন কি মারাত্মক কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। আর এই ধাপের নাম হল সেফটি ট্রায়াল।
দ্বিতীয় ধাপে শত শত মানুষের দেহে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়
দ্বিতীয় ধাপে শত শত মানুষের দেহে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয় নিশ্চিত হবার জন্য যে ভ্যাকসিনটি কিরকম ইম্মিউন রেসপন্স করে। সর্বশেষে হাজার হাজার লোকের দেহে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয় যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় ভ্যাকসিন কি কতটুকু কার্যকর। এই ধাপটি সবচেয়ে বেশি সময় নেয়। আর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অংশগ্রহণকারীদের সাধারনত রিক্রুট করা হয়। এরপর গবেষকদের অপেক্ষার পালা। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে যারা প্যাথোজেন এর সংস্পর্শে আসেন, তাদের তথ্যের জন্য গবেষকরা অপেক্ষা করেন। তারপর ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে দেখেন যে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও কেউ আক্রান্ত হয়েছেন কিনা এবং হলে তারা কতজন। এই তথ্যের মাধ্যমে গবেষকরা নিশ্চিত হতে পারেন যে, ভ্যাকসিন কি একটা গ্রুপ কে রক্ষা করতে কতটুকু কার্যকর। এটা বছরের পর বছর লাগতে পারে।হাই স্ট্যান্ডার্ড ধরে রেখে বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন করা
এরপর এটাকে লাইসেন্স দেওয়া হয়।
এরপরেও কিছু সমস্যাকে সলভ করতে হয়। যেমন হাই স্ট্যান্ডার্ড ধরে রেখে বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন করা একটি কঠিন কাজ। এরপর উৎপাদন প্রক্রিয়া শেষ করার পর এটা বিতরণের পালা। যেখানে যেখানে প্রয়োজন সেখানে সেখানে এটাকে বিতরণ করতে হয়।
মনিটরিং এর ধাপ
এরপর চতুর্থ ধাপ অর্থাৎ মনিটরিং এর ধাপ। এই ধাপে অতি অল্প সংখ্যক বিরূপ প্রতিক্রিয়া লিপিবদ্ধ করতে হয় যা গত ফেইজে ধরা পড়েনি। এই ট্রায়াল' প্রসেসটি অধিক নিরাপদ। এবং এতে অর্থের প্রয়োজন হয় এবং খুব সময় লাগে। ইমারজেন্সি ক্ষেত্রে কিছু পন্থা অবলম্বন করতে হয়। যেমন পেপার ওয়ার্ক এর যে সময়টা লাগে, সেটা কমিয়ে আনা হয়। অথবা বিভিন্ন ধাপগুলিকে একই সময়ে চালানো হয়, কিন্তু কোন স্টেপ কে বাদ দেয়া হয় না। অধিক দক্ষতার সাথেভ্যাকসিন।। একটা জীবন সুরক্ষিত ভ্যাকসিন প্রস্তুত করা হয় সর্বনিম্ন ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে। এবং বায়োটেকনোলজির উন্নয়নের সাথে সাথে উৎপাদন প্রক্রিনক়া ত্বরান্বিত করা যায়, এবং আরো অনেক কথা আছে, যার মাধ্যমে উৎপাদন প্রক্রিয়াকে গতিশীল করা যায়।
নতুন নতুন ভ্যাকসিন প্ল্যাটফর্ম
এখন আসা যাক কিছু নতুন নতুন ভ্যাকসিন প্ল্যাটফর্ম এর বিষয়ে। নিউক্লিক অ্যাসিড ভ্যাকসিন। এই ভ্যাকসিনে প্যাথোজেন বা এন্টিজেন কে সরাসরি ব্যবহার করা হয় না। তার পরিবর্তে তারা জেনেটিক টেমপ্লেট প্রয়োগ করে। এই ডিএনএ বা আরএনএ টেমপ্লেট সরাসরি বা লিপিড ন্যানো পার্টিকেলসে প্রয়োগ করা হয়। এগুলি সেলে প্রবেশ করতে সাহায্য করে এবং তাদের স্থায়িত্ব কে বৃদ্ধি করে। এই নেনো পার্টিকেলস ডিএনএ বা আরএনএ কে এনক্যাপসুলেট করে যাতে করে শরীরে প্রবেশ করার পর এটাকে রক্ষা করতে পারে। কিছু কিছু লিপিড ন্যানো পার্টিকেল সহযোগী হিসেবে কাজ করে। মলিকিউলার গুলি ইমিউনো রেসপন্স কে আরো গতিশীল করে। শরীরের ভিতর যেয়ে এই ডিএনএ বা আরএনএ আমাদের দেহের সেল গুলিকে এন্টিজেন তৈরি করার পরামর্শ দেয়। যেই অ্যান্টিজেনগুলো আমাদের দেহে ইমিউন রেসপন্স কে সক্রিয় করে যা আমাদের দেহে ইমিউনিটি তৈরীর জন্য প্রয়োজন। এন্টিজেন এর চেয়ে আর এন এ এবং ডিএনএ ল্যাবে প্রস্তুত করা অধিক দ্রুত এবং কার্যকর। সম্পূর্ণ প্যাথোজেন ভ্যাকসিনের চেয়ে তারা অধিক নিরাপদ। অর্থাৎ যে সমস্ত দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের লোক আছে তাদের জন্য এ ধরনের ভ্যাকসিন অধিক ভালো। কিন্তু নিউক্লিক এসিড ভ্যাকসিন এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে।ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন
আরেক ধরনের ভ্যাকসিন হচ্ছে, ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন। প্যাথোজেন থেকে জেনেটিক মেটেরিয়াললের ইনকমপ্লিট সেগমেন্টকে রোগ সৃষ্টি করে না এমন ভাইরাস এর ভিতরে প্রয়োগের মাধ্যমে ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন কাজ করে। এটা এরপর জেনেটিক মেটেরিয়াল এর ভেহিকেল হিসেবে কাজ করে যাতে সঠিক স্থানে পৌঁছে, সেখানেই সেটা প্রোটিনের রূপ নিয়ে ইমিউন সিস্টেমকে গতিশীল করে। ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন নিজে নিজেই দেহে অসংখ্য নিজের মতো আরো ভ্যাকসিন তৈরি করে এগুলা দ্রুত শরীরে বিস্তার ঘটায়। সেইফ ভ্যাকসিন ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে যায় এবং বিভিন্ন টার্গেটের জেনেটিক মেটেরিয়াল এই ধরনের established ক্যারিয়ারে প্রবেশ করানো তুলনামূলকভাবে সহজ হয়। এবং যেহেতু জেনেটিক মেটেরিয়াল এর ইনকমপ্লিট সেগমেন্ট প্রয়োগ করা হয়, এটা অনুলিপি তৈরি করতে পারে না। এবং রোগও সৃষ্টি করতে পারে না। এজন্যে তারা অধিক নিরাপদ।
কার্যকর ভ্যাকসিন
একটা কার্যকর ভ্যাকসিন লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে বাঁচাতে পারে, কিন্তু ব্যবহারের পূর্বে এই ভ্যাকসিন নিরাপদ এবং কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হতে হয়। ভবিষ্যতে গবেষকরা টিউমোর নিউ এন্টিজেন নামক কেমিক্যাল মার্কার উপর ভিত্তি করে নন ইনফেকশাস ডিজিজ যেমন ক্যান্সারের মতো রোগের ভ্যাকসিন তৈরি করবেন বলে আশা করছেন। হয়তো সেদিন বেশি দূরে নয়, যখন ক্যান্সারের মতো রোগের ক্ষেত্রেও টিকা আবিষ্কৃত হবে।Shameem Sarwar
shameem.sarwar@yahoo.com