- Get link
- X
- Other Apps
আপিল কাকে বলে এবং কে দায়ের করতে পারে?
আপিল আদালতের ক্ষমতা। আপিল ও রিভিশনের পার্থক্য।
ফৌজদারী আদালতের কোন দন্ড আপিলযোগ্য নয়?
সংক্ষিপ্ত বিচারের ক্ষেত্রে আপিল।
আপিলকারীর মূত্যু হলে আপিল চলবে কিনা?
খালাস ও অপর্যাপ্ত দন্ডের বিরুদ্ধে আপিল।
প্রশ্ন:আপিল কাকে বলে?
উত্তর: ফৌজদারি কার্যবিধিতে আপিলের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা প্রদান করা হয়নি, তবে বিভিন্ন পর্যালোচনায় বলা যায়: কলকাতা হাইকোর্ট একটি মামলায় আপিল সম্পর্কে বলেন: - নিম্ন আদালত কর্তৃক কোন মামলার রায়ের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্দ পক্ষ উক্ত রায় সংশোধনী বা বাতিলের জন্য ঊর্ধ্বতন আদালতে যে দরখাস্ত করে তাকে আপিল বলে।
অক্সফোর্ড অভিধানের সংজ্ঞা অনুযায়ী:- নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্ত বাতিল বা সংশোধনের জন্য কোন মামলা নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালতে স্থানান্তর হওয়াই হল আপিল।
প্রশ্ন: যিনি আপিল দায়ের করতে পারেন;
উত্তর: কোন আদালতের রায় বা আদেশে যে পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা যে পক্ষ সন্তুষ্ট হতে পারে না, সেই পক্ষ আইনে সুনির্দিষ্ট বিধান থাকলে উচ্চ আদালতে আপিল দায়ের করতে পারে। মেমোরেন্ডাম বা দরখাস্ত আকারে আপিল আবেদন করতে হয়। আপিল আবেদনের সাথে যে রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হচ্ছে তার একটি নকল সংযুক্ত করতে হয়।
প্রশ্ন আপিল আদালতের ক্ষমতা ও কার্যাবলী বা পরিসর:
উত্তর: ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৩ ধারা অনুযায়ী কোনো মামলার নথিপত্র তলব বা মামলা খারিজ করা। কোন মামলার নথিপত্র যদি পূর্ব থেকে আদালতে না থাকে তাহলে আপিল আদালত উক্ত নথি তলব করবেন। তলবকৃত নথি পরীক্ষা করার পর আপিলকারী বা তার আইনজীবী হাজির হলে তাদের বক্তব্য শ্রবন করবেন এবং সরকারি উকিল হাজির হলে তার বক্তব্য শ্রবণ করে এবং ৪১৭ ধারা অনুযায়ী আপিলের ক্ষেত্রে আসামী হাজির হলে তার বক্তব্য শ্রবণ করে আপিল আদালত যদি মনে করেন যে হস্তক্ষেপ করার মতো পর্যাপ্ত অজুহাত নেই তাহলে উক্ত আপিল খারিজ করতে পারবেন।
যদি খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপিল হয়,
আপিল আদালতে যদি খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপিল হয়, তাহলে উক্ত আদেশ পরিবর্তন করতে পারবেন এবং আরও নির্দেশ দিতে পারেন তদন্ত করার জন্য বা আসামির পুনর্বিচার হবে বা তাকে বিচারের জন্য পাঠাতে হবে অথবা তাকে দোষী সাব্যস্ত করতে বা দন্ড দিতে পারবেন।
আপিল আদালতে দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল হলে
আপিল আদালতে দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল হলে আদালত নিম্ন পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারবেন:- আসামিকে খালাস অথবা অব্যাহতি দিতে পারবেন, দণ্ড রদ করতে পারবেন, পুনর্বিচারের জন্য অধস্তন কোন আদালতকে আদেশ দিতে পারবেন। অথবা দন্ড হ্রাস করে বা না করে তার প্রকৃতির পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে ১০৬ (৩) ধারার বিধান সাপেক্ষে দন্ড বৃদ্ধি করতে পারবেন না।
দন্ড বৃদ্ধির জন্য আপিল হলে
দন্ড বৃদ্ধির জন্য আপিল হলে আদালত নিম্ন পদ্ধতি অবলম্বন করবেন:- দন্ড রদ করতে পারবেন বা আসামিকে খালাস বা অব্যাহতি দিতে পারবেন বা সংশ্লিষ্ট আদালতে তাঁর পুনর্বিচারের আদেশ দিতে পারবেন, সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে দণ্ড বহাল রাখতে পারবেন বা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করে প্রকৃতি এমন ভাবে পরিবর্তন করতে পারবেন যার ফলে দন্ড হ্রাস বা বৃদ্ধি হয়।
অন্য কোন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল হলে
আপিল আদালতে অন্য কোন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল হলে উক্ত আদেশ পরিবর্তন করতে পারবেন অথবা বিপরীত কোন আদেশ দিতে পারবেন।আপিল আদালত ন্যায় সঙ্গত কোন সংশোধন করতে পারবেন বা প্রাসঙ্গিক কোন আদেশ প্রদান করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে শর্ত থাকে যে দন্ড বৃদ্ধির বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর জন্য আসামিকে সুযোগ না দিয়ে দন্ড বৃদ্ধি করা যাবে না।
আপিল আদালতে দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল হলে সেই দন্ড বা আদেশ দানকারী আদালত একই অপরাধের জন্য আসামিকে যে দণ্ড প্রদান করতে পারতেন, আপিল আদালত তার চেয়ে বেশি দণ্ড প্রদান করবেন না।
প্রশ্ন: আপিল ও রিভিশন এর পার্থক্য:
উত্তর: ১।নিম্ন আদালতের কোনো আদেশ বা রায় সংক্ষিপ্ত রায় বা আদেশ বাতিল বা সংশোধন চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করাকে আপিল বলে। কিন্তু অধস্তন আদালতের কার্যক্রম এ কোন অনিয়ম লক্ষ্য করলে হাইকোর্ট বিভাগ বা দায়রা জজ কারো আবেদনে অথবা স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে উক্ত নথি তলব করে তা পরীক্ষার পর প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান করতে পারেন। একে রিভিশন বলে।
২। আপিল কে ইংরেজিতে Appeal বলে।
কিন্তু
রিভিশন কে ইংরেজিতে Revision বলে।
৩। কতিপয় বিষয় ছাড়া সকল বিষয়ে আপিল করা যায়।
কিন্তু
যে ক্ষেত্রে আপিল চলে না সে ক্ষেত্রে কেবল রিভিশন করা যায়।
৪। অধিকার হিসেবে আপিল দাবী করা যায়।
কিন্তু
অধিকার হিসেবে রিভিশন দাবি করা যায় না।
৫। আপিল আদালতের ক্ষমতা সীমিত।
কিন্তু
রিভিশন আদালতের ক্ষমতা ব্যাপক।
৬। খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করা যায়।
কিন্তু
খালাসের বিরুদ্ধে রিভিশন করা যায় না।
প্রশ্ন: ফৌজদারি আদালতে যে সকল দণ্ড আপিল যোগ্য নয়:
উত্তর: ১। নালিশ কৃত মামলা আদালত খারিজ করলে তার বিরুদ্ধে আপিল করা যায় না। ধারা ২০৩
২। বর্তমান বলবৎ কোন আইনে বা অন্য কোন আইনের বিধান অনুযায়ী আপিলের বিধান না থাকলে আপিল করা যায় না। ধারা ৪০৪
৩। আসামি যদি তার নিজের দোষ স্বীকার করে তাহলে দায়রা আদালত বা মেট্রোপলিটন বা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট দণ্ড প্রদান করলে তার বিরুদ্ধে আপিল চলেনা। ধারা ৪১২
৪। দায়রা আদালত যদি অনধিক এক মাসের কারাদণ্ড প্রদান করে অথবা দায়রা আদালত বা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট যদি অনধিক ৫০ টাকা জরিমানা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আপিল করা যায় না। ধারা ৪১৩
৫। সংক্ষিপ্ত বিচারের ২০০ টাকা বা তার কম জরিমানা করলে তার বিরুদ্ধে আপিল করা যায় না। ধারা ৪১৪
প্রশ্ন: কোন কোন অবস্থায় সংক্ষিপ্ত বিচারের শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল চলে এবং কখন চলে না।
উত্তর: ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১৪ ধারা অনুযায়ী সাধারণ বিচারে ৫০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হলে তার বিরুদ্ধে আপিল চলে না। সংক্ষিপ্ত বিচারের ২০০ টাকার বেশি জরিমানা হলে তার বিরুদ্ধে আপিল করা যায়। সংক্ষিপ্ত বিচারে ২০০ টাকা বা তার কম জরিমানা হলে তার বিরুদ্ধে আপিল চলে না। সুতরাং বলা যায় সংক্ষিপ্ত বিচারের ২০০ টাকার বেশি জরিমানা হলে তার বিরুদ্ধে আপিল করা যায় এবং ২০০ টাকা বা তার কম জরিমানা হলে তার বিরুদ্ধে আপিল করা যায় না।প্রশ্ন: আপিলকারী মৃত্যু হলে উক্ত আপীল এর অবস্থা:
উত্তর: ফৌজদারী কার্যবিধি ৪৩১ ধারা অনুযায়ী-ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১৭ এবং ৪১৭ (এ) ধারা অনুযায়ী আসামির মৃত্যু হলে আপিল চূড়ান্তভাবে পন্ড হয়ে যাবে। কিন্তু জরিমানার বিরুদ্ধে আপিল হলে তা চূড়ান্তভাবে পন্ড হয়ে যাবে না।
প্রশ্ন: খালাসের বিরুদ্ধে আপিল:
উত্তর: ফৌজদারী কার্যবিধি ৪১৭ ধারা অনুযায়ী- খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে যদি কোনো বাধা না থাকে তাহলে সরকার যে কোনো মামলায় কৌঁসুলি কে আপিল করার নির্দেশ দিতে পারেন।কৌঁসুলি দায়রা আদালতের খালাসের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করবেন। কৌশলী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের খালাসের বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে আপিল করবেন। ধারা ৪১৭ (১)। কোন ফরিয়াদি কর্তৃক আনীত মামলায় খালাস আদেশ হলে ৪১৮ ধারায় যাই থাকুক না কেন ফরিয়াদি উক্ত খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। দায়রা আদালতের খালাসের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করবেন। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের খালাসের বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে আপিল করবেন। ধারা ৪১৭ (২)
খালাস আদেশ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে আপিল দায়ের করতে হবে। ৬০ দিন অতিক্রম করার পর ফরিয়াদি আপিল দায়ের করলে তা হাইকোর্ট বা দায়রা বিভাগে গ্রহণীয় হবেনা। ধারা ৪১৭ (৩)
খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপিল গৃহীত না হলে উপধারা ১ অনুসারে আপিল করা যাবেনা ধারা ৪১৭
(৪)প্রশ্ন: অপর্যাপ্ত দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল:
উত্তর: ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১৭ (এ) ধারা অনুযায়ী- সরকার কোন আদালতের বিচারে প্রদত্ত দণ্ডাদেশ যদি অপর্যাপ্ত হয় তাহলে কৌঁসুলি কে হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করার নির্দেশ দিতে পারেন ধারা ৪১৭ (এ)(১)কোন আদালতের বিচারে প্রদত্ত দণ্ডাদেশ যদি অপর্যাপ্ত হয় তাহলে নালিশ কারী আপিল আদালতে আপিল করতে পারেন। তবে উক্ত দণ্ডাদেশের ৬০ দিনের মধ্যে আপিল দায়ের করতে হবে। ৬০ দিন অতিক্রম করলে আপিল গৃহীত হবে না। অপর্যাপ্ত দণ্ডাদেশের কারণে আপিল দায়ের করা হলে আদালত দণ্ডবিধির বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর জন্য আসামিকে যুক্তিসঙ্গত সুযোগ দিবেন এবং কারণ দর্শানোর সময় আসামি তার খালাস প্রাপ্তি বাদ দন্ড হ্রাসের জন্য প্রার্থনা করতে পারবে ধারা ৪১৭ (এ) (৩)
Shameem Sarwar
shameem.sarwar@yahoo.com